Parenting Point

safkat

হ্যান্ড, ফুট এন্ড মাউথ ডিজিস (HFMD)

হ্যান্ড, ফুট এন্ড মাউথ ডিজিস (HFMD)

ডাঃ মায়িশা হোসেন  MBBS Training/Course: PGT (Gynae & Obs) হ্যান্ড, ফুট এন্ড মাউথ ডিজিস (Hand, Foot, and Mouth Disease) একটি সংক্রামক রোগ যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিশুদের মধ্যে দেখা যায়, বিশেষ করে যাদের বয়স ৫ বছরের নিচে। হ্যান্ড, ফুট এন্ড মাউথ ডিজিস বর্তমানে খুবই কমন একটা রোগ যেটিতে দেখা দেয় জ্বর, মুখে ঘা এবং শরীরে র‍্যাশ। এটি একটি অতিমাত্রায় সংক্রামক রোগ। তবে ৭-১০ দিনে নিজে নিজেই ঠিক হয়ে যায়। কেনো হয় ? এটি একটি ভাইরাস জনিত রোগ। এটি কক্সস্যাকি ভাইরাস এবং এনটেরোভাইরাস গ্রুপের বেশ কিছু ভাইরাস দ্বারা হতে পারে। যেহেতু বিভিন্ন ভাইরাস দ্বারা হতে পারে সেহেতু এটি জীবনে একাধিক বার হতে পারে। কাদের হয়  এটি সাধারণত ইনফ্যান্ট (১বছরের ছোট বাচ্চা) এবং মূলত ৫ বছরের নিচে বাচ্চাদের বেশি হয়ে থাকে। তবে এটা যেকোন বয়সেই হতে পারে। লক্ষণ কি কি ? সাধারণত প্রথমে লো গ্রেড ফিভার অর্থাৎ নিম্নমাত্রার জ্বর(১০১ এর কম) দেখা দেয়। জ্বরের ২৪ ঘন্টার মধ্যে মুখে কিছু র‍্যাশ এবং ঘা দেখা দিতে পারে, যেগুলো সাধারণত ব্যথা দায়ক হয়। বাচ্চারা খাবার খেতে চায় না, গিলতে কষ্ট হয়, রুচি কমে যায়। মুখ দিয়ে লালা পড়তে পারে। মুখে ঘায়ের ১-২ দিন পর হাতে পায়ে র‍্যাশ দেখা দেয়। প্রথমে ফ্ল্যাট, এরপর চামড়া থেকে উঁচু হয়,এরপর কিছু কিছু পেকে যায়,পরবর্তীতে সেগুলো ফেটে যায়, এরপর শুকিয়ে যায়। র‍্যাশগুলোতে চুলকানি থাকতেও পারে নাও পারে। ছোট বাচ্চাদের বাটক অর্থাৎ নিতম্বেও র‍্যাশ দেখা দিতে পারে, কুচকিতেও দেখা দিতে পারে। কিভাবে ছড়ায় হাঁচি, কাশি উপরন্তু কথার মাধ্যমে যেসকল ড্রপলেট বের হয় যেসকল জিনিসপত্রে আক্রান্ত ব্যাক্তির সংস্পর্শ থাকে র‍্যাশ ফেটে যে তরল বের হয় আক্রান্ত ব্যাক্তির পায়খানা এসকলের মাধ্যমেই HFMD ছড়াতে পারে । প্রতিরোধের উপায় এটি খুবই খুবই সংক্রামক। তারপরও কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ঘন ঘন হাত ধুতে হবে, বড়রাও ধুবে, ছোটদেরও একটু পর পর হাত ধোয়ার অভ্যাস করাতে হবে। আক্রান্ত ব্যাক্তির ব্যবহার্য জিনিসপত্র, খেলনা একটু পর পর ডিসইনফেকট্যান্ট দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে আক্রান্ত ব্যাক্তি অন্যদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখবে প্রতিকার হ্যান্ড, ফুট এন্ড মাউথ ডিজিস এর কোনো প্রতিকার নেই। কোনো ঔষধ নেই,কোনো ভ্যাক্সিন নেই। নিজে নিজেই ৭-১০ দিনে ঠিক হয়ে যায়। তবে প্রচুর পরিমাণে পানি ও তরল খাবার খেতে হবে। প্রয়োজনে উপসর্গ অনুযায়ী — প্যারাসিটামল এন্টিহিস্টামিন কখন স্কুলে যেতে পারবে? জ্বর নেই শরীর ভালো লাগছে মুখ দিয়ে কোনো লালা বের হচ্ছে না র‍্যাশ যেতে ১-২ সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।  হ্যান্ড, ফুট এন্ড মাউথ ডিজিস গুরুতর না হলেও এতে শিশুদের ভোগান্তি হতে পারে। সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও সাবধানতা অবলম্বন করলে এ রোগটি প্রতিরোধ করা সম্ভব।

হ্যান্ড, ফুট এন্ড মাউথ ডিজিস (HFMD) Read More »

নবজাতকের মানসিক, ইমোশনাল এবং মনস্তাত্ত্বিক বিকাশ: একটি অন্তর্দৃষ্টি

child development

ডা: মৌমিতা পাল শিশু-কিশোর মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এম.বি.বি.এস (এস.ইউ. এস.টি )এমডি, চাইল্ড এন্ড এডোলেসেন্ট সাইকিয়াট্রি ( বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটি) নবজাতকের জন্মের পর থেকেই তার শারীরিক বিকাশ যেমন চোখে পড়ে, তেমনি মানসিক, আবেগিক ও মনস্তাত্ত্বিক বিকাশও গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক। নবজাতক তার আশেপাশের পরিবেশ, মানুষের আচরণ, এবং বিভিন্ন অভিজ্ঞতা থেকে ধীরে ধীরে শিখতে শুরু করে। এই প্রক্রিয়াটি ধাপে ধাপে ঘটে এবং প্রতিটি স্তরে বিভিন্ন উপাদান প্রভাব ফেলে। মানসিক বিকাশ: নবজাতকের মানসিক বিকাশের শুরু হয় তার জন্মের পর থেকেই। প্রথম ৬ মাসের মধ্যে নবজাতক তার মা-বাবা এবং অন্যান্য পরিচিত মানুষের সাথে মানসিক বন্ধন গড়ে তোলে। এই সময় তার ব্রেনের নিউরোনাল কানেকশন দ্রুত বিকাশ লাভ করে। সঠিক যত্ন এবং ভালবাসা এই সময় শিশুর মানসিক বিকাশে সহায়ক হয়। বিশেষ করে, মায়ের সাথে ত্বক-স্পর্শ (skin-to-skin contact) শিশুর ব্রেনের সঠিক বৃদ্ধি এবং মানসিক স্থিতিশীলতা গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইমোশনাল বিকাশ: নবজাতকের ইমোশনাল বা আবেগিক বিকাশ তার আশেপাশের পরিবেশ এবং পরিবার থেকে প্রাপ্ত অনুভূতির মাধ্যমে হয়। প্রথমদিকে, শিশু শুধুমাত্র কেঁদে তার প্রয়োজনীয়তা প্রকাশ করে। তবে ধীরে ধীরে সে বিভিন্ন ধরণের আবেগ প্রকাশ করতে শেখে, যেমন- হাসি, বিরক্তি, বা আতঙ্ক। শিশুর আবেগিক বিকাশের ক্ষেত্রে বাবা-মার ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্নেহময় সম্পর্ক ও স্থিতিশীল পরিবেশ শিশুর আবেগিক স্থিতিশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে। মনস্তাত্ত্বিক বিকাশ: নবজাতকের মনস্তাত্ত্বিক বিকাশও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিশুর সাথে কথা বলা, গান শোনানো, এবং গল্প বলা তার ভাষাগত এবং চিন্তনক্ষমতা বিকাশে সাহায্য করে। এমনকি একতরফা কথা বললেও শিশুর ব্রেন ধীরে ধীরে শব্দ, ভাষা এবং অর্থ বোঝার ক্ষমতা তৈরি করতে শুরু করে। এছাড়াও, নিয়মিত চাহিদা পূরণ এবং স্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে শিশুর আত্মবিশ্বাস এবং নিরাপত্তাবোধ তৈরি হয়। কেন এই বিকাশ গুরুত্বপূর্ণ? শিশুর প্রথম বছরগুলির অভিজ্ঞতা তার ভবিষ্যতের মানসিক এবং শারীরিক সুস্থতায় প্রভাব ফেলে। এই সময়টিতে সন্তানের বিকাশের সঠিক যত্ন নিলে সে ভবিষ্যতে মানসিকভাবে আরও স্থিতিশীল, আবেগিকভাবে শক্তিশালী, এবং মনস্তাত্ত্বিকভাবে সৃজনশীল হয়ে উঠবে। তাই, এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সন্তানের শারীরিক যত্নের পাশাপাশি তার মানসিক ও আবেগিক বিকাশেও গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন কীভাবে সঠিকভাবে যত্ন নেয়া যায়? সন্তানের সাথে সময় কাটানো: সন্তানের সাথে কথা বলা, তার অনুভূতির প্রতি যত্নশীল হওয়া এবং নিয়মিত শারীরিক স্পর্শ তার বিকাশে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। সঠিক পুষ্টি: সন্তানের সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করা তার ব্রেন এবং মানসিক বিকাশের জন্য অপরিহার্য। আনন্দময় পরিবেশ: আনন্দদায়ক এবং নির্ঝঞ্ঝাট পরিবেশ শিশুকে নিরাপত্তাবোধ প্রদান করে, যা তার আবেগিক স্থিতিশীলতায় সহায়তা করে। সুতরাং, নবজাতকের মানসিক, আবেগিক এবং মনস্তাত্ত্বিক বিকাশের জন্য সন্তানের প্রতি পিতামাতার মনোযোগ এবং ভালোবাসা সবচেয়ে বড় অবলম্বন। নবজাতকের মানসিক, আবেগিক, এবং মনস্তাত্ত্বিক বিকাশ ধাপে ধাপে ঘটে, যা প্রতিটি বয়সের সঙ্গে পরিবর্তিত হয়। নিচে বয়সভিত্তিক কিছু সাধারণ বিকাশের ধাপ তুলে ধরা হলো:

