Parenting Point

Others

১ বছর বয়সী শিশুর বিকাশের ধাপ সমূহ

Developmental milestones of a 1-year-old baby

জীবনের প্রতিটি ধাপে প্রথমবারের অভিজ্ঞতা সবসময়ই একটু বেশিই বিশেষ। ঠিক তেমনই, শিশুর প্রথম ১২ মাস—এই সময়টা তার বেড়ে ওঠার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। হাঁটতে শেখা, নিজের নাম শুনে সাড়া দেওয়া, মায়ের কোলে লজ্জা পাওয়া কিংবা ছোট ছোট শব্দে কথা বলা—প্রতিটি মুহূর্তই এক একটি মাইলফলক। এই লেখায় তুলে ধরা হয়েছে, শিশুর ১ বছর বয়সের মধ্যে কোন কোন রোমাঞ্চকর বিকাশ আমরা আশা করতে পারি এবং কীভাবে প্রতিটি শিশু নিজের গতিতে বেড়ে ওঠে। ১ বছর বয়সী শিশুর চলাফেরার মাইলফলক শিশুদের বেড়ে ওঠার প্রতিটি ধাপই এক একটি অনন্য মাইলফলক। ১ বছর বয়সের কাছাকাছি সময়টি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই সময়েই শিশুর মোটর স্কিল বা চলাফেরার দক্ষতা গড়ে ওঠে। শিশুর মোটর স্কিল বলতে বোঝায় তাদের শরীরের নড়াচড়া, বসা, হামাগুড়ি দেওয়া এবং হাঁটার মতো শারীরিক কর্মকাণ্ডের দক্ষতা। এই সময় শিশুরা নিচের কয়েকটি মাইলফলকে পৌঁছাতে শুরু করে: ✅ নিজে বসে থাকতে পারবে প্রথম দিকে (৪-৫ মাস বয়সে) শিশু হেলান দিয়ে বসা শিখে ফেলে। কিন্তু বয়স ৯-১২ মাসে পৌঁছালে, সে আর কোনো কিছুতে ভর না দিয়েই নিজেই উঠে বসে থাকতে পারে। এটি শিশুর শরীরের পেশি নিয়ন্ত্রণে উন্নতির একটি বড় ইঙ্গিত। ✅ হামাগুড়ি দিয়ে আগানো সব শিশু হামাগুড়ি দেয় না, তবে অধিকাংশই পেটের ওপর ভর দিয়ে ধীরে ধীরে সামনের দিকে এগোনোর চেষ্টা করে। পরে হাত ও পায়ের ওপর ভর দিয়ে পুরোদমে হামাগুড়ি দিয়ে চলতে শেখে। এটি শিশুর সমন্বয় ক্ষমতা এবং শক্তি বৃদ্ধির লক্ষণ। ✅ নিজে উঠে দাঁড়ানো যখন আপনি দেখবেন শিশুটি ছোট চেয়ার বা টেবিলের ওপর ভর করে দাঁড়াতে পারছে, বুঝবেন সে হাঁটার প্রস্তুতিতে রয়েছে। এই ধাপে শিশুরা পা ও শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করতে শেখে – হাঁটার আগের এক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। ✅ গুটি গুটি পায়ে হাঁটার চেষ্টা ১ বছর বয়সেই অনেক শিশু বড়দের হাত ধরে ছোট ছোট পা ফেলে হাঁটার চেষ্টা করে। যদিও প্রতিটি শিশুর বিকাশ ভিন্ন, তবে অধিকাংশ শিশু ১৮ মাস বয়সের মধ্যে একা একা হাঁটতে শেখে। এটা শিশুর আত্মবিশ্বাস এবং স্বাধীন চলাফেরার দিকে বড় একটি ধাপ। ১ বছর বয়সী শিশুর বুদ্ধিবৃত্তিক মাইলফলক এক বছর বয়সে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে শিশুর মধ্যে বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় শুরু হয়। এ বয়সে শিশুরা নতুন জিনিস শেখার প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে, চারপাশের জিনিস খুঁটিয়ে দেখতে শেখে এবং নিজের মতো করে ছোটখাটো সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করে। এই সময়ের অর্জিত প্রতিটি মাইলফলক তার মস্তিষ্কের বিকাশ ও চিন্তাশক্তির অগ্রগতিকে নির্দেশ করে। জিনিসপত্র খুঁটিয়ে দেখবে