Parenting Point

গর্ভকালীন সেবা

গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত গরম লাগা কি স্বাভাবিক? জানুন এর কারণ, প্রতিকার

Is it normal to feel hot during pregnancy? Know its causes and remedies

গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত গরম লাগা অনেক মায়েরই একটি সাধারণ অভিযোগ। শরীরের হরমোন পরিবর্তন, বাড়তি রক্তপ্রবাহ ও মেটাবলিজম বৃদ্ধির কারণে এই অস্বস্তি আরও বেড়ে যেতে পারে, বিশেষ করে আমাদের দেশের তাপপ্রবণ আবহাওয়ায়। অতিরিক্ত গরমে যেমন পানিশূন্যতা ও হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি থাকে, তেমনি তা গর্ভের শিশুর ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে। এই লেখায় গরমে গর্ভবতী মায়েদের যে-সব সমস্যা দেখা দিতে পারে এবং কীভাবে নিরাপদ ও স্বস্তিতে থাকা যায়, তা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত গরম লাগার কারণ গর্ভাবস্থা নারীর জীবনে এক অসাধারণ কিন্তু শারীরিকভাবে চ্যালেঞ্জিং সময়। এই সময় অনেক নারীকেই অতিরিক্ত গরম লাগা বা “হট ফ্ল্যাশ”-এর মতো অনুভূতির মুখোমুখি হতে হয়। এটা স্বাভাবিক হলেও অনেক সময় অস্বস্তিকর হয়ে উঠতে পারে। চলুন জেনে নিই, কেন এমনটা হয়। ১. পানিশূন্যতা (ডিহাইড্রেশন) আমাদের শরীর গরম অনুভব করলে ঘাম উৎপন্ন করে তা ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করে। কিন্তু শরীরে যখন পানির ঘাটতি থাকে, তখন ঘামের পরিমাণ কমে যায়। এর ফলে শরীরের অতিরিক্ত তাপ বের হতে পারে না এবং আমরা অস্বাভাবিকভাবে গরম অনুভব করি। গর্ভাবস্থায় ডিহাইড্রেশন হওয়ার ঝুঁকি আরও বেশি থাকে, তাই পর্যাপ্ত পানি পান না করলে এই গরম অনুভূতি আরও তীব্র হতে পারে। ২. মেটাবলিজম বৃদ্ধি গর্ভাবস্থায় আপনি শুধু নিজের জন্য নয়, গর্ভের শিশুর জন্যও পুষ্টি জোগান দেন। ফলে আপনার শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি কাজ করে। এই বাড়তি কাজের ফলে মেটাবলিজম বা হজমক্রিয়ার গতি বেড়ে যায়। মেটাবলিক হার যত বেশি হবে, শরীর তত বেশি তাপ উৎপন্ন করবে — আর এটাই অতিরিক্ত গরম লাগার অন্যতম কারণ। ৩. হরমোনের তারতম্য গর্ভাবস্থায় শরীরে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের মতো হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়। এই হরমোনগুলো শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে প্রভাব ফেলে। এর ফলে আপনার মস্তিষ্কে থাকা থার্মোস্ট্যাট (Hypothalamus) সহজেই গরম অনুভব করতে পারে, যার ফলশ্রুতিতে অতিরিক্ত ঘাম বা হট ফ্ল্যাশ হতে পারে। ৪. রক্ত চলাচলের বৃদ্ধি গর্ভস্থ শিশুর সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করতে গর্ভাবস্থায় রক্তসঞ্চালন বেড়ে যায়। এই অতিরিক্ত রক্তপ্রবাহ ত্বকের আশেপাশে তাপমাত্রা বাড়ায় এবং আপনাকে আরও গরম লাগতে পারে। করণীয় পর্যাপ্ত পানি পান করুন। হালকা, ঢিলেঢালা ও সুতির পোশাক পরুন। অতিরিক্ত গরম পরিবেশ এড়িয়ে চলুন। ঘর ঠান্ডা রাখতে ফ্যান বা এসি ব্যবহার করুন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। যাদের সমস্যা হওয়ার বেশি সম্ভাবনা থাকে গর্ভাবস্থায় শরীরের হরমোনের পরিবর্তনের কারণে অনেক মায়েরই স্বাভাবিকের তুলনায় একটু বেশি গরম লাগতে পারে। তবে কিছু মায়ের জন্য এই অতিরিক্ত গরম সহ্য করা আরও বেশি কঠিন হয়ে পড়ে, বিশেষ কিছু কারণের জন্য। নিচে আমরা এমন কিছু পরিস্থিতি তুলে ধরেছি, যেখানে গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত গরমে ভোগার সম্ভাবনা বেশি থাকে: ১. যদি আগে থেকেই দীর্ঘমেয়াদি বা জটিল অসুখ থাকে যে-সব মায়ের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্‌রোগ, কিডনির সমস্যা কিংবা মানসিক স্বাস্থ্যের জটিলতা আগে থেকেই থাকে—তাদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত গরমে দেহের স্বাভাবিক ভারসাম্য আরও বিঘ্নিত হতে পারে। এতে করে ক্লান্তি, মাথা ঘোরা বা পানিশূন্যতার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। ২. যাঁরা নিয়মিত বাইরে কাজ করেন যে-সব গর্ভবতী নারী কর্মজীবী এবং নিয়মিত বাইরে যান, যেমন—স্কুলশিক্ষিকা, সেবিকা, নির্মাণশ্রমিক বা মাঠপর্যায়ে কাজ করেন—তাদের সূর্যের প্রখর তাপ, ধুলাবালি ও আর্দ্রতার কারণে অতিরিক্ত গরমে ভোগার সম্ভাবনা বেশি থাকে। ৩. যদি আপনি বাড়ির সবচেয়ে উপরের তলায় থাকেন বিল্ডিংয়ের উপরের তলাগুলো গরমের সময় সবচেয়ে বেশি উত্তপ্ত হয়। রোদ সরাসরি ছাদে পড়ে বলে দিনের অনেকটা সময় ধরে ঘর গরম থাকে। এমন পরিবেশে দীর্ঘক্ষণ থাকার ফলে শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হতে পারে, যা গর্ভবতী মায়েদের জন্য বেশ অস্বস্তিকর ও ঝুঁকিপূর্ণ। গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত গরম থেকে কী কী জটিলতা হতে পারে? গর্ভাবস্থায় শরীরের প্রাকৃতিক পরিবর্তনের কারণে এমনিতেই শরীরের তাপমাত্রা একটু বেশি থাকে। এর ওপর যদি বাইরের পরিবেশে অতিরিক্ত গরম থাকে এবং শরীরের তাপমাত্রা ৩৯°C (১০২.২°F) এর বেশি উঠে যায়, তাহলে তা মা ও শিশুর জন্য মারাত্মক হতে পারে। জেনে নিন অতিরিক্ত গরম থেকে কী কী জটিলতা দেখা দিতে পারে এবং কীভাবে নিজেকে নিরাপদ রাখা যায়। ১. হিট ক্র্যাম্প হিট ক্র্যাম্প হচ্ছে এক ধরনের পেশির খিঁচুনি যা সাধারণত শরীরচর্চা বা গরমে অতিরিক্ত ঘামের ফলে শরীর থেকে লবণ ও পানি বেরিয়ে যাওয়ার কারণে হয়। হাত, পা ও পেটে ব্যথা অনুভব হতে পারে। করণীয় ব্যায়াম বা কাজ বন্ধ করে ঠান্ডা জায়গায় যান। পর্যাপ্ত পানি পান করুন। ব্যথা না কমা পর্যন্ত বিশ্রাম নিন। চিকিৎসকের পরামর্শ নিন যদি: এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে ক্র্যাম্প থাকে। খাদ্যে সোডিয়াম লবণের ঘাটতি থাকে। হৃদ্‌রোগ থাকে। ২. ডিহাইড্রেশন গরমে শরীর থেকে ঘাম ও বাষ্পের মাধ্যমে পানি বেরিয়ে গেলে, কিন্তু আপনি পর্যাপ্ত পানি না খেলে ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। এটি প্লাসেন্টার রক্তপ্রবাহ কমিয়ে দিতে পারে এবং ব্র্যাক্সটন হিক্স সংকোচন শুরু হতে পারে। পানিশূন্যতার কারণে আপনি দাঁড়াতে গেলে মাথা ঘুরিয়ে পড়েও যেতে পারেন। লক্ষণ: অতিরিক্ত তৃষ্ণা। গাঢ় ও গন্ধযুক্ত প্রস্রাব। মাথা ঘোরা, ক্লান্তি। ক্লান্তি বোধ। দ্রুত হার্টবিট। শুকনো ঠোঁট ও মুখ। চোখ কোটরে ঢুকে যাওয়া। দিনে ৪ বার বা কম প্রস্রাব হওয়া। ৩. হাত-পা ফুলে যাওয়া (ইডেমা) গরমে পানিশূন্যতার ফলে শরীর পানি ধরে রাখার চেষ্টা করে। এই অতিরিক্ত পানি শরীরের নিচের দিকের অংশগুলোতে জমা হয়। বিশেষ করে যখন আপনি অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন। এতে করে নিচের অংশ যেমন হাত, পা, গোড়ালি ও পায়ের পাতায় ফোলা দেখা দিতে পারে। প্রতিকার: একটানা দাঁড়িয়ে থাকা থেকে বিরত থাকুন। আরামদায়ক জুতা ব্যবহার করুন। প্রচুর পানি পান করুন। হালকা ব্যায়াম করুন: পা বাঁকিয়ে-সোজা করে ৩০ বার উঠানামা। প্রতিটি পা ৮ বার করে ঘোরান। ৪. হিটর‍্যাশ বা ঘামাচি গর্ভাবস্থায় গরম থেকে আপনার ছোট ছোট লাল ফুসকুড়ি বা ঘামাচি সাধারণত কাঁধ, বগল, বুক, কুঁচকিতে হয়ে থাকে। করণীয়: ঠান্ডা ও শুকনো পরিবেশে থাকুন। ঘামাচি শুকিয়ে রাখুন। প্রয়োজনে বেবি পাউডার ব্যবহার করুন। ৫. মেলাসমা এটি গর্ভাবস্থায় গরম ও হরমোনের প্রভাবে মুখে বাদামি বা ধূসর দাগ দেখা দেয়। প্রতিকার: সূর্যের আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি এড়িয়ে চলুন। সানস্ক্রিন, সানগ্লাস ও টুপি ব্যবহার করুন। চিন্তার কিছু নেই—সন্তান জন্মের কয়েক মাসের মধ্যেই দাগগুলো স্বাভাবিকভাবে মিলিয়ে যেতে পারে। ৬. হিট এক্সোশন গ্রীষ্মকালে অতিরিক্ত গরম এবং আর্দ্র পরিবেশে দীর্ঘ সময় থাকলে আমাদের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর ফলে শরীর অতিরিক্ত গরম হয়ে যায় এবং এক পর্যায়ে দেখা দিতে পারে হিট এক্সোশন (Heat Exhaustion) — যা এক ধরনের হাইপারথার্মিয়া বা উচ্চ তাপমাত্রাজনিত স্বাস্থ্যসমস্যা। লক্ষণ: অতিরিক্ত ঘাম। ত্বক ফ্যাকাশে। মাথা ব্যথা, বমি, দুর্বলতা। জ্ঞান হারাতে পারেন। বমি বমি ভাব কিংবা বমি হওয়া। মাংসপেশিতে ব্যথা হওয়া ক্লান্তিভাব ও দুর্বল লাগা করণীয়: ঠান্ডা জায়গায় যান। হালকা পানি পান করুন। শরীর ঠান্ডা রাখুন। ঠান্ডা ভেজা কাপড় দিয়ে শরীর মুছুন। সম্ভব হলে বাথটাবে ঠান্ডা পানিতে বসে থাকুন। ১ ঘণ্টার মধ্যে উন্নতি না হলে দ্রুত হাসপাতালে যান। ৭. হিট স্ট্রোক: মারাত্মক বিপদ হিট স্ট্রোক হলে শরীর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত বেড়ে যায়, যা হার্ট, মস্তিষ্ক, কিডনি বা পেশীকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত গরম লাগা কি স্বাভাবিক? জানুন এর কারণ, প্রতিকার Read More »

