Parenting Point

নবজাতকের সেবা

টামি টাইম (Tummy Time) : শিশুর ঘাড় শক্ত করার সহজ ও কার্যকরী উপায়

Tummy time

শিশুর জন্মের পর শারীরিক বিকাশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ রয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো টামি টাইম। অনেক মা-বাবা জানেন না এই ছোট অভ্যাসটি কীভাবে শিশুর ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্য ও মোটর স্কিল ডেভেলপমেন্টে বড় ভূমিকা রাখে। এই ব্লগে আপনি জানবেন— টামি টাইম কী এর উপকারিতা কখন ও কিভাবে করবেন সতর্কতা ও পরামর্শ টামি টাইম কী? টামি টাইম (Tummy Time) বলতে বোঝায়—শিশু জেগে থাকা অবস্থায় তাকে পেটের ওপর ভর দিয়ে উপুড় করে শোয়ানো। সাধারণত ৬-৭ মাস বয়সের আগে শিশুরা নিজে থেকে উপুড় হতে পারে না, তাই অভিভাবকরা তাকে সাহায্য করেন। এটি শিশুর ঘাড়, পিঠ ও কোমরের পেশি শক্তিশালী করে এবং গ্যাসের সমস্যা কমায়। টামি টাইম কেন গুরুত্বপূর্ণ? ✅ ঘাড় ও পেশি শক্তিশালী করে শিশু সোজা হয়ে বসা, হামাগুড়ি বা হাঁটার জন্য যে পেশিগুলোর প্রয়োজন—টামি টাইম সেই পেশিগুলোকে শক্তিশালী করে। ✅ পেটের গ্যাস দূর করে শিশুরা যখন উপুড় হয়ে থাকে, তখন পেটের গ্যাস সহজে বের হয়ে যায়। এটি তাদের অস্বস্তি কমাতে সাহায্য করে। ✅ মাথার গঠন ঠিক রাখতে সাহায্য করে দীর্ঘ সময় চিত হয়ে শোয়ার ফলে শিশুর মাথা সমান বা চ্যাপ্টা হয়ে যেতে পারে (Flat Head Syndrome)। টামি টাইমে অবস্থান পরিবর্তন হয়, ফলে এই ঝুঁকি কমে। ✅ দৃষ্টি ও মোটর স্কিল ডেভেলপ করে চোখে চোখ রাখা, খেলনার দিকে তাকানো, সামনে এগিয়ে যাওয়া ইত্যাদির মাধ্যমে শিশুর মোটর স্কিল এবং ভিজুয়াল ট্র্যাকিং স্কিল তৈরি হয়।   কখন শুরু করবেন টামি টাইম? শিশুর জন্মের কয়েকদিন পর থেকেই টামি টাইম শুরু করা যায়। প্রথম দিকে দিনে ২-৩ বার মাত্র ১-২ মিনিট করে শুরু করুন। এরপর ধীরে ধীরে সময় বাড়ান। বয়স অনুযায়ী গাইডলাইন: নবজাতক (০-২ মাস): দিনে ৩-৫ বার, ২-৩ মিনিট করে ৩ মাস+: দিনে মোট ২০-৩০ মিনিট ৬ মাস+: দিনে মোট ৪০-৬০ মিনিট (ভাগ করে) টামি টাইম কোথায় করাবেন? আপনার বুকের উপর: সবচেয়ে নিরাপদ ও ঘনিষ্ঠ সময়। নরম ম্যাট বা কম্বলের উপর: ফ্লোরে একটি সেফ জোন বানিয়ে। আপনার কোলে বা পায়ের উপর: সহজ এবং আরামদায়ক বিকল্প। টামি টাইম করার টিপস ✔️ শিশুর মন ভালো থাকলে করুন (খাওয়ার পর নয়)✔️ রঙিন খেলনা বা আয়নার সাহায্যে শিশুকে উৎসাহ দিন✔️ শিশুর সঙ্গে চোখে চোখ রেখে কথা বলুন✔️ ধীরে ধীরে সময় বাড়ান—প্রথমে ১ মিনিট, পরে ১০ মিনিট পর্যন্ত সতর্কতা ও ভুল এড়ানো ⚠️ টামি টাইম কখনো ঘুমের সময় নয়⚠️ শিশুকে একা ফেলে যাবেন না⚠️ নরম বালিশ বা উঁচু স্থানে করবেন না⚠️ যদি শিশু ক্লান্ত হয় বা কান্না করে, তখন বিরতি দিন টামি টাইম না করালে কী সমস্যা হতে পারে? ঘাড়ের পেশি দুর্বল থেকে যাবে মাথা চ্যাপ্টা হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে বসা, হামাগুড়ি, হাঁটার সময় দেরি হতে পারে হাতের স্পর্শ ও চোখের দৃষ্টি ব্যবহারে বিলম্ব হয় টামি টাইম শিশুর জীবনের শুরুতেই তার শরীর ও মস্তিষ্ক বিকাশের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রতিদিন কিছু সময় ধরে এই অভ্যাস গড়ে তুললে শিশু আরও শক্তিশালী, সক্রিয় এবং সুস্থভাবে বেড়ে উঠবে।

টামি টাইম (Tummy Time) : শিশুর ঘাড় শক্ত করার সহজ ও কার্যকরী উপায় Read More »

