Parenting Point

স্মার্ট প্যারেন্টিং

যে ৭টি ভুলের জন্য অধিকাংশ বাবা-মা পরে আফসোস করেন

পিতামাতা হওয়া মানেই কেবল খুশির রোলার কোস্টারে চড়া নয়—এটি এমন একটি যাত্রা, যেখানে প্রচুর চড়াই-উৎরাই, ভুল এবং আফসোস জড়িয়ে থাকে। প্রায় সব বাবা-মা-ই সন্তানদের জন্য সবচেয়ে ভালোটা চান, কিন্তু বাস্তবে তা সবসময় সম্ভব হয় না। ভুল হতেই পারে—কারণ, আমরা সবাই মানুষ। তবে কিছু ভুলের খেসারত অনেক বড় হয়ে দাঁড়ায়, যা পরে আফসোসে পরিণত হয়। বিভিন্ন বাবা-মার নিজস্ব নীতি ও মূল্যবোধ থাকলেও একটি বিষয়ে সবাই একমত—যদি সময়কে ফিরিয়ে নেওয়া যেত, তাহলে অনেকেই কিছু ভুল শুধরে নিতে চাইতেন। চলুন দেখে নেওয়া যাক কি সেই ৭টি সাধারণ ভুল যার জন্য অধিকাংশ বাবা-মা পরে আফসোস করেন। ১. সন্তানের সঙ্গে পর্যাপ্ত যোগাযোগের অভাব জীবনের ব্যস্ততায় আমরা প্রায়শই সন্তানদের সঙ্গে কথাবার্তা বলার সময় পাই না। ছোট বাচ্চারা হয়তো ঠিকমতো কথা বলতে পারে না, তবে তাদের সঙ্গে সময় কাটানো, কথা বলা, হাসা-কান্না ভাগ করে নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন একটু সময় আলাদা করে সন্তানকে মন দিয়ে শোনা ও কথা বলা আপনার সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করে তোলে। অনেক বাবা-মা যখন বুঝতে পারেন যে সন্তান বড় হয়ে গেছে, তখন তারা আফসোস করেন—কেন আরও সময় দিলাম না! ২. আদর করে বুকে জড়িয়ে না ধরা কে না চায় ভালোবাসার আলিঙ্গন? হ্যাঁ, একটু জড়িয়ে ধরা, একটু আদর, সন্তানের মনে নিরাপত্তা ও ভালোবাসার অনুভব তৈরি করে। জড়িয়ে ধরলে শরীরে “হ্যাপি হরমোন” বা আনন্দদায়ক হরমোন নিঃসরণ হয়, যা মন ভালো রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু অনেক সময় বাবা-মা ব্যস্ততা কিংবা সামাজিক বাধ্যবাধকতার কারণে সন্তানের প্রতি এই ছোট্ট ভালোবাসার প্রকাশটুকুও করতে ভুলে যান। মনে রাখবেন—যখন সন্তান একটু বড় হয়ে যাবে, তখন হয়তো ওরা নিজেই দূরে সরে যাবে। তাই যতটা পারেন, এখনই আলিঙ্গন করে নিন! ৩. মুহূর্তগুলো ধরে না রাখা আমরা ডিজিটাল যুগে বাস করি—ছবি তোলা, ভিডিও করা এখন আর কষ্টকর কাজ নয়। তবুও আমরা অনেকেই ভাবি—পরে তুলব, এখন দরকার নেই। কিন্তু এই “পরে” বলতেই কত স্মৃতি হারিয়ে যায়। ছোট ছোট মুহূর্ত, যেমন শিশুর প্রথম হাঁটা, প্রথম কথা বলা, জন্মদিনের হাসি—এসব ক্যামেরাবন্দি করে রাখুন। একদিন যখন স্মৃতির পাতায় ফিরে তাকাবেন, তখন এই মুহূর্তগুলোই হবে অমূল্য। ৪. সৃজনশীল খেলার সুযোগ না দেওয়া শিশুরা