Connect with us

গর্ভকালীন সেবা

প্রেগন্যান্সির লক্ষণ

গর্ভধারণ একটি বিশেষ মুহূর্ত যা প্রত্যেক মহিলার জীবনে এক অনন্য অভিজ্ঞতা নিয়ে আসে। গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণগুলি প্রত্যেক মহিলার ক্ষেত্রে একটু আলাদা হতে পারে, তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছে যা অধিকাংশ মহিলার মধ্যে দেখা যায়।সাধানণত গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহে কোনো সুনির্দিষ্ট লক্ষণ থাকে না এমনকি ১ মাস পর্যন্ত মায়েরা বুঝতেই পারেন না যে তারা গর্ভধারণ করেছেন। প্রথম যে লক্ষণটি গর্ভবতী মায়েরা খেয়াল করে তা হলো পিরিয়ড বাদ যাওয়া। উল্লেখ্য, গর্ভবতী নারীর সর্বশেষ মাসিকের প্রথম দিন থেকে তার গর্ভকালের শুরু ধরা হয়।

আপনি প্রেগন্যান্ট কি না কীভাবে বুঝবেন?

গর্ভবতী হওয়ার প্রথম এবং প্রধান লক্ষণ হলো পিরিয়ড বন্ধ হওয়া। এ ছাড়া কারো কারো ক্ষেত্রে আরও কিছু লক্ষণ উপস্থিত থাকতে পারে। যেমন:

  • যোনিপথ দিয়ে হালকা রক্তপাত

  • মাথা ঘুরানো

  • চাপ দিলে স্তনে ব্যথা অনুভব করা

  • বমি বমি লাগা

  • ক্লান্তি অনুভব করা

  • পেটে অস্বস্তি বা পেট ফাঁপা হয়েছে এমন মনে হওয়া

  • সাদা স্রাবের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া

  • পিরিয়ড বা মাসিকের ব্যথার মতো তলপেটে মোচড় দিয়ে ব্যথা হওয়া

  • ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ আসা

  • প্রিয় কোনো খাবারে অরুচি কিংবা নতুন কোনো খাবারের প্রতি তীব্র আকাঙ্ক্ষা

  • মুখে অদ্ভুত স্বাদ পাওয়া

  • প্রখর ঘ্রাণশক্তি

এসব লক্ষণ থাকলেই যে আপনি গর্ভবতী তা সুনিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়। কেননা এমন কিছু লক্ষণ কারও কারও ক্ষেত্রে মাসিকের আগে আগে দেখা দেয়। যেমন: স্তনে ব্যথা, পেট ফাঁপা ও কোনো খাবারের প্রতি তীব্র আকাঙ্ক্ষা। আবার অনেকের ক্ষেত্রে প্রেগন্যান্ট হওয়ার পর পর তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। ফলে গর্ভধারণের ব্যাপারটা আঁচ করতে দেরি হয়।

আপনি গর্ভবতী কি না তা জানার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি হল প্রেগন্যান্সি টেস্ট করা। 

মিলনের কতদিন পর প্রেগন্যান্সি টেস্ট করবেন ?

আপনার যদি কোনো মাসের পিরিয়ড বাদ যায় এবং আপনি যদি এর আগের সময়ে অনিরাপদ সহবাস করে থাকেন, অর্থাৎ কোনো জন্মনিরোধক (কনডম, পিল বা বড়ি, ইনজেকশন) ব্যবহার না করে সহবাস করে থাকেন, সেক্ষেত্রে যখনই দেখবেন যে নির্দিষ্ট তারিখে পিরিয়ড শুরু হয়নি তখনি আপনি প্রেগন্যান্সি টেস্ট করে নিতে পারেন।

আপনার যদি পিরিয়ড শুরু হওয়ার সম্ভাব্য তারিখটি জানা না থাকে তাহলে অনিরাপদ সহবাসের কমপক্ষে ২১ দিন পরে টেস্ট করেও আপনি জেনে নিতে পারবেন আপনি গর্ভধারণ করেছেন কি না। এ ছাড়া আজকাল অনেক উন্নত প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট পাওয়া যায়, যার সাহায্যে গর্ভধারণের নয় দিন পরেই আপনি গর্ভবতী হয়েছেন কি না তা জানা সম্ভব।

প্রেগন্যান্সি টেস্ট কীভাবে করবেন ?

আপনি প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিটের সাহায্যে খুব সহজে ঘরে বসেই জেনে নিতে পারেন আপনি গর্ভবতী কি না। এই কিটগুলো আপনি সাধারণ ওষুধের দোকান বা ফার্মেসি থেকেই কিনতে পারবেন। দিনের যেকোনো সময়ের প্রস্রাবের নমুনা নিয়ে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করা যায়। প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট/স্টিকের উপর প্রস্রাব করার পর সাধারণত কয়েক মিনিটের মধ্যেই ফলাফল দেখায়। একেকটি টেস্ট কিটের ধরন একেকরকম, তাই ব্যবহারের আগে অবশ্যই বক্সের গায়ে লেখা নির্দেশাবলি ভালোমতো পড়ে নিবেন। এ ছাড়া নিকটস্থ কোনো ক্লিনিক, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, হাসপাতাল বা গাইনি ডাক্তারের চেম্বারে গিয়েও আপনি প্রেগন্যান্সি টেস্ট করাতে পারেন। 

গর্ভবতী নিশ্চিত হলে করণীয় কী?

