শীতের আগমন প্রাকৃতিক পরিবর্তনের এক নতুন বার্তা নিয়ে আসে। তবে এই সময়টায় শিশুরা নানা ধরনের শারীরিক ও ত্বকের সমস্যার মুখোমুখি হতে পারে। ঠান্ডা আবহাওয়া এবং শুষ্ক পরিবেশ শিশুর স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সঠিক যত্ন এবং পূর্বসতর্কতা গ্রহণের মাধ্যমে এই সমস্যাগুলো সহজেই এড়িয়ে চলা সম্ভব। আজকের আলোচনায় তুলে ধরা হবে শীতকালে শিশুদের ত্বক ও স্বাস্থ্য পরিচর্যার কিছু প্রয়োজনীয় দিক।

শীতকালে শিশুর ত্বকের সমস্যাগুলো
শীতের শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে শিশুরা সাধারণত যে সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হয় তা হলো:
- ত্বক রুক্ষ হওয়া
- ত্বকের চুলকানি এবং অ্যালার্জি
- ঠোঁট ফাটা
- ত্বকের লালচে ভাব
- হাত ও পায়ের ত্বক ফেটে যাওয়া
শিশুদের ত্বক অত্যন্ত সংবেদনশীল হওয়ায় এই সমস্যাগুলো দ্রুত দেখা দিতে পারে। তাই সঠিক পরিচর্যা অত্যন্ত জরুরি।
শীতে শিশুরা যে স্বাস্থ্য সমস্যায় বেশি আক্রান্ত হয়
শুধু ত্বকের সমস্যাই নয়, শীতকালে ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে শিশুরা বিভিন্ন রোগেও আক্রান্ত হতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
- সর্দি-কাশি
- গলাব্যথা
- জ্বর
- নিউমোনিয়া
- অ্যালার্জি
শুষ্ক বাতাস এবং পরিবেশে ধুলাবালুর আধিক্যের কারণে এই সমস্যাগুলো আরও বাড়তে পারে। সঠিক প্রস্তুতি নিলে এই ঝুঁকি অনেকাংশে হ্রাস করা সম্ভব।
শীতকালে শিশুদের সুরক্ষায় করণীয়
১. ঠান্ডা বাতাস এবং ধুলাবালু থেকে সুরক্ষা
- শিশুকে বাইরে নিয়ে গেলে মুখে মাস্ক পরার অভ্যাস করান।
- শিশুর ঘরকে ধুলোমুক্ত রাখার চেষ্টা করুন। নিয়মিত পরিষ্কার করুন এবং ভেজা কাপড় দিয়ে ধুলো মুছুন।
- ঘরে পর্যাপ্ত তাপমাত্রা বজায় রাখুন।
২. ত্বকের যত্ন
শীতকালে শিশুর ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখার জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপ নিতে পারেন:
- বেবি লোশন ও ক্রিম: শিশুর ত্বকে নিয়মিত বেবি লোশন, বেবি অয়েল বা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। এতে ত্বকের শুষ্কতা দূর হবে।
- গ্লিসারিনের ব্যবহার: গ্লিসারিন ও গোলাপজলের মিশ্রণ ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
- ঠোঁটের যত্ন: শিশুর ঠোঁট ফাটলে পেট্রোলিয়াম জেলি বা ঠোঁটের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
৩. গরম পানি ব্যবহার
- শিশুকে হালকা কুসুম গরম পানিতে গোসল করান।
- সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর দাঁত ব্রাশ, মুখ ধোয়া, এবং অন্যান্য কাজে হালকা গরম পানি ব্যবহার করতে বলুন।
- নবজাতক বা ঠান্ডার সমস্যা থাকা শিশুর ক্ষেত্রে গরম পানিতে ভেজানো নরম কাপড় দিয়ে শরীর মুছে দেওয়া যেতে পারে।
৪. উষ্ণ পোশাক পরিধান
- শিশুকে সুতির পোশাকের ওপর নরম উলের পোশাক পরাতে হবে। সরাসরি উলের পোশাক পরানো থেকে বিরত থাকুন।
- পোশাক অবশ্যই আরামদায়ক এবং পরিবেশ অনুযায়ী হতে হবে।
শীতে শিশুদের খাবারদাবার
১. পুষ্টিকর খাবার:
শীতে শিশুদের খাওয়ার প্রবণতা কমে যেতে পারে। তবে এই সময়ে পুষ্টিকর খাবার দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
- ডিম: ডিমের কুসুম শিশুর জন্য অত্যন্ত পুষ্টিকর।
- সবজি স্যুপ: গাজর, বিট, টমেটো দিয়ে তৈরি স্যুপ শীতকালে শিশুর শরীর গরম রাখতে সাহায্য করে।
- ফলের রস: কমলা, মাল্টা, আপেল বা পেয়ারার রস শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
- সবজি দিয়ে খিচুড়ি: বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি দিয়ে তৈরি খিচুড়ি শিশুর শরীরের জন্য পুষ্টিকর।
যেসব খাবার দিবেন না : শীতকালে অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে এমন খাবার থেকে শিশুকে দূরে রাখুন।
ঠান্ডাজনিত সমস্যায় ঘরোয়া সমাধান
১. গলা ব্যথা ও সর্দি–কাশি
- আদা ও লেবু দিয়ে তৈরি গরম চা শিশুর গলা ব্যথা কমাতে কার্যকর।
- গরম পানিতে লবণ দিয়ে গড়গড়া করলে সংক্রমণ কমে।
- মধু ও তুলসী পাতার রস সর্দি-কাশি প্রশমনে সাহায্য করে।
২. গায়ের ব্যথা ও ক্লান্তি দূর করতে
- শিশুকে হালকা গরম পানিতে গোসল করান।
- মালিশ করার জন্য শিশুর ত্বকে মৃদু গরম নারিকেল তেল ব্যবহার করুন।
৩. চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া
শিশুর সমস্যার তীব্রতা বেশি হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। বিশেষ করে নিচের লক্ষণগুলো দেখা দিলে দেরি করবেন না:
- দীর্ঘদিন ধরে জ্বর বা কাশি থাকলে
- শ্বাসকষ্ট বা শ্বাস নিতে অসুবিধা হলে
- ত্বকে লালচে দাগ বা অ্যালার্জি গুরুতর হলে
শীতের সময় শিশুদের জন্য বিশেষ কিছু টিপস
- শিশুকে দিনের প্রথম ভাগে রোদে খেলতে দিন। সূর্যের আলো ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি পূরণ করবে।
- শিশুকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে দিন।
- শিশুকে প্রতিদিন কিছুটা হালকা ব্যায়াম বা শারীরিক কাজ করান। এটি তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে।
- শিশু যে কম্বল বা বিছানার চাদর ব্যবহার করছে তা পরিষ্কার এবং ধুলোমুক্ত রাখুন।
শীতকালে শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সঠিক পরিচর্যা এবং পুষ্টিকর খাবার দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ত্বকের যত্ন থেকে শুরু করে ঠান্ডাজনিত সমস্যার প্রতিরোধ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপেই সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে। সামান্য যত্নই শিশুর শীতকালীন সময়কে স্বাস্থ্যকর ও আনন্দময় করে তুলতে পারে।