এক বছরের শিশুরা প্রায়ই হাতের কাছে যেটা পায়, সেটি নিয়ে নাড়াচাড়া করে দেখে। তারা আবিষ্কার করতে চায় জিনিসটি কীভাবে কাজ করে কিংবা সেটি দিয়ে কী করা যায়। এই বয়সে শিশুরা ঘরের জিনিস নাড়িয়ে দেখা, ছুঁড়ে মারা বা আছাড় দিয়ে ফেলার মাধ্যমে শিখে নেয় কারণ-প্রতিক্রিয়ার ধারণা। লুকিয়ে রাখা জিনিস খুঁজে বের করতে পারবে আপনার শিশু যদি কাঁথার নিচে রাখা তার প্রিয় খেলনাটি খুঁজে বের করতে পারে, বুঝে নিন সে এখন বস্তু স্থায়ীত্বের ধারণা (object permanence) রপ্ত করছে। এটি শিশুদের চিন্তাশক্তির একটি বড় অগ্রগতি। জিনিসপত্র বাক্সে রাখতে পারবে শিশুরা এখন ছোট ছোট জিনিস একত্র করে একটি বাক্সে রাখতে শিখে। যদিও কখনো কখনো আবার সেগুলো ছড়িয়ে দিতেও পারে, তবে এভাবেই তারা সংগঠন ও ধারাবাহিকতার ধারণা অর্জন করে। জিনিস ঠিকভাবে ব্যবহার করতে শুরু করবে এক বছর বয়সী শিশু সাধারণ ব্যবহারের জিনিস যেমন কাপ, চামচ বা খেলনা ঠিকভাবে ধরতে ও ব্যবহার করতে শিখে। কাপ থেকে নিজে পানি খাওয়ার চেষ্টা বা চামচে করে খাবার তোলার চেষ্টাও দেখা যায় এই সময়। সহজ নির্দেশনা পালন করতে পারবে “খেলনাটা মাটিতে রাখো”, “মামাকে টাটা দাও”— এমন ছোট ছোট নির্দেশনার প্রতিক্রিয়া দিতে শুরু করে এই বয়সী শিশুরা। তারা শব্দ ও নির্দেশনা বুঝতে শেখে, যা তাদের ভাষা ও সামাজিক দক্ষতা বিকাশে সহায়তা করে। ১ বছর বয়সী শিশুর ভাষা ও যোগাযোগের মাইলফলক শিশুর প্রথম জন্মদিনের কাছাকাছি সময়টা শুধু কেক-ক্যান্ডল দিয়ে উদ্‌যাপন করার নয়—এটা তার ভাষা ও যোগাযোগের বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। এ বয়সে শিশুরা নানা রকম শব্দ, আওয়াজ এবং ইঙ্গিতের মাধ্যমে নিজেদের অনুভূতি ও চাহিদা প্রকাশ করতে শেখে। নিচে ১ বছর বয়সী শিশুর ভাষাগত ও যোগাযোগমূলক বিকাশের কিছু গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক তুলে ধরা হলো— অর্থহীন আওয়াজ ও ছোট ছোট শব্দ উচ্চারণ ১ বছর বয়সের দিকে এগোতে থাকা শিশুরা সারাদিন অর্থহীন আওয়াজ করতে থাকে। “ডা ডা”, “টা টা”, “মা মা” বা “বাবা” জাতীয় ছোট শব্দগুলো প্রথম উচ্চারণে শোনা যেতে পারে। যদিও এসব শব্দে এখনো তেমন অর্থ নেই, তবুও এগুলো ভবিষ্যতের ভাষা শেখার ভিত্তি তৈরি করে। ইঙ্গিতের মাধ্যমে ভাব প্রকাশ এই বয়সে শিশুরা ইঙ্গিত শেখে এবং ব্যবহার করতে শুরু করে। বিদায় জানাতে হাত নাড়া, কিছু না চাইলে মাথা নাড়ানো বা আনন্দ পেলে হাততালি দেওয়া—এসবই তার যোগাযোগ দক্ষতার অংশ। শিশুর ইঙ্গিত ব্যবহার তার সামাজিক বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক। গলার স্বরের বৈচিত্র্য শিশু এ সময় বিভিন্ন স্বরের ভঙ্গিমা অনুকরণ করে—নরম আওয়াজ থেকে শুরু করে উচ্চস্বরে ‘আবোল তাবোল’ বলা পর্যন্ত। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, সে এমনভাবে আওয়াজ করে যেন আপনাকে কিছু বলতে চাইছে। এ সময় তার স্বরেও ওঠানামা লক্ষ্য করা যায়, যা বড়দের মতো কথা বলার এক ধরনের অনুশীলন। কীভাবে শিশুকে কথা শেখাতে সাহায্য করবেন? ১ বছর বয়সে শিশুরা সাধারণত কয়েকটি সহজ শব্দ উচ্চারণ করতে শেখে—যেমন: “মা”, “উহু”, “বাবা” ইত্যাদি। এ সময় আপনার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। শিশুকে নিয়মিতভাবে তার নাম ধরে ডাকা, তার সাথে চোখে চোখ রেখে কথা বলা এবং ছোট ছোট শব্দ বারবার বলার মাধ্যমে সে দ্রুত শব্দ ও ভাষা শিখে নিতে পারে। সহজ কিছু পরামর্শঃ শিশুকে গান, ছড়া ও গল্প শুনান। শিশুর প্রতিক্রিয়ায় সাড়া দিন। তার বলা অর্থহীন শব্দগুলোকেও গুরুত্ব দিয়ে জবাব দিন। বারবার একই শব্দ ব্যবহার করে শেখানোর চেষ্টা করুন। ১ বছর বয়সের শিশুর সামাজিকতা ও আবেগের মাইলফলক শিশু যখন ১ বছর বয়সে পৌঁছায়, তখন তার ব্যক্তিত্ব ও আবেগের জগতে আসে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন। এ সময় সে শুধু হাঁটা বা শব্দ বলা শিখছে না, বরং ধীরে ধীরে তৈরি করছে সামাজিক সংযোগ ও জটিল আবেগগত প্রতিক্রিয়া। চলুন জেনে নিই এই বয়সে শিশুর কিছু গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ও আবেগের মাইলফলক সম্পর্কে। চোখে চোখ রেখে হাসা – সম্পর্ক তৈরির শুরু ১ বছর বয়সী শিশু যদি আপনার চোখের দিকে তাকিয়ে হাসে, তাহলে বুঝে নিন সে অন্যদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার প্রাথমিক ধাপ পার করছে। এটি তার সামাজিক বিকাশের এক শক্তিশালী ইঙ্গিত। অপরিচিত মানুষ দেখলে অস্থিরতা – স্ট্রেইঞ্জার অ্যাংজাইটি এই বয়সে অপরিচিত কেউ কাছে এলে অনেক শিশুই অস্থির বা লাজুক হয়ে পড়ে, এমনকি কান্নাও শুরু করে দেয়। এটিকে বলা হয় Stranger Anxiety বা অপরিচিত ভীতি। যদিও এটি সাধারণত ৯ মাস বয়সে শুরু হয়, তবে অনেক শিশুর ক্ষেত্রে এটি দুই বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। হাত তালি দিয়ে খেলায় অংশগ্রহণ ১ বছর বয়সে শিশু সাধারণত ছন্দ মিলিয়ে হাত তালি দিতে পারে। এ ধরনের খেলার মাধ্যমে

১ বছর বয়সী শিশুর বিকাশের ধাপ সমূহ Read More »

প্রসব পরবর্তী পরিবার পরিকল্পনা

Postpartum family planning

সন্তান জন্মের পর অনেক মা জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে ভাবেন না, অথচ এ সময়টাতেই অপ্রত্যাশিত গর্ভধারণের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি থাকে। গর্ভকাল ও প্রসবজনিত জটিলতা এড়াতে মা ও শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রসব পরবর্তী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই লেখা আপনাকে জানাবে কখন, কেন ও কীভাবে আপনি উপযুক্ত জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বেছে নিতে পারেন। প্রসবের কতদিন পর গর্ভধারণের সম্ভাবনা থাকে? — বিস্তারিত তথ্য আপনার জন্য অনেক নতুন মা মনে করেন, সন্তান জন্মের পরপরই গর্ভধারণের সম্ভাবনা একেবারে কমে যায়। কেউ কেউ আবার ধরেই নেন, পিরিয়ড না এলে গর্ভধারণ সম্ভব নয়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে—এই ধারণাগুলো ভুল এবং বিপজ্জনক হতে পারে। পিরিয়ড না হলেও