গর্ভাবস্থা নিশ্চিত হওয়ার পরপরই একজন স্বাস্থ্যকর্মী বা সম্ভব হলে একজন গাইনি ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন। প্রথম আল্ট্রাসাউন্ড, রক্ত পরীক্ষা, এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে নিন। ডাক্তার যে-সব পরামর্শ দিবে সেসব মেনে চলবেন।

গর্ভাবস্থার শুরুতে নিচের বিষয়গুলো মেনে চলার পরামর্শ দেয়া হয়–

  • গর্ভবতী হওয়ার প্রথম ৩ মাস বা ১২তম সপ্তাহ পর্যন্ত দৈনিক ৪০০ মাইক্রোগ্রাম ফলিক অ্যাসিড সেবন করতে হবে। ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট আকারে পাওয়া যায়।

  • দৈনিক ১০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন ডি ট্যাবলেট সেবন করতে পারেন।

  • গর্ভাবস্থায় নানান রকম ইনফেকশনের ঝুঁকি থাকে। তাই এসময় কাঁচা বা ভালোভাবে রান্না হয়নি এমন খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।

  • গর্ভের শিশুর সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে অবশ্যই ধূমপান, অতিরিক্ত চা-কফি পান, মদপান করা এড়িয়ে চলা উচিত।

  • পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করবেন ।

  • কিছু কিছু ওষুধ গর্ভাবস্থায় ক্ষতিকর হতে পারে। তাই কোন ধরনের ওষুধ গ্রহণ করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন ।

গর্ভকালীন সেবা

গর্ভাবস্থায় ঔষধ সেবনে সচেতনতা

গর্ভাবস্থাজীবনের একটি বিশেষ সময়, যা প্রতিটি মায়ের জন্য এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। এই সময় মায়ের স্বাস্থ্য সরাসরি গর্ভস্থ শিশুর স্বাস্থ্যের সাথে সম্পৃক্ত। তাই গর্ভাবস্থায় ঔষধ সেবনের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত। এসময় মায়ের শরীরে পরিবর্তন আসে এবং এই পরিবর্তনগুলোর উপর ভিত্তি করে ঔষধ গ্রহণের সঠিক পদ্ধতি ও সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। আসুন জেনে নিই কীভাবে গর্ভাবস্থায় ঔষধ সেবন সম্পর্কে সচেতন থাকবেন এবং নিজে ও আপনার শিশুকে সুস্থ রাখবেন।

medicine and pregnancy

গর্ভাবস্থার পুরো সময় জুড়ে মায়ের শরীর নানা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়, আর এই পরিবর্তনগুলো সরাসরি শিশুর স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে। ঔষধের প্রতিক্রিয়াও ভিন্ন হতে পারে। গর্ভস্থ শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে, মায়ের ঔষধ গ্রহণের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নিয়মকানুন মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি।

ডাক্তারের পরামর্শ: ঔষধ গ্রহণের প্রথম শর্ত

প্রতিদিনের ছোটখাটো অসুস্থতার জন্য আমরা অনেক সময় নিজে থেকেই ঔষধ সেবন করি। কিন্তু গর্ভাবস্থায় এ ধরনের নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেয়া ক্ষতিকর হতে পারে। সাধারণ সর্দি, কাশি, বা মাথাব্যথার মতো সমস্যার জন্যও ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ঔষধ গ্রহণ করা উচিত নয়। কারণ, অনেক ঔষধ গর্ভস্থ শিশুর বিকাশে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। সুতরাং, কোনও ধরনের চিকিৎসা শুরু করার আগে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা প্রয়োজন।

প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ঔষধ গ্রহণ

গর্ভাবস্থায় কোন ঔষধ সেবন করার আগে সেটি ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী গ্রহণ করতে হবে। প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী সঠিক ডোজ এবং নির্ধারিত সময় মেনে ঔষধ খাওয়া জরুরি। কারণ ডোজে কোন ধরনের পরিবর্তন হলে তা মা এবং শিশুর স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

প্রাকৃতিক ও হারবাল ঔষধ সেবনে সতর্কতা

প্রাকৃতিক বা হারবাল ঔষধ অনেক সময় ক্ষতিকর হতে পারে। বেশিরভাগ মানুষ হারবাল ঔষধকে নিরাপদ মনে করেন, কিন্তু গর্ভাবস্থায় এটি মায়ের এবং শিশুর স্বাস্থ্যের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই যেকোনো প্রকার হারবাল ঔষধ সেবনের আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

