Connect with us

নবজাতকের সেবা

নবজাতকের অত্যাবশ্যকীয় সেবা সমূহ

নবজাতকের জন্মের পর প্রথম কয়েকটি মুহূর্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং বিশেষ যত্ন ও সেবার প্রয়োজন। নবজাতকের সুস্থতা ও সুস্থভাবে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বৃদ্ধি করতে তার প্রাথমিক যত্নের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া অপরিহার্য। এই প্রাথমিক সেবায় অন্তর্ভুক্ত থাকে সঠিক পরিচর্যা, সঠিক পুষ্টি প্রদান, সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা এবং উষ্ণতার ব্যবস্থা করা। এর মাধ্যমে নবজাতককে জীবন শুরুর সঠিক ভিত্তি প্রদান করা হয় যা তার ভবিষ্যৎ সুস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

নবজাতকের অত্যাবশ্যকীয় সেবা

নবজাতকের অত্যাবশ্যকীয় সেবা সমূহঃ

  • প্রসবের সাথে সাথেই নবজাতককে পরিস্কার শুকনা নরম কাপড় দিয়ে মুছে নিতে হবে। আরেকটি শুকনো পরিষ্কার নরম কাপড়ে নবজাতককে মুড়িয়ে মায়ের কোলে দিন।
  • নবজাতককে জন্মের সাথে সাথেই (১ ঘণ্টার মধ্যে) গর্ভফুল পড়ার অপেক্ষা না করে মায়ের দুধ খাওয়ানো শুরু করতে হবে। মায়ের দুধ ছাড়া নবজাতককে অন্য কোনো কিছুই (যেমন – মধু, পানি, চিনির পানি) খাওয়াবেন না, কারণ এগুলো নবজাতকের জন্য ক্ষতিকর।
  • নবজাতককে গরম রাখুন ও জন্মের পর ৭২ ঘণ্টার আগে গোসল করাবেন না, কারণ গোসল করালে নবজাতকের ঠান্ডা লেগে যেতে পারে।
  • নবজাতক স্বাভাবিকভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছে কিনা তা খেয়াল করুন।
  • নবজাতকের নাভির যত্ন নিন । নাভির গোড়ায় কোনোকিছু লাগাবেন না।
  • কম ওজন নিয়ে জন্মানো ও স্বাভাবিক সময়ের পূর্বে জন্মানো নবজাতকের বিশেষ যত্ন নিন , যেমন – দুধ টেনে খেতে না পারলে মায়ের দুধ চেপে বের করে খাওয়াতে হবে, মায়ের বুকে রেখে গরম রাখতে হবে।
  • নবজাতকের ত্বক ও চোখের সঠিক যত্ন নিন।
  • নবজাতকের যেকোনো বিপদচিহ্ন দেখামাত্রই দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে ।

নবজাতককে মোড়ানোর পদ্ধতিঃ

  • এক টুকরা নরম, শুকনো ও পরিস্কার সুতি কাপড়ের উপর নবজাতককে শুইয়ে দিবেন।
  • লক্ষ্য রাখবেন যেন কাপড়ের কিছু অংশ নবজাতকের মাথার উপরের দিকে ও কিছু অংশ নবজাতকের পায়ের নিচের দিকে বাড়তি থাকে।
  • প্রথমে মাথার উপরের দিকের কাপড়ের বাড়তি অংশ দিয়ে নবজাতকের মাথা কপাল পর্যন্ত ঢেকে নিবেন। তারপর কাপড়ের উপরের দুই কোনা টেনে নবজাতকের দুই কাঁধ ঢেকে দিন।
  • এবার নবজাতকের পায়ের দিকের কাপড়ের বাড়তি অংশ দিয়ে পা গুলো চমৎকারভাবে ঢেকে দিন।
  • এরপর নবজাতকের শরীরের দুই পাশের বাড়তি কাপড় দিয়ে বুক ও পেট ভালোভাবে ঢেকে দিন।
  • পুরোপুরি মোড়ানোর পর নবজাতককে গরম রাখার জন্য মায়ের বুকে দিন।
  • মায়ের বুকে দেওয়ার পরপরই নবজাতককে শালদুধ খাওয়াতে সহায়তা করুন।