নরমাল ডেলিভারির সম্ভাবনা বৃদ্ধির উপায়

Normal delivery

  সুস্থ মা ও সুস্থ শিশুর জন্য স্বাভাবিক (নরমাল) ডেলিভারি অনেক ক্ষেত্রেই নিরাপদ ও উপকারী। তবে বর্তমান সময়ে নানা শারীরিক ও জীবনধারাগত কারণে অনেক নারীকেই সিজারিয়ান ডেলিভারির দিকে ঝুঁকতে হয়। গর্ভকালীন কিছু সহজ কিন্তু কার্যকর অভ্যাস গড়ে তোলার মাধ্যমে এই ঝুঁকি কমানো সম্ভব। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ, নিয়মিত চেকআপ—এসবই একটি নিরাপদ ও নরমাল ডেলিভারিকে উৎসাহিত করতে পারে। এই লেখায় এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ তুলে ধরা হয়েছে, যা মেনে চললে স্বাভাবিক প্রসবের সম্ভাবনা অনেকটাই বাড়ানো সম্ভব। নরমাল ডেলিভারির সম্ভাবনা বাড়াতে করণীয় প্রাকৃতিক বা নরমাল ডেলিভারি, মায়ের জন্য যেমন নিরাপদ, তেমনি শিশুর জন্যও তা স্বাস্থ্যকর। তবে বর্তমান সময়ে নানা জটিলতা ও জীবনধারাগত কারণে অনেক মায়ের ক্ষেত্রেই সিজারিয়ান ডেলিভারির প্রয়োজন পড়ে। অথচ গর্ভকালীন সময়ে কিছু সচেতনতা ও সহজ পরিবর্তনের মাধ্যমেই নরমাল ডেলিভারির সম্ভাবনা অনেকাংশে বাড়ানো সম্ভব। নরমাল ডেলিভারির পথে বাধাগুলো গর্ভাবস্থায় ও প্রসবের সময় কিছু জটিলতা নরমাল ডেলিভারিতে বাঁধা সৃষ্টি করে। যেমন: গর্ভধারণের আগে অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা। গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ও দ্রুত ওজন বৃদ্ধি। ৩৫ বছর বয়সের পরে গর্ভধারণ। ডায়াবেটিস বা রক্তে অতিরিক্ত গ্লুকোজ। ধূমপান ও অ্যালকোহল সেবন। উচ্চ রক্তচাপ। শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা ও মানসিক চাপ। এই সব কারণই নরমাল ডেলিভারির ঝুঁকি বাড়ায় এবং সিজার প্রয়োজনীয় করে তোলে। নরমাল ডেলিভারির সম্ভাবনা বাড়াতে করণীয় জীবনধারায় কিছু সহজ ও কার্যকর পরিবর্তন এনে মা ও শিশুর উভয়ের জন্যই একটি নিরাপদ ও স্বাভাবিক ডেলিভারির পথ প্রশস্ত করা যায়। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরা হলো: ১. সঠিক ওজন বজায় রাখা গর্ভধারণের আগে ও গর্ভাবস্থায় ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত জরুরি। পুষ্টিকর খাবার খাওয়া এবং অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ এড়িয়ে চলা উচিত। ২. নিয়মিত হালকা ব্যায়াম চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হালকা হাঁটা, গর্ভকালীন ইয়োগা বা প্রেনাটাল এক্সারসাইজ মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এটি শরীরকে ডেলিভারির জন্য প্রস্তুত রাখে। ৩. মানসিক চাপ কমানো অতিরিক্ত মানসিক চাপ হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে প্রসব জটিল করে তুলতে পারে। তাই মেডিটেশন, সঙ্গীত বা পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের সাথে সময় কাটিয়ে মানসিক স্বস্তি বজায় রাখা জরুরি। ৪. সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ফলমূল, সবজি, প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার, পর্যাপ্ত পানি ইত্যাদি নিয়মিত গ্রহণ করলে গর্ভাবস্থায় প্রয়োজনীয় পুষ্টি বজায় থাকে এবং গর্ভজনিত জটিলতা হ্রাস পায়। ৫. প্রসব–পূর্ব ম্যাসাজ গবেষণায় দেখা গেছে, গর্ভকালীন সময়ে যোনিপথে হালকা ম্যাসাজ করলে যন্ত্রণার পরিমাণ কমে এবং এপিসিওটমি বা সেলাইয়ের প্রয়োজন অনেকাংশে কমে যায়। এটি স্বাভাবিক প্রসবকে সহজ করতে সাহায্য করে। ৬. ধূমপান ও ক্ষতিকর অভ্যাস থেকে বিরত থাকা ধূমপান, অ্যালকোহল বা কোনো ধরনের মাদকসেবন মা ও শিশুর উভয়ের জন্য ক্ষতিকর। এগুলো স্বাভাবিক ডেলিভারির সম্ভাবনা হ্রাস করে। ৭. পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম সুস্থ গর্ভাবস্থার জন্য পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম আবশ্যক। শরীর ও মনের ভারসাম্য বজায় রাখতে এটি বিশেষভাবে সহায়ক। গর্ভাবস্থায় নিয়মিত ব্যায়াম: সুস্থ মা ও শিশুর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস গর্ভাবস্থার সময় স্বাস্থ্যবান থাকা শুধুমাত্র মায়ের জন্যই নয়, গর্ভের শিশুর সুস্থতার জন্যও অত্যন্ত জরুরি। আর এই সুস্থতা বজায় রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম একটি কার্যকর ও নিরাপদ উপায় হিসেবে বিবেচিত। গবেষণায় দেখা গেছে, গর্ভাবস্থায় যেসব মা নিয়মিত ব্যায়াম করেন, তাদের নরমাল ডেলিভারির সম্ভাবনা বেশি থাকে এবং সিজারিয়ান ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি ব্যবহারের প্রয়োজন অনেকটাই কমে যায়। এছাড়াও, সময়ের আগে সন্তান প্রসব এবং কম ওজনের শিশুর জন্ম হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়। কেন ব্যায়াম জরুরি গর্ভাবস্থায়? নিয়মিত ব্যায়াম গর্ভকালীন অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে। অতিরিক্ত ওজন শিশুর আকার বড় করে তুলতে পারে, যা সিজারের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। এ ছাড়াও ব্যায়াম গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ, প্রি-এক্লাম্পসিয়া এবং গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়—যা সবই সম্ভাব্য জটিল প্রসবের কারণ হতে পারে। ব্যায়ামের উপকারিতা এক নজরে: কোমর ব্যথা ও অন্যান্য গর্ভকালীন ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্য ও গ্যাসের সমস্যা হ্রাস করে। শরীরের শক্তি ও সহ্যশক্তি বাড়ায়। মন ভালো রাখতে সহায়তা করে। ভালো ঘুম আসতে সাহায্য করে। কতটা ব্যায়াম করা উচিত? বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, গর্ভবতী নারীদের জন্য প্রতি সপ্তাহে ২.৫ ঘণ্টা মাঝারি মাত্রার ‘অ্যারোবিক’ ব্যায়াম উপযোগী। উদাহরণস্বরূপ: দ্রুত হাঁটা। বাগান করা। সাঁতার কাটা। হালকা নাচ। সাইকেল চালানো (নিরাপদ স্থানে)। আপনি সপ্তাহে পাঁচ দিন, দিনে ৩০ মিনিট করে ব্যায়াম করতে পারেন। আবার চাইলে দিনে তিন ভাগে ১০ মিনিট করে শরীরচর্চাও করতে পারেন। যেটা আপনার জন্য বেশি স্বাচ্ছন্দ্যের হয়, সেটাই বেছে নিন। নতুনদের জন্য পরামর্শ যদি গর্ভধারণের আগে আপনার ব্যায়ামের অভ্যাস না থাকে, তবুও দুশ্চিন্তার কিছু নেই। ধীরে ধীরে হালকা ব্যায়ামের মাধ্যমে শুরু করুন এবং সময়ের সাথে সহনশীলতা বাড়ান। আপনার প্রতিদিনের রুটিনেই সহজ কিছু শারীরিক কার্যকলাপ যোগ করুন—যেমন: সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা, দোকানে যাওয়ার সময় কিছুটা হাঁটা ইত্যাদি। কোন ব্যায়াম থেকে বিরত থাকবেন? গর্ভাবস্থায় ঝুঁকিপূর্ণ ব্যায়াম যেমন—বক্সিং, ব্যাডমিন্টন, কারাতে ইত্যাদি এড়িয়ে চলাই ভালো। ভারী ধরনের নতুন এক্সারসাইজ শুরু করাও ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—আপনার শারীরিক অবস্থা ও গর্ভকালীন জটিলতা অনুযায়ী ব্যায়াম নির্বাচনের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। গর্ভাবস্থায় পুষ্টিকর খাবার খাওয়া: সুস্থ মা ও শিশুর জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গর্ভাবস্থায় আপনি যা খান, তার সরাসরি প্রভাব পড়ে আপনার অনাগত সন্তানের বিকাশ ও স্বাস্থ্যের উপর। অনেকেরই ধারণা, গর্ভধারণ করলেই ‘দুইজনের হয়ে খেতে হবে’। কিন্তু বাস্তবে এটি একটি ভুল ধারণা। দুইজনের হয়ে নয়, বরং একজনের জন্য পুষ্টিকর ও সুষম খাদ্য নির্বাচনই যথেষ্ট। গর্ভাবস্থায় খাদ্য নির্বাচন কেন গুরুত্বপূর্ণ? গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত চিনি, তেল ও চর্বিযুক্ত খাবার থেকে দূরে থাকাটা অত্যন্ত জরুরি। অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি যেমন ক্ষতিকর, ঠিক তেমনি অপুষ্টিও অনাগত শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখতে হলে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি, শাকসবজি, ফলমূল, প্রোটিন ও আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে। কোন মাসে কতটুকু অতিরিক্ত ক্যালরি প্রয়োজন? গর্ভাবস্থার বিভিন্ন পর্যায়ে আপনার ক্যালরির প্রয়োজন পরিবর্তিত হয়: প্রথম তিন মাসে (প্রথম ত্রৈমাসিক) – সাধারণত অতিরিক্ত খাবারের প্রয়োজন নেই। দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক (৪–৬ মাস) – প্রতিদিন গড়ে ৩৪০ ক্যালরি অতিরিক্ত প্রয়োজন। তৃতীয় ত্রৈমাসিক (৭–৯ মাস) – প্রতিদিন গড়ে ৪৫০ ক্যালরি অতিরিক্ত খাবার প্রয়োজন। 📌 এই ক্যালরি মান সাধারণভাবে স্বাভাবিক ওজনের একজন মায়ের জন্য প্রযোজ্য। ওজন কম বা বেশি হলে, কিংবা যমজ সন্তান ধারণ করলে এই হিসাব পরিবর্তিত হবে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াটা অত্যন্ত জরুরি। পুষ্টিকর খাবারের তালিকায় যা রাখবেন: দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার (ক্যালসিয়ামের উৎস)। ডিম ও মাছ (প্রোটিন ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের উৎস)। ডাল, শাকসবজি ও ফলমূল (আঁশ, আয়রন, ভিটামিন)। বাদাম ও বীজ (স্বাস্থ্যকর চর্বি)। 💡 গুরুত্বপূর্ণ টিপস: অতিরিক্ত খাওয়া নয়, বরং সঠিক পরিমাণে খাওয়া জরুরি। চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার কমিয়ে ঘরে রান্না করা খাবারে গুরুত্ব দিন। প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন। নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাদ্যাভ্যাস ঠিক রাখুন। নিয়মিত গর্ভকালীন চেকআপ: সুস্থ মা ও শিশুর জন্য অপরিহার্য গর্ভাবস্থার প্রতিটি মুহূর্ত একটি নারীর জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল। এই সময়টায় মা ও গর্ভের শিশুর সুস্থতা নিশ্চিত করতে নিয়মিত গর্ভকালীন চেকআপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা গর্ভকালীন নিয়মিত চেকআপে যাননি, তাদের মধ্যে প্রসবকালীন জটিলতা,