গর্ভাবস্থার বিভিন্ন পর্যায়ে ঔষধ গ্রহণের বিশেষ সতর্কতা

গর্ভাবস্থার সময়কে সাধারণত তিনটি ধাপে ভাগ করা হয়—প্রথম তিন মাস (প্রথম ট্রাইমেস্টার), মধ্যের তিন মাস (দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টার), এবং শেষের তিন মাস (তৃতীয় ট্রাইমেস্টার)। প্রতিটি ধাপে মায়ের ও শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষায় ভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়।

প্রথম তিন মাসের ঔষধ সেবন

প্রথম তিন মাস গর্ভস্থ শিশুর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গঠনের সময়। এই সময় যেকোনো প্রকার ঔষধ সেবন করলে শিশুর শারীরিক বিকাশে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। তাই প্রথম তিন মাসে যে কোনো ঔষধ গ্রহণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সতর্ক থাকা জরুরি।

মধ্যের তিন মাসের ঔষধ সেবন

মধ্যের তিন মাস তুলনামূলকভাবে কম ঝুঁকিপূর্ণ হলেও, মায়ের শরীরের পরিবর্তনের সাথে সাথে শিশুর বৃদ্ধি এসময় দ্রুত হয়। এই সময় কোন ঔষধ গ্রহণ করতে হলে অবশ্যই চিকিৎসকের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে।

শেষ তিন মাসের ঔষধ সেবন

শেষ তিন মাসেও সতর্কতার প্রয়োজন। যেকোনো প্রকার ঔষধ শিশুর জন্মের প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে। এছাড়া কিছু ঔষধ প্রিম্যাচিউর লেবার বা শিশুর প্রিম্যাচিউর জন্মের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

কোন ঔষধগুলি গর্ভাবস্থায় এড়িয়ে চলা উচিত

গর্ভাবস্থায় কিছু ঔষধ গ্রহণ করলে তা মা ও শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। নিচে উল্লেখিত ঔষধগুলো এড়িয়ে চলা উচিত:

 ১. অ্যাসপিরিন ও অন্যান্য ব্যথানাশকঃ অনেক ব্যথানাশক ঔষধ গর্ভস্থ শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। অ্যাসপিরিন, আইবুপ্রোফেন প্রভৃতি ঔষধ গ্রহণের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

 ২. অ্যান্টিবায়োটিকঃ অনেক ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক শিশুর অঙ্গপ্রত্যঙ্গের গঠনে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। তাই কোন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ গ্রহণ করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলা জরুরি।

 ৩. অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টঃ যেসব ঔষধ মনের অবস্থার উন্নতি করতে ব্যবহৃত হয়, সেগুলি গর্ভস্থ শিশুর মানসিক ও শারীরিক বিকাশে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

 ৪. এন্টিহিস্টামিন ও ডিকঞ্জেস্ট্যান্টঃ যেকোনো ধরনের অ্যালার্জি বা ঠান্ডা জনিত ঔষধ সেবন করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা জরুরি। কিছু এন্টিহিস্টামিন ঔষধ গর্ভস্থ শিশুর উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

ফার্মাসিস্টের পরামর্শে ঔষধ সেবন করবেন না

বেশিরভাগ মানুষ ঔষধ ক্রয়ের জন্য ফার্মেসির ওপর নির্ভরশীল। তবে ফার্মাসিস্ট বা ফার্মেসির কর্মীরা সাধারণত চিকিৎসক নন এবং তারা মায়ের নির্দিষ্ট শারীরিক অবস্থা, রোগের ইতিহাস বা অন্যান্য বিবরণ সম্পর্কে জানেন না। এতে ভুল ঔষধ সেবন বা ডোজের ভুল হওয়ার ঝুঁকি থাকে, যা মা এবং শিশুর জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। তাই, ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ব্যতীত ঔষধ গ্রহণ করা উচিত নয়।

গর্ভাবস্থায় নিরাপদ কিছু ঔষধ

গর্ভাবস্থায় সব ঔষধ ঝুঁকিপূর্ণ নয়। কিছু সাধারণ সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নিরাপদ ঔষধ রয়েছে, তবে সেগুলি গ্রহণ করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। উদাহরণস্বরূপ:

 প্যারাসিটামল: মাথাব্যথা বা জ্বরের ক্ষেত্রে প্যারাসিটামল নিরাপদ বলে ধরা হয়।

 এন্টাসিড: গ্যাস্ট্রিক বা বুকজ্বালা কমাতে কিছু এন্টাসিড গ্রহণ করা যেতে পারে।

 ভিটামিন ও আয়রন সাপ্লিমেন্ট: গর্ভাবস্থায় শরীরে পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করতে বিশেষ কিছু ভিটামিন এবং আয়রন সাপ্লিমেন্ট প্রয়োজন হতে পারে।

গর্ভাবস্থায় সুস্থ থাকার কিছু সাধারণ পরামর্শ

গর্ভাবস্থায় ঔষধ সেবনের পাশাপাশি নিজের শরীরের প্রতি বাড়তি যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। সুস্থ থাকতে কিছু সহজ পদক্ষেপ অনুসরণ করা যেতে পারে:

 পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন: প্রতিদিন পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং ভালো ঘুম নিশ্চিত করুন।

 পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ: স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মেনে চলুন এবং পুষ্টিকর খাবার খান।

 হালকা ব্যায়াম: হালকা শরীরচর্চা করতে পারেন, তবে তা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী।

 মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন: নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিন এবং কোনো মানসিক চাপ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন।

মায়ের স্বাস্থ্য যত ভালো থাকবে, গর্ভস্থ শিশুর স্বাস্থ্যও তত ভালো থাকবে। গর্ভাবস্থায় ঔষধ সেবনের ক্ষেত্রে সচেতন থাকাটা অত্যন্ত জরুরি। শিশুর সুস্থতা নিশ্চিত করতে হলে মাকে অবশ্যই নিজে সচেতন হতে হবে, নিজের শরীরের যত্ন নিতে হবে এবং ডাক্তারের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে।

সচেতন হোন, সুস্থ থাকুন এবং আপনার শিশুকে একটি স্বাস্থ্যকর জীবন উপহার দিন!

Continue Reading

গর্ভকালীন সেবা

গর্ভাবস্থায় আয়রন

গর্ভাবস্থায় আয়রন একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান । গর্ভের শিশুর সঠিক বিকাশ ও সুস্থ প্রসবের জন্য গর্ভবতীর আয়রনের চাহিদা মেটানো খুব গুরুত্বপূর্ণ। আয়রন গর্ভাবস্থার সময় হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সাহায্য করে, যা রক্তের মাধ্যমে অক্সিজেন পরিবহনে সহায়ক। গর্ভাবস্থায় আয়রনের অভাব হলে অ্যানিমিয়া হতে পারে, যা মায়ের ক্লান্তি, দুর্বলতা এবং শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

Iron tablet

গর্ভাবস্থায় আয়রন ট্যাবলেট এর উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় শরীরে আয়রনের চাহিদা অনেকটা বেড়ে যায়। এই চাহিদা সঠিকভাবে পূরণ করতে না পারলে তা আপনার ও গর্ভের শিশুর দেহে বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে—

  • গর্ভাবস্থায় আয়রনের অভাবজনিত রক্তশূন্যতা (অ্যানিমিয়া)। অ্যানিমিয়া একটি সাধারণ সমস্যা যা মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। আয়রনের অভাবজনিত রক্তশূন্যতা হলে যে-সব লক্ষণ দেখা দেয়—
    1. ক্লান্ত অনুভব করা
    2. শরীরের শক্তি কমে যাওয়া অথবা দুর্বল লাগা
    3. শ্বাস নিতে গিয়ে হাঁপিয়ে ওঠা
    4.  বুক ধড়ফড় করা
    5.  ত্বক ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া
  • আয়রনের অভাবজনিত রক্তশূন্যতা থেকে ‘পিকা’ নামের একটি সমস্যা হতে পারে। এই সমস্যা হলে খুবই অদ্ভুত জিনিস, অর্থাৎ খাবার নয় এমন কিছু খাওয়ার তীব্র ইচ্ছা হয়। যেমন: মাটি, কাগজ কিংবা দেয়ালের রং। এমন বোধ করলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
  • এ ছাড়াও গর্ভকালীন আয়রনের অভাবজনিত রক্তশূন্যতা মা ও শিশুর মৃত্যু ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।
  • পর্যাপ্ত আয়রনের অভাবে গর্ভের শিশুর গঠন ও বিকাশ বাধাগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। ফলে আপনার শিশু জন্মের সময়ে এবং জন্মের পরেও বেশ কিছু সমস্যায় ভুগতে পারে। যেমন—
    1. নির্দিষ্ট সময়ের আগেই, অর্থাৎ প্রিম্যাচিউর অবস্থায় জন্ম নেওয়া
    2. জন্মের সময়ে স্বাভাবিকের তুলনায় কম ওজন হওয়া
    3. শিশুর স্বাভাবিক ব্যবহারগত ও বুদ্ধিবৃত্তিক আচরণগত বিকাশ বাধাগ্রস্ত হওয়া
    4. শিশুর শরীরে আয়রনের মাত্রা প্রয়োজনের চেয়ে কম হওয়া

গর্ভাবস্থায় আয়রনযুক্ত খাবার খাওয়ার পাশাপাশি বাড়তি আয়রনের চাহিদা মেটাতে নিয়মমতো আয়রন ট্যাবলেট সেবন করলে তা মা ও গর্ভের শিশুকে বিভিন্ন স্বাস্থ্য জটিলতা থেকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে।