নবজাতকের মানসিক, ইমোশনাল এবং মনস্তাত্ত্বিক বিকাশ: একটি অন্তর্দৃষ্টি Read More »

শিশুকে গরুর দুধ কখন থেকে খাওয়াবেন?

cow milk

আগে প্রচলিত ধারণা ছিল যে, বাচ্চাকে ২ বছরের আগে গরুর দুধ খাওয়ানো যাবে না এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনাও একই ছিল। তবে অধিকাংশ উন্নত দেশে বাচ্চার বয়স ১ বছর থেকে গরুর দুধ খাওয়ানো শুরু হয়। যে-সব শিশু ফর্মূলা খায়, তাদেরকে ১২ মাস বয়সের পর থেকে ফর্মূলার পরিবর্তে গরুর দুধ খাওয়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। যারা এ সময় বুকের দুধ খাওয়ানো ছেড়ে দেয়, তাদেরকেও কৌটার দুধ না দিয়ে গরুর দুধ খাওয়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে মনে রাখতে হবে, পরিমাণে খুবই কম দেওয়া উচিত। কারণ অতিরিক্ত গরুর দুধ বাচ্চার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। গরুর দুধের পুষ্টি ও সমস্যা গরুর দুধে উচ্চমাত্রার আমিষ ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান থাকে যা ১ বছরের নিচের শিশুদের হজম করার ক্ষমতা নেই। উপরন্তু, গরুর দুধে কিছু ভিটামিন ও মিনারেল নেই যা প্রথম বছরের শিশুর বিকাশের জন্য প্রয়োজন। শিশুকে গরুর দুধে অভ্যস্ত করার পদ্ধতি গরুর দুধের স্বাদে অভ্যস্ত করা: বুকের দুধ গরুর দুধের চেয়ে বেশি মিষ্টি হওয়ায় কিছু বাচ্চা সহজেই গরুর দুধ খেতে পছন্দ করে না। এমন হলে, শুরুতে বুকের দুধের সঙ্গে সামান্য গরুর দুধ মিশিয়ে খাওয়াতে পারেন। এতে বাচ্চা নতুন স্বাদে অভ্যস্ত হবে। ধীরে ধীরে গরুর দুধের পরিমাণ বাড়িয়ে দিন। খাবার তৈরিতে গরুর দুধের ব্যবহার:  বাচ্চার খাবার যেমন সুজি বা অন্যান্য খাবারে গরুর দুধ ব্যবহার করতে পারেন। এতে বাচ্চা দুধের স্বাদে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে। দুধের তাপমাত্রা সামঞ্জস্য করা: বাচ্চা ঠান্ডা দুধ খেতে না চাইলে কুসুম গরম দুধ দিয়ে চেষ্টা করুন। তাপমাত্রার পরিবর্তনে অনেক সময় বাচ্চা দুধ খেতে পছন্দ করে। ফল বা বাদাম মিশিয়ে দিন: গরুর দুধের সঙ্গে বাচ্চার পছন্দের ফল বা বাদাম গুঁড়া মিশিয়ে দিলে দুধের স্বাদ ও পুষ্টিগুণ বাড়ে। এতে বাচ্চা দুধ খেতে আরও আগ্রহী হবে।   বয়সভেদে গরুর দুধের পরিমাণ ১-৩ বছর বয়সী শিশুদের জন্য প্রতিদিন ২-৩ কাপ (১৬-২৪ আউন্স বা ৫০০-৬৮০ গ্রাম) গরুর দুধ খাওয়ানো উচিত। গরুর দুধে প্রচুর ফ্যাট, প্রোটিন, জিঙ্ক, ভিটামিন এ এবং ডি থাকে, যা শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সাহায্য করে। তবে মনে রাখতে হবে, অতিরিক্ত গরুর দুধ খাওয়ানো উচিত নয়। অতিরিক্ত দুধ খেলে বাচ্চার ক্ষুধা নষ্ট হয়ে যেতে পারে, যার ফলে সলিড খাবারের প্রতি আগ্রহ কমে যায়। গরুর দুধে আয়রন নেই, তাই বাচ্চা যদি আয়রনযুক্ত খাবার না খায়, তবে আয়রনের অভাব থেকে অ্যানিমিয়া হতে পারে। শিশুর পেটে গরুর দুধ সহ্য না হলে কী করবেন? নন-ডেইরি দুধের বিকল্প: বাচ্চার যদি দুধে অ্যালার্জি থাকে, তবে নন-ডেইরি দুধ (যেমন আমন্ড মিল্ক, ওট মিল্ক) খাওয়ানো যেতে পারে। তবে এগুলো ৫ বছরের নিচে খাওয়াতে হলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ফর্টিফাইড সয়া মিল্ক: সয়াবিন দিয়ে তৈরি ফর্টিফাইড সয়া মিল্কে গরুর দুধের সমান পুষ্টিগুণ থাকে। সয়া মিল্ক গরুর দুধের ভালো বিকল্প হতে পারে। বাচ্চা দুধ না খেলে যে-সব খাবার দেওয়া যেতে পারে দুধের বিকল্প হিসেবে বাচ্চাকে নিম্নোক্ত খাবার খাওয়ানো যেতে পারে, যাতে প্রচুর ক্যালসিয়াম এবং পুষ্টি উপাদান থাকে: – টকদই – পনির বা চিজ – চিয়া সিড / তিল – পালং শাক – ব্রকলি – মসুর ডাল – মটরশুঁটি – কাজুবাদাম বাচ্চা দুধ না খেলেও অন্যান্য পুষ্টিকর খাবার তার সঠিক বিকাশে সাহায্য করতে পারে। সঠিক পরিমাণ এবং পুষ্টির বিষয়টি মাথায় রেখে বাচ্চার খাদ্য তালিকা তৈরি করা উচিত। প্রয়োজনে পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া সবসময় ভালো।  

শিশুকে গরুর দুধ কখন থেকে খাওয়াবেন? Read More »