নবজাতক জন্মের পরপর শ্বাস না নিলে

               যা করা উচিত

           যা করা উচিত নয়

  • পরিষ্কার ও নরম কাপড় দিয়ে নবজাতকের সম্পূর্ণ শরীর ভালো করে মুছতে হবে
  • নাকে ও মুখে ময়লা লেগে থাকলে তা আঙুল দিয়ে পরিষ্কার ও নরম কাপড় পেঁচিয়ে পরিচ্ছন্ন করতে হবে
  • নবজাতককে কাত করে পিঠে শিরদাঁড়া নিচ থেকে উপর দিক বরাবর হাতের তালুর নিচের অংশ দিয়ে ঘষতে হবে
  • নবজাতকের রঙ এবং শ্বাসের দিকে লক্ষ্য করতে হবে। যদি ঠোঁট, জিহ্বা ও মুখের রঙ গোলাপি হয় এবং অনিয়মিত শ্বাস নিতে থাকে তাহলে নবজাতককে মায়ের বুকে দিতে হবে
  • এরপর ও নবজাতক শ্বাস না নিলে দ্রুত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে হবে
  • পা ধরে নবজাতককে উল্টো করে ঝোলানো উচিত নয়
  • নবজাতককে থাপ্পড় দেয়া উচিত নয়
  • নবজাতকের মুখে অথবা শরীরে ঠাণ্ডা পানি ছিটানো উচিত নয়
  • কানে অথবা নাকে ফুঁ/বাতাস দেয়া উচিত নয়
  • পানিতে চুবানো উচিত নয়
  • বুকের খাঁচায় চাপ দেয়া উচিত নয়
  • গর্ভফুল গরম করা উচিত নয়
  • গর্ভফুল পড়ার অপেক্ষায় নবজাতককে ফেলে রাখা উচিত নয়
Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

নবজাতকের সেবা

নবজাতকের চর্মরোগ হলে বাবা-মায়ের করণীয়: সহজ সমাধান ও পরামর্শ

নবজাতকের জন্মের পরপরই চর্মরোগ দেখা দিতে পারে। নবজাতকের ত্বক অত্যন্ত সংবেদনশীল হয়ে থাকে। যে কারণে স্বাভাবিকভাবেই তাদের ত্বক খুব সহজেই চর্মরোগে আক্রান্ত হতে পারে। অনেক সময় বাবা-মায়ের অজ্ঞতার কারণেও এ জাতীয় সমস্যার সৃষ্টি হয়। শিশুর ত্বকের সঠিক পরিচর্যা ও সময়মতো সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে অতি সহজেই এ জাতীয় জটিলতা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আসুন জেনে নেই নবজাতকের চর্মরোগ হলে করণীয় কী।

baby skin disease

নবজাতকের চর্মরোগ ও এর প্রতিকার

১. প্রিকলি হিট বা ঘামাচি: 

দিনের তাপমাত্রা বেশি থাকা সত্বেও আনেক সময় দেখা যায় আমাদের দেশে দাদী-নানীরা নবজাতককে চারদিক থেকে গরম কাপড়ে জড়িয়ে রাখেন। এর থেকে নবজাতকের শরীরে সাদা অথবা লাল রং বিশিষ্ট পানি আকারে ঘামাচির দানা দেখা দেয়। এ জাতীয় ঘামাচি চেনার উপায় হচ্ছে, ঘামাচি কখনো লোমের গোড়াতে হয় না। ঘামাচিকে যদিও সাধারণ ব্যাপার মনে হতে পারে কিন্তু । এ থেকে নবজাতকের অনেক জটিল সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। যেমন—এ থেকে শরীরে অনেক ফোঁড়ার সৃষ্টি হতে পারে। এটি সারানো একটু কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। আবহাওয়া যদি গরম থাকে, তবে জন্মের পর শিশুকে একটু খোলামেলা রাখা উচিত। ঘরের জানালা খোলা থাকা উচিত। ঘামাচিতে যেকোনো ট্যালকম পাউডারের ব্যবহার উপকারে আসে।