গর্ভাবস্থায় কতটুকু আয়রন ট্যাবলেট খাবেন?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশনা মতে, গর্ভাবস্থায় আপনাকে দৈনিক ৬০ মিলিগ্রাম করে আয়রন ট্যাবলেট সেবন করতে হবে। তবে এটি নির্ভর করে মায়ের শারীরিক অবস্থা এবং রক্তশূন্যতার মাত্রার ওপর। ডাক্তার নির্দিষ্ট পরীক্ষার ভিত্তিতে সঠিক ডোজ নির্ধারণ করবেন।

বাংলাদেশে গর্ভকালীন সময়ের জন্য আয়রন ও ফলিক অ্যাসিড একত্রে ‘আয়রন-ফলিক অ্যাসিড’ ট্যাবলেট হিসেবে কিনতে পাওয়া যায়। এতে গর্ভাবস্থার জন্য সঠিক পরিমাণে আয়রন যোগ করা থাকে। সেই সাথে ফলিক অ্যাসিড থাকে, যা শিশুর ব্রেইন ও স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশে সাহায্য করে এবং নানান জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধ করে।

উল্লেখ্য, আয়রনের অভাবজনিত রক্তশূন্যতার মতো কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে ডাক্তার আপনাকে ৬০ মিলিগ্রামের বেশি ডোজে আয়রন সেবনের পরামর্শ দিতে পারেন

গর্ভাবস্থায় আয়রন ট্যাবলেট কখন কীভাবে খাবেন ?

গর্ভাবস্থার শুরু থেকে প্রসব পরবর্তী তিন মাস পর্যন্ত আপনাকে দৈনিক ৬০ মিলিগ্রাম আয়রনযুক্ত ট্যাবলেট সেবন করতে হবে। সন্তান জন্মদানের তিন মাস পর পর্যন্ত আয়রন সেবন চালিয়ে যেতে হবে।

আয়রন ট্যাবলেট খাবার নিয়ম

আয়রন-ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট খালি পেটে খেলে এটি সবচেয়ে ভালোভাবে কাজ করে। তাই খাবার খাওয়ার এক ঘণ্টা আগে বা খাবার শেষ হওয়ার দুই ঘণ্টা পরে এক গ্লাস পানির সঙ্গে এই ট্যাবলেট গ্রহণ করা উচিত। পানির পরিবর্তে এক গ্লাস কমলার রস বা লেবুর শরবতও ব্যবহার করা যেতে পারে, কারণ এতে থাকা ভিটামিন সি শরীরকে আয়রন শোষণে সাহায্য করে।

তবে, খালি পেটে আয়রন-ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট খেলে অনেকের ক্ষেত্রে পেটে অস্বস্তি হতে পারে। যদি এমন হয়, তাহলে ডাক্তার আপনাকে খাবারের সাথে বা খাওয়ার পরপরই ট্যাবলেট সেবনের পরামর্শ দিতে পারেন।

সতর্কতা

আয়রন-ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেটের সাথে একই সময়ে অ্যান্টাসিড অথবা ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাবেন না। এতে আয়রনের কার্যকারিতা কমে যায়। অ্যান্টাসিড অথবা ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়ার অন্তত ১ ঘণ্টা আগে অথবা ২ ঘণ্টা পরে আয়রন ট্যাবলেট খাবেন।

এ ছাড়াও কিছু কিছু খাবার শরীরে আয়রন শোষণের হার কমিয়ে ফেলতে পারে। আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার সময়ে এসব খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। এমন কিছু খাবার হলো—

    1.  চা ও কফি
    2. ডিম
    3. দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার
    4. সয়াবিনযুক্ত খাবার

আয়রন ট্যাবলেট সেবনের ক্ষেত্রে যে চারটি বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে —

  1. আপনি আগে থেকেই শুধুমাত্র আয়রন অথবা কোনো মাল্টিভিটামিন সেবন করে থাকলে, তা ডাক্তারকে জানাবেন৷ ডাক্তারের সুনির্দিষ্ট পরামর্শ ছাড়া কয়েক ধরনের মাল্টিভিটামিন, আয়রন ও ফলিক অ্যাসিড একত্রে সেবন করা থেকে বিরত থাকবেন।
  2. বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গর্ভকালীন সময়ে যে-সব মাল্টিভিটামিন ট্যাবলেট সেবনের পরামর্শ দেওয়া হয়, সেসবে আয়রন যোগ করা থাকে। তাই গর্ভাবস্থায় ডাক্তার আপনাকে প্রয়োজনীয় পরিমাণে আয়রন-ফলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ মাল্টিভিটামিন ট্যাবলেট সেবনের পরামর্শ দিয়ে থাকলে আলাদা করে আয়রন ট্যাবলেট সেবনের প্রয়োজন নেই।
  3. গর্ভাবস্থায় প্রয়োজনীয় পরিমাণে আয়রন ও ফলিক অ্যাসিড একত্রে ‘আয়রন-ফলিক অ্যাসিড’ ট্যাবলেট হিসেবে পাওয়া যায়। এই ট্যাবলেট গর্ভাবস্থায় একই সাথে আয়রন ও ফলিক এসিডের চাহিদা পূরণ করে। তাই এটি সেবন করলে, কোনো বিশেষ প্রয়োজন (যেমন: আয়রনের অভাবজনিত রক্তশূন্যতা) ছাড়া আলাদা করে শুধু আয়রন ট্যাবলেট অথবা সিরাপ সেবনের প্রয়োজন নেই।
  4. নিয়মিত ‘আয়রন-ফলিক অ্যাসিড’ ট্যাবলেট সেবনের পরেও আপনার রক্তশূন্যতার লক্ষণ দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শে রক্ত পরীক্ষা করাবেন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করবেন।
  5. গর্ভাবস্থায় আপনি অন্য যেকোনো ঔষধ সেবন করলে ডাক্তারকে সেই ঔষধের নাম ও ডোজটি জানান। অনেকসময় আয়রনের সাথে অন্যান্য ঔষধের প্রতিক্রিয়া হতে পারে। সেক্ষেত্রে ডোজ কমানো কিংবা বাড়ানোর প্রয়োজন হতে পারে।