গর্ভাবস্থায় ঔষধ সেবনে সচেতনতা

medicine and pregnancy

গর্ভাবস্থাজীবনের একটি বিশেষ সময়, যা প্রতিটি মায়ের জন্য এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। এই সময় মায়ের স্বাস্থ্য সরাসরি গর্ভস্থ শিশুর স্বাস্থ্যের সাথে সম্পৃক্ত। তাই গর্ভাবস্থায় ঔষধ সেবনের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত। এসময় মায়ের শরীরে পরিবর্তন আসে এবং এই পরিবর্তনগুলোর উপর ভিত্তি করে ঔষধ গ্রহণের সঠিক পদ্ধতি ও সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। আসুন জেনে নিই কীভাবে গর্ভাবস্থায় ঔষধ সেবন সম্পর্কে সচেতন থাকবেন এবং নিজে ও আপনার শিশুকে সুস্থ রাখবেন। গর্ভাবস্থার পুরো সময় জুড়ে মায়ের শরীর নানা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়, আর এই পরিবর্তনগুলো সরাসরি শিশুর স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে। ঔষধের প্রতিক্রিয়াও ভিন্ন হতে পারে। গর্ভস্থ শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে, মায়ের ঔষধ গ্রহণের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নিয়মকানুন মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। ডাক্তারের পরামর্শ: ঔষধ গ্রহণের প্রথম শর্ত প্রতিদিনের ছোটখাটো অসুস্থতার জন্য আমরা অনেক সময় নিজে থেকেই ঔষধ সেবন করি। কিন্তু গর্ভাবস্থায় এ ধরনের নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেয়া ক্ষতিকর হতে পারে। সাধারণ সর্দি, কাশি, বা মাথাব্যথার মতো সমস্যার জন্যও ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ঔষধ গ্রহণ করা উচিত নয়। কারণ, অনেক ঔষধ গর্ভস্থ শিশুর বিকাশে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। সুতরাং, কোনও ধরনের চিকিৎসা শুরু করার আগে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা প্রয়োজন। প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ঔষধ গ্রহণ গর্ভাবস্থায় কোন ঔষধ সেবন করার আগে সেটি ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী গ্রহণ করতে হবে। প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী সঠিক ডোজ এবং নির্ধারিত সময় মেনে ঔষধ খাওয়া জরুরি। কারণ ডোজে কোন ধরনের পরিবর্তন হলে তা মা এবং শিশুর স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। প্রাকৃতিক ও হারবাল ঔষধ সেবনে সতর্কতা প্রাকৃতিক বা হারবাল ঔষধ অনেক সময় ক্ষতিকর হতে পারে। বেশিরভাগ মানুষ হারবাল ঔষধকে নিরাপদ মনে করেন, কিন্তু গর্ভাবস্থায় এটি মায়ের এবং শিশুর স্বাস্থ্যের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই যেকোনো প্রকার হারবাল ঔষধ সেবনের আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। গর্ভাবস্থার বিভিন্ন পর্যায়ে ঔষধ গ্রহণের বিশেষ সতর্কতা গর্ভাবস্থার সময়কে সাধারণত তিনটি ধাপে ভাগ করা হয়—প্রথম তিন মাস (প্রথম ট্রাইমেস্টার), মধ্যের তিন মাস (দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টার), এবং শেষের তিন মাস (তৃতীয় ট্রাইমেস্টার)। প্রতিটি ধাপে মায়ের ও শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষায় ভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। প্রথম তিন মাসের ঔষধ সেবন প্রথম তিন মাস গর্ভস্থ শিশুর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গঠনের সময়। এই সময় যেকোনো প্রকার ঔষধ সেবন করলে শিশুর শারীরিক বিকাশে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। তাই প্রথম তিন মাসে যে কোনো ঔষধ গ্রহণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সতর্ক থাকা জরুরি। মধ্যের তিন মাসের ঔষধ সেবন মধ্যের তিন মাস তুলনামূলকভাবে কম ঝুঁকিপূর্ণ হলেও, মায়ের শরীরের পরিবর্তনের সাথে সাথে শিশুর বৃদ্ধি এসময় দ্রুত হয়। এই সময় কোন ঔষধ গ্রহণ করতে হলে অবশ্যই চিকিৎসকের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। শেষ তিন মাসের ঔষধ সেবন শেষ তিন মাসেও সতর্কতার প্রয়োজন। যেকোনো প্রকার ঔষধ শিশুর জন্মের প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে। এছাড়া কিছু ঔষধ প্রিম্যাচিউর লেবার বা শিশুর প্রিম্যাচিউর জন্মের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। কোন ঔষধগুলি গর্ভাবস্থায় এড়িয়ে চলা উচিত গর্ভাবস্থায় কিছু ঔষধ গ্রহণ করলে তা মা ও শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। নিচে উল্লেখিত ঔষধগুলো এড়িয়ে চলা উচিত:  ১. অ্যাসপিরিন ও অন্যান্য ব্যথানাশকঃ অনেক ব্যথানাশক ঔষধ গর্ভস্থ শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। অ্যাসপিরিন, আইবুপ্রোফেন প্রভৃতি ঔষধ গ্রহণের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।  ২. অ্যান্টিবায়োটিকঃ অনেক ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক শিশুর অঙ্গপ্রত্যঙ্গের গঠনে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। তাই কোন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ গ্রহণ করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলা জরুরি।  ৩. অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টঃ যেসব ঔষধ মনের অবস্থার উন্নতি করতে ব্যবহৃত হয়, সেগুলি গর্ভস্থ শিশুর মানসিক ও শারীরিক বিকাশে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।  ৪. এন্টিহিস্টামিন ও ডিকঞ্জেস্ট্যান্টঃ যেকোনো ধরনের অ্যালার্জি বা ঠান্ডা জনিত ঔষধ সেবন করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা জরুরি। কিছু এন্টিহিস্টামিন ঔষধ গর্ভস্থ শিশুর উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ফার্মাসিস্টের পরামর্শে ঔষধ সেবন করবেন না বেশিরভাগ মানুষ ঔষধ ক্রয়ের জন্য ফার্মেসির ওপর নির্ভরশীল। তবে ফার্মাসিস্ট বা ফার্মেসির কর্মীরা সাধারণত চিকিৎসক নন এবং তারা মায়ের নির্দিষ্ট শারীরিক অবস্থা, রোগের ইতিহাস বা অন্যান্য বিবরণ সম্পর্কে জানেন না। এতে ভুল ঔষধ সেবন বা ডোজের ভুল হওয়ার ঝুঁকি থাকে, যা মা এবং শিশুর জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। তাই, ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ব্যতীত ঔষধ গ্রহণ করা উচিত নয়। গর্ভাবস্থায় নিরাপদ কিছু ঔষধ গর্ভাবস্থায় সব ঔষধ ঝুঁকিপূর্ণ নয়। কিছু সাধারণ সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নিরাপদ ঔষধ রয়েছে, তবে সেগুলি গ্রহণ করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। উদাহরণস্বরূপ:  প্যারাসিটামল: মাথাব্যথা বা জ্বরের ক্ষেত্রে প্যারাসিটামল নিরাপদ বলে ধরা হয়।  এন্টাসিড: গ্যাস্ট্রিক বা বুকজ্বালা কমাতে কিছু এন্টাসিড গ্রহণ করা যেতে পারে।  ভিটামিন ও আয়রন সাপ্লিমেন্ট: গর্ভাবস্থায় শরীরে পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করতে বিশেষ কিছু ভিটামিন এবং আয়রন সাপ্লিমেন্ট প্রয়োজন হতে পারে। গর্ভাবস্থায় সুস্থ থাকার কিছু সাধারণ পরামর্শ গর্ভাবস্থায় ঔষধ সেবনের পাশাপাশি নিজের শরীরের প্রতি বাড়তি যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। সুস্থ থাকতে কিছু সহজ পদক্ষেপ অনুসরণ করা যেতে পারে:  পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন: প্রতিদিন পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং ভালো ঘুম নিশ্চিত করুন।  পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ: স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মেনে চলুন এবং পুষ্টিকর খাবার খান।  হালকা ব্যায়াম: হালকা শরীরচর্চা করতে পারেন, তবে তা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী।  মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন: নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিন এবং কোনো মানসিক চাপ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। মায়ের স্বাস্থ্য যত ভালো থাকবে, গর্ভস্থ শিশুর স্বাস্থ্যও তত ভালো থাকবে। গর্ভাবস্থায় ঔষধ সেবনের ক্ষেত্রে সচেতন থাকাটা অত্যন্ত জরুরি। শিশুর সুস্থতা নিশ্চিত করতে হলে মাকে অবশ্যই নিজে সচেতন হতে হবে, নিজের শরীরের যত্ন নিতে হবে এবং ডাক্তারের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। সচেতন হোন, সুস্থ থাকুন এবং আপনার শিশুকে একটি স্বাস্থ্যকর জীবন উপহার দিন!

গর্ভাবস্থায় ঔষধ সেবনে সচেতনতা Read More »