২. এরিথেমা টক্সিকাম নিউন্যাটোরিয়াম বা মাসিপিসি

গ্রামের মা-চাচিরা এ জাতীয় চর্মরোগকে মাসিপিসি বলে থাকেন এবং এটি নবজাতকদের হয়েই থাকে বলে তাদের ধারণা। সত্যিই এটি খুব সাধারণ ব্যাপার। জন্মের তিন থেকে চার দিনের দিন শিশুর শরীরে লাল লাল র‍্যাশ দেখা দেয়। এর সঙ্গে জ্বর বা অসুস্থতার অন্য কোনো উপসর্গ থাকে না। ১০ দিনের দিন কোনো ধরনের ওষুধ ছাড়াই এটি ভালো হয়ে যায়।

৩. ডায়াপার র‍্যাশ বা ন্যাপকিন র‍্যাশ

ডায়াপার বা ন্যাপি পরানোর কারণে নবজাতকের ত্বকে লাল লাল ভাব নিয়ে অ্যালার্জির মতো র‍্যাশ দেখা দিতে পারে। এ জাতীয় র‍্যাশ শরীরের যে সব স্থান কাপড়ের সংস্পর্শে আসে, সেই জায়গায় হয়ে থাকে। অর্থাৎ উরুতে হবে, তবে উরুর ভাঁজ বা কুঁচকির ভাঁজে হবে না। এমন অবস্থায় কাপড় সাময়িকভাবে বর্জন করা উচিত। যেসব বাচ্চার ন্যাপি বা ডায়াপার সারা রাতে একবারও বদলানো হয় না, তাদেরই এ সমস্যাটি বেশি হয়। প্রস্রাবের ইউরিয়া থেকে অ্যামোনিয়া তৈরি করে ত্বকে জ্বালাপোড়া ও চুলকানি সৃষ্টি হয়।

৪. ক্যানডিডিয়াসিস বা ফাঙ্গাস

নবজাতকের মুখের ভেতর, বিশেষ করে জিহ্বাতে দুধের সরের মতো আস্তরণ দেখা দেয়। যে সমস্ত জায়গা সব সময় ভিজা থাকে, যেমন কুঁচকি, পায়ুপথের আশপাশ, গলার ভাঁজ, সে সমস্ত জায়গাতেও ক্যানডিডা দিয়ে সংক্রমণ হতে পারে। এ ক্ষেত্রে আক্রান্ত স্থানের চামড়া লাল লাল ভাব হয়ে যায় এবং এর ওপর সাদা সাদা ছোপ দেখা দেয়, সাথে প্রচণ্ড চুলকায়। এ থেকে মুক্তি পেতে হলে আক্রান্ত স্থানকে অবশ্যই শুকনো রাখতে হবে।

৫. ক্যারাডাল ক্যাপ

কোনো কোনো নবজাতকের মাথায় চামড়া পুরু হয়ে জমতে দেখা যায়। এগুলো অনেকটা খুশকির মতো। সাধারণত হলুদ অথবা বাদামি রঙের হয়। কখনো কখনো বাজে গন্ধ হয় এবং তেলতেলে ভাব দেখা যায়। এটি ছয় মাস বয়সে নিজে থেকেই ভালো হয়ে যায়। সাময়িকভাবে পরিষ্কারের জন্য অলিভ অয়েল রাতে মেখে সকালে গোসল করাতে পারেন।

৬. স্ক্যাবিস বা পাঁচড়া চুলকানি

খোসপাঁচড়া ছোঁয়াচে রোগ। এটি নবজাতকের চর্মরোগ গুলোর মধ্যে তুলনামূলক জটিলতম। প্রতিটি আঙুলের ভাঁজে ভাঁজে, কব্জিতে, হাত ও পায়ের তালুতে, বগলে, নাভি, যৌনাঙ্গে, গলা এমনকি সমস্ত শরীরে ছোট ছোট গোটা আকারে চুলকানি দেখা দেয়। তাই দ্রুত একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের অধীনে এর চিকিৎসা নেওয়া উচিত। কারণ, খোস পাঁচড়াগুলো পেকে যেতে পারে এবং এ থেকে কখনো কখনো কিডনি আক্রান্ত হতে পারে।

তবে নবজাতকের যেকোনো সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই ডাক্টারের পরামর্শ নিবেন ।