আয়রন ট্যাবলেট এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

আয়রন ট্যাবলেট সেবনের ফলে কারও কারও ক্ষেত্রে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে হতে পারে। যেমন—

  • কোষ্ঠকাঠিন্য
  • পাতলা পায়খানা
  • পেট ব্যথা
  • অ্যাসিডিটি, বুক জ্বালাপোড়া করা বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা
  • বমি বমি ভাব ও বমি
  • কালচে পায়খানা
  • ড্রপের ক্ষেত্রে দাঁত কালচে হয়ে যাওয়া

যদিও খালি পেটে আয়রন ট্যাবলেট খাওয়া ভালো, তবুও পেট ব্যথা কিংবা পাতলা পায়খানার সমস্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য খাবারের সাথে অথবা খাওয়ার ঠিক পর পরই আয়রন ট্যাবলেট সেবন করতে পারেন। সেই সাথে পর্যাপ্ত পানি ও ফাইবারযুক্ত খাবার খাবেন। এতে করে আয়রন ট্যাবলেটজনিত কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও কিছুটা কমতে পারে।

তবে আপনার এসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলেও ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ঔষধ খাওয়া বন্ধ করবেন না। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলেও এই ঔষধ সেবন চালিয়ে যাওয়া খুব জরুরি। আপনার যদি খুব বেশি সমস্যা বা অস্বস্তি হয়, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। ডাক্তার আপনাকে অন্য ব্র‍্যান্ডের ঔষধ কিংবা ট্যাবলেটের বদলে ইনজেকশন হিসেবে আয়রন গ্রহণের পরামর্শ দিতে পারে। তবে নিজে নিজে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ঔষধ বদল করে ফেলবেন না। এ ছাড়াও যদি আপনার অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন দেখা দেয় তাহলে ঔষধ সেবন বন্ধ করে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।

Iron

গর্ভাবস্থায় আয়রন সমৃদ্ধ খাবার

আয়রন ট্যাবলেট সেবনের পাশাপাশি আপনাকে নিয়মিত আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে, শুধুমাত্র এসব খাবার দিয়ে সাধারণত গর্ভাবস্থায় আয়রনের বাড়তি চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয় না। কিছু আয়রন সমৃদ্ধ খাবার হলো—

  • মাংস, বিশেষত গরু ও খাসির মাংসের মতো ‘রেড মিট’
  • বিভিন্ন ডাল। যেমন: ছোলা, মাষকলাই, মুগ ও মসুর
  • চিনাবাদাম, কাজুবাদাম ও পেস্তাবাদাম
  • মটর ও মটরশুঁটি
  • শুকনো ফল। যেমন: খেজুর, নারিকেল (শুকনা) ও আখরোট
  • বিভিন্ন মাছ। যেমন: চাপিলা, ট্যাংরা, কাচকি, মলা, টাটকিনি, শিং, ফেসা ও চেলা
  • ডিম
  • দুধ ও পনির
  • বিভিন্ন শাক। যেমন: পাট শাক, লাল শাক, সবুজ শাক, সবুজ ডাটা শাক, নটে শাক, সবুজ কচু শাক, চুকাই শাক, বরবটি পাতা, মালঞ্চ শাক, বকফুল শাক, মূলা শাক, লাউ শাক, পালং শাক ও পুঁই শাক
  • বিভিন্ন সবজি। যেমন: আলু, ব্রকলি ও মাশরুম
  • বিভিন্ন শস্যদানা। যেমন: যব, কাউন, ভুট্টা, চিড়া, গম, চালের কুড়া ও ঢেঁকিছাঁটা চাল
  • বিভিন্ন বীজ। যেমন: সয়াবিন, তিল, সরিষা, তিসি, মিষ্টিকুমড়া বীজ, সূর্যমুখী বীজ, পদ্ম (শুকনা) ও চিলগোজা

আয়রনযুক্ত ঔষধ শিশুদের হাতের নাগালের বাইরে রাখুন। অতিরিক্ত পরিমাণে আয়রন সেবনে শিশুর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

