সন্তান জন্মের পর অনেক মা জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে ভাবেন না, অথচ এ সময়টাতেই অপ্রত্যাশিত গর্ভধারণের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি থাকে। গর্ভকাল ও প্রসবজনিত জটিলতা এড়াতে মা ও শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রসব পরবর্তী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই লেখা আপনাকে জানাবে কখন, কেন ও কীভাবে আপনি উপযুক্ত জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বেছে নিতে পারেন।
প্রসবের কতদিন পর গর্ভধারণের সম্ভাবনা থাকে? — বিস্তারিত তথ্য আপনার জন্য
অনেক নতুন মা মনে করেন, সন্তান জন্মের পরপরই গর্ভধারণের সম্ভাবনা একেবারে কমে যায়। কেউ কেউ আবার ধরেই নেন, পিরিয়ড না এলে গর্ভধারণ সম্ভব নয়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে—এই ধারণাগুলো ভুল এবং বিপজ্জনক হতে পারে।
পিরিয়ড না হলেও গর্ভধারণ হতে পারে
প্রসবের পর মেয়েদের দেহ সাধারণত আবার পিরিয়ড শুরু করার আগে থেকেই ওভুলেশন শুরু করে দেয়। অর্থাৎ ডিম্বাণু নির্গত হয়, যা গর্ভধারণের জন্য প্রয়োজনীয়। এই ওভুলেশন পিরিয়ড ফেরার দুই সপ্তাহ আগেই ঘটে। তাই পিরিয়ড শুরুর আগেই আপনি গর্ভধারণ করে ফেলতে পারেন—যা অনেকেই বুঝতে পারেন না।
বিশেষ করে আপনি যদি শুধুমাত্র বুকের দুধ না খাওয়ান, বা দুধের পাশাপাশি ফর্মুলা বা অন্যান্য খাবারও দেন, তাহলে ডেলিভারির মাত্র এক মাসের মধ্যেই ওভুলেশন হতে পারে এবং ছয় সপ্তাহের মধ্যেই আপনি পুনরায় গর্ভবতী হয়ে যেতে পারেন।
প্রসব–পরবর্তী জন্মনিয়ন্ত্রণ কেন জরুরি?
প্রসবের পরে সহবাস শুরু করলেই জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আপনার দেহ প্রস্তুত থাকলে, পিরিয়ড না এলেও আপনি গর্ভধারণ করতে পারেন। অনিচ্ছাকৃত বা অপরিকল্পিত গর্ভধারণ এড়াতে, ডাক্তারদের মতে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অবশ্যই ব্যবহার করা উচিত।
বুকের দুধ খাওয়ানো ও গর্ভধারণ: সত্য ও ভুল
বেশিরভাগ মা মনে করেন, বুকের দুধ খাওয়ালে জন্মনিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন নেই। এই ধারণার ভিত্তিতে তারা কোনো সুরক্ষা ছাড়াই সহবাস করেন। বাস্তবে, শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়ানো (exclusive breastfeeding) আংশিকভাবে জন্মনিয়ন্ত্রণে সহায়ক হলেও এটি শতভাগ নিরাপদ নয়।
তবে কিছু শর্তে এটি কিছুটা কার্যকর হতে পারে:
- পিরিয়ড এখনো ফেরেনি।
- আপনি এক্সক্লুসিভ ব্রেস্টফিডিং করছেন (শুধু মায়ের দুধ, কোনো ফর্মুলা বা পানি নয়)।
- শিশুর বয়স ছয় মাসের কম।
এই তিনটি শর্ত একসাথে পূরণ হলেই কিছুটা সুরক্ষা পাওয়া যায়। কিন্তু এরপরও গর্ভধারণের ঝুঁকি একেবারে থাকে না। তাই জন্মনিয়ন্ত্রণের কোনো না কোনো পদ্ধতি অবলম্বন করাটা সবচেয়ে নিরাপদ পথ।
জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে পরিকল্পনা করবেন কখন?