প্রিম্যাচুর শিশু

Premature

বিশ্বজুড়ে ৫ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হলো সময়ের আগেই শিশুর জন্ম বা প্রিম্যাচুর ডেলিভারি। যেসব শিশু ৩৭ সপ্তাহের আগে জন্ম নেয়, তাদের প্রিটার্ম শিশু বলা হয়। জন্মের পর থেকেই এদের বাড়তি যত্ন ও চিকিৎসার প্রয়োজন হয়, না হলে অনেক ক্ষেত্রে তাদের বাঁচিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে—বিশেষত বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে। মা ও শিশুর যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা, সচেতনতা, ও আন্তর্জাতিক নির্দেশনা মেনে চলার মাধ্যমেই এই সমস্যা অনেকাংশে প্রতিরোধ করা সম্ভব। এ নিবন্ধে প্রিম্যাচুর শিশুর কারণ, ঝুঁকি, প্রতিকার ও যত্নের বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। প্রিটার্ম শিশু কারা? যেসব শিশুর জন্ম গর্ভধারণের পূর্ণ ৩৭ সপ্তাহের আগেই হয়, তাদেরকে প্রিটার্ম শিশু বলা হয়। গর্ভের সময়কাল অনুসারে এই শিশুদের আবার বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়: মারাত্মক প্রিটার্ম (Extremely Preterm): ২৮ সপ্তাহের আগেই জন্মায়। অতিরিক্ত প্রিটার্ম (Very Preterm): ২৮-৩২ সপ্তাহের মধ্যে জন্মায়। মধ্যম থেকে দেরিতে প্রিটার্ম (Moderate to Late Preterm): ৩২-৩৭ সপ্তাহের মধ্যে জন্মায়। প্রিটার্ম জন্ম সাধারণত দুইভাবে হয়ে থাকে — প্রসব ব্যথা নির্ধারিত সময়ের আগেই শুরু হয়ে যাওয়া। মায়ের জটিল শারীরিক অবস্থার কারণে জরুরি সিজারিয়ান প্রসব। প্রিম্যাচুর শিশুর ঝুঁকি ও জটিলতা সময়ের আগে জন্মানো এই শিশুদের জন্য জীবনের শুরু থেকেই লড়াই শুরু হয়। তাদেরকে বহু শারীরিক ও মানসিক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়, যেমন: শেখার অক্ষমতা বা মনোযোগে ঘাটতি। শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তির সমস্যা। শ্বাসকষ্ট ও অক্সিজেন ঘাটতি। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হওয়ায় ঘন ঘন ইনফেকশন। স্নায়ুজনিত জটিলতা ও বিকাশে বাধা। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বাস্তবতা বাংলাদেশের মতো একটি নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে, প্রিটার্ম শিশুর যত্ন নেওয়া অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। বিশেষ করে ৩২ সপ্তাহের আগেই জন্মানো শিশুদের বাঁচিয়ে রাখা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে। কারণগুলো হলো: আধুনিক নবজাতক পরিচর্যা ইউনিট (NICU) অনেক হাসপাতালেই নেই। পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ ও ইনকিউবেটরের ঘাটতি। স্বল্পআয়ের পরিবারের পক্ষে উন্নত চিকিৎসা খরচ চালানো কঠিন। বুকের দুধ খাওয়ানোতে সমস্যা, যা শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও কমিয়ে দেয়। উন্নত দেশ বনাম উন্নয়নশীল দেশ উন্নত বিশ্বে যেখানে NICU, ভেন্টিলেটর, সার্বক্ষণিক ডাক্তার ও নার্সের সুবিধা সহজলভ্য, সেখানে সময়ের আগেই জন্মানো শিশুরাও সুস্থভাবে বেড়ে ওঠে। কিন্তু বাংলাদেশসহ অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশে এই প্রযুক্তির অভাব এবং সচেতনতার ঘাটতির কারণে প্রিম্যাচুর শিশুদের মৃত্যুর হার এখনও অনেক বেশি। আর যারা বেঁচে থাকে, তাদের অনেকেই সারা জীবন নানা অক্ষমতা বয়ে বেড়ায়। নির্ধারিত সময় বা ডেলিভারি ডেটের আগে কেন একটি শিশুর জন্ম হয়? একটি গর্ভাবস্থার পূর্ণ মেয়াদ সাধারণত ৩৭ থেকে ৪০ সপ্তাহের মধ্যে ধরে নেওয়া হয়। কিন্তু অনেক সময়ই দেখা যায়, একটি শিশু নির্ধারিত সময়ের আগেই—৩৭ সপ্তাহের পূর্বে—জন্ম নেয়। এধরনের সময়ের আগেই জন্ম নেওয়া শিশুকে বলা হয় প্রিটার্ম (preterm) বা অপরিণত শিশু। কিন্তু কেন এমনটি ঘটে? এর উত্তর সবসময় সহজ নয়। আগেভাগে শিশুর জন্ম হওয়ার পেছনে সম্ভাব্য কারণগুলো ১. অজানা কারণেই প্রিটার্ম ডেলিভারি: বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আগেভাগে শিশুর জন্ম হওয়ার কোনো নির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। চিকিৎসা বিজ্ঞান অনেক অগ্রগতি করলেও এখনো প্রিটার্ম বাচ্চা জন্মের সব কারণ পুরোপুরি ব্যাখ্যা করা সম্ভব হয়নি। অনেক সময় সম্পূর্ণ সুস্থ মা ও গর্ভাবস্থাতেও হঠাৎ করে প্রসবের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। ২. গর্ভকালীন জটিলতা ও রোগ সংক্রমণ: মায়ের শরীরে কোনো ধরনের ব্যাকটেরিয়াল বা ভাইরাল সংক্রমণ, যেমন: মূত্রনালীর ইনফেকশন, অ্যামনিওটিক থলি ফেটে যাওয়া, জরায়ুতে প্রদাহ ইত্যাদি ঘটলে, তা প্রিটার্ম লেবারের ঝুঁকি বাড়ায়। ৩. গর্ভবতী মায়ের দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক সমস্যা: মায়ের যদি দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, থাইরয়েড