শিশুরা খেতে না চাইলে কি করবেন

feeding-problems

প্রায় প্রত্যেক মায়ের এই অভিযোগ আমার বাচ্চা কিছু খেতে চায় না। সারা দিন খাবার না দিলে না খেয়েই থাকে। আবার জোর করে খাওয়ালে বমি করে দেয়। ১ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের মা–বাবারা এই সমস্যা নিয়ে শিশুবিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হন। শিশু খেতে চায় না, এটি  কি আদতেই জটিল সমস্যা? নাকি সাধারণ ব্যাপার? জন্মের পর প্রথম ৬ মাস শিশু শুধু বুকের দুধ খায়। তারপর ধীরে ধীরে বাড়তি খাবার শুরু করা হয়। এ সময় যদি শিশুকে সঠিক নিয়মে খাবার না দেয়া হয় তাহলে শিশুরা খাবারের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে বা অনীহা প্রকাশ করতে থাকে। যেমন— শিশুরা যদি বাইরের খাবারের অভ্যস্ত হয়ে যায়, তাহলে ঘরে তৈরি খাবার খেতে চায় না। একই খাবার প্রতিদিন দেওয়া, এতে শিশু একঘেয়েমিতে ভোগে। খাবারের ঘনত্ব ঠিক না থাকা। খুব বেশি তরল বা একদম ব্লেন্ড করা খাবার দিলে শিশু খাবারের স্বাদ পায় না। আবার বেশি শক্ত বা থকথকে দিলে গিলতে পারে না। বুকের দুধের পরপর বাড়তি খাবার দেওয়া। শিশুদের পাকস্থলী আকারে বেশ ছোট, দুধই তাদের পেটের অনেকখানি ভরিয়ে ফেলে। তাই এ সময় বাড়তি খাবারটা খেতে পারে না। ঘন ঘন এক–দুই ঘণ্টা পরপরই খাবার দেওয়া। এতে শিশু খাবারটুকু হজমের সময় পায় না, অনেক সময় বমিও করে দেয়। ১ থেকে ২ বছরের শিশুরা সাধারণত দুরন্ত প্রকৃতির হয়। খাবারের চেয়ে খেলাধুলা ও চঞ্চলতা বেশি করে। তাই বসিয়ে খাবার খাওয়ানো মুশকিল হয়ে যায়। তা ছাড়া এ বয়সে শিশুরা যদি চকলেট, চিপস, জুস—এ ধরনের বাইরের খাবারের অভ্যস্ত হয়ে যায়, তাহলে ঘরে তৈরি খাবার খেতে চায় না। যা করবেন ১. শিশুদের খাবারের একটি রুটিন তৈরি করুনঃ ৬ থেকে ৯ মাসের শিশুরা বুকের দুধের পাশাপাশি দিনে দুবার আধা বাটি পরিমাণ বাড়তি খাবার খেলেই যথেষ্ট। বুকের দুধের পাশাপাশি ধীরে ধীরে ১-২ চামচ করে বাড়তি খাবার খাওয়াতে হবে। ১০ মাস থেকে ১ বছরের শিশুকে আধা বাটি করে তিন বেলা, মাঝে ১–২ বার নাশতা দেওয়া যেতে পারে। এক বছর পর এক বাটি করে তিন বেলা খাবারের সঙ্গে নাশতা দিন। ২ বছরের পর থেকে ঘরের অন্য সদস্যদের সঙ্গে একই নিয়মে খাবে। ২. খাবারের ঘনত্ব ঠিক রাখতে হবেঃ খাবার পুরোপুরি ব্লেন্ড করে বা তরল করে দেওয়া যাবে না। আধা শক্ত খাবার শিশু কিছুটা চিবিয়ে খাবে। এতে খাবারের স্বাদ বুঝবে। চিবিয়ে খাওয়া পরে দ্রুত কথা বলার ক্ষেত্রেও সাহায্য করবে। ৩. ঘরের পরিবেশ সুস্থ ও শিশুবান্ধব রাখুনঃ শিশুকে ধৈর্য ধরে যত্ন ও স্নেহ–মমতার সঙ্গে খাওয়ান। সম্ভব হলে পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে বসিয়ে খাবার দিন। একটি নির্দিষ্ট স্থানে বসিয়ে বিভিন্ন সুন্দর ও রংবেরঙের পাত্রে পরিবেশন করলে খাবারের প্রতি আগ্রহ বোধ করবে। ৪. খাবারের বৈচিত্র্য আনুনঃ প্রতিদিন একই উপাদান দিয়ে রান্না করা খিচুড়ি না দিয়ে ভিন্নভাবে দিন। ডিমও প্রতিদিন সেদ্ধ না দিয়ে কখনো ভাজা বা পুডিং হিসেবে দিন। ৫. শিশুকেও খাবার আয়োজনে যুক্ত করুনঃ খাবার রান্না ও পরিবেশনের সময় শিশুকে সঙ্গে রাখুন। একটু বড় হলে আঙুল দিয়ে ধরে খেতে পারে, এ ধরনের খাবারগুলো নিজের হাতে খেতে উৎসাহ দিন। যা করবেন না ১. বাচ্চাদের জোর করে, ভয় দেখিয়ে খাওয়াবেন না। ২. চকলেট, চিপস, জুস দেবেন না। এসব রুচি নষ্ট করে এবং সহজেই পেট ভরিয়ে ফেলে, তখন ঘরে তৈরি পুষ্টিকর খাবার খেতে চায় না। ৩. মোবাইল, টিভি ইত্যাদি যন্ত্রের সামনে বসিয়ে না খাওয়ানোই ভালো। এতে খাবারের প্রতি মনোযোগ না থাকায় কী খাচ্ছে, তা বুঝতে পারে না। কখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন শিশু খাওয়াদাওয়া করছে না, সেই সঙ্গে দুর্বল হয়ে পড়ছে, অপুষ্টির লক্ষণ দেখা দিচ্ছে। শিশু খেলাধুলার উৎসাহ হারিয়ে ফেলছে। শিশু খাবার খাচ্ছে না। অন্যান্য উপসর্গ যেমন গলাব্যথা, বমি, রক্তশূন্যতা ইত্যাদি সমস্যা হচ্ছে। এসব কোনো রোগের লক্ষণ হতে পারে না। জিহ্বার ওপরে পুরু সাদা স্তর পড়ে গেছে, যা ছত্রাকের কারণে হতে পারে। খাওয়া দাওয়া না করার সঙ্গে সঙ্গে শিশুর মানসিক বিকাশ, কথা বলা, অন্যান্য দিক ঠিক আছে কি না, সেটাও লক্ষ করতে হবে। অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের বিশেষ কোনো খাবারের গন্ধ, রং বা স্বাদের প্রতি সংবেদনশীলতা থাকার কারণে কিছু খাবার খেতে চায় না। আবার সেরিব্রাল পলিসি, হাইপোথাইরয়েডিজম ইত্যাদি রোগের কারণে খেতে পারে না। সেই সঙ্গে হাঁটা, বসা ইত্যাদি সময়মতো হয় না। এসব ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

শিশুরা খেতে না চাইলে কি করবেন Read More »

শিশুর সৃজনশীলতা বৃদ্ধিতে প্রিটেন্ড প্লে বা অভিনয়-অভিনয় খেলা

pretend play

আপনি কি কখনো দেখেছেন, আপনার বাচ্চা তার প্রিয় পুতুলটিকে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করছে, আপনার জুতা পরে হেঁটে বেড়াচ্ছে, বা একটি বাটিতে কাল্পনিক স্যুপ নিয়ে চামচ দিয়ে নাড়ছে? শিশুরা যখন ২ বছর বয়সে পৌঁছে, তখন তারা নানা সৃজনশীল পদ্ধতিতে খেলতে শুরু করে। এই সময়টাই তাদের অভিনয়-অভিনয় খেলা বা ‘প্রিটেন্ড প্লে’র শুরু। প্রিটেন্ড প্লে এমন একটি খেলা যেখানে শিশু বাস্তব কোনো কাজকে কল্পনার মাধ্যমে অন্য কোনোভাবে উপস্থাপন করে। যেমন, টেবিলকে নৌকা হিসেবে বা ঝাড়ুকে ঘোড়া হিসেবে কল্পনা করা। এই ধরনের খেলায় শিশুরা বাস্তব জগতের অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে কাল্পনিক জগতে প্রবেশ করে। সাধারণত, ২ বছর বয়সে শিশুরা বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতাকে তাদের খেলায় নিয়ে আসে, আর ৩ থেকে ৪ বছর বয়সে এসে তারা নিজেরাই বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় শুরু করে। প্রিটেন্ড প্লে’র মাধ্যমে শিশুর মানসিক বিকাশ ১ থেকে ৩ বছর বয়সী বাচ্চারা তাদের কল্পনাশক্তি দিয়ে পৃথিবীকে বুঝতে শুরু করে। এ বয়সে তাদের কাছে বাস্তব আর কল্পনার জগৎের মধ্যে পার্থক্য স্পষ্ট হয় না। তবে মানসিক বিকাশের সাথে সাথে এবং বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা বাড়ার সাথে সাথে এই পার্থক্যও পরিষ্কার হতে থাকে। বাচ্চার অভিনয়-অভিনয় খেলায় সাহায্য করার উপায় শিশুরা কল্পনাশক্তিতে সমৃদ্ধ। তাই আপনাকে খুব বেশি কিছু করতে হবে না। তবু কিছু ছোটো পদক্ষেপে আপনি তাদের খেলাকে আরও উপভোগ্য করে তুলতে পারেন:  ১. অভিনয়-অভিনয় খেলার জন্য একটি স্থান নির্ধারণ করুনঃ শিশুর জন্য একটি নিরাপদ জায়গা তৈরি করতে পারেন যেখানে সে কল্পনার জগতে ঢুকে খেলতে পারে। সেখানে খেলার তাঁবু, বড় কার্ডবোর্ড বক্সের মত কিছু জিনিস রাখতে পারেন। এটি শিশুকে খেলায় উদ্বুদ্ধ করবে।  ২. স্পষ্ট করে কথা বলুনঃ শিশুর সাথে কথা বলার সময় বর্ণনা করে বোঝান। এটি তার কল্পনার জগৎকে প্রসারিত করতে সাহায্য করবে। যেমন, “আমরা এখন চা খাচ্ছি, তুমি কি আমাকে একটু চা ঢেলে দিতে পারবে?”  ৩. অভিনয় করা শিখিয়ে দিনঃ সাজানোর জন্য সহজে পরা যায় এমন জামাকাপড় দিন। ব্যাটম্যান বা স্পাইডারম্যানের কেপ, বড় জুতো, নকল চুল ইত্যাদি দিয়ে শিশুকে কল্পনাপ্রবণ চরিত্রে অভিনয় করতে সহায়তা করতে পারেন।  ৪. বাস্তব জিনিসপত্র ব্যবহার করুনঃ শিশুর আশেপাশের জিনিসের অনুকরণে তৈরি খেলনা তাকে কল্পনার জগতে মগ্ন হতে সাহায্য করে। রান্নাঘর বা বাগানের জিনিস দিয়েও খেলার সামগ্রী তৈরি করতে পারেন। ৫. খেলার সঙ্গী হনঃ শিশুর খেলার সঙ্গী হয়ে তার সাথে মজা করুন। সে যদি প্যানকেক বানানোর অভিনয় করে, তবে আপনি বলতে পারেন, “তুমি কি আমাকে এই প্যানকেকগুলো একটি প্লেটে সাজিয়ে দেবে?” প্রিটেন্ড প্লে’র উপকারিতা ১. সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধি: শিশু যখন বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করে, তখন সে বিভিন্ন সামাজিক পরিস্থিতি শিখে। ২. ভাষা উন্নতি: বিভিন্ন চরিত্রে কথা বলার মাধ্যমে শিশুর ভাষার দক্ষতা বাড়ে। ৩. সমস্যা সমাধানের দক্ষতা: কল্পনাপ্রসূত খেলার মাধ্যমে শিশু বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের উপায় খুঁজে পায়। ৪. মানসিক বিকাশ: খেলাধুলা শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশকে ত্বরান্বিত করে, তাকে সৃজনশীল ও কল্পনাপ্রবণ করে তোলে। শিশুরা যখন প্রিটেন্ড প্লে’র মাধ্যমে তাদের কল্পনার জগতে বিচরণ করে, তখন তাদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই শিশুর কল্পনাশক্তি ও সৃজনশীলতাকে সমর্থন দিতে তাদের অভিনয়-অভিনয় খেলার পরিবেশ তৈরি করুন।