নরমাল ডেলিভারির সম্ভাবনা বৃদ্ধির উপায় Read More »

গর্ভাবস্থায় ঔষধ সেবনে সচেতনতা

medicine and pregnancy

গর্ভাবস্থাজীবনের একটি বিশেষ সময়, যা প্রতিটি মায়ের জন্য এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। এই সময় মায়ের স্বাস্থ্য সরাসরি গর্ভস্থ শিশুর স্বাস্থ্যের সাথে সম্পৃক্ত। তাই গর্ভাবস্থায় ঔষধ সেবনের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত। এসময় মায়ের শরীরে পরিবর্তন আসে এবং এই পরিবর্তনগুলোর উপর ভিত্তি করে ঔষধ গ্রহণের সঠিক পদ্ধতি ও সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। আসুন জেনে নিই কীভাবে গর্ভাবস্থায় ঔষধ সেবন সম্পর্কে সচেতন থাকবেন এবং নিজে ও আপনার শিশুকে সুস্থ রাখবেন। গর্ভাবস্থার পুরো সময় জুড়ে মায়ের শরীর নানা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়, আর এই পরিবর্তনগুলো সরাসরি শিশুর স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে। ঔষধের প্রতিক্রিয়াও ভিন্ন হতে পারে। গর্ভস্থ শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে, মায়ের ঔষধ গ্রহণের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নিয়মকানুন মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। ডাক্তারের পরামর্শ: ঔষধ গ্রহণের প্রথম শর্ত প্রতিদিনের ছোটখাটো অসুস্থতার জন্য আমরা অনেক সময় নিজে থেকেই ঔষধ সেবন করি। কিন্তু গর্ভাবস্থায় এ ধরনের নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেয়া ক্ষতিকর হতে পারে। সাধারণ সর্দি, কাশি, বা মাথাব্যথার মতো সমস্যার জন্যও ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ঔষধ গ্রহণ করা উচিত নয়। কারণ, অনেক ঔষধ গর্ভস্থ শিশুর বিকাশে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। সুতরাং, কোনও ধরনের চিকিৎসা শুরু করার আগে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা প্রয়োজন। প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ঔষধ গ্রহণ গর্ভাবস্থায় কোন ঔষধ সেবন করার আগে সেটি ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী গ্রহণ করতে হবে। প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী সঠিক ডোজ এবং নির্ধারিত সময় মেনে ঔষধ খাওয়া জরুরি। কারণ ডোজে কোন ধরনের পরিবর্তন হলে তা মা এবং শিশুর স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। প্রাকৃতিক ও হারবাল ঔষধ সেবনে সতর্কতা প্রাকৃতিক বা হারবাল ঔষধ অনেক সময় ক্ষতিকর হতে পারে। বেশিরভাগ মানুষ হারবাল ঔষধকে নিরাপদ মনে করেন, কিন্তু গর্ভাবস্থায় এটি মায়ের এবং শিশুর স্বাস্থ্যের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই যেকোনো প্রকার হারবাল ঔষধ সেবনের আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। গর্ভাবস্থার বিভিন্ন পর্যায়ে ঔষধ গ্রহণের বিশেষ সতর্কতা গর্ভাবস্থার সময়কে সাধারণত তিনটি ধাপে ভাগ করা হয়—প্রথম তিন মাস (প্রথম ট্রাইমেস্টার), মধ্যের তিন মাস (দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টার), এবং শেষের তিন মাস (তৃতীয় ট্রাইমেস্টার)। প্রতিটি ধাপে মায়ের ও শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষায় ভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। প্রথম তিন মাসের ঔষধ সেবন প্রথম তিন মাস গর্ভস্থ শিশুর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গঠনের সময়। এই সময় যেকোনো প্রকার ঔষধ সেবন করলে শিশুর শারীরিক বিকাশে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। তাই প্রথম তিন মাসে যে কোনো ঔষধ গ্রহণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সতর্ক থাকা জরুরি। মধ্যের তিন মাসের ঔষধ সেবন মধ্যের তিন মাস তুলনামূলকভাবে কম ঝুঁকিপূর্ণ হলেও, মায়ের শরীরের পরিবর্তনের সাথে সাথে শিশুর বৃদ্ধি এসময় দ্রুত হয়। এই সময় কোন ঔষধ গ্রহণ করতে হলে অবশ্যই চিকিৎসকের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। শেষ তিন মাসের ঔষধ সেবন শেষ তিন মাসেও সতর্কতার প্রয়োজন। যেকোনো প্রকার ঔষধ শিশুর জন্মের প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে। এছাড়া কিছু ঔষধ প্রিম্যাচিউর লেবার বা শিশুর প্রিম্যাচিউর জন্মের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। কোন ঔষধগুলি গর্ভাবস্থায় এড়িয়ে চলা উচিত গর্ভাবস্থায় কিছু ঔষধ গ্রহণ করলে তা মা ও শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। নিচে উল্লেখিত ঔষধগুলো এড়িয়ে চলা উচিত:  ১. অ্যাসপিরিন ও অন্যান্য ব্যথানাশকঃ অনেক ব্যথানাশক ঔষধ গর্ভস্থ শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। অ্যাসপিরিন, আইবুপ্রোফেন প্রভৃতি ঔষধ গ্রহণের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।  ২. অ্যান্টিবায়োটিকঃ অনেক ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক শিশুর অঙ্গপ্রত্যঙ্গের গঠনে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। তাই কোন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ গ্রহণ করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলা জরুরি।  ৩. অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টঃ যেসব ঔষধ মনের অবস্থার উন্নতি করতে ব্যবহৃত হয়, সেগুলি গর্ভস্থ শিশুর মানসিক ও শারীরিক বিকাশে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।  ৪. এন্টিহিস্টামিন ও ডিকঞ্জেস্ট্যান্টঃ যেকোনো ধরনের অ্যালার্জি বা ঠান্ডা জনিত ঔষধ সেবন করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা জরুরি। কিছু এন্টিহিস্টামিন ঔষধ গর্ভস্থ শিশুর উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ফার্মাসিস্টের পরামর্শে ঔষধ সেবন করবেন না বেশিরভাগ মানুষ ঔষধ ক্রয়ের জন্য ফার্মেসির ওপর নির্ভরশীল। তবে ফার্মাসিস্ট বা ফার্মেসির কর্মীরা সাধারণত চিকিৎসক নন এবং তারা মায়ের নির্দিষ্ট শারীরিক অবস্থা, রোগের ইতিহাস বা অন্যান্য বিবরণ সম্পর্কে জানেন না। এতে ভুল ঔষধ সেবন বা ডোজের ভুল হওয়ার ঝুঁকি থাকে, যা মা এবং শিশুর জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। তাই, ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ব্যতীত ঔষধ গ্রহণ করা উচিত নয়। গর্ভাবস্থায় নিরাপদ কিছু ঔষধ গর্ভাবস্থায় সব ঔষধ ঝুঁকিপূর্ণ নয়। কিছু সাধারণ সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নিরাপদ ঔষধ রয়েছে, তবে সেগুলি গ্রহণ করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। উদাহরণস্বরূপ:  প্যারাসিটামল: মাথাব্যথা বা জ্বরের ক্ষেত্রে প্যারাসিটামল নিরাপদ বলে ধরা হয়।  এন্টাসিড: গ্যাস্ট্রিক বা বুকজ্বালা কমাতে কিছু এন্টাসিড গ্রহণ করা যেতে পারে।  ভিটামিন ও আয়রন সাপ্লিমেন্ট: গর্ভাবস্থায় শরীরে পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করতে বিশেষ কিছু ভিটামিন এবং আয়রন সাপ্লিমেন্ট প্রয়োজন হতে পারে। গর্ভাবস্থায় সুস্থ থাকার কিছু সাধারণ পরামর্শ গর্ভাবস্থায় ঔষধ সেবনের পাশাপাশি নিজের শরীরের প্রতি বাড়তি যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। সুস্থ থাকতে কিছু সহজ পদক্ষেপ অনুসরণ করা যেতে পারে:  পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন: প্রতিদিন পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং ভালো ঘুম নিশ্চিত করুন।  পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ: স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মেনে চলুন এবং পুষ্টিকর খাবার খান।  হালকা ব্যায়াম: হালকা শরীরচর্চা করতে পারেন, তবে তা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী।  মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন: নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিন এবং কোনো মানসিক চাপ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। মায়ের স্বাস্থ্য যত ভালো থাকবে, গর্ভস্থ শিশুর স্বাস্থ্যও তত ভালো থাকবে। গর্ভাবস্থায় ঔষধ সেবনের ক্ষেত্রে সচেতন থাকাটা অত্যন্ত জরুরি। শিশুর সুস্থতা নিশ্চিত করতে হলে মাকে অবশ্যই নিজে সচেতন হতে হবে, নিজের শরীরের যত্ন নিতে হবে এবং ডাক্তারের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। সচেতন হোন, সুস্থ থাকুন এবং আপনার শিশুকে একটি স্বাস্থ্যকর জীবন উপহার দিন!