প্রসব-পরবর্তী সময়ে যৌনজীবন শুরুর আগেই জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে পরিকল্পনা করা অত্যন্ত জরুরি। এই বিষয়ে আগে থেকেই সচেতনতা ও প্রস্তুতি ভবিষ্যতের অনাকাঙ্ক্ষিত জটিলতা এড়াতে সহায়ক হতে পারে। আদর্শভাবে, গর্ভাবস্থার সময় থেকেই আপনি এবং আপনার সঙ্গী জন্মনিয়ন্ত্রণ বিষয়ে চিন্তা শুরু করতে পারেন।
অনেক মা গর্ভাবস্থার শেষের দিকে বা প্রসবের পরে চিকিৎসকের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করে থাকেন। যদি হাসপাতালেই আপনার ডেলিভারি হয়, তাহলে হাসপাতাল ছাড়ার আগেই চিকিৎসকের সঙ্গে জন্মনিয়ন্ত্রণ নিয়ে একটি পরিপূর্ণ আলোচনা সেরে নেওয়া ভালো।
প্রসব-পরবর্তী চেকআপে—সাধারণত প্রসবের ৬ থেকে ৮ সপ্তাহ পর—চিকিৎসক নিজেই আপনাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করবেন। তবে আপনি চাইলে এর আগেও বা যেকোনো সময় এ নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। যত দ্রুত পরিকল্পনা করবেন, ততই আপনি আত্মবিশ্বাসী ও নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করতে পারবেন।
আলোচনার সময় যেসব বিষয় গুরুত্ব দিন:
- পূর্ববর্তী গর্ভাবস্থার অভিজ্ঞতা: পূর্বে কোন ধরনের জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবহার করেছেন? সেগুলোর কার্যকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কেমন ছিল?
- ভবিষ্যতের পরিবার পরিকল্পনা: আপনি কি অদূর ভবিষ্যতে আবার গর্ভধারণ করতে চান, নাকি দীর্ঘমেয়াদি বিরতি চান?
- দুজনের সম্মতি ও স্বাচ্ছন্দ্য: আপনি ও আপনার সঙ্গী কোন পদ্ধতিতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?
- পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: কোন পদ্ধতিতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে এবং সেগুলোর প্রভাব কী?
- যদি শারীরিক কোনো সমস্যা বা রোগ থাকে: যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি থাকলে কোন পদ্ধতি নিরাপদ হবে?
কখন শুরু করবেন জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি?
সন্তান জন্মদানের পর জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি কখন থেকে শুরু করবেন, তা নির্ভর করে আপনার শারীরিক অবস্থা, দৈনন্দিন রুটিন, স্বাচ্ছন্দ্য এবং যে পদ্ধতিটি আপনি ব্যবহার করতে চান তার উপর।
কখন কোন পদ্ধতি শুরু করবেন?
- দীর্ঘমেয়াদি পদ্ধতি (যেমন: আইইউডি, ইমপ্ল্যান্ট, ইনজেকশন): সন্তান জন্মের পরপরই ব্যবহার শুরু করা যায়।
- কম্বাইন্ড জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি (যেমন: ‘সুখী’): সাধারণত সিজারিয়ান বা জটিল ডেলিভারির ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৬ সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হয়।
জনপ্রিয় জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির তালিকা
ডেলিভারির পর আপনি নিচের পদ্ধতিগুলোর মধ্যে যেকোনোটি বেছে নিতে পারেন:
১. ব্যারিয়ার পদ্ধতি:
- পুরুষ ও মহিলা কনডম।
- স্পার্মিসাইড।
- ডায়াফ্রাম।
- সারভাইকাল ক্যাপ।
- ভ্যাজাইনাল স্পঞ্জ।
২. বড়ি:
- মিশ্র বড়ি (কম্বাইন্ড পিল) – সাধারণত ‘সুখী’ নামে পরিচিত।
- প্রজেস্টোরন বড়ি (মিনিপিল) – সরকারিভাবে ‘আপন’ নামে পাওয়া যায়।
৩. ইন্ট্রা ইউটেরাইন ডিভাইস (IUD):
- কপার IUD।
- হরমোনাল IUD।
৪. ইমপ্ল্যান্ট:
- ত্বকের নিচে স্থাপনযোগ্য হরমোন নির্ভর রড।
৫. ইনজেকশন:
- ডিপো প্রোভেরা – প্রতি ৩ মাস অন্তর একটি ডোজ।
৬. স্থায়ী পদ্ধতি (স্টেরিলাইজেশন):
- নারীদের টিউবাল লাইগেশন।
- পুরুষদের ভ্যাসেকটমি।
৭. প্রাকৃতিক পদ্ধতি:
- ল্যাকটেশনাল এমেনোরিয়া (LAM) – শুধুমাত্র স্তন্যদানরত মায়েদের জন্য নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কার্যকর।
প্রত্যেকটি পদ্ধতির কার্যকারিতা, ব্যবহারবিধি ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ভিন্ন। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া সবসময়ই বুদ্ধিমানের কাজ।
সন্তান জন্মের পর কি ইমারজেন্সি জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়া যাবে?