শিশুর সৃজনশীলতা বৃদ্ধিতে প্রিটেন্ড প্লে বা অভিনয়-অভিনয় খেলা Read More »

শিশুর ঘুমের সমস্যার কারণ ও প্রতিকার

baby sleep

শিশুর শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত ঘুম দরকার। কিন্তু বর্তমানে অনেক শিশুকেই ঘুমের সমস্যায় ভুগেতে দেখা যায়। যেসব শিশুরা ঘুমের সমস্যাতে ভোগে তাদের মধ্যে কিছু কমন সমস্যা দেখা যায়। যেমন – স্কুলে অমনোযোগী থাকে, দিনে ঝিমঝিম ভাব থাকে, পরীক্ষায় ভালো ফল করতে পারে না, মেজাজ খিটখিটে হয়, দীর্ঘমেয়াদি মাথাব্যথা ও স্থূলতায় ভুগে থাকে। মানুষের ঘুমের পরিমাণ ও তীব্রতা নির্ধারণে ‘প্রসেস-এস’ এবং অ্যাডিনোসিন ও অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থের প্রভাব থাকে। ঘুমসংক্রান্ত রাসায়নিক পদার্থগুলোকে বলে সমনোজেন। শিশু বয়সে এসব সমনোজেন থাকে বাড়তি মাত্রায়, ফলে এ বয়সের শিশু দিনে বেশিক্ষণ জেগে থাকতে পারে না। দিনের বেলার ঘুমে ঢলে পড়ে। মস্তিষ্কের ‘প্রসেস-সি’ ২৪ ঘণ্টাব্যাপী ঘুমানোর সময়কাল, ঘুম-জাগরণের ঢেউ নিয়ন্ত্রণ করে। এই মাস্টার ঘড়িটা মগজের হাইপোথ্যালামাস অংশে অবস্থিত। রক্ত সরবরাহ তন্ত্র, হরমোন, কিডনি ও ফুসফুসে ছড়িয়ে থাকা ঘুমঘড়ির ছোট ছোট বার্তাবাহকগুলো এই অংশের নিয়ন্ত্রণে। ঘুমের ‘সারকাডিয়ান ছন্দের’ কাজে প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রভাব বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বয়সভেদে শিশুর ঘুমের সময়কাল ও ঘুমের সমস্যা শূন্য থেকে দুই মাস বয়স: এই বয়সের শিশু ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রায় ১০-১৯ ঘণ্টা ঘুমিয়ে কাটায় (গড়ে ১৩ থেকে সাড়ে ১৪ ঘণ্টা), প্রিম্যাচিউর বা সময়ের আগেই জন্মানো শিশুর ক্ষেত্রে ঘুমের সময় আরও বেশি হয়ে থাকে । প্রথম সপ্তাহে রাত-দিনে ঘুমানোর কোনো শিডিউল গড়ে ওঠে না। পরের দিকে রাতে সাড়ে আট ঘণ্টা ও দিনে পৌনে ছয় ঘণ্টার মতো ঘুমের পরিমাণ নির্দিষ্ট হয়। বুকের দুধ খেয়ে তৃপ্ত থাকলে নবজাতক কখনো চার থেকে পাঁচ ঘণ্টাও একনাগাড়ে ঘুমাতে পারে। শূলবেদনা, অ্যাপনিয়া (হঠাৎ হঠাৎ শ্বাসপ্রশ্বাসের অসুবিধা), রিফ্লাক্স, ফর্মুলা খাবারে অ্যালার্জি ইত্যাদি কারণে এ বয়সের শিশুদের ঘুমের সমস্যা হতে পারে। ২ থেকে ১২ মাস বয়সী (ইনফ্যান্ট) শিশু: এ বয়সের শিশু গড়ে ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা অবধি ঘুমিয়ে কাটায়। মাথা দোলানো, পা ঝাঁকানো (রিদমিক মুভমেন্ট ডিজঅর্ডার), অনেক রাত অবধি ঘুম থেকে উঠিয়ে শিশুকে খাওয়ানোর অভ্যাস, ক্ষুধা, প্রস্রাব–পায়খানায় ভিজে যাওয়া, ঠান্ডা আবহাওয়া, একা রেখে মা কোথাও চলে যাবে এই বিচ্ছেদভীতি এ বয়সের শিশুর ঘুমের ব্যাঘাতের কারণ। ১ থেকে ৩ বছর বয়সী (টডলারস): শিশুর দৈনিক ঘুমের পরিমাণ দিনের ঘুম সহ ১১ থেকে ১৪ ঘণ্টার মতো। প্রধান ঘুমের সমস্যা হলো—ঘুম আতঙ্ক। এ বয়স থেকে শিশুকে নির্দিষ্ট সময়ে শোয়াতে নিয়ে যাওয়ার রুটিন গড়ে তোলা উচিত। স্কুলে যাওয়ার আগের বয়সে (৩-৫ বছর): দৈনিক ঘুমের পরিমাণ দিনের ঘুম সহ ১০-১৩ ঘণ্টা। ৪ বছর বয়সের ২৬ শতাংশ শিশু ও ৫ বছর বয়সে মাত্র ১৫ শতাংশ শিশু দিনে ঘুমায়। এ বয়সের শিশুর প্রধান ঘুমের সমস্যার মধ্যে আছে—স্লিপ ওয়াকিং, ঘুম আতঙ্ক ও হঠাৎ শ্বাসরোধ হওয়ার মতো পরিস্থিতি। এ বয়সে থেকে যাওয়া ঘুমের সমস্যা ক্রনিক হয়ে যেতে পারে, যা থেকে সে প্রস্রাব করে বিছানাও ভেজায়। মধ্য শৈশব (৬-১২ বছর): দৈনিক মোট ঘুম ৯ থেকে ১২ ঘণ্টা। বিদ্যালয়ের পরিবেশ ও আচরণের সমস্যা, স্ক্রিনের ব্যবহার, যেমন টেলিভিশন, কম্পিউটার, ভিডিও গেম, ইন্টারনেট আসক্তি ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায়। যা ঘুম আতঙ্ক, কম ঘুম ও ঘুমে শ্বাসপ্রশ্বাস বন্ধ হওয়ার মতো জটিলতা তৈরি করতে পারে। বয়ঃসন্ধিকাল: এ বয়সে শিশুর দৈনিক কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত। দেরি করে ঘুমানো, ক্লাস থাকার সময়ে ও ছুটির দিনের ঘুম রুটিনে বড় তফাত থাকা অনুচিত। চারপাশে নানা প্রতিযোগিতার দুশ্চিন্তা তার ঘুমকে প্রভাবিত করে। ফলে স্বাভাবিক নিদ্রা হয় না, সে নারকোলেপসিতে ভোগে। কেউ কেউ ঘুমে ক্রমাগত পা ঝাঁকায়। এই ঘুমহীন অবস্থা নানা সংকট তৈরি করে। যেমন স্কুলে সমস্যা সৃষ্টি, পারফরম্যান্সে ভাটা, মনোযোগ কমে যাওয়া ও স্বল্পকালীন দুর্বল স্মৃতিশক্তি। শিশু তাৎক্ষণিকভাবে কোনো কিছুর উত্তর দিতে পারে না, মেজাজ থাকে চড়া। বাইসাইকেল বা গাড়ি চালাতে প্রায় দুর্ঘটনার শিকার হয়। শিশুর স্বাস্থ্যকর ঘুমের টিপস ও ঘুমের সমস্যার প্রতিকার শিশুর সুস্বাস্থ্যের জন্য ঘুম ভীষণ প্রয়োজনীয় উপাদান। গবেষণা বলছে, অনধিক ৫ বছরের প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন শিশুর ঘুমের সমস্যা থাকে। এদের মধ্যে আবার ৩০ শতাংশের এ সমস্যা বেশ প্রকট। তবে শিশু যত বড় হতে থাকে, সমস্যা তত হ্রাস পায় এবং ৮ বছর বয়সে এসে প্রতি ১০ জন শিশুর একজন মাত্র ঘুমের অসুবিধায় ভোগে। শিশুর ৪ বছর বয়স থেকে ১৮ বছর বয়স অবধি প্রয়োজনীয় ঘুমের সবটুকুই রাতে বরাদ্দ। তখন থেকে আর দিনের ঘুমের প্রয়োজন পড়ে না। একজন শিশুর ঘুমের দৈনিক ঘণ্টার মোট পরিমাণ প্রতিদিনে খুব বেশি ওঠানামা করে না। তবে একেক শিশুর মধ্যে ঘুমের স্বাভাবিক পরিমাণের ফারাকটা বেশ বড়। শিশু যদি রাতে কম ঘুমায়, তবে দিনের বেলায় সে বেশি ঘুমাবে। রাতে বেশি ঘুমালে দিনে কম ঘুমাবে, এটাই নিয়ম। শিশুর ঘুমের রুটিনে স্বাভাবিক বা অস্বাভাবিকত্ব বলে কিছু নেই। এটি তখনই অস্বাভাবিক, তা যদি মা-বাবার ইচ্ছার সঙ্গে না মেলে। এই ঘুমের সমস্যার জন্য দিনে মা–বাবা ও শিশু উভয়ে ভীষণ ক্লান্ত থাকে। অল্প বয়সে যে শিশু ঘুমের সমস্যায় পড়ে, পরবর্তী সময়ে সে তা নিয়েই বেড়ে ওঠে। শিশুর ঘুমের সমস্যার কারণ চিহ্নিত করতে পূর্বাপর ইতিহাস নেওয়া উচিত। বিশেষত টেমপারেমেন্ট ও সাইকোলজিক্যাল হিস্ট্রি। যেমন ২৫-৫০ শতাংশ অমনোযোগী ডানপিটে শিশু ঘুমের সমস্যায় ভোগে। শিশু যদি কান পাকা, অ্যাডিনয়েড ও টনসিল স্ফীতজনিত শ্বাসরোধ অসুখ, পেটব্যথা বা স্নায়ুতন্ত্রের রোগে আক্রান্ত থাকে, তবে ঘুমের সমস্যায় পড়তে পারে। এসব শিশুকে শারীরিক পরীক্ষার সঙ্গে বা কখনো ইইজিসহ মৃগী রোগে ভুগছে কি না, যাচাই করা প্রয়োজন। শুরু থেকে শিশুর জন্য একটা ‘সুনিদ্রা অভ্যাস’ গড়ে তোলা উচিত। ঘুম ঘুম ভাব আছে, তবে সজাগ, এমন অবস্থায় শিশুকে ঘুমাতে নেওয়া উচিত। এ সময়টার কিছু আগে থেকে তাকে খানিক মজাদার গল্প পড়িয়ে শোনানো, ছবি দেখানো বা সুরেলা গানে অভ্যস্ত করা স্বাস্থ্যকর। ঘুমের আগে বেশি ছোটাছুটি বা দৌড়ঝাঁপ–জাতীয় কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখা উচিত। বিছানায় যাওয়ার আগে শিশু যে যে পছন্দের জিনিস নিতে চায়, তা নিতে দেওয়া ভালো, যেমন প্রিয় খেলনা, পুতুল বা বই। তবে কোনো ধারালো কিছু বা বোতাম–জাতীয় জিনিস, যা থেকে আঘাত কিংবা হঠাৎ গিলে ফেলার মতো দুর্ঘটনার আশঙ্কা আছে, সে সম্পর্কে সাবধানতা জরুরি। ঘুমাতে যাওয়ার আগের এক ঘণ্টা সময়কাল যেন শান্ত পরিবেশে থাকে। আলোহীন শোবার ঘর ও সহনীয় তাপমাত্রা (২৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের কম) থাকলে ভালো। শোবার ঘরে টেলিভিশন রাখা উচিত নয়। শিশু যেন অভুক্ত ঘুমাতে না যায়। তবে ঘুমানোর এক থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যে ভরপেট খাবার, কফি–চা, চকোলেটের মতো ক্যাফেইনযুক্ত খাবার গ্রহণ ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। সবচেয়ে ভালো হয় ঘুমের অন্তত তিন ঘণ্টা আগে খাবার খাওয়ানো। শিশুকে ‘শুভরাত্রি’ জানানো প্রতিদিন যেন একই রকমের হয়। ঘরের আলো নিভিয়ে দরজা বন্ধ করে আসুন। শোবার ঘরের আলো জ্বালিয়ে রাখার অর্থ—‘অন্ধকার এক ভয়ংকর ব্যাপার’, আর শোবার ঘরের দরজা খোলা রেখে দেওয়ার ইঙ্গিত—‘যখন ইচ্ছা তুমি বিছানা ছেড়ে চলে আসতে পারো’। এই ম্যাসেজ দেবেন না। সে যেন বুঝতে পারে, বিছানায় যাওয়ার পর টয়লেট বা জরুরি কাজ ছাড়া শয্যাত্যাগ নিষেধ। এ সময়ে তার সঙ্গে খেলা, কথা বলা, লাইট জ্বালানো–নেভানো এসব বাড়তি কিছু করা উচিত নয়। যখনই শিশু বিছানা থেকে ডাক দেবে, তার ওপর নজর রাখবেন। তার ডাকে দ্রুত না গিয়ে খানিক