গর্ভাবস্থায় ঔষধ সেবনে সচেতনতা Read More »

গর্ভাবস্থায় আয়রন

Iron tablet

গর্ভাবস্থায় আয়রন একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান । গর্ভের শিশুর সঠিক বিকাশ ও সুস্থ প্রসবের জন্য গর্ভবতীর আয়রনের চাহিদা মেটানো খুব গুরুত্বপূর্ণ। আয়রন গর্ভাবস্থার সময় হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সাহায্য করে, যা রক্তের মাধ্যমে অক্সিজেন পরিবহনে সহায়ক। গর্ভাবস্থায় আয়রনের অভাব হলে অ্যানিমিয়া হতে পারে, যা মায়ের ক্লান্তি, দুর্বলতা এবং শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করতে পারে। গর্ভাবস্থায় আয়রন ট্যাবলেট এর উপকারিতা গর্ভাবস্থায় শরীরে আয়রনের চাহিদা অনেকটা বেড়ে যায়। এই চাহিদা সঠিকভাবে পূরণ করতে না পারলে তা আপনার ও গর্ভের শিশুর দেহে বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে— গর্ভাবস্থায় আয়রনের অভাবজনিত রক্তশূন্যতা (অ্যানিমিয়া)। অ্যানিমিয়া একটি সাধারণ সমস্যা যা মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। আয়রনের অভাবজনিত রক্তশূন্যতা হলে যে-সব লক্ষণ দেখা দেয়— ক্লান্ত অনুভব করা শরীরের শক্তি কমে যাওয়া অথবা দুর্বল লাগা শ্বাস নিতে গিয়ে হাঁপিয়ে ওঠা  বুক ধড়ফড় করা  ত্বক ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া আয়রনের অভাবজনিত রক্তশূন্যতা থেকে ‘পিকা’ নামের একটি সমস্যা হতে পারে। এই সমস্যা হলে খুবই অদ্ভুত জিনিস, অর্থাৎ খাবার নয় এমন কিছু খাওয়ার তীব্র ইচ্ছা হয়। যেমন: মাটি, কাগজ কিংবা দেয়ালের রং। এমন বোধ করলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। এ ছাড়াও গর্ভকালীন আয়রনের অভাবজনিত রক্তশূন্যতা মা ও শিশুর মৃত্যু ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। পর্যাপ্ত আয়রনের অভাবে গর্ভের শিশুর গঠন ও বিকাশ বাধাগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। ফলে আপনার শিশু জন্মের সময়ে এবং জন্মের পরেও বেশ কিছু সমস্যায় ভুগতে পারে। যেমন— নির্দিষ্ট সময়ের আগেই, অর্থাৎ প্রিম্যাচিউর অবস্থায় জন্ম নেওয়া জন্মের সময়ে স্বাভাবিকের তুলনায় কম ওজন হওয়া শিশুর স্বাভাবিক ব্যবহারগত ও বুদ্ধিবৃত্তিক আচরণগত বিকাশ বাধাগ্রস্ত হওয়া শিশুর শরীরে আয়রনের মাত্রা প্রয়োজনের চেয়ে কম হওয়া গর্ভাবস্থায় আয়রনযুক্ত খাবার খাওয়ার পাশাপাশি বাড়তি আয়রনের চাহিদা মেটাতে নিয়মমতো আয়রন ট্যাবলেট সেবন করলে তা মা ও গর্ভের শিশুকে বিভিন্ন স্বাস্থ্য জটিলতা থেকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় কতটুকু আয়রন ট্যাবলেট খাবেন? বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশনা মতে, গর্ভাবস্থায় আপনাকে দৈনিক ৬০ মিলিগ্রাম করে আয়রন ট্যাবলেট সেবন করতে হবে। তবে এটি নির্ভর করে মায়ের শারীরিক অবস্থা এবং রক্তশূন্যতার মাত্রার ওপর। ডাক্তার নির্দিষ্ট পরীক্ষার ভিত্তিতে সঠিক ডোজ নির্ধারণ করবেন। বাংলাদেশে গর্ভকালীন সময়ের জন্য আয়রন ও ফলিক অ্যাসিড একত্রে ‘আয়রন-ফলিক অ্যাসিড’ ট্যাবলেট হিসেবে কিনতে পাওয়া যায়। এতে গর্ভাবস্থার জন্য সঠিক পরিমাণে আয়রন যোগ করা থাকে। সেই সাথে ফলিক অ্যাসিড থাকে, যা শিশুর ব্রেইন ও স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশে সাহায্য করে এবং নানান জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধ করে। উল্লেখ্য, আয়রনের অভাবজনিত রক্তশূন্যতার মতো কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে ডাক্তার আপনাকে ৬০ মিলিগ্রামের বেশি ডোজে আয়রন সেবনের পরামর্শ দিতে পারেন গর্ভাবস্থায় আয়রন ট্যাবলেট কখন ও কীভাবে খাবেন ? গর্ভাবস্থার শুরু থেকে প্রসব পরবর্তী তিন মাস পর্যন্ত আপনাকে দৈনিক ৬০ মিলিগ্রাম আয়রনযুক্ত ট্যাবলেট সেবন করতে হবে। সন্তান জন্মদানের তিন মাস পর পর্যন্ত আয়রন সেবন চালিয়ে যেতে হবে। আয়রন ট্যাবলেট খাবার নিয়ম আয়রন-ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট খালি পেটে খেলে এটি সবচেয়ে ভালোভাবে কাজ করে। তাই খাবার খাওয়ার এক ঘণ্টা আগে বা খাবার শেষ হওয়ার দুই ঘণ্টা পরে এক গ্লাস পানির সঙ্গে এই ট্যাবলেট গ্রহণ করা উচিত। পানির পরিবর্তে এক গ্লাস কমলার রস বা লেবুর শরবতও ব্যবহার করা যেতে পারে, কারণ এতে থাকা ভিটামিন সি শরীরকে আয়রন শোষণে সাহায্য করে। তবে, খালি পেটে আয়রন-ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট খেলে অনেকের ক্ষেত্রে পেটে অস্বস্তি হতে পারে। যদি এমন হয়, তাহলে ডাক্তার আপনাকে খাবারের সাথে বা খাওয়ার পরপরই ট্যাবলেট সেবনের পরামর্শ দিতে পারেন। সতর্কতা আয়রন-ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেটের সাথে একই সময়ে অ্যান্টাসিড অথবা ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাবেন না। এতে আয়রনের কার্যকারিতা কমে যায়। অ্যান্টাসিড অথবা ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়ার অন্তত ১ ঘণ্টা আগে অথবা ২ ঘণ্টা পরে আয়রন ট্যাবলেট খাবেন। এ ছাড়াও কিছু কিছু খাবার শরীরে আয়রন শোষণের হার কমিয়ে ফেলতে পারে। আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার সময়ে এসব খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। এমন কিছু খাবার হলো—  চা ও কফি ডিম দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার সয়াবিনযুক্ত খাবার আয়রন ট্যাবলেট সেবনের ক্ষেত্রে যে চারটি বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে — আপনি আগে থেকেই শুধুমাত্র আয়রন অথবা কোনো মাল্টিভিটামিন সেবন করে থাকলে, তা ডাক্তারকে জানাবেন৷ ডাক্তারের সুনির্দিষ্ট পরামর্শ ছাড়া কয়েক ধরনের মাল্টিভিটামিন, আয়রন ও ফলিক অ্যাসিড একত্রে সেবন করা থেকে বিরত থাকবেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গর্ভকালীন সময়ে যে-সব মাল্টিভিটামিন ট্যাবলেট সেবনের পরামর্শ দেওয়া হয়, সেসবে আয়রন যোগ করা থাকে। তাই গর্ভাবস্থায় ডাক্তার আপনাকে প্রয়োজনীয় পরিমাণে আয়রন-ফলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ মাল্টিভিটামিন ট্যাবলেট সেবনের পরামর্শ দিয়ে থাকলে আলাদা করে আয়রন ট্যাবলেট সেবনের প্রয়োজন নেই। গর্ভাবস্থায় প্রয়োজনীয় পরিমাণে আয়রন ও ফলিক অ্যাসিড একত্রে ‘আয়রন-ফলিক অ্যাসিড’ ট্যাবলেট হিসেবে পাওয়া যায়। এই ট্যাবলেট গর্ভাবস্থায় একই সাথে আয়রন ও ফলিক এসিডের চাহিদা পূরণ করে। তাই এটি সেবন করলে, কোনো বিশেষ প্রয়োজন (যেমন: আয়রনের অভাবজনিত রক্তশূন্যতা) ছাড়া আলাদা করে শুধু আয়রন ট্যাবলেট অথবা সিরাপ সেবনের প্রয়োজন নেই। নিয়মিত ‘আয়রন-ফলিক অ্যাসিড’ ট্যাবলেট সেবনের পরেও আপনার রক্তশূন্যতার লক্ষণ দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শে রক্ত পরীক্ষা করাবেন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করবেন। গর্ভাবস্থায় আপনি অন্য যেকোনো ঔষধ সেবন করলে ডাক্তারকে সেই ঔষধের নাম ও ডোজটি জানান। অনেকসময় আয়রনের সাথে অন্যান্য ঔষধের প্রতিক্রিয়া হতে পারে। সেক্ষেত্রে ডোজ কমানো কিংবা বাড়ানোর প্রয়োজন হতে পারে। আয়রন ট্যাবলেট এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আয়রন ট্যাবলেট সেবনের ফলে কারও কারও ক্ষেত্রে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে হতে পারে। যেমন— কোষ্ঠকাঠিন্য পাতলা পায়খানা পেট ব্যথা অ্যাসিডিটি, বুক জ্বালাপোড়া করা বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বমি বমি ভাব ও বমি কালচে পায়খানা ড্রপের ক্ষেত্রে দাঁত কালচে হয়ে যাওয়া যদিও খালি পেটে আয়রন ট্যাবলেট খাওয়া ভালো, তবুও পেট ব্যথা কিংবা পাতলা পায়খানার সমস্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য খাবারের সাথে অথবা খাওয়ার ঠিক পর পরই আয়রন ট্যাবলেট সেবন করতে পারেন। সেই সাথে পর্যাপ্ত পানি ও ফাইবারযুক্ত খাবার খাবেন। এতে করে আয়রন ট্যাবলেটজনিত কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও কিছুটা কমতে পারে। তবে আপনার এসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলেও ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ঔষধ খাওয়া বন্ধ করবেন না। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলেও এই ঔষধ সেবন চালিয়ে যাওয়া খুব জরুরি। আপনার যদি খুব বেশি সমস্যা বা অস্বস্তি হয়, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। ডাক্তার আপনাকে অন্য ব্র‍্যান্ডের ঔষধ কিংবা ট্যাবলেটের বদলে ইনজেকশন হিসেবে আয়রন গ্রহণের পরামর্শ দিতে পারে। তবে নিজে নিজে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ঔষধ বদল করে ফেলবেন না। এ ছাড়াও যদি আপনার অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন দেখা দেয় তাহলে ঔষধ সেবন বন্ধ করে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। গর্ভাবস্থায় আয়রন সমৃদ্ধ খাবার আয়রন ট্যাবলেট সেবনের পাশাপাশি আপনাকে নিয়মিত আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে, শুধুমাত্র এসব খাবার দিয়ে সাধারণত গর্ভাবস্থায় আয়রনের বাড়তি চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয় না। কিছু আয়রন সমৃদ্ধ খাবার হলো— মাংস, বিশেষত গরু ও খাসির মাংসের মতো ‘রেড মিট’ বিভিন্ন ডাল। যেমন: ছোলা, মাষকলাই, মুগ ও মসুর চিনাবাদাম, কাজুবাদাম ও পেস্তাবাদাম মটর ও মটরশুঁটি শুকনো ফল। যেমন: খেজুর, নারিকেল (শুকনা) ও আখরোট বিভিন্ন মাছ। যেমন: চাপিলা, ট্যাংরা, কাচকি, মলা, টাটকিনি, শিং, ফেসা ও চেলা ডিম দুধ ও পনির বিভিন্ন শাক। যেমন: পাট শাক,