Continue Reading

নবজাতকের সেবা

শীতকালে শিশুর গোসল: সতর্কতা ও সঠিক পদ্ধতি

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা শিশুর সুস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে শীতকালে শিশুকে গোসল করানোর সময় অতিরিক্ত যত্ন ও সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। ঠান্ডা-কাশি ও নিউমোনিয়া থেকে শিশুকে রক্ষা করার পাশাপাশি পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার বিষয়েও সচেতন থাকা প্রয়োজন। বিশেষত নবজাতকদের ক্ষেত্রে এ বিষয়ে বিশেষ যত্ন নেওয়া দরকার।

winter-baby-bathing-tips

নবজাতক গোসলের নিয়ম

নবজাতক বলতে সাধারণত ২৮ দিনের কম বয়সী শিশু বোঝানো হয়। জন্মের ৭২ ঘণ্টা পর নবজাতকের প্রথম গোসল করানো হয়, যেকোনো ঋতুতেই। নবজাতকদের সপ্তাহে দুই বা তিন দিন গোসল করানোই যথেষ্ট। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিয়মিত গোসল করানো যেতে পারে।

শীতকালে শিশুর গোসলের জন্য বিশেষ যত্ন

শীতকালে শিশুকে গরম রাখা অত্যন্ত জরুরি। এ সময়ে বাতাসের আর্দ্রতা কম থাকায় শিশুর ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে এবং সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। এজন্য:

  • এক বছরের বেশি বয়সী শিশুদের প্রতিদিন গোসল করানো ভালো, যদি সর্দি-কাশি বা নিউমোনিয়ার লক্ষণ না থাকে।
  • অতিরিক্ত শীত পড়লে এক বা দুই দিন পরপর গোসল করানো যেতে পারে।
  • প্রতিদিন গোসল সম্ভব না হলে কুসুম গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে শিশুর শরীর ভালোভাবে স্পঞ্জ করিয়ে দেওয়া একটি ভালো বিকল্প।

শীতকালে শিশুর গোসলের সময় যে বিষয়গুলো অবশ্যই মনে রাখবেন

  1. নিয়মিত সময় ঠিক করুন: প্রতিদিন একই সময়ে গোসল করালে শিশুর মধ্যে একটি রুটিন তৈরি হয়। তবে খাওয়ার সময় বা ঘুমানোর সময় গোসল করানো উচিত নয়। এতে শিশুর মেজাজ খারাপ হতে পারে।
  2. উষ্ণ স্থান নির্বাচন করুন: গোসলের স্থানটি উষ্ণ হওয়া উচিত এবং সেখানে ঠান্ডা বাতাস ঢুকতে না পারে তা নিশ্চিত করুন।
  3. গোসলের আগে তেল ব্যবহার: প্রাকৃতিক তেল শিশুর ত্বকের জন্য ভালো হতে পারে। তবে কোনো ত্বকের সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া তেল ব্যবহার করা ঠিক নয়।
  4. পানির তাপমাত্রা পরীক্ষা করুন: কুসুম গরম পানিতে গোসল করানো উচিত। পানির তাপমাত্রা শিশুর জন্য উপযুক্ত কি না, তা হাতে পরীক্ষা করে নিন।
  5. গোসলের সময়সীমা: ৫-১০ মিনিটের গোসলই যথেষ্ট। বেশি সময় ধরে গোসল করানো উচিত নয়।
  6. পোশাক হাতের কাছে রাখুন: শিশুকে গোসল করানোর পর তৎক্ষণাৎ তোয়ালে দিয়ে মুছে গরম পোশাক পরিয়ে দিন।
  7. চুল কান শুকনো রাখুন:
    • গোসলের পর চুল ভালোভাবে মুছে নিশ্চিত করুন, যাতে ভেজা চুলের কারণে ঠান্ডা না লাগে।
    • কানের ভেতরে পানি ঢুকেছে কি না, সেদিকে খেয়াল রাখুন।
  1. ত্বকের যত্ন:
    গোসলের পর শিশুর ত্বকে বয়স উপযোগী ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন, যা ত্বককে শুষ্ক হয়ে খসখসে হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করবে।
  2. নিরাপত্তা বজায় রাখুন:
    শিশুকে কোনো অবস্থাতেই পানির কাছে একা যেতে দেওয়া উচিত নয়।