শিশুর ঘুমের সমস্যার কারণ ও প্রতিকার Read More »

বেবি বার্পিং ( নবজাতকের ঢেকুর তোলা )

baby burp

নবজাতকের যত্নে বেবি বার্পিং বা ঢেকুর তোলা একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এটি শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, কারণ খাওয়ার সময় বাচ্চার পেটে যে অতিরিক্ত গ্যাস জমে তা বার্পিংয়ের মাধ্যমে বের হয়ে আসে। এতে শিশুর পেটের অস্বস্তি, গ্যাসের সমস্যা, এবং হজমজনিত জটিলতা কমে যায়। আসুন, এই আর্টিকেলে জেনে নিই বেবি বার্পিংয়ের সঠিক পদ্ধতি ও এর গুরুত্ব। কেন বেবি বার্পিং জরুরি? নবজাতক যখন দুধ টেনে খেতে থাকে, মুখ দিয়ে তখন খানিকটা বাতাসও গিলে ফেলে। এই বাতাস শিশুর পেটে গ্যাস তৈরি করে। পেটে অস্বস্তি বোধ করায় শিশু অনবরত কান্না করে, হাত মুঠ করে হাত–পা ছোড়াছুড়ি করে, মুখ থেকে দুধ বের করে দেয়। বেবি বার্পিং এর মাধ্যমে এই গ্যাস সহজেই বের হয়ে যায়, যা শিশুকে আরাম দেয় এবং হজমে সাহায্য করে। বেবি বার্পিংয়ের সঠিক পদ্ধতি নবজাতককে বার্প করানোর সময় কিছু সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত। নিচে কয়েকটি সহজ ও কার্যকর পদ্ধতি উল্লেখ করা হলো: কাঁধের উপর ধরে বার্পিং: শিশুর মাথা সোজা রেখে কোলে নিয়ে শিশুর মুখ নিজের কাঁধের ওপর রাখবেন । এক হাতে শিশুর পিঠে হালকা চাপড় দিবেন। চাইলে শিশুকে আরও খানিকটা ওপরে তুলে তার পেট কাঁধের ওপর রেখেও পিঠে চাপড় দিতে পারবেন । এটি বারবার করতে হতে পারে। তবে লক্ষ্য রাখবেন যেন শিশুর মাথা ও ঘাড় আরেক হাত দিয়ে ভালো করে সাপোর্ট দেওয়া থাকে। বসানো অবস্থায় বার্পিং: শিশুকে কোলের ওপর বসিয়েও হাতের তালু দিয়ে পিঠে হালকা চাপড় দিয়ে ঢেকুর তোলাতে পারবেন । এ ক্ষেত্রে আরেক হাতে শিশুর বুক ও চোয়াল ধরে শিশুকে সাপোর্ট দিতে হবে, যাতে শিশুর মাথা সোজা থাকে। হাতের তালু খানিকটা ভাঁজ করে কাপের মতো করে পিঠে বারবার চাপড় দিবেন তাহলে আরও ভালো ফল পাবেন । পেটের উপর শুইয়ে বার্পিং: এ ছাড়া শিশুকে হাঁটুর ওপর, উপুড় করে শুইয়ে রেখে পিঠে চাপড় দেওয়া যায়। এ ক্ষেত্রেও শিশুর থুঁতনি ধরে তাকে সাপোর্ট দিতে হবে। কখন বার্প করানো উচিত? খাবারের মাঝে ও পরে: শিশুকে খাওয়ানোর মাঝে একবার ও খাওয়ানো শেষ হওয়ার পর অবশ্যই বার্প করানো উচিত।  বাচ্চা যদি অস্বস্তি বোধ করে: যদি শিশুকে অস্বস্তি বোধ করতে দেখেন, তার মানে তার পেটে গ্যাস জমেছে। তখনই বার্প করানোর চেষ্টা করুন। কতক্ষণ ধরে বার্প করাবেন? বাচ্চার বার্প করানোর সময় ধৈর্য ধরে কাজটি করতে হবে। ৫-১০ মিনিট ধরে বিভিন্ন পদ্ধতিতে চেষ্টা করুন। বারবার বার্প না হলে, কিছুক্ষণ পর পুনরায় চেষ্টা করুন। বার্পিংয়ের পর সাবধানতা বার্প করানোর পর শিশুকে কিছুক্ষণ সোজা অবস্থায় রাখুন। এতে দুধ উঠে আসার ঝুঁকি কমে যায় এবং পেটে হজম প্রক্রিয়া ভালোভাবে কাজ করে। প্রতিটি পদ্ধতিতে খেয়াল রাখতে হবে ঢেকুর তোলার সময় শিশুর নাক যেন খোলা থাকে, সে যেন ঠিকভাবে শ্বাস নিতে পারে। কত দিন পর্যন্ত বার্পিং জরুরি শিশু সোজা হয়ে বসতে শিখলে এটা করার আর প্রয়োজন হয় না। সাধারণত ৪ থেকে ৬ মাসের মধ্যেই এটা ঘটে থাকে, তবে কারও কারও ৯ মাস পর্যন্ত প্রয়োজন হতে পারে। যখন মা মনে করবেন দুধ পানের পরপর শিশু আর কান্না ও অস্বস্তি বোধ করছে না, তখন থেকে এটা করার আর দরকার হবে না। নবজাতকের স্বাস্থ্য ও সুস্থতার জন্য বেবি বার্পিং অত্যন্ত জরুরি। সঠিক পদ্ধতিতে এবং সময়মতো বার্প করানোর মাধ্যমে আপনি আপনার শিশুকে আরাম দিতে এবং সুস্থ রাখতে পারবেন।