হ্যাঁ, তবে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। নিচে দুটি বিকল্প উল্লেখ করা হলো:
১. ইমারজেন্সি পিল:
- লেভোনোরগ্যাস্ট্রেল (LNG-ECP): যৌনসম্পর্কের পর ৭২ ঘণ্টার মধ্যে গ্রহণযোগ্য।
- ইউলিপ্রোস্টাল এসিটেট (UPA): ৫ দিনের মধ্যে কার্যকর।
⚠ স্তন্যদানরত মায়েদের জন্য এই পিল পরিহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
২. কপার IUD:
- অনিরাপদ সহবাসের পর ৫ দিনের মধ্যে ব্যবহারযোগ্য।
- দীর্ঘমেয়াদেও জন্মনিয়ন্ত্রণে কার্যকর।
জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বাছাইয়ের আগে যেসব বিষয় বিবেচনা করবেন
জন্মনিয়ন্ত্রণ একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত, যা শুধু পরিবার পরিকল্পনা নয়, একজন নারীর শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার সঙ্গেও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বাছাই করার আগে আপনাকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে। এই বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখলে আপনি নিজের শরীর, জীবনধারা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ সঠিক পদ্ধতি নির্বাচন করতে পারবেন।
১. আপনার ভবিষ্যৎ সন্তান পরিকল্পনা
আপনি আর সন্তান চান কি না, চাইলে কতদিন পর চান—এ প্রশ্নের উত্তর আপনার জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নির্ধারণে মুখ্য ভূমিকা রাখে। যদি আপনি স্থায়ীভাবে সন্তান না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, তাহলে স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি (যেমন: বন্ধ্যত্বকরন) বিবেচনায় নিতে পারেন।
২. উপযুক্ত সময়ের প্রয়োজনীয়তা
সব পদ্ধতি একসাথে শুরু করা যায় না। কিছু পদ্ধতি ডেলিভারির পরপরই শুরু করা যায়, আবার কিছু পদ্ধতির জন্য অপেক্ষা করতে হতে পারে। আপনি কোন সময়ে পদ্ধতি শুরু করতে চান, সে অনুযায়ী বিকল্প বেছে নেওয়া উচিত।
৩. বুকের দুধ খাওয়ানোর বিষয়টি
যদি আপনি সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ান, তাহলে সব জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি আপনার জন্য উপযোগী নাও হতে পারে। কিছু পদ্ধতি দুধের পরিমাণ বা মানে প্রভাব ফেলতে পারে, তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
৪. কার্যকারিতা ও পূর্বের অভিজ্ঞতা
আপনি পূর্বে যেসব পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন সেগুলো সবসময় কার্যকর নাও থাকতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, স্পঞ্জ বা জরায়ুমুখের ক্যাপ পদ্ধতি গর্ভধারণ প্রতিরোধে আগের মতো সফল না-ও হতে পারে।
৫. ব্যবহারের নিয়ম ও পুনরাবৃত্তি
আপনি কত ঘন ঘন পদ্ধতিটি ব্যবহার করতে পারবেন বা করতে ইচ্ছুক সেটিও গুরুত্বপূর্ণ। কিছু পদ্ধতি প্রতিদিন ব্যবহার করতে হয় (যেমন পিল), আবার কিছু পদ্ধতি একবারেই দীর্ঘমেয়াদে কাজ করে (যেমন ইমপ্ল্যান্ট, আইইউডি)।
৬. যৌনবাহিত রোগ থেকে সুরক্ষা
আপনার বা আপনার সঙ্গীর যৌনবাহিত রোগ থাকলে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির বাছাইয়ে এটি অবশ্যই বিবেচ্য। যেমন, কনডম যৌনবাহিত রোগ সংক্রমণের ঝুঁকি হ্রাস করে, যা অন্যান্য অনেক পদ্ধতি পারে না।
৭. অন্যান্য শারীরিক সমস্যা