সমস্যা বা কিডনির জটিলতা থেকে থাকে, তাহলে নির্ধারিত সময়ের আগে ডেলিভারি করানোর প্রয়োজন হতে পারে। অনেক সময় ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় মায়ের জীবন রক্ষার্থে সিজারিয়ান ডেলিভারির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ৪. একাধিকবার গর্ভধারণ বা বহু সন্তান গর্ভে থাকা: যদি মা অতীতে একাধিকবার গর্ভবতী হয়ে থাকেন, অথবা গর্ভে যমজ বা একাধিক শিশু থাকে, তাহলে জরায়ুতে চাপ বেড়ে যাওয়ার কারণে আগেভাগে প্রসবের সম্ভাবনা বাড়ে। ৫. জীবনযাপন ও পরিবেশগত কারণ: অতিরিক্ত মানসিক চাপ, ধূমপান, মাদক গ্রহণ, অপুষ্টি বা অপর্যাপ্ত গর্ভকালীন যত্ন—এসব বিষয়ও প্রিটার্ম ডেলিভারির সম্ভাবনা বাড়াতে পারে। বিজ্ঞানীরা এখনো চেষ্টা করে যাচ্ছেন প্রিটার্ম শিশুর জন্মের পেছনের অজানা কারণগুলো উদ্ঘাটন করার জন্য। উন্নত মনিটরিং ও চিকিৎসা পদ্ধতি থাকা সত্ত্বেও অনেক ক্ষেত্রেই কেন শিশু আগে জন্মায়, সেটি অনির্ধারিতই থেকে যায়। ভবিষ্যতে আরও গবেষণার মাধ্যমে হয়তো এই প্রশ্নের উত্তর স্পষ্টভাবে পাওয়া যাবে। কোন দেশে এবং কখন প্রিটার্ম শিশু বেশি জন্মায়? প্রিটার্ম বা অকাল প্রসব বিশ্বব্যাপী একটি গুরুতর জনস্বাস্থ্য সমস্যা। গর্ভধারণের ৩৭ সপ্তাহের আগেই যখন কোনো শিশু জন্ম নেয়, তখন তাকে প্রিটার্ম শিশু বলা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিবছর প্রায় ১৫ মিলিয়ন প্রিটার্ম শিশু পৃথিবীতে জন্মায় এবং এর মধ্যে একটি বিশাল অংশই দক্ষিণ এশিয়া ও সাব-সাহারান আফ্রিকার দেশগুলোতে। কোথায় সবচেয়ে বেশি প্রিটার্ম শিশু জন্মায়? বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং ইউনিসেফ-এর মতে, দক্ষিণ এশিয়া এবং সাব-সাহারান আফ্রিকার দেশগুলোতে প্রিটার্ম জন্মের হার সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নাইজেরিয়া এবং ইথিওপিয়া—এই দেশগুলোতে অকাল প্রসব একটি প্রচলিত এবং উদ্বেগজনক সমস্যা। এসব অঞ্চলে গর্ভবতী মায়েদের পর্যাপ্ত চিকিৎসা, পুষ্টি ও সচেতনতার অভাবের কারণে প্রিটার্ম শিশুর জন্ম হার তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। কোনো দেশে জন্ম হলে প্রিটার্ম শিশুর বাঁচার সম্ভাবনা বেশি? প্রিটার্ম শিশুর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা অনেকাংশেই নির্ভর করে সে কোনো দেশে জন্মগ্রহণ করেছে তার ওপর। উন্নত দেশগুলোর তুলনায় নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে এই ঝুঁকি বহুগুণ বেশি। উদাহরণস্বরূপ: বাংলাদেশের মতো একটি নিম্ন আয়ের দেশে, যদি অতিরিক্ত প্রিটার্ম শিশু (২৮ সপ্তাহের আগে জন্ম নেওয়া) জন্মায়, তাহলে ৯০% এর বেশি শিশু মারা যায়। কারণ, এখানে অনেক সময় নবজাতকের জন্য প্রয়োজনীয় NICU সুবিধা, উন্নত চিকিৎসা ও প্রশিক্ষিত জনবল যথেষ্ট নয়। অন্যদিকে, উন্নত দেশ যেমন যুক্তরাষ্ট্রে, একই ধরনের প্রিটার্ম শিশুদের মধ্যে মৃত্যুহার মাত্র ১০%। উন্নত মেডিকেল সাপোর্ট, ইনকিউবেটর, নিউনেটাল কেয়ার এবং মায়ের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রযুক্তি-নির্ভর ব্যবস্থা এই পার্থক্য গড়ে দেয়। কেন এই ব্যবধান? এই ব্যবধানের পেছনে রয়েছে বিভিন্ন কারণ, যেমন: প্রসবপূর্ব পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষা না হওয়া। জরুরি চিকিৎসা ও ইনকিউবেটরের অভাব। গর্ভাবস্থায় অপুষ্টি ও সংক্রমণ। গর্ভবতী নারীদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতার ঘাটতি। অপ্রশিক্ষিত ধাত্রী বা স্বাস্থ্যকর্মীর মাধ্যমে প্রসব। কীভাবে অকাল জন্ম প্রতিরোধ করা যায়? অকাল জন্ম বা প্রিটার্ম ডেলিভারি নবজাতকের স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই গর্ভাবস্থার শুরু থেকেই একজন মায়ের সুস্থ থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ একজন সুস্থ মা-ই পারে একটি সুস্থ ও পূর্ণমেয়াদি শিশুর জন্ম দিতে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানিয়েছে, প্রিটার্ম ডেলিভারি প্রতিরোধের জন্য মায়েদের সুস্থতা বজায় রাখা, সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ, এবং নিয়মিত চিকিৎসা পরামর্শ নেওয়া অপরিহার্য। এই আর্টিকেলে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো কীভাবে গর্ভাবস্থায় সচেতন থেকে অকাল জন্ম প্রতিরোধ করা যায় এবং প্রিটার্ম শিশুর যত্ন কেমন হওয়া উচিত। অকাল জন্ম প্রতিরোধে করণীয় ১. পুষ্টিকর খাবার ও সাপ্লিমেন্ট: গর্ভবতী মায়ের জন্য প্রতিদিন পুষ্টিকর ও সুষম খাদ্যগ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে আয়রন, ফলিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য ভিটামিন-যুক্ত খাবার গর্ভকালীন জটিলতা প্রতিরোধে সহায়তা করে। ২. ধূমপান ও মাদক দ্রব্য এড়িয়ে চলুন:

প্রিম্যাচুর শিশু Read More »

শিশুর দাঁত ওঠা: লক্ষণ, পরিচর্যা ও করণীয়

সব শিশুর দাঁত একই বয়সে ওঠে না। যদিও অধিকাংশ শিশুর প্রথম দাঁত ৬ মাস বয়সে উঠতে শুরু করে, তবে এর পূর্ব লক্ষণগুলো আরও আগে থেকেই দেখা দিতে পারে। অনেক সময় এই লক্ষণগুলো নিয়ে অভিভাবকদের মনে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। এই লেখায় শিশুর দাঁত ওঠার প্রক্রিয়া, লক্ষণ ও করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

শিশুর দাঁত ওঠা: লক্ষণ, পরিচর্যা ও করণীয় Read More »

নবজাতকের চর্মরোগ হলে বাবা-মায়ের করণীয়: সহজ সমাধান ও পরামর্শ

baby skin disease

নবজাতকের জন্মের পরপরই চর্মরোগ দেখা দিতে পারে। নবজাতকের ত্বক অত্যন্ত সংবেদনশীল হয়ে থাকে। যে কারণে স্বাভাবিকভাবেই তাদের ত্বক খুব সহজেই চর্মরোগে আক্রান্ত হতে পারে। অনেক সময় বাবা-মায়ের অজ্ঞতার কারণেও এ জাতীয় সমস্যার সৃষ্টি হয়। শিশুর ত্বকের সঠিক পরিচর্যা ও সময়মতো সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে অতি সহজেই এ জাতীয় জটিলতা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আসুন জেনে নেই নবজাতকের চর্মরোগ হলে করণীয় কী। নবজাতকের চর্মরোগ ও এর প্রতিকার ১. প্রিকলি হিট বা ঘামাচি:  দিনের তাপমাত্রা বেশি থাকা সত্বেও আনেক সময় দেখা যায় আমাদের দেশে দাদী-নানীরা নবজাতককে চারদিক থেকে গরম কাপড়ে জড়িয়ে রাখেন। এর থেকে নবজাতকের শরীরে সাদা অথবা লাল রং বিশিষ্ট পানি আকারে ঘামাচির দানা দেখা দেয়। এ জাতীয় ঘামাচি চেনার উপায় হচ্ছে, ঘামাচি কখনো লোমের গোড়াতে হয় না। ঘামাচিকে যদিও সাধারণ ব্যাপার মনে হতে পারে কিন্তু । এ থেকে নবজাতকের অনেক জটিল সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। যেমন—এ থেকে শরীরে অনেক ফোঁড়ার সৃষ্টি হতে পারে। এটি সারানো একটু কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। আবহাওয়া যদি গরম থাকে, তবে জন্মের পর শিশুকে একটু খোলামেলা রাখা উচিত। ঘরের জানালা খোলা থাকা উচিত। ঘামাচিতে যেকোনো ট্যালকম পাউডারের ব্যবহার উপকারে আসে। ২. এরিথেমা টক্সিকাম নিউন্যাটোরিয়াম বা মাসিপিসি গ্রামের মা-চাচিরা এ জাতীয় চর্মরোগকে মাসিপিসি বলে থাকেন এবং এটি নবজাতকদের হয়েই থাকে বলে তাদের ধারণা। সত্যিই এটি খুব সাধারণ ব্যাপার। জন্মের তিন থেকে চার দিনের দিন শিশুর শরীরে লাল লাল র‍্যাশ দেখা দেয়। এর সঙ্গে জ্বর বা অসুস্থতার অন্য কোনো উপসর্গ থাকে না। ১০ দিনের দিন কোনো ধরনের ওষুধ ছাড়াই এটি ভালো হয়ে যায়। ৩. ডায়াপার র‍্যাশ বা ন্যাপকিন র‍্যাশ ডায়াপার বা ন্যাপি পরানোর কারণে নবজাতকের ত্বকে লাল লাল ভাব নিয়ে অ্যালার্জির মতো র‍্যাশ দেখা দিতে পারে। এ জাতীয় র‍্যাশ শরীরের যে সব স্থান কাপড়ের সংস্পর্শে আসে, সেই জায়গায় হয়ে থাকে। অর্থাৎ উরুতে হবে, তবে উরুর ভাঁজ বা কুঁচকির ভাঁজে হবে না। এমন অবস্থায় কাপড় সাময়িকভাবে বর্জন করা উচিত। যেসব বাচ্চার ন্যাপি বা ডায়াপার সারা রাতে একবারও বদলানো হয় না, তাদেরই এ সমস্যাটি বেশি হয়। প্রস্রাবের ইউরিয়া থেকে অ্যামোনিয়া তৈরি করে ত্বকে জ্বালাপোড়া ও চুলকানি সৃষ্টি হয়। ৪. ক্যানডিডিয়াসিস বা ফাঙ্গাস নবজাতকের মুখের ভেতর, বিশেষ করে জিহ্বাতে দুধের সরের মতো আস্তরণ দেখা দেয়। যে সমস্ত জায়গা সব সময় ভিজা থাকে, যেমন কুঁচকি, পায়ুপথের আশপাশ, গলার ভাঁজ, সে সমস্ত জায়গাতেও ক্যানডিডা দিয়ে সংক্রমণ হতে পারে। এ ক্ষেত্রে আক্রান্ত স্থানের চামড়া লাল লাল ভাব হয়ে যায় এবং এর ওপর সাদা সাদা ছোপ দেখা দেয়, সাথে প্রচণ্ড চুলকায়। এ থেকে মুক্তি পেতে হলে আক্রান্ত স্থানকে অবশ্যই শুকনো রাখতে হবে। ৫. ক্যারাডাল ক্যাপ কোনো কোনো নবজাতকের মাথায় চামড়া পুরু হয়ে জমতে দেখা যায়। এগুলো অনেকটা খুশকির মতো। সাধারণত হলুদ অথবা বাদামি রঙের হয়। কখনো কখনো বাজে গন্ধ হয় এবং তেলতেলে ভাব দেখা যায়। এটি ছয় মাস বয়সে নিজে থেকেই ভালো হয়ে যায়। সাময়িকভাবে পরিষ্কারের জন্য অলিভ অয়েল রাতে মেখে সকালে গোসল করাতে পারেন। ৬. স্ক্যাবিস বা পাঁচড়া চুলকানি খোসপাঁচড়া ছোঁয়াচে রোগ। এটি নবজাতকের চর্মরোগ গুলোর মধ্যে তুলনামূলক জটিলতম। প্রতিটি আঙুলের ভাঁজে ভাঁজে, কব্জিতে, হাত ও পায়ের তালুতে, বগলে, নাভি, যৌনাঙ্গে, গলা এমনকি সমস্ত শরীরে ছোট ছোট গোটা আকারে চুলকানি দেখা দেয়। তাই দ্রুত একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের অধীনে এর চিকিৎসা নেওয়া উচিত। কারণ, খোস পাঁচড়াগুলো পেকে যেতে পারে এবং এ থেকে কখনো কখনো কিডনি আক্রান্ত হতে পারে। তবে নবজাতকের যেকোনো সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই ডাক্টারের পরামর্শ নিবেন ।

নবজাতকের চর্মরোগ হলে বাবা-মায়ের করণীয়: সহজ সমাধান ও পরামর্শ Read More »