Continue Reading

গর্ভকালীন সেবা

প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট ব্যবহারের নিয়ম

প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট হলো একটি সহজ এবং সুবিধাজনক উপায় যা মহিলাদের গর্ভধারণের বিষয়টি দ্রুত নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। এটি মূলত প্রস্রাবের মাধ্যমে HCG (Human Chorionic Gonadotropin) হরমোন সনাক্ত করে, যা গর্ভধারণের সময় শরীরে উৎপন্ন হয়। এই আর্টিকেলে আমরা প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট ব্যবহারের সঠিক নিয়ম নিয়ে আলোচনা করব।

প্রস্তুতকারকভেদে প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিটের ব্যবহারবিধি কিছুটা ভিন্ন হতে পারে। কিটের প্যাকেটের ভেতরের নির্দেশিকায় কীভাবে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে হবে সেটি বিস্তারিতভাবে লেখা থাকে। নির্দেশিকা অনুসরণ করে আপনি সহজেই ঘরে বসে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করে ফেলতে পারবেন।

সচরাচর যেসব প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট পাওয়া যায়, সেগুলোর প্যাকেটের ভেতরে একটি লম্বা কাঠি বা বক্স থাকে। তাতে একটি ‘S’ লেখা ঘর থাকে। এ ঘরে আপনাকে কয়েক ফোঁটা প্রস্রাব দিয়ে কয়েক মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। তারপর বক্সের ‘C’ ও ‘T’ লেখা অন্য দুইটি ঘরের দিকে লক্ষ রাখতে হবে।

শুধু ‘C’ ঘরে একটি দাগ দেখা গেলে পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ, অর্থাৎ আপনি হয়তো গর্ভবতী না। আর ‘C’ ও ‘T’ দুইটি ঘরেই দাগ দেখা গেলে ফলাফল পজিটিভ, অর্থাৎ আপনি গর্ভবতী।

pregnancy kit use

প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট কীভাবে কাজ করে?

প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিটের মাধ্যমে প্রস্রাবে ‘বেটা হিউম্যান কোরিওনিক গোনাডোট্রপিন’ নামের একটি বিশেষ হরমোনের উপস্থিতি নির্ণয় করা হয়। গর্ভবতী নারীদের প্রস্রাবে এই হরমোনের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। যা কিটের মাধ্যমে শনাক্ত করা যায়।

টেস্ট কিট দিয়ে প্রস্রাবে এই হরমোনের উপস্থিতি শনাক্ত করা গেলে সেই ফলাফলকে ‘পজিটিভ’ বলে। আর শনাক্ত করার মতো যথেষ্ট পরিমাণ হরমোন না পাওয়া গেলে তাকে ‘নেগেটিভ’ বলে। ফলাফল পজিটিভ আসলে তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নির্ভুল হয়ে থাকে। তাই ফলাফল পজিটিভ আসলে একজন গাইনী ডাক্তার অথবা হাসপাতালে গিয়ে গর্ভাবস্থায় করণীয় সম্পর্কে জেনে নিতে হবে।

প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিটের ফলাফল কি নির্ভরযোগ্য?

সাধারণত সঠিক নিয়মে পরীক্ষা করলে প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সঠিক তথ্য দেয়।তবে প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিটের ফলাফল হিসাবের সময়ে নিচের বিষয়গুলো মাথায় রাখা জরুরি—

গর্ভধারণের ছয় দিন পর থেকেই শরীরে ‘বেটা হিউম্যান কোরিওনিক গোনাডোট্রপিন’ নামের বিশেষ হরমোন তৈরি হতে শুরু করে। তবে অনেক ক্ষেত্রে আট-দশ দিন সময়ও লাগতে পারে। গর্ভাবস্থার শুরুর দিকে শরীরে এই হরমোনের পরিমাণ তুলনামূলক কম থাকে। ধীরে ধীরে এই হরমোনের পরিমাণ বাড়তে থাকে। তাই অনেকক্ষেত্রেই গর্ভাবস্থার একেবারে শুরুর দিকে কিট দিয়ে পরীক্ষা করলে গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রেও ফলাফল নেগেটিভ আসতে পারে।

অনেকেই অনিয়মিত মাসিকের সমস্যায় ভোগেন। ফলে তারা মাসিকের সম্ভাব্য তারিখ ঠিকমতো হিসাব করতে পারেন না। সেক্ষেত্রে অনেকেই পর্যাপ্ত পরিমাণ হরমোন তৈরি হওয়ার আগেই টেস্ট করে ফেলতে পারেন। এমন হলেও গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রেও টেস্টের ফলাফল নেগেটিভ আসতে পারে।

এ ছাড়াও প্যাকেটের নির্দেশনা ঠিকমতো না মেনে পরীক্ষা করলে গর্ভবতী হলেও ভুলবশত কিট টেস্টের ফলাফল নেগেটিভ আসতে পারে।