আপনার উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা থাকলে কিছু জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি আপনার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তাই সঠিক পদ্ধতি বাছাইয়ের জন্য চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা প্রয়োজন।
৮. ‘ওভার দা কাউন্টার’ সুবিধা
কিছু জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সহজেই ফার্মেসিতে পাওয়া যায় এবং নিজেই ব্যবহার করা যায় (যেমন: কনডম, স্পার্মিসাইড, স্পঞ্জ)। তবে ইমপ্ল্যান্ট, ইনজেকশন বা আইইউডি’র মতো পদ্ধতির জন্য প্রশিক্ষিত চিকিৎসকের সহায়তা প্রয়োজন।
কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন – জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারে সতর্কবার্তা
জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যবিষয়ক সিদ্ধান্ত। তবে যেকোনো পদ্ধতি গ্রহণের সময় কিছু শারীরিক প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে, যা অবহেলা না করে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। নিচে এমন কিছু লক্ষণ ও সতর্কতা তুলে ধরা হলো, যা দেখা দিলে অবিলম্বে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
সাধারণ যেকোনো জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন যদি:
- এক পা বা উভয় পা হঠাৎ ফুলে যায়।
- শ্বাসকষ্ট শুরু হয়।
- বুকে চাপ বা ব্যথা অনুভূত হয়।
- পায়ে হালকা ছোঁয়ায়ও তীব্র ব্যথা হয়।
এই উপসর্গগুলো রক্ত জমাট বাঁধার ইঙ্গিত হতে পারে, যা গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে। তাই দেরি না করে চিকিৎসা গ্রহণ করুন।
ইন্ট্রাইউটেরিয়ান ডিভাইস (IUD) ব্যবহারের সময় নিচের লক্ষণগুলো থাকলে সতর্ক হোন:
- ডিভাইসটি বের হয়ে এলে বা নিজের অবস্থান পরিবর্তন করলে।
- তীব্র ও ধারালো ধরনের পেট ব্যথা হলে।
- প্রস্রাবের সময় রক্ত পড়লে।
- দুর্গন্ধযুক্ত যোনিস্রাব হলে।
- সহবাসের সময় ব্যথা অনুভূত হলে।
- ডিভাইসের সুতা স্পর্শ করে অনুভব না করা গেলে।
উপরে উল্লেখিত যেকোনো উপসর্গ ইনফেকশন, ভুল স্থাপন অথবা অন্যান্য জটিলতার লক্ষণ হতে পারে।
পিল, মিনিপিল, প্যাচ, রিং বা ইমপ্ল্যান্ট ব্যবহারের সময় নিচের উপসর্গ থাকলে:
- দীর্ঘস্থায়ী মাথাব্যথা যা সময়ের সাথে কমে না।
- নিয়মিত বমি যা দিনে দিনে বাড়তে থাকে।
- দুইটি মাসিকের মধ্যবর্তী সময়ে যোনিপথে ছোপ ছোপ রক্তপাত।
এগুলো হরমোনজনিত ভারসাম্যহীনতা বা শরীরে প্রতিক্রিয়া বোঝাতে পারে।
সন্তান জন্মের পর জন্মনিয়ন্ত্রণ নিয়ে সাধারণ জিজ্ঞাসা
সন্তান জন্মের পর নারীর দেহে বেশ কিছু শারীরিক ও হরমোনজনিত পরিবর্তন দেখা দেয়। অনেকেই ভাবেন—বুকের দুধ খাওয়ালে বা মাসিক না এলে গর্ভধারণ হবে না। বাস্তবে বিষয়টি কিন্তু ভিন্ন। সন্তান জন্মদানের মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যেই আপনি পুনরায় গর্ভধারণ করতে পারেন। এমনকি বুকের দুধ খাওয়ানো বা পিরিয়ড না থাকলেও গর্ভধারণ সম্ভব। তাই সন্তান জন্মের পর প্রতিবার সহবাসের সময় জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরি।
সন্তান জন্মের পর জন্মনিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা, কার্যকারিতা এবং বুকের দুধ খাওয়ানোর বিষয়টি মাথায় রেখে পুরুষের কনডম ব্যবহার সবচেয়ে উপযোগী পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত।
✅ এটি সহজলভ্য।
✅ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।
✅ যৌনবাহিত রোগ থেকেও সুরক্ষা দেয়।.