জন্মগতভাবে কল্পনাশক্তিতে ভরপুর। তারা যখন খেলাধুলায় মেতে ওঠে, তখন তাদের মস্তিষ্কে নতুন নতুন চিন্তার সঞ্চার হয়। অনেক বাবা-মা শুধু নির্দিষ্ট, “শেখার” মতো খেলাতেই শিশুদের সীমাবদ্ধ রাখেন। কিন্তু আপনি কি জানেন—যখন শিশুকে স্বাধীনভাবে আঁকতে বা গড়তে দেওয়া হয়, তখনই সে নিজের সৃজনশীলতা প্রকাশ করে? তাদের আঁকা ছবির ভুল ধরবেন না, বরং উৎসাহ দিন। এভাবেই শিশুর স্বাধীন চিন্তাশক্তি ও আত্মবিশ্বাস গড়ে ওঠে। ৫. অতিরিক্ত কঠোর হওয়া “বেশি নিয়মে বাঁধা থাকলে সন্তানরা ভালো হয়”—এই বিশ্বাস এখনও অনেক বাবা-মার মধ্যে রয়েছে। কিন্তু অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ কিংবা কড়াকড়ি সন্তানের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করতে পারে। অনেক সময় সন্তানেরা মিথ্যা কথা বলতে শুরু করে শুধুমাত্র শাস্তি এড়ানোর জন্য। কঠোর শাসনের বদলে যদি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা যায়, তাহলে সন্তান আপনার সঙ্গে খোলামেলা কথা বলবে। পরে যখন সন্তানেরা দূরে সরে যায়, তখন বাবা-মার মনে কেবলই আফসোস থেকে যায়—“আমি কেন এত কঠোর ছিলাম?” ৬. সন্তানের মতামতকে অবমূল্যায়ন করা আমরা প্রায়ই মনে করি—আমরা বড়, তাই সবকিছু আমরাই ভালো বুঝি। কিন্তু সন্তানেরাও চিন্তা করতে পারে, তাদের নিজস্ব মতামত থাকতে পারে। সন্তান যখন কিছু বলতে চায়, তখন মনোযোগ দিয়ে শুনুন। শুধু উপদেশ না দিয়ে তাদের মতামতকে গুরুত্ব দিন। এতে তাদের আত্মমর্যাদা বাড়বে এবং আপনি হয়তো তাদের কাছ থেকেও কিছু শিখতে পারেন। ৭. অর্থ উপার্জনের চাপে স্মৃতিগুলো বানানো হয়ে ওঠে না পরিবারের জন্য পরিশ্রম করা জরুরি, কিন্তু সেই সঙ্গে সন্তানদের সঙ্গে সময় কাটানোও ততটাই গুরুত্বপূর্ণ। একটা জরুরি মিটিং একদিন পিছিয়ে গেলেও কিছু আসে যায় না, কিন্তু সন্তানের সঙ্গে পার্কে যাওয়া, একসাথে গল্প শোনা বা পিকনিকে যাওয়া—এসব স্মৃতিই একদিন অমূল্য হয়ে উঠবে। সন্তানের চোখে শৈশব মানেই হবে ভালোবাসা আর আনন্দে ভরা মুহূর্ত, যদি আপনি পাশে থাকেন। পিতামাতা হওয়া কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম বা ম্যানুয়াল অনুযায়ী চলে না। সব চেষ্টার পরেও কিছু না কিছু ভুল হতেই পারে। কিন্তু নিজেকে দোষারোপ না করে, নিজের সন্তানকে ভালোবেসে, বোঝাপড়া তৈরি করে আগানোই হলো সঠিক পথ। যদি আপনি সন্তানের সঙ্গে একটি সম্পর্ক তৈরি করতে পারেন—যেখানে ভালোবাসা, সম্মান আর বোঝাপড়া রয়েছে—তাহলে আপনি সত্যিই একজন সফল পিতা-মাতা।