গর্ভধারণ হতে পারে প্রসবের পর মেয়েদের দেহ সাধারণত আবার পিরিয়ড শুরু করার আগে থেকেই ওভুলেশন শুরু করে দেয়। অর্থাৎ ডিম্বাণু নির্গত হয়, যা গর্ভধারণের জন্য প্রয়োজনীয়। এই ওভুলেশন পিরিয়ড ফেরার দুই সপ্তাহ আগেই ঘটে। তাই পিরিয়ড শুরুর আগেই আপনি গর্ভধারণ করে ফেলতে পারেন—যা অনেকেই বুঝতে পারেন না। বিশেষ করে আপনি যদি শুধুমাত্র বুকের দুধ না খাওয়ান, বা দুধের পাশাপাশি ফর্মুলা বা অন্যান্য খাবারও দেন, তাহলে ডেলিভারির মাত্র এক মাসের মধ্যেই ওভুলেশন হতে পারে এবং ছয় সপ্তাহের মধ্যেই আপনি পুনরায় গর্ভবতী হয়ে যেতে পারেন। প্রসব–পরবর্তী জন্মনিয়ন্ত্রণ কেন জরুরি? প্রসবের পরে সহবাস শুরু করলেই জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আপনার দেহ প্রস্তুত থাকলে, পিরিয়ড না এলেও আপনি গর্ভধারণ করতে পারেন। অনিচ্ছাকৃত বা অপরিকল্পিত গর্ভধারণ এড়াতে, ডাক্তারদের মতে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অবশ্যই ব্যবহার করা উচিত। বুকের দুধ খাওয়ানো ও গর্ভধারণ: সত্য ও ভুল বেশিরভাগ মা মনে করেন, বুকের দুধ খাওয়ালে জন্মনিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন নেই। এই ধারণার ভিত্তিতে তারা কোনো সুরক্ষা ছাড়াই সহবাস করেন। বাস্তবে, শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়ানো (exclusive breastfeeding) আংশিকভাবে জন্মনিয়ন্ত্রণে সহায়ক হলেও এটি শতভাগ নিরাপদ নয়। তবে কিছু শর্তে এটি কিছুটা কার্যকর হতে পারে: পিরিয়ড এখনো ফেরেনি। আপনি এক্সক্লুসিভ ব্রেস্টফিডিং করছেন (শুধু মায়ের দুধ, কোনো ফর্মুলা বা পানি নয়)। শিশুর বয়স ছয় মাসের কম। এই তিনটি শর্ত একসাথে পূরণ হলেই কিছুটা সুরক্ষা পাওয়া যায়। কিন্তু এরপরও গর্ভধারণের ঝুঁকি একেবারে থাকে না। তাই জন্মনিয়ন্ত্রণের কোনো না কোনো পদ্ধতি অবলম্বন করাটা সবচেয়ে নিরাপদ পথ। জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে পরিকল্পনা করবেন কখন? প্রসব-পরবর্তী সময়ে যৌনজীবন শুরুর আগেই জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে পরিকল্পনা করা অত্যন্ত জরুরি। এই বিষয়ে আগে থেকেই সচেতনতা ও প্রস্তুতি ভবিষ্যতের অনাকাঙ্ক্ষিত জটিলতা এড়াতে সহায়ক হতে পারে। আদর্শভাবে, গর্ভাবস্থার সময় থেকেই আপনি এবং আপনার সঙ্গী জন্মনিয়ন্ত্রণ বিষয়ে চিন্তা শুরু করতে পারেন। অনেক মা গর্ভাবস্থার শেষের দিকে বা প্রসবের পরে চিকিৎসকের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করে থাকেন। যদি হাসপাতালেই আপনার ডেলিভারি হয়, তাহলে হাসপাতাল ছাড়ার আগেই চিকিৎসকের সঙ্গে জন্মনিয়ন্ত্রণ নিয়ে একটি পরিপূর্ণ আলোচনা সেরে নেওয়া ভালো। প্রসব-পরবর্তী চেকআপে—সাধারণত প্রসবের ৬ থেকে ৮ সপ্তাহ পর—চিকিৎসক নিজেই আপনাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করবেন। তবে আপনি চাইলে এর আগেও বা যেকোনো সময় এ নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। যত দ্রুত পরিকল্পনা করবেন, ততই আপনি আত্মবিশ্বাসী