জন্মবিরতিকরণ পিল বা বড়িতে হরমোন (ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টোরন) থাকে। উচ্চমাত্রার ইস্ট্রোজেনযুক্ত পিল বুকের দুধের সরবরাহ কমিয়ে দিতে পারে। তাই সন্তানের স্বাভাবিক দুধপান নিশ্চিত করতে হলে হরমোনাল পদ্ধতি গ্রহণের আগে অন্তত ৪–৬ সপ্তাহ অপেক্ষা করা উচিত।
নিম্নলিখিত অবস্থায় পিল খেতে সাবধানতা অবলম্বন বা পুরোপুরি পরিহার করা উচিত:
🔸 ৩৫ বছরের বেশি বয়সে ধূমপান করলে।
🔸 উচ্চ রক্তচাপ বা অরাযুক্ত মাইগ্রেন থাকলে।
🔸 সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ালে।
🔸 অনিয়মিত মাসিক চক্র থাকলে।
🔸 স্তন ক্যান্সার, থ্রম্বোসিস, পালমোনারি এমবোলিজম, লিভার ডিজিজ বা টিবির ওষুধ রিফামপিসিন সেবনের ইতিহাস থাকলে।
▶ ২৮টি পিলের প্যাক:
- ২১টি অ্যাকটিভ পিল—প্রতিদিন একটি করে খান।
- ৭টি ইনঅ্যাকটিভ পিল—পরবর্তী ৭ দিন খান, তখন মাসিক হতে পারে।
- এরপর নতুন প্যাক শুরু করুন।
▶ ২১টি পিলের প্যাক:
- মাসিক শেষের পরদিন শুরু করুন।
- ২১ দিন প্রতিদিন ১টি করে খান।
- ৭ দিন বিরতি দিন।
- ৮ম দিনে নতুন প্যাক শুরু করুন।
বিঃদ্রঃ পিল প্রতিদিন একই সময়ে খাওয়ার চেষ্টা করুন।
✅ কনডম – ব্যারিয়ার পদ্ধতি, সহজ ও নিরাপদ।
✅ ভ্যাসেক্টমি – স্থায়ী পদ্ধতি, নিরাপদ ও তুলনামূলকভাবে সহজ অপারেশন।
নারীদের তুলনায় পুরুষদের স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বেশি কার্যকর ও ঝুঁকিমুক্ত।
হ্যাঁ, তবে শুধু তখনই নেওয়া উচিত যখন আপনি ও আপনার সঙ্গী পুরোপুরি নিশ্চিত হন—আর সন্তান নেওয়ার প্রয়োজন নেই। একে বলা হয় স্টেরিলাইজেশন।
- সিজারিয়ান অপারেশনের সময়ই এটি করা যেতে পারে।
- ল্যাপারোস্কোপির মাধ্যমেও কয়েক সপ্তাহ পর করানো যায়।