গর্ভাবস্থায় আয়রন Read More »

প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট ব্যবহারের নিয়ম

pregnancy kit use

প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট হলো একটি সহজ এবং সুবিধাজনক উপায় যা মহিলাদের গর্ভধারণের বিষয়টি দ্রুত নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। এটি মূলত প্রস্রাবের মাধ্যমে HCG (Human Chorionic Gonadotropin) হরমোন সনাক্ত করে, যা গর্ভধারণের সময় শরীরে উৎপন্ন হয়। এই আর্টিকেলে আমরা প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট ব্যবহারের সঠিক নিয়ম নিয়ে আলোচনা করব। প্রস্তুতকারকভেদে প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিটের ব্যবহারবিধি কিছুটা ভিন্ন হতে পারে। কিটের প্যাকেটের ভেতরের নির্দেশিকায় কীভাবে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে হবে সেটি বিস্তারিতভাবে লেখা থাকে। নির্দেশিকা অনুসরণ করে আপনি সহজেই ঘরে বসে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করে ফেলতে পারবেন। সচরাচর যেসব প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট পাওয়া যায়, সেগুলোর প্যাকেটের ভেতরে একটি লম্বা কাঠি বা বক্স থাকে। তাতে একটি ‘S’ লেখা ঘর থাকে। এ ঘরে আপনাকে কয়েক ফোঁটা প্রস্রাব দিয়ে কয়েক মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। তারপর বক্সের ‘C’ ও ‘T’ লেখা অন্য দুইটি ঘরের দিকে লক্ষ রাখতে হবে। শুধু ‘C’ ঘরে একটি দাগ দেখা গেলে পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ, অর্থাৎ আপনি হয়তো গর্ভবতী না। আর ‘C’ ও ‘T’ দুইটি ঘরেই দাগ দেখা গেলে ফলাফল পজিটিভ, অর্থাৎ আপনি গর্ভবতী। প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট কীভাবে কাজ করে? প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিটের মাধ্যমে প্রস্রাবে ‘বেটা হিউম্যান কোরিওনিক গোনাডোট্রপিন’ নামের একটি বিশেষ হরমোনের উপস্থিতি নির্ণয় করা হয়। গর্ভবতী নারীদের প্রস্রাবে এই হরমোনের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। যা কিটের মাধ্যমে শনাক্ত করা যায়। টেস্ট কিট দিয়ে প্রস্রাবে এই হরমোনের উপস্থিতি শনাক্ত করা গেলে সেই ফলাফলকে ‘পজিটিভ’ বলে। আর শনাক্ত করার মতো যথেষ্ট পরিমাণ হরমোন না পাওয়া গেলে তাকে ‘নেগেটিভ’ বলে। ফলাফল পজিটিভ আসলে তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নির্ভুল হয়ে থাকে। তাই ফলাফল পজিটিভ আসলে একজন গাইনী ডাক্তার অথবা হাসপাতালে গিয়ে গর্ভাবস্থায় করণীয় সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিটের ফলাফল কি নির্ভরযোগ্য? সাধারণত সঠিক নিয়মে পরীক্ষা করলে প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সঠিক তথ্য দেয়।তবে প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিটের ফলাফল হিসাবের সময়ে নিচের বিষয়গুলো মাথায় রাখা জরুরি— গর্ভধারণের ছয় দিন পর থেকেই শরীরে ‘বেটা হিউম্যান কোরিওনিক গোনাডোট্রপিন’ নামের বিশেষ হরমোন তৈরি হতে শুরু করে। তবে অনেক ক্ষেত্রে আট-দশ দিন সময়ও লাগতে পারে। গর্ভাবস্থার শুরুর দিকে শরীরে এই হরমোনের পরিমাণ তুলনামূলক কম থাকে। ধীরে ধীরে এই হরমোনের পরিমাণ বাড়তে থাকে। তাই অনেকক্ষেত্রেই গর্ভাবস্থার একেবারে শুরুর দিকে কিট দিয়ে পরীক্ষা করলে গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রেও ফলাফল নেগেটিভ আসতে পারে। অনেকেই অনিয়মিত মাসিকের সমস্যায় ভোগেন। ফলে তারা মাসিকের সম্ভাব্য তারিখ ঠিকমতো হিসাব করতে পারেন না। সেক্ষেত্রে অনেকেই পর্যাপ্ত পরিমাণ হরমোন তৈরি হওয়ার আগেই টেস্ট করে ফেলতে পারেন। এমন হলেও গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রেও টেস্টের ফলাফল নেগেটিভ আসতে পারে। এ ছাড়াও প্যাকেটের নির্দেশনা ঠিকমতো না মেনে পরীক্ষা করলে গর্ভবতী হলেও ভুলবশত কিট টেস্টের ফলাফল নেগেটিভ আসতে পারে। তাই টেস্টের ফলাফল নেগেটিভ আসার পরেও আপনার পিরিয়ড না হলে অথবা আপনার নিজেকে গর্ভবতী মনে হলে কয়েকদিন পর আবার প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে পারেন। দ্বিতীয়বার টেস্টের ফলাফল নেগেটিভ আসার পরেও যদি আপনার পিরিয়ড না হয় তাহলে দ্রুত কোনো গাইনী ডাক্তার অথবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কিংবা সদর হাসপাতালে যেতে হবে। সেখানে আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আপনি গর্ভবতী কি না সেই বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারবেন।

প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট ব্যবহারের নিয়ম Read More »

গর্ভাবস্থা নিয়ে প্রচলিত কুসংস্কার

Myth vs Fact

গর্ভকালীন সময়টি একজন নারীর জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়টিতে মায়ের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বজায় রাখা অপরিহার্য। তবে আমাদের সমাজে গর্ভকালীন সময় নিয়ে অনেক কুসংস্কার ও ভুল ধারণা প্রচলিত আছে, যা অনেক ক্ষেত্রেই গর্ভবতী নারীদের উদ্বিগ্ন করে তোলে এবং ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে প্ররোচিত করে। প্রথমেই বলতে হয়, গর্ভাবস্থার শুরুর দিকে অনেক মা-ই জানেন না কোন বিষয়গুলো তাদের এবং গর্ভের সন্তানের জন্য ভালো বা খারাপ হতে পারে। অনেক সময় পরিবারের লোকজন কিংবা আশেপাশের মানুষজনের কাছ থেকে নানা পরামর্শ এবং গুজব শোনা যায়, যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিজ্ঞানের ভিত্তিতে নয় বরং কুসংস্কারের ওপর নির্ভরশীল। এই সময়ে একজন মায়ের উচিত চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা এবং সঠিক তথ্য জেনে নিজেকে ও গর্ভস্থ শিশুকে সুরক্ষিত রাখা। কুসংস্কারের পরিবর্তে বিজ্ঞানসম্মত পরামর্শ গ্রহণ করাই হবে সঠিক পথ। আমাদের দেশে গর্ভাবস্থার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রচুর কুসংস্কার বা মিথ প্রচলিত রয়েছে, যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসছে। গর্ভবতী নারীরা সাধারণত পরিবারের বয়স্ক সদস্যদের কাছ থেকে বিভিন্ন পরামর্শ পান, যা কখনো কখনো সঠিক হলেও, অনেক সময় বিজ্ঞানসম্মত নয় এবং ক্ষতিকরও হতে পারে। গর্ভবতীর পেটের আকৃতি দেখে গর্ভের শিশু ছেলে না মেয়ে তা কি বোঝা সম্ভব? গর্ভাবস্থায় পেট নিচের দিকে বড় হলে ছেলে এবং ওপরের দিকে বড় হলে বা উঁচু হলে মেয়ে সন্তান হবে—এমনটা অনেকে বলে থাকেন। বিজ্ঞান যা বলে: এই ধারণার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। একজন গর্ভবতী নারীর বাড়ন্ত পেট ওপরের দিকে অথবা নিচের দিকে বাড়ার সাথে তার গর্ভের সন্তান মেয়ে কিংবা ছেলে হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। প্রকৃতপক্ষে একজন নারী যতবার গর্ভধারণ করেন, তার পেটের পেশিগুলো তত বেশি প্রসারিত হয়। তাই কেউ প্রথমবারের মতো গর্ভধারণ করলে গর্ভাবস্থায় তার পেট হয়তো খুব বেশি নিচে নামে না। এমনকি উঁচু হয়েও থাকতে পারে। এ ছাড়া কারও পেটের পেশিগুলো অপেক্ষাকৃত শক্ত হলে তার বাড়ন্ত পেট কিছুটা উঁচু হয়ে থাকতে পারে। এক্ষেত্রে তার গর্ভের শিশু ছেলে অথবা মেয়ে—যে কোনোটিই হতে পারে। গর্ভের শিশুর হার্টরেট গুণে শিশুটি ছেলে না মেয়ে তা বোঝা যায় বিজ্ঞান যা বলে: এই ধারণাটি ভুল। একথা সত্য যে জন্মের পর ছেলে সন্তানের চেয়ে মেয়ে সন্তানের হার্টরেট সাধারণত বেশি হয়। তবে গর্ভে থাকাকালীন সময়ে ছেলে ও মেয়ে শিশুর হার্টরেটে তেমন কোনো পার্থক্য থাকে না। তাই গর্ভের শিশুর হার্টরেট গুণে শিশুটি ছেলে না কি মেয়ে তা বোঝা সম্ভব নয়। ছেলে কিংবা মেয়ে হোক, গর্ভকালের একেক পর্যায়ে গর্ভের শিশুর হার্টরেট একেক রকম হয়। যেমন, গর্ভাবস্থার পঞ্চম সপ্তাহে গর্ভের শিশুর হার্ট মিনিটে ৮০–৮৫ বার স্পন্দিত হয়। এটা নবম সপ্তাহের প্রথমদিক পর্যন্ত বাড়তে বাড়তে মিনিটে ১৭০–২০০ হার্টবিটে পৌঁছে। এরপর হার্টরেট কমতে শুরু করে। গর্ভাবস্থার মাঝামাঝি সময়ে পৌঁছাতে পৌঁছাতে এটা কমে দাঁড়ায় মিনিটে ১২০–১৬০ হার্টবিট (গড়) পর্যন্ত। প্রসবের সময়ে ছেলে ও মেয়ে শিশু উভয়ের হার্টবিট থাকে মিনিটে ১২০–১৬০। গর্ভাবস্থায় বমিভাব বেশি হলে গর্ভের শিশু মেয়ে হয় বিজ্ঞান যা বলে: শুনতে অবাক লাগলেও এই ধারণা সত্য হতে পারে। কিছু কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, যেসব গর্ভবতী নারীরা গর্ভে মেয়ে শিশু অথবা যমজ শিশু ধারণ করেন, তাদের গর্ভাবস্থায় বমি বমি ভাব হওয়ার সম্ভাবনা কিছুটা বেশি। এর সম্ভাব্য কারণ হিসেবে ধারণা করা হয়েছে যে, গর্ভে মেয়ে শিশু থাকলে এইচসিজি হরমোনের পরিমাণের তারতম্যের কারণে গর্ভবতী নারীর বমি বমি ভাব বাড়তে পারে। তবে এই তথ্যটি এখনো শক্তভাবে প্রমাণিত হয়নি। গর্ভাবস্থায় মা ও অনাগত শিশু দুজনের সমপরিমাণ খাবার খেতে হয় বিজ্ঞান যা বলে: গর্ভাবস্থায় দুইজনের সমপরিমাণ বা স্বাভাবিকের দ্বিগুণ পরিমাণ খাবার খেতে হবে—এই কথার কোনো ভিত্তি নেই। বরং এই পরামর্শ মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। গর্ভাবস্থায় কতটুকু খাবার বেশি খেতে হবে তা বেশ কিছু বিষয়ের ওপর নির্ভর করতে পারে। যেমন: আপনার ওজন, আপনার উচ্চতা, আপনি দৈনিক কী পরিমাণ কাজ করছেন অথবা আপনার গর্ভাবস্থার কততম মাস চলছে। গর্ভকালীন প্রথম তিন মাসে সাধারণত বাড়তি খাবারের প্রয়োজন হয় না। তবে এর পরের মাসগুলোতে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কিছুটা বেশি খাবার খেতে হবে। এসময়ে একই ধরনের খাবার বেশি পরিমাণে খেয়ে পূরণ না করে বিভিন্ন ধরনের খাবার থেকে মেটানো উচিত। প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় বৈচিত্র্য থাকলে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদানের চাহিদা পূরণ হবে। গর্ভাবস্থায় টক জাতীয় খাবার খেলে গর্ভপাত হবে বিজ্ঞান যা বলে: টক জাতীয় খাবারের সঙ্গে গর্ভপাতের আসলে কোনো সম্পর্ক নেই। টক জাতীয় খাবার ভিটামিন সি সমৃদ্ধ, এতে অনেক ধরনের খনিজ এবং ভিটামিন রয়েছে। যা মুখের স্বাদ ও রুচি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। তবে বেশি টক খেলে হাইপার এসিডিটির সমস্যা হতে পারে। গর্ভাবস্থায় পেঁপে ও আনারস খেলে গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ে বিজ্ঞান যা বলে: গর্ভাবস্থায় সাধারণত বেশি বেশি ফলমূল খেতে উৎসাহিত করা হয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। যেমন, গর্ভাবস্থায় কাঁচা অথবা আধাকাঁচা পেঁপে না খাওয়াই ভালো। কাঁচা পেঁপেতে উচ্চমাত্রায় ল্যাটেক্স থাকে। ইঁদুরের ওপর করা গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, ল্যাটেক্স জরায়ুর শক্তিশালী সংকোচন করে থাকে। তাই বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, কাঁচা পেঁপে খেলে সেটি গর্ভের শিশুর জন্য নিরাপদ না-ও হতে পারে। তবে পাকা পেঁপে খেতে কোনো সমস্যা নেই। পাকা পেঁপে ভিটামিন সি-সহ বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদানের একটি ভালো উৎস। অনেকে হয়তো শুনে থাকবেন যে আনারস খেলে গর্ভপাত হয়। এই ধারণার পক্ষে কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি। গর্ভাবস্থায় খাসির মাংস খেলে বাচ্চার শরীর থেকে বাজে গন্ধ বের হবে বিজ্ঞান যা বলে: খাসির মাংস খাওয়ার সাথে শিশুর শরীর থেকে বাজে গন্ধ বের হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। খাসির মাংস প্রোটিন ও আয়রনের উৎকৃষ্ট একটি উৎস। এসবের চাহিদা মেটাতে গর্ভবতী মায়েদের ভালোমতো সিদ্ধ করা খাসির মাংস খাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। তবে গরু, খাসি ও ছাগলের মাংসে তুলনামূলকভাবে বেশি চর্বি থাকে। অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার খেলে মায়ের অস্বাস্থ্যকর ওজন বাড়ার পাশাপাশি হার্টের রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই গরু-খাসির মাংস অনেক বেশি না খেয়ে পরিমিত পরিমাণে খাবেন। খাওয়ার সময়ে চর্বি ছাড়া মাংসের টুকরা বেছে নেওয়ার চেষ্টা করবেন। উল্লেখ্য, প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে খাসির মাংসের পাশাপাশি মাছ, ডিম, ডাল ও মুরগির মাংস বেছে নিতে পারেন। গর্ভাবস্থায় যমজ কলা খেলে যমজ সন্তান হবে বিজ্ঞান যা বলে: গর্ভাবস্থায় যমজ কলা অথবা অন্য কোনো ফল খেলে যমজ সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়—এমন ধারণা প্রচলিত আছে। তবে এর সপক্ষে কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। গবেষণায় পাওয়া গিয়েছে যে, কিছু বিষয় যমজ সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা বাড়াতে কিংবা কমাতে পারে। যেমন, ৩৫ বছরের পরে গর্ভধারণ করলে যমজ সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। কৃত্রিমভাবে গর্ভধারণের ক্ষেত্রেও যমজ সন্তান হওয়ার ঘটনা বেশি দেখা যায়। পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাসের সাথেও যমজ সন্তান হওয়ার সম্পর্ক থাকতে পারে। বিশেষ করে যারা দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার বেশি খান, তাদের মাঝে যমজ সন্তান হওয়ার ঘটনা বেশি দেখা গেছে।এ ছাড়া উচ্চতা, ওজন ও জেনেটিক কারণেও যমজ সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা বাড়তে কিংবা কমতে পারে। গর্ভাবস্থায় এক্সারসাইজ করা উচিত নয় বিজ্ঞান যা বলে: গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, গর্ভাবস্থায় নিয়মিত ব্যায়াম