শীতকালে শিশুর গোসল: সতর্কতা ও সঠিক পদ্ধতি

winter-baby-bathing-tips

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা শিশুর সুস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে শীতকালে শিশুকে গোসল করানোর সময় অতিরিক্ত যত্ন ও সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। ঠান্ডা-কাশি ও নিউমোনিয়া থেকে শিশুকে রক্ষা করার পাশাপাশি পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার বিষয়েও সচেতন থাকা প্রয়োজন। বিশেষত নবজাতকদের ক্ষেত্রে এ বিষয়ে বিশেষ যত্ন নেওয়া দরকার। নবজাতক ও গোসলের নিয়ম নবজাতক বলতে সাধারণত ২৮ দিনের কম বয়সী শিশু বোঝানো হয়। জন্মের ৭২ ঘণ্টা পর নবজাতকের প্রথম গোসল করানো হয়, যেকোনো ঋতুতেই। নবজাতকদের সপ্তাহে দুই বা তিন দিন গোসল করানোই যথেষ্ট। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিয়মিত গোসল করানো যেতে পারে। শীতকালে শিশুর গোসলের জন্য বিশেষ যত্ন শীতকালে শিশুকে গরম রাখা অত্যন্ত জরুরি। এ সময়ে বাতাসের আর্দ্রতা কম থাকায় শিশুর ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে এবং সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। এজন্য: এক বছরের বেশি বয়সী শিশুদের প্রতিদিন গোসল করানো ভালো, যদি সর্দি-কাশি বা নিউমোনিয়ার লক্ষণ না থাকে। অতিরিক্ত শীত পড়লে এক বা দুই দিন পরপর গোসল করানো যেতে পারে। প্রতিদিন গোসল সম্ভব না হলে কুসুম গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে শিশুর শরীর ভালোভাবে স্পঞ্জ করিয়ে দেওয়া একটি ভালো বিকল্প। শীতকালে শিশুর গোসলের সময় যে বিষয়গুলো অবশ্যই মনে রাখবেন নিয়মিত সময় ঠিক করুন: প্রতিদিন একই সময়ে গোসল করালে শিশুর মধ্যে একটি রুটিন তৈরি হয়। তবে খাওয়ার সময় বা ঘুমানোর সময় গোসল করানো উচিত নয়। এতে শিশুর মেজাজ খারাপ হতে পারে। উষ্ণ স্থান নির্বাচন করুন: গোসলের স্থানটি উষ্ণ হওয়া উচিত এবং সেখানে ঠান্ডা বাতাস ঢুকতে না পারে তা নিশ্চিত করুন। গোসলের আগে তেল ব্যবহার: প্রাকৃতিক তেল শিশুর ত্বকের জন্য ভালো হতে পারে। তবে কোনো ত্বকের সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া তেল ব্যবহার করা ঠিক নয়। পানির তাপমাত্রা পরীক্ষা করুন: কুসুম গরম পানিতে গোসল করানো উচিত। পানির তাপমাত্রা শিশুর জন্য উপযুক্ত কি না, তা হাতে পরীক্ষা করে নিন। গোসলের সময়সীমা: ৫-১০ মিনিটের গোসলই যথেষ্ট। বেশি সময় ধরে গোসল করানো উচিত নয়। পোশাক হাতের কাছে রাখুন: শিশুকে গোসল করানোর পর তৎক্ষণাৎ তোয়ালে দিয়ে মুছে গরম পোশাক পরিয়ে দিন। চুল ও কান শুকনো রাখুন: গোসলের পর চুল ভালোভাবে মুছে নিশ্চিত করুন, যাতে ভেজা চুলের কারণে ঠান্ডা না লাগে। কানের ভেতরে পানি ঢুকেছে কি না, সেদিকে খেয়াল রাখুন। ত্বকের যত্ন:গোসলের পর শিশুর ত্বকে বয়স উপযোগী ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন, যা ত্বককে শুষ্ক হয়ে খসখসে হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করবে। নিরাপত্তা বজায় রাখুন:শিশুকে কোনো অবস্থাতেই পানির কাছে একা যেতে দেওয়া উচিত নয়। শীতকালে শিশুর গোসলের নিয়মাবলী মেনে চললে সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া থেকে দূরে থাকা সম্ভব। একই সঙ্গে শিশুর ত্বকের স্বাস্থ্য এবং পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত হবে। শিশুর যত্নে সঠিক পদ্ধতি ও সতর্কতা আপনার শিশুকে সুস্থ, সতেজ এবং হাসিখুশি রাখতে সহায়তা করবে।

শীতকালে শিশুর গোসল: সতর্কতা ও সঠিক পদ্ধতি Read More »