শীতকালে শিশুর গোসলের নিয়মাবলী মেনে চললে সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া থেকে দূরে থাকা সম্ভব। একই সঙ্গে শিশুর ত্বকের স্বাস্থ্য এবং পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত হবে।

শিশুর যত্নে সঠিক পদ্ধতি ও সতর্কতা আপনার শিশুকে সুস্থ, সতেজ এবং হাসিখুশি রাখতে সহায়তা করবে।

Continue Reading

নবজাতকের সেবা

শীতে শিশুর যত্ন

শীতের আগমন প্রাকৃতিক পরিবর্তনের এক নতুন বার্তা নিয়ে আসে। তবে এই সময়টায় শিশুরা নানা ধরনের শারীরিক ও ত্বকের সমস্যার মুখোমুখি হতে পারে। ঠান্ডা আবহাওয়া এবং শুষ্ক পরিবেশ শিশুর স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সঠিক যত্ন এবং পূর্বসতর্কতা গ্রহণের মাধ্যমে এই সমস্যাগুলো সহজেই এড়িয়ে চলা সম্ভব। আজকের আলোচনায় তুলে ধরা হবে শীতকালে শিশুদের ত্বক ও স্বাস্থ্য পরিচর্যার কিছু প্রয়োজনীয় দিক।

baby winter care

শীতকালে শিশুর ত্বকের সমস্যাগুলো

শীতের শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে শিশুরা সাধারণত যে সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হয় তা হলো:

  • ত্বক রুক্ষ হওয়া
  • ত্বকের চুলকানি এবং অ্যালার্জি
  • ঠোঁট ফাটা
  • ত্বকের লালচে ভাব
  • হাত ও পায়ের ত্বক ফেটে যাওয়া

শিশুদের ত্বক অত্যন্ত সংবেদনশীল হওয়ায় এই সমস্যাগুলো দ্রুত দেখা দিতে পারে। তাই সঠিক পরিচর্যা অত্যন্ত জরুরি।

শীতে শিশুরা যে স্বাস্থ্য সমস্যায় বেশি আক্রান্ত হয়

শুধু ত্বকের সমস্যাই নয়, শীতকালে ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে শিশুরা বিভিন্ন রোগেও আক্রান্ত হতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য:

  • সর্দি-কাশি
  • গলাব্যথা
  • জ্বর
  • নিউমোনিয়া
  • অ্যালার্জি

শুষ্ক বাতাস এবং পরিবেশে ধুলাবালুর আধিক্যের কারণে এই সমস্যাগুলো আরও বাড়তে পারে। সঠিক প্রস্তুতি নিলে এই ঝুঁকি অনেকাংশে হ্রাস করা সম্ভব।

শীতকালে শিশুদের সুরক্ষায় করণীয়

     ১. ঠান্ডা বাতাস এবং ধুলাবালু থেকে সুরক্ষা

  • শিশুকে বাইরে নিয়ে গেলে মুখে মাস্ক পরার অভ্যাস করান।
  • শিশুর ঘরকে ধুলোমুক্ত রাখার চেষ্টা করুন। নিয়মিত পরিষ্কার করুন এবং ভেজা কাপড় দিয়ে ধুলো মুছুন।
  • ঘরে পর্যাপ্ত তাপমাত্রা বজায় রাখুন।

     ২. ত্বকের যত্ন

        শীতকালে শিশুর ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখার জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপ নিতে পারেন:

  1. বেবি লোশন ক্রিম: শিশুর ত্বকে নিয়মিত বেবি লোশন, বেবি অয়েল বা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। এতে ত্বকের শুষ্কতা দূর হবে।
  2. গ্লিসারিনের ব্যবহার: গ্লিসারিন ও গোলাপজলের মিশ্রণ ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
  3. ঠোঁটের যত্ন: শিশুর ঠোঁট ফাটলে পেট্রোলিয়াম জেলি বা ঠোঁটের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।