গর্ভাবস্থা নিয়ে প্রচলিত কুসংস্কার Read More »

প্রেগন্যান্সি টেস্ট কখন ও কিভাবে করবেন

Pregnancy Test

গর্ভবতী হওয়ার সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ হলো পিরিয়ড মিস হওয়া। কিন্তু কোনো নারীর পিরিয়ড মিস হয়েছে মানেই যে সে গর্ভধারণ করেছে, এমনটা ধরে নেওয়া যাবে না। আরও অনেক কারণেই পিরিয়ড মিস হতে পারে। গর্ভধারণের প্রথম মাসে গর্ভবতী হওয়ার তেমন কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না। তাই এসময়ে লক্ষণের ভিত্তিতে গর্ভাবস্থা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া বেশ কঠিন। এই অবস্থায় আপনি গর্ভধারণ করেছেন কি না সেটি জানার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উপায় হলো কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা। এসব পরীক্ষাকে ‘প্রেগন্যান্সি টেস্ট’ বলা হয়। আপনি ডাক্তার অথবা স্বাস্থ্যকর্মীর কোনো রকম সাহায্য ছাড়া ঘরে বসেই প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে পারবেন। যে কিটের মাধ্যমে এই পরীক্ষা করা হয় তার নাম প্রেগন্যান্সি কিট। এটি ফার্মেসি বা সুপার শপে কিনতে পাওয়া যায়।যত তাড়াতাড়ি গর্ভধারণের ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারবেন, তত দ্রুত আপনার ও গর্ভের শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনাগুলো মেনে চলা শুরু করতে পারবেন। কখন প্রেগন্যান্সি টেস্ট করবেন ? আপনার পিরিয়ডের সম্ভাব্য সময়ের মধ্যে যদি পিরিয়ড শুরু না হয় এবং আপনি জন্মনিরোধক পদ্ধতি (যেমন: কনডম, পিল বা বড়ি ও ইনজেকশন) ব্যবহার ছাড়া সহবাস করে থাকেন, তাহলে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে পারেন। পিরিয়ড মিস হওয়ার প্রথম দিনই আপনি প্রেগন্যান্সি টেস্ট করে গর্ভবতী কি না সেটি জেনে নিতে পারেন। প্রেগন্যান্সি টেস্টে সাধারণত গর্ভবতী নারীদের প্রস্রাবে একটি হরমোনের উপস্থিতি নির্ণয় করা হয়। গর্ভবতী নারীদের প্রস্রাবে এই হরমোনের পরিমাণ শুরুর দিকে অল্প পরিমাণে থাকে। তাই গর্ভধারণের একদম শুরুর দিকে অথবা সহবাসের পর পরই এই টেস্ট করলে সাধারণত হরমোনের উপস্থিতি সঠিকভাবে নির্ণয় করা সম্ভব হয় না। এজন্য সহবাসের পর কমপক্ষে ২১ দিন অথবা পরবর্তী মাসিকের সম্ভাব্য তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। অনিয়মিত পিরিয়ডের ক্ষেত্রে, আপনার ধারণা করা পিরিয়ড শুরু হওয়ার তারিখের থেকে প্রায় ৩ সপ্তাহ পর প্রেগন্যান্সি টেস্ট করবেন । বর্তমানে কিছু আধুনিক প্রেগন্যান্সি টেস্টের মাধ্যমে পিরিয়ডের সম্ভাব্য তারিখ আসার অনেক আগে, এমনকি গর্ভধারণের নয় দিনের মধ্যেই আপনি গর্ভধারণ করেছেন কি না সেটি নিশ্চিতভাবে জানা যায়। কিভাবে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করবেন? প্রেগন্যান্সি টেস্ট করার অনেকগুলো উপায় আছে। এর মধ্যে প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট বা কাঠি দিয়ে আপনি সবচেয়ে সহজ ও কম খরচে ঘরে বসেই টেস্ট করতে পারবেন। সাধারণত নির্দিষ্ট সময়ে পিরিয়ড না হলে প্রথমেই প্রেগন্যান্সি কিটের সাহায্যে টেস্ট করা হয়ে থাকে। ফার্মেসিতে ৩০–১০০ টাকার মধ্যে বিভিন্ন কোম্পানির প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট পাওয়া যায়। এ ছাড়াও ডাক্তারের কাছে গিয়ে রক্ত পরীক্ষা, প্রস্রাব পরীক্ষা ও আলট্রাসাউন্ড পরীক্ষার মাধ্যমে আপনি গর্ভবতী কি না সেই বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারবেন। পাশাপাশি গর্ভের সন্তানের হৃৎপিণ্ডের কার্যক্রমও হয়তো শনাক্ত করা যেতে পারে।

প্রেগন্যান্সি টেস্ট কখন ও কিভাবে করবেন Read More »