তাই টেস্টের ফলাফল নেগেটিভ আসার পরেও আপনার পিরিয়ড না হলে অথবা আপনার নিজেকে গর্ভবতী মনে হলে কয়েকদিন পর আবার প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে পারেন।

দ্বিতীয়বার টেস্টের ফলাফল নেগেটিভ আসার পরেও যদি আপনার পিরিয়ড না হয় তাহলে দ্রুত কোনো গাইনী ডাক্তার অথবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কিংবা সদর হাসপাতালে যেতে হবে। সেখানে আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আপনি গর্ভবতী কি না সেই বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারবেন।

Continue Reading

Latest Post

speech delay speech delay
স্মার্ট প্যারেন্টিং1 week ago

স্পিচ ডিলে বা শিশুর কথা বলার দেরির কারণ ও সমাধান

ডা: মৌমিতা পাল শিশু-কিশোর মনোরোগ বিশেষজ্ঞএম.বি.বি.এস (এস.ইউ. এস.টি )এমডি, চাইল্ড এন্ড এডোলেসেন্ট সাইকিয়াট্রি ( বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটি) প্রযুক্তির...

winter-baby-bathing-tips winter-baby-bathing-tips
নবজাতকের সেবা2 weeks ago

শীতকালে শিশুর গোসল: সতর্কতা ও সঠিক পদ্ধতি

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা শিশুর সুস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে শীতকালে শিশুকে গোসল করানোর সময় অতিরিক্ত যত্ন ও সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। ঠান্ডা-কাশি...

impact-of-electronic-devices-on-children-and-teens impact-of-electronic-devices-on-children-and-teens
স্মার্ট প্যারেন্টিং3 weeks ago

শিশু এবং কিশোরদের উপর ইলেকট্রনিক ডিভাইসের প্রভাব

ডা: মৌমিতা পাল শিশু-কিশোর মনোরোগ বিশেষজ্ঞএম.বি.বি.এস (এস.ইউ. এস.টি )এমডি, চাইল্ড এন্ড এডোলেসেন্ট সাইকিয়াট্রি ( বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটি) সব...

baby winter care baby winter care
নবজাতকের সেবা1 month ago

শীতে শিশুর যত্ন

শীতের আগমন প্রাকৃতিক পরিবর্তনের এক নতুন বার্তা নিয়ে আসে। তবে এই সময়টায় শিশুরা নানা ধরনের শারীরিক ও ত্বকের সমস্যার মুখোমুখি...

হ্যান্ড, ফুট এন্ড মাউথ ডিজিস (HFMD) হ্যান্ড, ফুট এন্ড মাউথ ডিজিস (HFMD)
অসুখ বিসুখ1 month ago

হ্যান্ড, ফুট এন্ড মাউথ ডিজিস (HFMD)

ডাঃ মায়িশা হোসেন  MBBS Training/Course: PGT (Gynae & Obs) হ্যান্ড, ফুট এন্ড মাউথ ডিজিস (Hand, Foot, and Mouth Disease) একটি...

child development child development
স্মার্ট প্যারেন্টিং2 months ago

নবজাতকের মানসিক, ইমোশনাল এবং মনস্তাত্ত্বিক বিকাশ: একটি অন্তর্দৃষ্টি

ডা: মৌমিতা পাল শিশু-কিশোর মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এম.বি.বি.এস (এস.ইউ. এস.টি )এমডি, চাইল্ড এন্ড এডোলেসেন্ট সাইকিয়াট্রি ( বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটি)...

cow milk cow milk
শিশু খাদ্য2 months ago

শিশুকে গরুর দুধ কখন থেকে খাওয়াবেন?

আগে প্রচলিত ধারণা ছিল যে, বাচ্চাকে ২ বছরের আগে গরুর দুধ খাওয়ানো যাবে না এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনাও একই...

medicine and pregnancy medicine and pregnancy
গর্ভকালীন সেবা3 months ago

গর্ভাবস্থায় ঔষধ সেবনে সচেতনতা

গর্ভাবস্থাজীবনের একটি বিশেষ সময়, যা প্রতিটি মায়ের জন্য এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। এই সময় মায়ের স্বাস্থ্য সরাসরি গর্ভস্থ শিশুর স্বাস্থ্যের সাথে সম্পৃক্ত। তাই...

feeding-problems feeding-problems
স্মার্ট প্যারেন্টিং3 months ago

শিশুরা খেতে না চাইলে কি করবেন

প্রায় প্রত্যেক মায়ের এই অভিযোগ আমার বাচ্চা কিছু খেতে চায় না। সারা দিন খাবার না দিলে না খেয়েই থাকে। আবার...

pretend play pretend play
স্মার্ট প্যারেন্টিং3 months ago

শিশুর সৃজনশীলতা বৃদ্ধিতে প্রিটেন্ড প্লে বা অভিনয়-অভিনয় খেলা

আপনি কি কখনো দেখেছেন, আপনার বাচ্চা তার প্রিয় পুতুলটিকে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করছে, আপনার জুতা পরে হেঁটে বেড়াচ্ছে, বা একটি...

Trending