বেবি বার্পিং ( নবজাতকের ঢেকুর তোলা ) Read More »

গর্ভাবস্থায় আয়রন

Iron tablet

গর্ভাবস্থায় আয়রন একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান । গর্ভের শিশুর সঠিক বিকাশ ও সুস্থ প্রসবের জন্য গর্ভবতীর আয়রনের চাহিদা মেটানো খুব গুরুত্বপূর্ণ। আয়রন গর্ভাবস্থার সময় হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সাহায্য করে, যা রক্তের মাধ্যমে অক্সিজেন পরিবহনে সহায়ক। গর্ভাবস্থায় আয়রনের অভাব হলে অ্যানিমিয়া হতে পারে, যা মায়ের ক্লান্তি, দুর্বলতা এবং শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করতে পারে। গর্ভাবস্থায় আয়রন ট্যাবলেট এর উপকারিতা গর্ভাবস্থায় শরীরে আয়রনের চাহিদা অনেকটা বেড়ে যায়। এই চাহিদা সঠিকভাবে পূরণ করতে না পারলে তা আপনার ও গর্ভের শিশুর দেহে বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে— গর্ভাবস্থায় আয়রনের অভাবজনিত রক্তশূন্যতা (অ্যানিমিয়া)। অ্যানিমিয়া একটি সাধারণ সমস্যা যা মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। আয়রনের অভাবজনিত রক্তশূন্যতা হলে যে-সব লক্ষণ দেখা দেয়— ক্লান্ত অনুভব করা শরীরের শক্তি কমে যাওয়া অথবা দুর্বল লাগা শ্বাস নিতে গিয়ে হাঁপিয়ে ওঠা  বুক ধড়ফড় করা  ত্বক ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া আয়রনের অভাবজনিত রক্তশূন্যতা থেকে ‘পিকা’ নামের একটি সমস্যা হতে পারে। এই সমস্যা হলে খুবই অদ্ভুত জিনিস, অর্থাৎ খাবার নয় এমন কিছু খাওয়ার তীব্র ইচ্ছা হয়। যেমন: মাটি, কাগজ কিংবা দেয়ালের রং। এমন বোধ করলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। এ ছাড়াও গর্ভকালীন আয়রনের অভাবজনিত রক্তশূন্যতা মা ও শিশুর মৃত্যু ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। পর্যাপ্ত আয়রনের অভাবে গর্ভের শিশুর গঠন ও বিকাশ বাধাগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। ফলে আপনার শিশু জন্মের সময়ে এবং জন্মের পরেও বেশ কিছু সমস্যায় ভুগতে পারে। যেমন— নির্দিষ্ট সময়ের আগেই, অর্থাৎ প্রিম্যাচিউর অবস্থায় জন্ম নেওয়া জন্মের সময়ে স্বাভাবিকের তুলনায় কম ওজন হওয়া শিশুর স্বাভাবিক ব্যবহারগত ও বুদ্ধিবৃত্তিক আচরণগত বিকাশ বাধাগ্রস্ত হওয়া শিশুর শরীরে আয়রনের মাত্রা প্রয়োজনের চেয়ে কম হওয়া গর্ভাবস্থায় আয়রনযুক্ত খাবার খাওয়ার পাশাপাশি বাড়তি আয়রনের চাহিদা মেটাতে নিয়মমতো আয়রন ট্যাবলেট সেবন করলে তা মা ও গর্ভের শিশুকে বিভিন্ন স্বাস্থ্য জটিলতা থেকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় কতটুকু আয়রন ট্যাবলেট খাবেন? বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশনা মতে, গর্ভাবস্থায় আপনাকে দৈনিক ৬০ মিলিগ্রাম করে আয়রন ট্যাবলেট সেবন করতে হবে। তবে এটি নির্ভর করে মায়ের শারীরিক অবস্থা এবং রক্তশূন্যতার মাত্রার ওপর। ডাক্তার নির্দিষ্ট পরীক্ষার ভিত্তিতে সঠিক ডোজ নির্ধারণ করবেন। বাংলাদেশে গর্ভকালীন সময়ের জন্য আয়রন ও ফলিক অ্যাসিড একত্রে ‘আয়রন-ফলিক অ্যাসিড’ ট্যাবলেট হিসেবে কিনতে পাওয়া যায়। এতে গর্ভাবস্থার জন্য সঠিক পরিমাণে আয়রন যোগ করা থাকে। সেই সাথে ফলিক অ্যাসিড থাকে, যা শিশুর ব্রেইন ও স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশে সাহায্য করে এবং নানান জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধ করে। উল্লেখ্য, আয়রনের অভাবজনিত রক্তশূন্যতার মতো কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে ডাক্তার আপনাকে ৬০ মিলিগ্রামের বেশি ডোজে আয়রন সেবনের পরামর্শ দিতে পারেন গর্ভাবস্থায় আয়রন ট্যাবলেট কখন ও কীভাবে খাবেন ? গর্ভাবস্থার শুরু থেকে প্রসব পরবর্তী তিন মাস পর্যন্ত আপনাকে দৈনিক ৬০ মিলিগ্রাম আয়রনযুক্ত ট্যাবলেট সেবন করতে হবে। সন্তান জন্মদানের তিন মাস পর পর্যন্ত আয়রন সেবন চালিয়ে যেতে হবে। আয়রন ট্যাবলেট খাবার নিয়ম আয়রন-ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট খালি পেটে খেলে এটি সবচেয়ে ভালোভাবে কাজ করে। তাই খাবার খাওয়ার এক ঘণ্টা আগে বা খাবার শেষ হওয়ার দুই ঘণ্টা পরে এক গ্লাস পানির সঙ্গে এই ট্যাবলেট গ্রহণ করা উচিত। পানির পরিবর্তে এক গ্লাস কমলার রস বা লেবুর শরবতও ব্যবহার করা যেতে পারে, কারণ এতে থাকা ভিটামিন সি শরীরকে আয়রন শোষণে সাহায্য করে। তবে, খালি পেটে আয়রন-ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট খেলে অনেকের ক্ষেত্রে পেটে অস্বস্তি হতে পারে। যদি এমন হয়, তাহলে ডাক্তার আপনাকে খাবারের সাথে বা খাওয়ার পরপরই ট্যাবলেট সেবনের পরামর্শ দিতে পারেন। সতর্কতা আয়রন-ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেটের সাথে একই সময়ে অ্যান্টাসিড অথবা ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাবেন না। এতে আয়রনের কার্যকারিতা কমে যায়। অ্যান্টাসিড অথবা ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়ার অন্তত ১ ঘণ্টা আগে অথবা ২ ঘণ্টা পরে আয়রন ট্যাবলেট খাবেন। এ ছাড়াও কিছু কিছু খাবার শরীরে আয়রন শোষণের হার কমিয়ে ফেলতে পারে। আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার সময়ে এসব খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। এমন কিছু খাবার হলো—  চা ও কফি ডিম দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার সয়াবিনযুক্ত খাবার আয়রন ট্যাবলেট সেবনের ক্ষেত্রে যে চারটি বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে — আপনি আগে থেকেই শুধুমাত্র আয়রন অথবা কোনো মাল্টিভিটামিন সেবন করে থাকলে, তা ডাক্তারকে জানাবেন৷ ডাক্তারের সুনির্দিষ্ট পরামর্শ ছাড়া কয়েক ধরনের মাল্টিভিটামিন, আয়রন ও ফলিক অ্যাসিড একত্রে সেবন করা থেকে বিরত থাকবেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গর্ভকালীন সময়ে যে-সব মাল্টিভিটামিন ট্যাবলেট সেবনের পরামর্শ দেওয়া হয়, সেসবে আয়রন যোগ করা থাকে। তাই গর্ভাবস্থায় ডাক্তার আপনাকে প্রয়োজনীয় পরিমাণে আয়রন-ফলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ মাল্টিভিটামিন ট্যাবলেট সেবনের পরামর্শ দিয়ে থাকলে আলাদা করে আয়রন ট্যাবলেট সেবনের প্রয়োজন নেই। গর্ভাবস্থায় প্রয়োজনীয় পরিমাণে আয়রন ও ফলিক অ্যাসিড একত্রে ‘আয়রন-ফলিক অ্যাসিড’ ট্যাবলেট হিসেবে পাওয়া যায়। এই ট্যাবলেট গর্ভাবস্থায় একই সাথে আয়রন ও ফলিক এসিডের চাহিদা পূরণ করে। তাই এটি সেবন করলে, কোনো বিশেষ প্রয়োজন (যেমন: আয়রনের অভাবজনিত রক্তশূন্যতা) ছাড়া আলাদা করে শুধু আয়রন ট্যাবলেট অথবা সিরাপ সেবনের প্রয়োজন নেই। নিয়মিত ‘আয়রন-ফলিক অ্যাসিড’ ট্যাবলেট সেবনের পরেও আপনার রক্তশূন্যতার লক্ষণ দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শে রক্ত পরীক্ষা করাবেন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করবেন। গর্ভাবস্থায় আপনি অন্য যেকোনো ঔষধ সেবন করলে ডাক্তারকে সেই ঔষধের নাম ও ডোজটি জানান। অনেকসময় আয়রনের সাথে অন্যান্য ঔষধের প্রতিক্রিয়া হতে পারে। সেক্ষেত্রে ডোজ কমানো কিংবা বাড়ানোর প্রয়োজন হতে পারে। আয়রন ট্যাবলেট এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আয়রন ট্যাবলেট সেবনের ফলে কারও কারও ক্ষেত্রে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে হতে পারে। যেমন— কোষ্ঠকাঠিন্য পাতলা পায়খানা পেট ব্যথা অ্যাসিডিটি, বুক জ্বালাপোড়া করা বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বমি বমি ভাব ও বমি কালচে পায়খানা ড্রপের ক্ষেত্রে দাঁত কালচে হয়ে যাওয়া যদিও খালি পেটে আয়রন ট্যাবলেট খাওয়া ভালো, তবুও পেট ব্যথা কিংবা পাতলা পায়খানার সমস্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য খাবারের সাথে অথবা খাওয়ার ঠিক পর পরই আয়রন ট্যাবলেট সেবন করতে পারেন। সেই সাথে পর্যাপ্ত পানি ও ফাইবারযুক্ত খাবার খাবেন। এতে করে আয়রন ট্যাবলেটজনিত কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও কিছুটা কমতে পারে। তবে আপনার এসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলেও ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ঔষধ খাওয়া বন্ধ করবেন না। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলেও এই ঔষধ সেবন চালিয়ে যাওয়া খুব জরুরি। আপনার যদি খুব বেশি সমস্যা বা অস্বস্তি হয়, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। ডাক্তার আপনাকে অন্য ব্র‍্যান্ডের ঔষধ কিংবা ট্যাবলেটের বদলে ইনজেকশন হিসেবে আয়রন গ্রহণের পরামর্শ দিতে পারে। তবে নিজে নিজে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ঔষধ বদল করে ফেলবেন না। এ ছাড়াও যদি আপনার অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন দেখা দেয় তাহলে ঔষধ সেবন বন্ধ করে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। গর্ভাবস্থায় আয়রন সমৃদ্ধ খাবার আয়রন ট্যাবলেট সেবনের পাশাপাশি আপনাকে নিয়মিত আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে, শুধুমাত্র এসব খাবার দিয়ে সাধারণত গর্ভাবস্থায় আয়রনের বাড়তি চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয় না। কিছু আয়রন সমৃদ্ধ খাবার হলো— মাংস, বিশেষত গরু ও খাসির মাংসের মতো ‘রেড মিট’ বিভিন্ন ডাল। যেমন: ছোলা, মাষকলাই, মুগ ও মসুর চিনাবাদাম, কাজুবাদাম ও পেস্তাবাদাম মটর ও মটরশুঁটি শুকনো ফল। যেমন: খেজুর, নারিকেল (শুকনা) ও আখরোট বিভিন্ন মাছ। যেমন: চাপিলা, ট্যাংরা, কাচকি, মলা, টাটকিনি, শিং, ফেসা ও চেলা ডিম দুধ ও পনির বিভিন্ন শাক। যেমন: পাট শাক,