প্রেগন্যান্সির লক্ষণ

গর্ভধারণ একটি বিশেষ মুহূর্ত যা প্রত্যেক মহিলার জীবনে এক অনন্য অভিজ্ঞতা নিয়ে আসে। গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণগুলি প্রত্যেক মহিলার ক্ষেত্রে একটু আলাদা হতে পারে, তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছে যা অধিকাংশ মহিলার মধ্যে দেখা যায়।সাধানণত গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহে কোনো সুনির্দিষ্ট লক্ষণ থাকে না এমনকি ১ মাস পর্যন্ত মায়েরা বুঝতেই পারেন না যে তারা গর্ভধারণ করেছেন। প্রথম যে লক্ষণটি গর্ভবতী মায়েরা খেয়াল করে তা হলো পিরিয়ড বাদ যাওয়া। উল্লেখ্য, গর্ভবতী নারীর সর্বশেষ মাসিকের প্রথম দিন থেকে তার গর্ভকালের শুরু ধরা হয়। আপনি প্রেগন্যান্ট কি না কীভাবে বুঝবেন? গর্ভবতী হওয়ার প্রথম এবং প্রধান লক্ষণ হলো পিরিয়ড বন্ধ হওয়া। এ ছাড়া কারো কারো ক্ষেত্রে আরও কিছু লক্ষণ উপস্থিত থাকতে পারে। যেমন: যোনিপথ দিয়ে হালকা রক্তপাত মাথা ঘুরানো চাপ দিলে স্তনে ব্যথা অনুভব করা বমি বমি লাগা ক্লান্তি অনুভব করা পেটে অস্বস্তি বা পেট ফাঁপা হয়েছে এমন মনে হওয়া সাদা স্রাবের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া পিরিয়ড বা মাসিকের ব্যথার মতো তলপেটে মোচড় দিয়ে ব্যথা হওয়া ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ আসা প্রিয় কোনো খাবারে অরুচি কিংবা নতুন কোনো খাবারের প্রতি তীব্র আকাঙ্ক্ষা মুখে অদ্ভুত স্বাদ পাওয়া প্রখর ঘ্রাণশক্তি এসব লক্ষণ থাকলেই যে আপনি গর্ভবতী তা সুনিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়। কেননা এমন কিছু লক্ষণ কারও কারও ক্ষেত্রে মাসিকের আগে আগে দেখা দেয়। যেমন: স্তনে ব্যথা, পেট ফাঁপা ও কোনো খাবারের প্রতি তীব্র আকাঙ্ক্ষা। আবার অনেকের ক্ষেত্রে প্রেগন্যান্ট হওয়ার পর পর তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। ফলে গর্ভধারণের ব্যাপারটা আঁচ করতে দেরি হয়। আপনি গর্ভবতী কি না তা জানার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি হল প্রেগন্যান্সি টেস্ট করা।  মিলনের কতদিন পর প্রেগন্যান্সি টেস্ট করবেন ? আপনার যদি কোনো মাসের পিরিয়ড বাদ যায় এবং আপনি যদি এর আগের সময়ে অনিরাপদ সহবাস করে থাকেন, অর্থাৎ কোনো জন্মনিরোধক (কনডম, পিল বা বড়ি, ইনজেকশন) ব্যবহার না করে সহবাস করে থাকেন, সেক্ষেত্রে যখনই দেখবেন যে নির্দিষ্ট তারিখে পিরিয়ড শুরু হয়নি তখনি আপনি প্রেগন্যান্সি টেস্ট করে নিতে পারেন। আপনার যদি পিরিয়ড শুরু হওয়ার সম্ভাব্য তারিখটি জানা না থাকে তাহলে অনিরাপদ সহবাসের কমপক্ষে ২১ দিন পরে টেস্ট করেও আপনি জেনে নিতে পারবেন আপনি গর্ভধারণ করেছেন কি না। এ ছাড়া আজকাল অনেক উন্নত প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট পাওয়া যায়, যার সাহায্যে গর্ভধারণের নয় দিন পরেই আপনি গর্ভবতী হয়েছেন কি না তা জানা সম্ভব। প্রেগন্যান্সি টেস্ট কীভাবে করবেন ? আপনি প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিটের সাহায্যে খুব সহজে ঘরে বসেই জেনে নিতে পারেন আপনি গর্ভবতী কি না। এই কিটগুলো আপনি সাধারণ ওষুধের দোকান বা ফার্মেসি থেকেই কিনতে পারবেন। দিনের যেকোনো সময়ের প্রস্রাবের নমুনা নিয়ে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করা যায়। প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট/স্টিকের উপর প্রস্রাব করার পর সাধারণত কয়েক মিনিটের মধ্যেই ফলাফল দেখায়। একেকটি টেস্ট কিটের ধরন একেকরকম, তাই ব্যবহারের আগে অবশ্যই বক্সের গায়ে লেখা নির্দেশাবলি ভালোমতো পড়ে নিবেন। এ ছাড়া নিকটস্থ কোনো ক্লিনিক, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, হাসপাতাল বা গাইনি ডাক্তারের চেম্বারে গিয়েও আপনি প্রেগন্যান্সি টেস্ট করাতে পারেন।  গর্ভবতী নিশ্চিত হলে করণীয় কী? গর্ভাবস্থা নিশ্চিত হওয়ার পরপরই একজন স্বাস্থ্যকর্মী বা সম্ভব হলে একজন গাইনি ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন। প্রথম আল্ট্রাসাউন্ড, রক্ত পরীক্ষা, এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে নিন। ডাক্তার যে-সব পরামর্শ দিবে সেসব মেনে চলবেন। গর্ভাবস্থার শুরুতে নিচের বিষয়গুলো মেনে চলার পরামর্শ দেয়া হয়– গর্ভবতী হওয়ার প্রথম ৩ মাস বা ১২তম সপ্তাহ পর্যন্ত দৈনিক ৪০০ মাইক্রোগ্রাম ফলিক অ্যাসিড সেবন করতে হবে। ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট আকারে পাওয়া যায়। দৈনিক ১০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন ডি ট্যাবলেট সেবন করতে পারেন। গর্ভাবস্থায় নানান রকম ইনফেকশনের ঝুঁকি থাকে। তাই এসময় কাঁচা বা ভালোভাবে রান্না হয়নি এমন খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। গর্ভের শিশুর সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে অবশ্যই ধূমপান, অতিরিক্ত চা-কফি পান, মদপান করা এড়িয়ে চলা উচিত। পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করবেন । কিছু কিছু ওষুধ গর্ভাবস্থায় ক্ষতিকর হতে পারে। তাই কোন ধরনের ওষুধ গ্রহণ করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন ।

প্রেগন্যান্সির লক্ষণ Read More »