শীতে শিশুর যত্ন

baby winter care

শীতের আগমন প্রাকৃতিক পরিবর্তনের এক নতুন বার্তা নিয়ে আসে। তবে এই সময়টায় শিশুরা নানা ধরনের শারীরিক ও ত্বকের সমস্যার মুখোমুখি হতে পারে। ঠান্ডা আবহাওয়া এবং শুষ্ক পরিবেশ শিশুর স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সঠিক যত্ন এবং পূর্বসতর্কতা গ্রহণের মাধ্যমে এই সমস্যাগুলো সহজেই এড়িয়ে চলা সম্ভব। আজকের আলোচনায় তুলে ধরা হবে শীতকালে শিশুদের ত্বক ও স্বাস্থ্য পরিচর্যার কিছু প্রয়োজনীয় দিক। শীতকালে শিশুর ত্বকের সমস্যাগুলো শীতের শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে শিশুরা সাধারণত যে সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হয় তা হলো: ত্বক রুক্ষ হওয়া ত্বকের চুলকানি এবং অ্যালার্জি ঠোঁট ফাটা ত্বকের লালচে ভাব হাত ও পায়ের ত্বক ফেটে যাওয়া শিশুদের ত্বক অত্যন্ত সংবেদনশীল হওয়ায় এই সমস্যাগুলো দ্রুত দেখা দিতে পারে। তাই সঠিক পরিচর্যা অত্যন্ত জরুরি। শীতে শিশুরা যে স্বাস্থ্য সমস্যায় বেশি আক্রান্ত হয় শুধু ত্বকের সমস্যাই নয়, শীতকালে ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে শিশুরা বিভিন্ন রোগেও আক্রান্ত হতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য: সর্দি-কাশি গলাব্যথা জ্বর নিউমোনিয়া অ্যালার্জি শুষ্ক বাতাস এবং পরিবেশে ধুলাবালুর আধিক্যের কারণে এই সমস্যাগুলো আরও বাড়তে পারে। সঠিক প্রস্তুতি নিলে এই ঝুঁকি অনেকাংশে হ্রাস করা সম্ভব। শীতকালে শিশুদের সুরক্ষায় করণীয়      ১. ঠান্ডা বাতাস এবং ধুলাবালু থেকে সুরক্ষা শিশুকে বাইরে নিয়ে গেলে মুখে মাস্ক পরার অভ্যাস করান। শিশুর ঘরকে ধুলোমুক্ত রাখার চেষ্টা করুন। নিয়মিত পরিষ্কার করুন এবং ভেজা কাপড় দিয়ে ধুলো মুছুন। ঘরে পর্যাপ্ত তাপমাত্রা বজায় রাখুন।      ২. ত্বকের যত্ন         শীতকালে শিশুর ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখার জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপ নিতে পারেন: বেবি লোশন ও ক্রিম: শিশুর ত্বকে নিয়মিত বেবি লোশন, বেবি অয়েল বা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। এতে ত্বকের শুষ্কতা দূর হবে। গ্লিসারিনের ব্যবহার: গ্লিসারিন ও গোলাপজলের মিশ্রণ ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। ঠোঁটের যত্ন: শিশুর ঠোঁট ফাটলে পেট্রোলিয়াম জেলি বা ঠোঁটের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।      ৩. গরম পানি ব্যবহার শিশুকে হালকা কুসুম গরম পানিতে গোসল করান। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর দাঁত ব্রাশ, মুখ ধোয়া, এবং অন্যান্য কাজে হালকা গরম পানি ব্যবহার করতে বলুন। নবজাতক বা ঠান্ডার সমস্যা থাকা শিশুর ক্ষেত্রে গরম পানিতে ভেজানো নরম কাপড় দিয়ে শরীর মুছে দেওয়া যেতে পারে।      ৪. উষ্ণ পোশাক পরিধান শিশুকে সুতির পোশাকের ওপর নরম উলের পোশাক পরাতে হবে। সরাসরি উলের পোশাক পরানো থেকে বিরত থাকুন। পোশাক অবশ্যই আরামদায়ক এবং পরিবেশ অনুযায়ী হতে হবে। শীতে শিশুদের খাবারদাবার      ১. পুষ্টিকর খাবার:        শীতে শিশুদের খাওয়ার প্রবণতা কমে যেতে পারে। তবে এই সময়ে পুষ্টিকর খাবার দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। ডিম: ডিমের কুসুম শিশুর জন্য অত্যন্ত পুষ্টিকর। সবজি স্যুপ: গাজর, বিট, টমেটো দিয়ে তৈরি স্যুপ শীতকালে শিশুর শরীর গরম রাখতে সাহায্য করে। ফলের রস: কমলা, মাল্টা, আপেল বা পেয়ারার রস শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। সবজি দিয়ে খিচুড়ি: বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি দিয়ে তৈরি খিচুড়ি শিশুর শরীরের জন্য পুষ্টিকর। যেসব খাবার দিবেন না : শীতকালে অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে এমন খাবার থেকে শিশুকে দূরে রাখুন। ঠান্ডাজনিত সমস্যায় ঘরোয়া সমাধান     ১. গলা ব্যথা ও সর্দি–কাশি আদা ও লেবু দিয়ে তৈরি গরম চা শিশুর গলা ব্যথা কমাতে কার্যকর। গরম পানিতে লবণ দিয়ে গড়গড়া করলে সংক্রমণ কমে। মধু ও তুলসী পাতার রস সর্দি-কাশি প্রশমনে সাহায্য করে।     ২. গায়ের ব্যথা ও ক্লান্তি দূর করতে শিশুকে হালকা গরম পানিতে গোসল করান। মালিশ করার জন্য শিশুর ত্বকে মৃদু গরম নারিকেল তেল ব্যবহার করুন।     ৩. চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া       শিশুর সমস্যার তীব্রতা বেশি হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। বিশেষ করে নিচের লক্ষণগুলো দেখা দিলে          দেরি করবেন না: দীর্ঘদিন ধরে জ্বর বা কাশি থাকলে শ্বাসকষ্ট বা শ্বাস নিতে অসুবিধা হলে ত্বকে লালচে দাগ বা অ্যালার্জি গুরুতর হলে  শীতের সময় শিশুদের জন্য বিশেষ কিছু টিপস শিশুকে দিনের প্রথম ভাগে রোদে খেলতে দিন। সূর্যের আলো ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি পূরণ করবে। শিশুকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে দিন। শিশুকে প্রতিদিন কিছুটা হালকা ব্যায়াম বা শারীরিক কাজ করান। এটি তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে। শিশু যে কম্বল বা বিছানার চাদর ব্যবহার করছে তা পরিষ্কার এবং ধুলোমুক্ত রাখুন। শীতকালে শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সঠিক পরিচর্যা এবং পুষ্টিকর খাবার দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ত্বকের যত্ন থেকে শুরু করে ঠান্ডাজনিত সমস্যার প্রতিরোধ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপেই সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে। সামান্য যত্নই শিশুর শীতকালীন সময়কে স্বাস্থ্যকর ও আনন্দময় করে তুলতে পারে।

শীতে শিশুর যত্ন Read More »

বেবি বার্পিং ( নবজাতকের ঢেকুর তোলা )