ও নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করতে পারবেন। আলোচনার সময় যেসব বিষয় গুরুত্ব দিন: পূর্ববর্তী গর্ভাবস্থার অভিজ্ঞতা: পূর্বে কোন ধরনের জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবহার করেছেন? সেগুলোর কার্যকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কেমন ছিল? ভবিষ্যতের পরিবার পরিকল্পনা: আপনি কি অদূর ভবিষ্যতে আবার গর্ভধারণ করতে চান, নাকি দীর্ঘমেয়াদি বিরতি চান? দুজনের সম্মতি ও স্বাচ্ছন্দ্য: আপনি ও আপনার সঙ্গী কোন পদ্ধতিতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন? পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: কোন পদ্ধতিতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে এবং সেগুলোর প্রভাব কী? যদি শারীরিক কোনো সমস্যা বা রোগ থাকে: যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি থাকলে কোন পদ্ধতি নিরাপদ হবে? কখন শুরু করবেন জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি? সন্তান জন্মদানের পর জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি কখন থেকে শুরু করবেন, তা নির্ভর করে আপনার শারীরিক অবস্থা, দৈনন্দিন রুটিন, স্বাচ্ছন্দ্য এবং যে পদ্ধতিটি আপনি ব্যবহার করতে চান তার উপর। কখন কোন পদ্ধতি শুরু করবেন? দীর্ঘমেয়াদি পদ্ধতি (যেমন: আইইউডি, ইমপ্ল্যান্ট, ইনজেকশন): সন্তান জন্মের পরপরই ব্যবহার শুরু করা যায়। কম্বাইন্ড জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি (যেমন: ‘সুখী’): সাধারণত সিজারিয়ান বা জটিল ডেলিভারির ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৬ সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হয়। জনপ্রিয় জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির তালিকা ডেলিভারির পর আপনি নিচের পদ্ধতিগুলোর মধ্যে যেকোনোটি বেছে নিতে পারেন: ১. ব্যারিয়ার পদ্ধতি: পুরুষ ও মহিলা কনডম। স্পার্মিসাইড। ডায়াফ্রাম। সারভাইকাল ক্যাপ। ভ্যাজাইনাল স্পঞ্জ। ২. বড়ি: মিশ্র বড়ি (কম্বাইন্ড পিল) – সাধারণত ‘সুখী’ নামে পরিচিত। প্রজেস্টোরন বড়ি (মিনিপিল) – সরকারিভাবে ‘আপন’ নামে পাওয়া যায়। ৩. ইন্ট্রা ইউটেরাইন ডিভাইস (IUD): কপার IUD। হরমোনাল IUD। ৪. ইমপ্ল্যান্ট: ত্বকের নিচে স্থাপনযোগ্য হরমোন নির্ভর রড। ৫. ইনজেকশন: ডিপো প্রোভেরা – প্রতি ৩ মাস অন্তর একটি ডোজ। ৬. স্থায়ী পদ্ধতি (স্টেরিলাইজেশন): নারীদের টিউবাল লাইগেশন। পুরুষদের ভ্যাসেকটমি। ৭. প্রাকৃতিক পদ্ধতি: ল্যাকটেশনাল এমেনোরিয়া (LAM) – শুধুমাত্র স্তন্যদানরত মায়েদের জন্য নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কার্যকর। প্রত্যেকটি পদ্ধতির কার্যকারিতা, ব্যবহারবিধি ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ভিন্ন। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া সবসময়ই বুদ্ধিমানের কাজ। সন্তান জন্মের পর কি ইমারজেন্সি জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়া যাবে? হ্যাঁ, তবে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। নিচে দুটি বিকল্প উল্লেখ করা হলো: ১. ইমারজেন্সি পিল: লেভোনোরগ্যাস্ট্রেল (LNG-ECP): যৌনসম্পর্কের পর ৭২ ঘণ্টার মধ্যে গ্রহণযোগ্য। ইউলিপ্রোস্টাল এসিটেট (UPA): ৫ দিনের মধ্যে কার্যকর। ⚠ স্তন্যদানরত মায়েদের জন্য এই পিল পরিহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়। ২. কপার IUD: অনিরাপদ সহবাসের পর ৫ দিনের মধ্যে ব্যবহারযোগ্য। দীর্ঘমেয়াদেও জন্মনিয়ন্ত্রণে কার্যকর। জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বাছাইয়ের আগে যেসব বিষয় বিবেচনা করবেন জন্মনিয়ন্ত্রণ একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত, যা শুধু পরিবার পরিকল্পনা নয়, একজন নারীর শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার সঙ্গেও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বাছাই করার আগে আপনাকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে। এই বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখলে আপনি নিজের শরীর, জীবনধারা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ সঠিক পদ্ধতি নির্বাচন করতে পারবেন। ১. আপনার ভবিষ্যৎ সন্তান পরিকল্পনা আপনি আর সন্তান চান কি না, চাইলে কতদিন পর চান—এ প্রশ্নের উত্তর আপনার জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নির্ধারণে মুখ্য ভূমিকা রাখে। যদি আপনি স্থায়ীভাবে সন্তান না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, তাহলে স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি (যেমন: বন্ধ্যত্বকরন) বিবেচনায় নিতে পারেন। ২. উপযুক্ত সময়ের প্রয়োজনীয়তা সব পদ্ধতি একসাথে শুরু করা যায় না। কিছু পদ্ধতি ডেলিভারির পরপরই শুরু করা যায়, আবার কিছু পদ্ধতির জন্য অপেক্ষা করতে হতে পারে। আপনি কোন সময়ে পদ্ধতি শুরু করতে চান, সে অনুযায়ী বিকল্প বেছে নেওয়া উচিত। ৩. বুকের দুধ খাওয়ানোর বিষয়টি যদি আপনি সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ান, তাহলে সব জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি আপনার জন্য উপযোগী নাও হতে পারে। কিছু পদ্ধতি দুধের পরিমাণ বা মানে প্রভাব ফেলতে পারে, তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। ৪. কার্যকারিতা ও পূর্বের অভিজ্ঞতা আপনি পূর্বে যেসব পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন সেগুলো সবসময় কার্যকর নাও থাকতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, স্পঞ্জ বা জরায়ুমুখের ক্যাপ পদ্ধতি গর্ভধারণ প্রতিরোধে আগের মতো সফল না-ও হতে পারে। ৫. ব্যবহারের নিয়ম ও পুনরাবৃত্তি আপনি কত ঘন ঘন পদ্ধতিটি ব্যবহার করতে পারবেন বা করতে ইচ্ছুক সেটিও গুরুত্বপূর্ণ। কিছু পদ্ধতি প্রতিদিন ব্যবহার করতে হয় (যেমন পিল), আবার কিছু পদ্ধতি একবারেই দীর্ঘমেয়াদে কাজ করে (যেমন ইমপ্ল্যান্ট,

প্রসব পরবর্তী পরিবার পরিকল্পনা Read More »