গর্ভের শিশুর ব্রীচ পজিশন

breech position

গর্ভে বেশিরভাগ শিশুই ডেলিভারির আগে মাথা নীচের দিকে এবং পা ওপরের দিকে দিয়ে রাখে।  এই অবস্থানকে ডাক্তারি ভাষায় ‘সেফালিক’ প্রেজেন্টেশন বা পজিশন বলা হয়। এই অবস্থানে থাকলে নরমাল ডেলিভারি করা অনেকটা সহজ হয়। ব্রিচ পজিশন (Breech Position) হল সেই অবস্থান যেখানে গর্ভাবস্থায় শিশুটি মায়ের গর্ভে মাথা নিচে না থেকে পা বা নিতম্ব নিচের দিকে থাকে। সাধারণত, শিশুর জন্মের সময় মাথা প্রথমে প্রসবের পথে বেরিয়ে আসে, কিন্তু ব্রিচ অবস্থানে শিশুর নিতম্ব বা পা প্রথমে বের হতে চায়। এমন হলে শিশুর ডেলিভারির জন্য বিশেষ ব্যবস্থার প্রয়োজন হতে পারে। ব্রিচ পজিশন কি কমন? গর্ভে ৩৯ সপ্তাহ পূর্ণ করে জন্মগ্রহণ করা শিশুদের ‘ফুল টার্ম’ বলা হয়। এমন প্রতি ১০০টি শিশুর মধ্যে প্রায় ৯৬-৯৭টি শিশুর মাথা নিচের দিকে থাকে, যা স্বাভাবিক অবস্থান এবং ৩–৪টি শিশুর ক্ষেত্রে ব্রিচ পজিশন দেখা যায়। গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে শিশুরা ঘন ঘন অবস্থান পরিবর্তন করে, তাই তখন ব্রিচ পজিশন অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু ৩৬-৩৭ সপ্তাহের পরেও যদি শিশুটি ব্রিচ পজিশনে থাকে, তাহলে চিকিৎসকরা প্রায়ই সিজারিয়ান সেকশন (সিজার) করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ব্রিচ পজিশনের কারণ ব্রিচ পজিশনের নির্দিষ্ট কারণ সবসময় জানা যায় না, তবে কিছু ফ্যাক্টর বা কারণ রয়েছে যা ব্রিচ অবস্থানের ঝুঁকি বাড়াতে পারে- অতিরিক্ত বা কম অ্যামনিওটিক ফ্লুইড: গর্ভে অ্যামনিওটিক ফ্লুইডের পরিমাণ খুব বেশি বা খুব কম হলে শিশুর অবস্থান স্থির হতে সমস্যা হতে পারে, যার ফলে ব্রিচ পজিশন হতে পারে। গর্ভাশয়ের আকার বা আকৃতি: মায়ের গর্ভাশয়ের আকার বা আকৃতি যদি অস্বাভাবিক হয় (যেমন, বাইকর্নুয়েট বা সেপটেট ইউটেরাস), তবে শিশুর ঘুরে সঠিক অবস্থানে আসা কঠিন হতে পারে। মাল্টিপল গর্ভধারণ: যমজ বা একাধিক শিশুর গর্ভাবস্থা থাকলে তাদের জন্য গর্ভে পর্যাপ্ত স্থান না থাকার কারণে একটি বা একাধিক শিশু ব্রিচ পজিশনে থাকতে পারে। প্রিভিয়াস ব্রিচ ডেলিভারি: পূর্বে ব্রিচ ডেলিভারি হয়ে থাকলে, পরবর্তী গর্ভাবস্থায় ব্রিচ অবস্থানের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। প্রিম্যাচিউরিটি: গর্ভাবস্থার ৩৭ সপ্তাহের আগেই যদি শিশুর জন্ম হয়, তবে তার ব্রিচ পজিশনে থাকার সম্ভাবনা বেশি থাকে, কারণ এই সময়ের মধ্যে শিশু সঠিকভাবে মাথা নিচের দিকে ঘুরে যেতে পারে না। অন্য কোনো শারীরিক কারণ: যেমন, প্ল্যাসেন্টা প্রিভিয়া (প্ল্যাসেন্টা নিচে থাকা), বা শিশুর জন্মগত কিছু ত্রুটি থাকলেও ব্রিচ পজিশন হতে পারে। এছাড়া, কিছু ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট কারণ পাওয়া যায় না, এবং এটি কেবল একটি স্বাভাবিক পরিবর্তন হতে পারে। শিশু ব্রিচ পজিশনে আছে কি না বোঝার উপায় গর্ভে শিশু কোন অবস্থানে আছে সেটা আপনার জন্য বোঝা কঠিন হতে পারে। তাই শিশু ডেলিভারির জন্য সঠিক অবস্থানে আছে কি না জানতে নিয়মিত গর্ভকালীন চেকআপে যাবেন। চেকআপের সময়ে ডাক্তার আপনার পেটে হাত রেখে পরীক্ষা করবেন। এভাবে শিশু ব্রিচ পজিশনে থাকলে তিনি সেটা বুঝতে পারবেন। ডাক্তার মূলত আপনার পেটের বিভিন্ন জায়গায় আলতো চাপ দিয়ে গর্ভে শিশুর অবস্থান বোঝার চেষ্টা করবেন। এভাবে তিনি আপনার পেটের ভেতর শিশুর মাথা, পিঠ, পা ও নিতম্বের অবস্থান খুঁজে বের করবেন। ব্রিচ পজিশনে থাকলে শিশুর মাথা ওপরের দিকে এবং নিতম্ব ও/অথবা পা নিচের দিকে থাকবে। শিশুর পিঠ আপনার শরীরের যেকোনো একপাশে ঘুরানো থাকবে। এর সাথে ডাক্তার পেলভিক (যোনিপথে হাত ঢুকিয়ে) পরীক্ষা করতে পারেন। তবে আলট্রাসাউন্ড পরীক্ষা সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি ব্রিচ পজিশন নিশ্চিত করার জন্য। এতে স্পষ্টভাবে দেখা যায় যে শিশুটি গর্ভে কী অবস্থায় রয়েছে। শিশু ব্রিচ পজিশনে থাকলে করণীয় এক্সটার্নাল সেফালিক ভারসন (ECV) একটি চিকিৎসা পদ্ধতি যেখানে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক গর্ভের বাইরে থেকে মায়ের পেটের উপর চাপ প্রয়োগ করে শিশুটিকে ঘুরিয়ে মাথা নিচের দিকে আনার চেষ্টা করেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রিটার্ম ডেলিভারি বা অকাল প্রসবের ঝুঁকি এড়াতে গর্ভকালীন ৩৭ সপ্তাহে বা তারপরে এই পদ্ধতি চেষ্টা করা হয়। যদিও এটি সফল হলে শিশুটি সঠিক অবস্থানে চলে আসে, কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে এটি সফল নাও হতে পারে। এক্সটার্নাল সেফালিক ভারসন চেষ্টা করার আগে ডাক্তার পদ্ধতিটি আপনার ও গর্ভের শিশুর জন্য নিরাপদ কি না সেটি বিবেচনা করবেন। সেই অনুযায়ী পদ্ধতিটির সুবিধা-অসুবিধা ও ঝুঁকি সম্পর্কে আপনার সাথে আলোচনা করে নিবেন। এক্সটার্নাল সেফালিক ভারসন পদ্ধতি এক্সটার্নাল সেফালিক ভারসন হল একটি চিকিৎসা পদ্ধতি, যেখানে অভিজ্ঞ প্রসূতি চিকিৎসক মায়ের পেটের উপর থেকে হাতে চাপ প্রয়োগ করে শিশুটিকে ব্রিচ পজিশন থেকে ঘুরিয়ে মাথা নিচের দিকে আনতে চেষ্টা করেন। এই পদ্ধতিটি সাধারণত গর্ভাবস্থার ৩৭ সপ্তাহের পর প্রয়োগ করা হয়। পদ্ধতিটি প্রায় ৫০% ক্ষেত্রেই সফল হয়। এটা একটা নিরাপদ প্রক্রিয়া, এতে পেট কাটার বা কোনো অপারেশন করার প্রয়োজন হয় না। তবে শিশুকে ঘোরানোর সময়ে কিছুটা অস্বস্তি লাগতে পারে। পদ্ধতির উদ্দেশ্য: স্বাভাবিক প্রসবের সম্ভাবনা বাড়ানো। সিজারিয়ান সেকশনের প্রয়োজনীয়তা কমানো। এক্ষেত্রে একটা বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে- এক্সটার্নাল সেফালিক ভারসন অবশ্যই হাসপাতালে বা অভিজ্ঞ গাইনি ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে করাতে হবে। যেন মা অথবা শিশুর কোনো ধরনের সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়।এটা সচরাচর ডেলিভারি রুম বা অপারেশন থিয়েটারের কাছেই করানো হয়, যেন প্রয়োজনে জরুরি ভিত্তিতে সিজার করিয়ে মা ও শিশুকে সুস্থ রাখা যায়। এক্সটার্নাল সেফালিক ভারসন এক্সটার্নাল সেফালিক ভারসন পদ্ধতিটি সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো- এক্সটার্নাল সেফালিক ভারসন করার আগে আপনার শিশু আসলেই ব্রিচ পজিশনে আছে কি না, সেটা নিশ্চিত করতে সাধারণত একটা আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষা করা হবে। এর পাশাপাশি আপনার হার্টবিট ও রক্তচাপ পরীক্ষা করে নেওয়া হবে। শিশুর হার্টবিটও দেখে নেওয়া হবে। সাধারণত পদ্ধতির শুরুতে আপনার জরায়ুকে হালকা রিল্যাক্স বা শিথিল করার জন্য একটা ইনজেকশন দেওয়া হবে, যা আপনার ও গর্ভের শিশুর জন্য নিরাপদ। ইনজেকশনটা দেওয়ার পর কিছুক্ষণের জন্য আপনার হার্টবিট সামান্য বেড়ে যেতে পারে, রক্ত চলাচল বেড়ে গিয়ে হালকা গরম লাগতে পারে। এগুলো সাময়িক, কিছুক্ষণ পরেই চলে যায়। এরপর ডাক্তার আপনার পেটে হাত রাখবেন। এসময়ে হাতের সাহায্যে আপনার পেটের ওপর হালকা চাপ দিয়ে গর্ভের ভেতরে শিশুর অবস্থান পরিবর্তনের চেষ্টা করা হবে। এক্ষেত্রে ২ জন মানুষ দরকার হতে পারে। এসময়ে আপনার অস্বস্তি হতে পারে, কখনো কখনো কিছুটা ব্যথা লাগতে পারে। তবে পদ্ধতিটা কয়েক মিনিটের মধ্যেই সম্পন্ন হয়ে যায়। আপনার ব্যথা হতে থাকলে ডাক্তার প্রক্রিয়াটা থামিয়ে দিবেন। মনিটরিং এর মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া শুরু হবার আগে ও পরে শিশুর হার্টরেট চেক করা হবে৷ শিশুর হার্টরেটে যদি কোনো সমস্যা বা কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়, তাহলে সাথে সাথে এই প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেওয়া হবে। পদ্ধতিটা শেষ হওয়ার পর সাধারণত আরেকবার আল্ট্রাসাউন্ড করে দেখে নেওয়া হবে যে গর্ভের শিশু সঠিক পজিশনে এসেছে কি না। আপনার রক্তের গ্রুপ যদি নেগেটিভ হয় (যেমন: এ নেগেটিভ বা A -ve, বি নেগেটিভ বা B -ve, ও নেগেটিভ বা O -ve কিংবা এবি নেগেটিভ বা AB -ve), তাহলে এক্সটারনাল সেফালিক ভারসন করার পর ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ‘অ্যান্টি ডি’ নামের একটি ইনজেকশন নেওয়ার এবং বিশেষ একটা রক্ত পরীক্ষা করার প্রয়োজন হতে পারে। সতর্কতা- এক্সটার্নাল সেফালিক ভারসনের পর নিচের কোনো লক্ষণ দেখা গেলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন- যোনিপথে রক্তপাত হলে পেটে ব্যথা হলে পেটে টান, খিচ বা কনট্র্যাকশন অনুভব করলে গর্ভের শিশুর

গর্ভের শিশুর ব্রীচ পজিশন Read More »

গর্ভাবস্থার সময়কাল গণনা করার নিয়ম

due date calculator

গর্ভাবস্থার সঠিক সময় নির্ণয় মা এবং শিশুর সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থার সময়কাল নির্ধারণের মাধ্যমে চিকিৎসক এবং মা দুজনেই গর্ভের বিভিন্ন পর্যায় সম্পর্কে সঠিক ধারণা পান, যা স্বাস্থ্যসেবা পরিকল্পনা এবং শিশুর বিকাশ পর্যবেক্ষণের জন্য অপরিহার্য। গর্ভাবস্থার সময়কাল সাধারণত সপ্তাহ অনুযায়ী গণনা করা হয়, তবে অনেকেই এটি মাস হিসেবে জানতে আগ্রহী। এখন থেকে আপনি চাইলে নিজেই গর্ভাবস্থার সঠিক সময় নির্ণয় করতে পারবেন। নিচে গর্ভাবস্থার সপ্তাহ এবং মাস নির্ণয়ের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হলো: শেষ মাসিকের প্রথম দিন নির্ধারণ গর্ভাবস্থার সময়কাল গণনা করার প্রথম ধাপ হল আপনার শেষ মাসিকের প্রথম দিন নির্ধারণ করা। এই তারিখটি গর্ভধারণের সম্ভাব্য তারিখ হিসাবে গণনা করা হয়। গর্ভাবস্থার সময়কাল সাধারণত ৪০ সপ্তাহ বা ৯ মাস ধরে গণনা করা হয়। এটি শেষ মাসিকের প্রথম দিন থেকে শুরু করে শিশুর জন্মের সময় পর্যন্ত গণনা করা হয়। সাধারণভাবে, প্রতি ৪ সপ্তাহকে ১ মাস ধরা হয়। গর্ভাবস্থার সপ্তাহ নির্ণয়ের পদ্ধতি আপনার গর্ভাবস্থার বর্তমান সপ্তাহটি নির্ণয় করতে চাইলে: ১. শেষ মাসিকের প্রথম দিন জানতে হবে। ২. এরপর, শেষ মাসিকের তারিখ থেকে আজকের তারিখ পর্যন্ত দিনের সংখ্যা গণনা করুন। ৩. এখন এই সংখ্যা ৭ দিয়ে ভাগ করুন (যেহেতু এক সপ্তাহে ৭ দিন)। ৪. ফলাফলটি হলো আপনার গর্ভাবস্থার মোট সপ্তাহ সংখ্যা। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনার শেষ মাসিকের প্রথম দিন হয় ১ জানুয়ারি এবং আজকের তারিখ ১৫ মার্চ, তাহলে আপনার গর্ভাবস্থা হবে:               ১৫ মার্চ – ১ জানুয়ারি = ৭৪ দিন               ৭৪ দিন / ৭ = ১০.৫ সপ্তাহ এক্ষেত্রে, আপনার গর্ভাবস্থার সময়কাল হবে ১০ সপ্তাহ ৩ দিন বা ২.৫ মাস। অনলাইন ক্যালকুলেটর ব্যবহার গর্ভাবস্থার সময়কাল নির্ণয়ের জন্য আপনি বিভিন্ন অনলাইন ক্যালকুলেটর ব্যবহার করতে পারেন। সেখানে শুধু আপনার শেষ মাসিকের প্রথম দিন ইনপুট দিলেই আপনার গর্ভাবস্থার বর্তমান সপ্তাহ ও মাস সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাবেন। অনলাইনে ক্যালকুলেট করতে এখানে ক্লিক করুন । প্রেগন্যান্সি ক্যালকুলেটর সপ্তাহ এবং মাসের তুলনামূলক সম্পর্ক গর্ভাবস্থার সপ্তাহকে মাসে রূপান্তর করতে নিচের সম্পর্কটি ব্যবহার করা যেতে পারে: প্রসবের তারিখ (Estimated Due Date বা EDD) নির্ণয় প্রত্যাশিত প্রসবের তারিখ নির্ধারণ করার জন্য নিচের সূত্রটি ব্যবহার করা হয়: এলএমপি + ৯ মাস + ৭ দিন = EDD এটি একটি সাধারণ সূত্র যা বেশিরভাগ গর্ভধারণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনার শেষ মাসিকের প্রথম দিন ১ জানুয়ারি হয়, তবে আপনার প্রত্যাশিত প্রসবের তারিখ হবে: ১ জানুয়ারি + ৯ মাস + ৭ দিন = ৮ অক্টোবর আল্ট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে সময়কাল নির্ধারণ গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে আল্ট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে ভ্রূণের আকার পরিমাপ করে গর্ভধারণের সঠিক সময়কাল নির্ধারণ করা যায়। বিশেষ করে যদি আপনার মাসিক চক্র অনিয়মিত হয় বা আপনি এলএমপি সম্পর্কে নিশ্চিত না হন, তাহলে আল্ট্রাসাউন্ড বিশেষভাবে কার্যকর হতে পারে।

গর্ভাবস্থার সময়কাল গণনা করার নিয়ম Read More »