baby burp

নবজাতকের যত্নে বেবি বার্পিং বা ঢেকুর তোলা একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এটি শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, কারণ খাওয়ার সময় বাচ্চার পেটে যে অতিরিক্ত গ্যাস জমে তা বার্পিংয়ের মাধ্যমে বের হয়ে আসে। এতে শিশুর পেটের অস্বস্তি, গ্যাসের সমস্যা, এবং হজমজনিত জটিলতা কমে যায়। আসুন, এই আর্টিকেলে জেনে নিই বেবি বার্পিংয়ের সঠিক পদ্ধতি ও এর গুরুত্ব। কেন বেবি বার্পিং জরুরি? নবজাতক যখন দুধ টেনে খেতে থাকে, মুখ দিয়ে তখন খানিকটা বাতাসও গিলে ফেলে। এই বাতাস শিশুর পেটে গ্যাস তৈরি করে। পেটে অস্বস্তি বোধ করায় শিশু অনবরত কান্না করে, হাত মুঠ করে হাত–পা ছোড়াছুড়ি করে, মুখ থেকে দুধ বের করে দেয়। বেবি বার্পিং এর মাধ্যমে এই গ্যাস সহজেই বের হয়ে যায়, যা শিশুকে আরাম দেয় এবং হজমে সাহায্য করে। বেবি বার্পিংয়ের সঠিক পদ্ধতি নবজাতককে বার্প করানোর সময় কিছু সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত। নিচে কয়েকটি সহজ ও কার্যকর পদ্ধতি উল্লেখ করা হলো: কাঁধের উপর ধরে বার্পিং: শিশুর মাথা সোজা রেখে কোলে নিয়ে শিশুর মুখ নিজের কাঁধের ওপর রাখবেন । এক হাতে শিশুর পিঠে হালকা চাপড় দিবেন। চাইলে শিশুকে আরও খানিকটা ওপরে তুলে তার পেট কাঁধের ওপর রেখেও পিঠে চাপড় দিতে পারবেন । এটি বারবার করতে হতে পারে। তবে লক্ষ্য রাখবেন যেন শিশুর মাথা ও ঘাড় আরেক হাত দিয়ে ভালো করে সাপোর্ট দেওয়া থাকে। বসানো অবস্থায় বার্পিং: শিশুকে কোলের ওপর বসিয়েও হাতের তালু দিয়ে পিঠে হালকা চাপড় দিয়ে ঢেকুর তোলাতে পারবেন । এ ক্ষেত্রে আরেক হাতে শিশুর বুক ও চোয়াল ধরে শিশুকে সাপোর্ট দিতে হবে, যাতে শিশুর মাথা সোজা থাকে। হাতের তালু খানিকটা ভাঁজ করে কাপের মতো করে পিঠে বারবার চাপড় দিবেন তাহলে আরও ভালো ফল পাবেন । পেটের উপর শুইয়ে বার্পিং: এ ছাড়া শিশুকে হাঁটুর ওপর, উপুড় করে শুইয়ে রেখে পিঠে চাপড় দেওয়া যায়। এ ক্ষেত্রেও শিশুর থুঁতনি ধরে তাকে সাপোর্ট দিতে হবে। কখন বার্প করানো উচিত? খাবারের মাঝে ও পরে: শিশুকে খাওয়ানোর মাঝে একবার ও খাওয়ানো শেষ হওয়ার পর অবশ্যই বার্প করানো উচিত।  বাচ্চা যদি অস্বস্তি বোধ করে: যদি শিশুকে অস্বস্তি বোধ করতে দেখেন, তার মানে তার পেটে গ্যাস জমেছে। তখনই বার্প করানোর চেষ্টা করুন। কতক্ষণ ধরে বার্প করাবেন? বাচ্চার বার্প করানোর সময় ধৈর্য ধরে কাজটি করতে হবে। ৫-১০ মিনিট ধরে বিভিন্ন পদ্ধতিতে চেষ্টা করুন। বারবার বার্প না হলে, কিছুক্ষণ পর পুনরায় চেষ্টা করুন। বার্পিংয়ের পর সাবধানতা বার্প করানোর পর শিশুকে কিছুক্ষণ সোজা অবস্থায় রাখুন। এতে দুধ উঠে আসার ঝুঁকি কমে যায় এবং পেটে হজম প্রক্রিয়া ভালোভাবে কাজ করে। প্রতিটি পদ্ধতিতে খেয়াল রাখতে হবে ঢেকুর তোলার সময় শিশুর নাক যেন খোলা থাকে, সে যেন ঠিকভাবে শ্বাস নিতে পারে। কত দিন পর্যন্ত বার্পিং জরুরি শিশু সোজা হয়ে বসতে শিখলে এটা করার আর প্রয়োজন হয় না। সাধারণত ৪ থেকে ৬ মাসের মধ্যেই এটা ঘটে থাকে, তবে কারও কারও ৯ মাস পর্যন্ত প্রয়োজন হতে পারে। যখন মা মনে করবেন দুধ পানের পরপর শিশু আর কান্না ও অস্বস্তি বোধ করছে না, তখন থেকে এটা করার আর দরকার হবে না। নবজাতকের স্বাস্থ্য ও সুস্থতার জন্য বেবি বার্পিং অত্যন্ত জরুরি। সঠিক পদ্ধতিতে এবং সময়মতো বার্প করানোর মাধ্যমে আপনি আপনার শিশুকে আরাম দিতে এবং সুস্থ রাখতে পারবেন।

বেবি বার্পিং ( নবজাতকের ঢেকুর তোলা ) Read More »