     ৩. গরম পানি ব্যবহার

  • শিশুকে হালকা কুসুম গরম পানিতে গোসল করান।
  • সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর দাঁত ব্রাশ, মুখ ধোয়া, এবং অন্যান্য কাজে হালকা গরম পানি ব্যবহার করতে বলুন।
  • নবজাতক বা ঠান্ডার সমস্যা থাকা শিশুর ক্ষেত্রে গরম পানিতে ভেজানো নরম কাপড় দিয়ে শরীর মুছে দেওয়া যেতে পারে।

     ৪. উষ্ণ পোশাক পরিধান

  • শিশুকে সুতির পোশাকের ওপর নরম উলের পোশাক পরাতে হবে। সরাসরি উলের পোশাক পরানো থেকে বিরত থাকুন।
  • পোশাক অবশ্যই আরামদায়ক এবং পরিবেশ অনুযায়ী হতে হবে।

শীতে শিশুদের খাবারদাবার

     ১. পুষ্টিকর খাবার:

       শীতে শিশুদের খাওয়ার প্রবণতা কমে যেতে পারে। তবে এই সময়ে পুষ্টিকর খাবার দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

  1. ডিম: ডিমের কুসুম শিশুর জন্য অত্যন্ত পুষ্টিকর।
  2. সবজি স্যুপ: গাজর, বিট, টমেটো দিয়ে তৈরি স্যুপ শীতকালে শিশুর শরীর গরম রাখতে সাহায্য করে।
  3. ফলের রস: কমলা, মাল্টা, আপেল বা পেয়ারার রস শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
  4. সবজি দিয়ে খিচুড়ি: বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি দিয়ে তৈরি খিচুড়ি শিশুর শরীরের জন্য পুষ্টিকর।

যেসব খাবার দিবেন না : শীতকালে অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে এমন খাবার থেকে শিশুকে দূরে রাখুন

ঠান্ডাজনিত সমস্যায় ঘরোয়া সমাধান

    ১. গলা ব্যথা সর্দিকাশি

  • আদা ও লেবু দিয়ে তৈরি গরম চা শিশুর গলা ব্যথা কমাতে কার্যকর।
  • গরম পানিতে লবণ দিয়ে গড়গড়া করলে সংক্রমণ কমে।
  • মধু ও তুলসী পাতার রস সর্দি-কাশি প্রশমনে সাহায্য করে।

    ২. গায়ের ব্যথা ক্লান্তি দূর করতে

  • শিশুকে হালকা গরম পানিতে গোসল করান।
  • মালিশ করার জন্য শিশুর ত্বকে মৃদু গরম নারিকেল তেল ব্যবহার করুন।

    ৩. চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া

      শিশুর সমস্যার তীব্রতা বেশি হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। বিশেষ করে নিচের লক্ষণগুলো দেখা দিলে          দেরি করবেন না:

  • দীর্ঘদিন ধরে জ্বর বা কাশি থাকলে
  • শ্বাসকষ্ট বা শ্বাস নিতে অসুবিধা হলে
  • ত্বকে লালচে দাগ বা অ্যালার্জি গুরুতর হলে

 শীতের সময় শিশুদের জন্য বিশেষ কিছু টিপস

  1. শিশুকে দিনের প্রথম ভাগে রোদে খেলতে দিন। সূর্যের আলো ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি পূরণ করবে।
  2. শিশুকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে দিন।
  3. শিশুকে প্রতিদিন কিছুটা হালকা ব্যায়াম বা শারীরিক কাজ করান। এটি তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে।
  4. শিশু যে কম্বল বা বিছানার চাদর ব্যবহার করছে তা পরিষ্কার এবং ধুলোমুক্ত রাখুন।

শীতকালে শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সঠিক পরিচর্যা এবং পুষ্টিকর খাবার দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ত্বকের যত্ন থেকে শুরু করে ঠান্ডাজনিত সমস্যার প্রতিরোধ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপেই সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে। সামান্য যত্নই শিশুর শীতকালীন সময়কে স্বাস্থ্যকর ও আনন্দময় করে তুলতে পারে।

Continue Reading

Latest Post

adenoid adenoid
অসুখ বিসুখ5 days ago

শিশুর এডিনয়েড সমস্যা

শীতকালে সাধারণত শিশু ও কিশোরদের ঠান্ডা-সর্দি জনিত নানা রোগ বাড়তে দেখা যায়। বিশেষ করে নাক, গলা ও কানের সমস্যা বেড়ে...