গর্ভাবস্থায় আয়রন Read More »

প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট ব্যবহারের নিয়ম

pregnancy kit use

প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট হলো একটি সহজ এবং সুবিধাজনক উপায় যা মহিলাদের গর্ভধারণের বিষয়টি দ্রুত নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। এটি মূলত প্রস্রাবের মাধ্যমে HCG (Human Chorionic Gonadotropin) হরমোন সনাক্ত করে, যা গর্ভধারণের সময় শরীরে উৎপন্ন হয়। এই আর্টিকেলে আমরা প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট ব্যবহারের সঠিক নিয়ম নিয়ে আলোচনা করব। প্রস্তুতকারকভেদে প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিটের ব্যবহারবিধি কিছুটা ভিন্ন হতে পারে। কিটের প্যাকেটের ভেতরের নির্দেশিকায় কীভাবে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে হবে সেটি বিস্তারিতভাবে লেখা থাকে। নির্দেশিকা অনুসরণ করে আপনি সহজেই ঘরে বসে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করে ফেলতে পারবেন। সচরাচর যেসব প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট পাওয়া যায়, সেগুলোর প্যাকেটের ভেতরে একটি লম্বা কাঠি বা বক্স থাকে। তাতে একটি ‘S’ লেখা ঘর থাকে। এ ঘরে আপনাকে কয়েক ফোঁটা প্রস্রাব দিয়ে কয়েক মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। তারপর বক্সের ‘C’ ও ‘T’ লেখা অন্য দুইটি ঘরের দিকে লক্ষ রাখতে হবে। শুধু ‘C’ ঘরে একটি দাগ দেখা গেলে পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ, অর্থাৎ আপনি হয়তো গর্ভবতী না। আর ‘C’ ও ‘T’ দুইটি ঘরেই দাগ দেখা গেলে ফলাফল পজিটিভ, অর্থাৎ আপনি গর্ভবতী। প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট কীভাবে কাজ করে? প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিটের মাধ্যমে প্রস্রাবে ‘বেটা হিউম্যান কোরিওনিক গোনাডোট্রপিন’ নামের একটি বিশেষ হরমোনের উপস্থিতি নির্ণয় করা হয়। গর্ভবতী নারীদের প্রস্রাবে এই হরমোনের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। যা কিটের মাধ্যমে শনাক্ত করা যায়। টেস্ট কিট দিয়ে প্রস্রাবে এই হরমোনের উপস্থিতি শনাক্ত করা গেলে সেই ফলাফলকে ‘পজিটিভ’ বলে। আর শনাক্ত করার মতো যথেষ্ট পরিমাণ হরমোন না পাওয়া গেলে তাকে ‘নেগেটিভ’ বলে। ফলাফল পজিটিভ আসলে তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নির্ভুল হয়ে থাকে। তাই ফলাফল পজিটিভ আসলে একজন গাইনী ডাক্তার অথবা হাসপাতালে গিয়ে গর্ভাবস্থায় করণীয় সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিটের ফলাফল কি নির্ভরযোগ্য? সাধারণত সঠিক নিয়মে পরীক্ষা করলে প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সঠিক তথ্য দেয়।তবে প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিটের ফলাফল হিসাবের সময়ে নিচের বিষয়গুলো মাথায় রাখা জরুরি— গর্ভধারণের ছয় দিন পর থেকেই শরীরে ‘বেটা হিউম্যান কোরিওনিক গোনাডোট্রপিন’ নামের বিশেষ হরমোন তৈরি হতে শুরু করে। তবে অনেক ক্ষেত্রে আট-দশ দিন সময়ও লাগতে পারে। গর্ভাবস্থার শুরুর দিকে শরীরে এই হরমোনের পরিমাণ তুলনামূলক কম থাকে। ধীরে ধীরে এই হরমোনের পরিমাণ বাড়তে থাকে। তাই অনেকক্ষেত্রেই গর্ভাবস্থার একেবারে শুরুর দিকে কিট দিয়ে পরীক্ষা করলে গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রেও ফলাফল নেগেটিভ আসতে পারে। অনেকেই অনিয়মিত মাসিকের সমস্যায় ভোগেন। ফলে তারা মাসিকের সম্ভাব্য তারিখ ঠিকমতো হিসাব করতে পারেন না। সেক্ষেত্রে অনেকেই পর্যাপ্ত পরিমাণ হরমোন তৈরি হওয়ার আগেই টেস্ট করে ফেলতে পারেন। এমন হলেও গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রেও টেস্টের ফলাফল নেগেটিভ আসতে পারে। এ ছাড়াও প্যাকেটের নির্দেশনা ঠিকমতো না মেনে পরীক্ষা করলে গর্ভবতী হলেও ভুলবশত কিট টেস্টের ফলাফল নেগেটিভ আসতে পারে। তাই টেস্টের ফলাফল নেগেটিভ আসার পরেও আপনার পিরিয়ড না হলে অথবা আপনার নিজেকে গর্ভবতী মনে হলে কয়েকদিন পর আবার প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে পারেন। দ্বিতীয়বার টেস্টের ফলাফল নেগেটিভ আসার পরেও যদি আপনার পিরিয়ড না হয় তাহলে দ্রুত কোনো গাইনী ডাক্তার অথবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কিংবা সদর হাসপাতালে যেতে হবে। সেখানে আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আপনি গর্ভবতী কি না সেই বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারবেন।

প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট ব্যবহারের নিয়ম Read More »