নবজাতকের জন্য মায়ের দুধের গুরুত্ব

importance of breastfeeding

নবজাতকের জন্য মায়ের দুধ হচ্ছে প্রকৃতির এক অনন্য উপহার, যা শিশুর প্রথম খাদ্য হিসেবে তার সঠিক পুষ্টি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং সুস্থতা নিশ্চিত করে। মায়ের দুধ শিশুর জন্মের পর থেকেই তার শারীরিক ও মানসিক বিকাশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই দুধের প্রতিটি ফোঁটায় মিশে আছে শিশুর সঠিক বেড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত উপাদান। মায়ের দুধ ০২ ভাগে বিভক্তঃ ·       ১ম ভাগে পানি বেশি থাকে যা শিশুর তৃষ্ণা মেটাবে। ·       ২য় ভাগে চর্বি ও ক্যালরী বেশি থাকে যা শিশুর ক্ষিধা মেটাবে। শাল দুধঃ শিশুর জন্মের প্রথম কয়েকদিন যে ঘন আঠালো হলুদাভ দুধ পাওয়া যায় তাহাই শাল দুধ। এটি শিশুর প্রথম টিকা কারণ এতে রোগ প্রতিরোধক অনেক উপাদান থাকে। কিন্তু কুসংষ্কারের কারনে অনেক শিশু শাল দুধ থেকে বঞ্চিত হয়। মনে রাখবেন জন্মের প্রথম ৬মাস শিশুকে শুধুমাত্র মায়ের দুধ পান করাবেন। মায়ের দুধ ব্যতিত কিছুই খাওয়ানো যাবেনা এমন কি একফোটা পানিও না। কিন্তু আমাদের সমাজে শিশুকে জন্মের পর মধু, পানি, তেল, চিনির পানি ইত্যাদি খাওয়ানোর প্রচলন দেখা যায় যা নবজাতকের মৃত্যুর জন্য দায়ী কারণঃ v এটি নবজাতককে শালদুধ থেকে বঞ্চিত করে। v নবজাতক অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। v নবজাতকের ক্ষুধা নষ্ট করে তাকে মায়ের দুধ খাওয়া থেকে বিরত রাখে। v আর যদি ফিডার ব্যবহার করা হয় তবে শিশু মায়ের দুধ চুষতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। নবজাতকের জন্য মায়ের দুধের উপকারিতা  ১. মায়ের দুধে শিশুর বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশের জন্য পরিপূর্ণ পুষ্টিমান নিশ্চিত থাকে। ২. মায়ের দুধ ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া মুক্ত, খাঁটি এবং পরিচ্ছন্ন। ফলে শিশুর রোগাক্রান্ত হবার ভয় নেই। ৩. বুকের দুধে থাকে অ্যান্টিবডি, এনজাইম এবং ভিটামিন, যা শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। ৪. শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ালে বিভিন্ন সংক্রামক রোগ যেমন: ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, কানপাকা মেনিনজাইটিস ইত্যাদি থেকে রক্ষা পায়। ৫. বুকের দুধে লিনোলেনিক এসিড, ওমেগা-৩, ফ্যাটি এসিড এবং কোলেস্টেরল বিভিন্ন উপাদান থাকে; যা শিশুর মস্তিষ্ক গঠনে সাহায্য করে। এতে শিশু মেধাবী ও বুদ্ধিমান হয়। ৬. মায়ের দুধ শিশুকে ভবিষ্যতে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং স্থুলতা থেকে রক্ষা করে। ৭. বিশেষ কিছু রোগ যেমন: হাঁপানি, এলার্জি, একজিমা, দাঁতের অসুখ ইত্যাদি রোধে মায়ের দুধের ভূমিকা ব্যাপক। ৮. মায়ের দুধে থাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি, যা শিশুকে অন্ধত্ব ও স্কার্ভি থেকে রক্ষা করে। ৯. মায়ের শাল দুধ শিশুর প্রথম প্রাকৃতিক টিকা হিসেবে কাজ করে। ১০. যে সব শিশু ঠিক মতো মায়ের দুধ পান করে তারা স্বাস্থ্যবান ও দ্রুত বেড়ে উঠে। মায়ের দুধ পান করানোর মাধ্যমে মা নিজেই বেশ কয়েকটি শারীরিক এবং মানসিক উপকারিতা পান। মায়ের দুধ শুধু শিশুর জন্যই উপকারী নয়, বরং মায়ের স্বাস্থ্যের জন্যও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মা দুধ পান করালে যে উপকারিতা পান  ১. সদ্যভূমিষ্ট শিশু নাড়ী কাটার আগেই যদি মায়ের দুধ পান করে, তাহলে গর্ভস্থফুল বা প্লাসেন্টা দ্রুত বের হয়ে আসে। ফলে প্রসব পরবর্তী রক্তক্ষরণের ঝুঁকি কমে যায়। ২. শিশুকে ঠিক মতো বুকের দুধ খাওয়ান, এমন মায়ের স্তন ও জরায়ু ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়। ৩. বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় প্রোলাকটিন নামে এক ধরনের হরমোন মায়ের ডিম্বাশয়ের কার্যপ্রণালিতে বাধা দেয়। ফলে দুধ পান একটি প্রাকৃতিক জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি হিসেবে কাজ করে। ৪. বুকের দুধ খাওয়ানোর ফলে স্তনের টিস্যুগুলোর ব্যায়াম হয়, বিধায় স্তন সুডৌল থাকে। ৫. বুকের দুধ তৈরি হতে শরীরের অভ্যন্তরে প্রতিদিন অতিরিক্ত ক্যালরি খরচ হয়, ফলে মায়ের শরীরে থাকা অতিরিক্ত মেদ কমে যায়, এতে শরীর দ্রুত আগের অবস্থায় ফিরে আসে। ৬. দুধ দেওয়ার মধ্য দিয়ে মা ও শিশুর আত্মিক বন্ধন দৃঢ় হয়। এতে দুজনের মধ্যে গড়ে উঠে গভীর ভালোবাসার সম্পর্ক। ৭. মায়ের দুধ খাওয়ানোর মাধ্যমে মায়ের মধ্যে অক্সিটোসিনের নিঃসরণ হয়, যা মায়ের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এটি হতাশা এবং মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক। নবজাতকের জন্য মায়ের দুধ একান্ত অপরিহার্য। এটি শিশুর প্রথম এবং সর্বোত্তম খাদ্য, যা তার শারীরিক ও মানসিক বিকাশ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং সামগ্রিক সুস্থতায় সহায়ক। প্রথম ছয় মাসে একমাত্র মায়ের দুধই শিশুর জন্য যথেষ্ট এবং ছয় মাসের পরেও এক বছর বা তার বেশি সময় ধরে সম্পূরক খাবারের পাশাপাশি মায়ের দুধ খাওয়ানো উচিত। মায়ের দুধ খাওয়ানোর মাধ্যমে আমরা নবজাতকের সঠিক বিকাশ এবং সুস্থ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে পারি।

নবজাতকের জন্য মায়ের দুধের গুরুত্ব Read More »

নবজাতকের অত্যাবশ্যকীয় সেবা সমূহ

নবজাতকের অত্যাবশ্যকীয় সেবা

নবজাতকের জন্মের পর প্রথম কয়েকটি মুহূর্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং বিশেষ যত্ন ও সেবার প্রয়োজন। নবজাতকের সুস্থতা ও সুস্থভাবে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বৃদ্ধি করতে তার প্রাথমিক যত্নের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া অপরিহার্য। এই প্রাথমিক সেবায় অন্তর্ভুক্ত থাকে সঠিক পরিচর্যা, সঠিক পুষ্টি প্রদান, সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা এবং উষ্ণতার ব্যবস্থা করা। এর মাধ্যমে নবজাতককে জীবন শুরুর সঠিক ভিত্তি প্রদান করা হয় যা তার ভবিষ্যৎ সুস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নবজাতকের অত্যাবশ্যকীয় সেবা সমূহঃ নবজাতককে মোড়ানোর পদ্ধতিঃ

নবজাতকের অত্যাবশ্যকীয় সেবা সমূহ Read More »