baby skin disease baby skin disease
নবজাতকের সেবা6 days ago

নবজাতকের চর্মরোগ হলে বাবা-মায়ের করণীয়: সহজ সমাধান ও পরামর্শ

নবজাতকের জন্মের পরপরই চর্মরোগ দেখা দিতে পারে। নবজাতকের ত্বক অত্যন্ত সংবেদনশীল হয়ে থাকে। যে কারণে স্বাভাবিকভাবেই তাদের ত্বক খুব সহজেই...

speech delay speech delay
স্মার্ট প্যারেন্টিং1 month ago

স্পিচ ডিলে বা শিশুর কথা বলার দেরির কারণ ও সমাধান

ডা: মৌমিতা পাল শিশু-কিশোর মনোরোগ বিশেষজ্ঞএম.বি.বি.এস (এস.ইউ. এস.টি )এমডি, চাইল্ড এন্ড এডোলেসেন্ট সাইকিয়াট্রি ( বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটি) প্রযুক্তির...

winter-baby-bathing-tips winter-baby-bathing-tips
নবজাতকের সেবা1 month ago

শীতকালে শিশুর গোসল: সতর্কতা ও সঠিক পদ্ধতি

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা শিশুর সুস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে শীতকালে শিশুকে গোসল করানোর সময় অতিরিক্ত যত্ন ও সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। ঠান্ডা-কাশি...

impact-of-electronic-devices-on-children-and-teens impact-of-electronic-devices-on-children-and-teens
স্মার্ট প্যারেন্টিং2 months ago

শিশু এবং কিশোরদের উপর ইলেকট্রনিক ডিভাইসের প্রভাব

ডা: মৌমিতা পাল শিশু-কিশোর মনোরোগ বিশেষজ্ঞএম.বি.বি.এস (এস.ইউ. এস.টি )এমডি, চাইল্ড এন্ড এডোলেসেন্ট সাইকিয়াট্রি ( বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটি) সব...

baby winter care baby winter care
নবজাতকের সেবা2 months ago

শীতে শিশুর যত্ন

শীতের আগমন প্রাকৃতিক পরিবর্তনের এক নতুন বার্তা নিয়ে আসে। তবে এই সময়টায় শিশুরা নানা ধরনের শারীরিক ও ত্বকের সমস্যার মুখোমুখি...

হ্যান্ড, ফুট এন্ড মাউথ ডিজিস (HFMD) হ্যান্ড, ফুট এন্ড মাউথ ডিজিস (HFMD)
অসুখ বিসুখ2 months ago

হ্যান্ড, ফুট এন্ড মাউথ ডিজিস (HFMD)

ডাঃ মায়িশা হোসেন  MBBS Training/Course: PGT (Gynae & Obs) হ্যান্ড, ফুট এন্ড মাউথ ডিজিস (Hand, Foot, and Mouth Disease) একটি...

child development child development
স্মার্ট প্যারেন্টিং3 months ago

নবজাতকের মানসিক, ইমোশনাল এবং মনস্তাত্ত্বিক বিকাশ: একটি অন্তর্দৃষ্টি

ডা: মৌমিতা পাল শিশু-কিশোর মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এম.বি.বি.এস (এস.ইউ. এস.টি )এমডি, চাইল্ড এন্ড এডোলেসেন্ট সাইকিয়াট্রি ( বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটি)...

cow milk cow milk
শিশু খাদ্য3 months ago

শিশুকে গরুর দুধ কখন থেকে খাওয়াবেন?

আগে প্রচলিত ধারণা ছিল যে, বাচ্চাকে ২ বছরের আগে গরুর দুধ খাওয়ানো যাবে না এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনাও একই...

medicine and pregnancy medicine and pregnancy
গর্ভকালীন সেবা3 months ago

গর্ভাবস্থায় ঔষধ সেবনে সচেতনতা

গর্ভাবস্থাজীবনের একটি বিশেষ সময়, যা প্রতিটি মায়ের জন্য এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। এই সময় মায়ের স্বাস্থ্য সরাসরি গর্ভস্থ শিশুর স্বাস্থ্যের সাথে সম্পৃক্ত। তাই...

Trending