যে ৭টি ভুলের জন্য অধিকাংশ বাবা-মা পরে আফসোস করেন Read More »

স্পিচ ডিলে বা শিশুর কথা বলার দেরির কারণ ও সমাধান

speech delay

ডা: মৌমিতা পাল শিশু-কিশোর মনোরোগ বিশেষজ্ঞএম.বি.বি.এস (এস.ইউ. এস.টি )এমডি, চাইল্ড এন্ড এডোলেসেন্ট সাইকিয়াট্রি ( বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটি) প্রযুক্তির এই যূগে ইদানীং কালে দেড় বছর থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুর পিতা-মাতাদের একটি কমন কনসার্ন হলো স্পিচ ডিলে। স্পিচ ডিলে (Speech Delay) বলতে বোঝায় শিশুর বয়স অনুযায়ী স্বাভাবিক ভাষা বা কথা বলার দক্ষতা অর্জনে বিলম্ব হওয়া। এটি সাধারণত তখন বোঝা যায় যখন একটি শিশু নির্দিষ্ট বয়সে কথা বলা বা শব্দ উচ্চারণ করার ক্ষেত্রে অন্যান্য শিশুদের থেকে পিছিয়ে থাকে। কিন্তু অনেক সময় পিতা-মাতারা বুঝে ওঠেন না কখন বা কোন বয়সে এবং ঠিক কতটুকু কথা বলতে না পারার সীমাবদ্ধতা থাকলে তাকে স্পিচ ডিলে বলা হয়। কোন বয়সে কতটুকু কথা বলতে বা শব্দ জানতে পারা দরকার সেটা বোঝার আগে আমাদের জানতে হবে কতটুকু কথা বলার সীমাবদ্ধতা থাকলে আমরা তাকে স্পিচ ডিলে বলবো। এই সীমাবদ্ধতাগুলোকে সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করা যায়: ১. মিডিয়ান এজ (Median Age) অর্থাৎ যে বয়সে ৫০% বাচ্চাদের তাদের বয়স অনুযায়ী নির্দিষ্ট ভাষাগুলো বা শব্দগুলো শিখে ফেলা উচিত। ২. লিমিট এজ (Limit Age) অর্থাৎ যে বয়সে ৯৭.৫% বাচ্চাদের তাদের বয়স অনুযায়ী নির্দিষ্ট সংখ্যক শব্দ শিখে ফেলা উচিত। বয়স এবং শব্দের সংখ্যা অনুযায়ী শিশুর সক্ষমতা: ১. বাবলিং (Babbling) বাবলিং হলো শিশুর জীবনের প্রথম কয়েক মাসে এলোমেলোভাবে বিভিন্ন ধ্বনি তৈরি করার পর্যায়, যা ভাষা শেখার প্রাথমিক ধাপ। এ সময় শিশুরা বাবা-মা অথবা আশেপাশের পরিবেশ থেকে আওয়াজ শুনে অনুকরণ করার চেষ্টা করে। উদাহরণ: “বাব্বা”, “দা-দা”। মিডিয়ান এজ: ৪-৬ মাস (শতকরা ৫০% শিশুর এই দক্ষতা অর্জন করা উচিত)। লিমিট এজ: ৯ মাস (শতকরা ৯৭% শিশুর এই দক্ষতা অর্জন করা উচিত)। গবেষণা বলে, প্রথম ৯ মাসের মধ্যে যদি বাবলিং না থাকে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। কারণ এটি হিয়ারিং প্রবলেম বা ডেভেলপমেন্টাল ডিলের লক্ষণ হতে পারে। ২. প্রথম শব্দ: যেমন “মা”, “বাবা”, “দাদা”। মিডিয়ান এজ: ১২ মাস। লিমিট এজ: ১৮ মাস। ৩. দুই শব্দের বাক্য গঠন: যেমন “মা দাও”, “জল খাও”। মিডিয়ান এজ: ২৪ মাস (২ বছর)। লিমিট এজ: ৩০ মাস (আড়াই বছর)। ৪. অর্থবহ শব্দ বলা: ১০-২০ শব্দ: ১৮ মাস (মিডিয়ান এজ)। ৫০ শব্দ: মিডিয়ান এজ: ২৪ মাস। লিমিট এজ: ৩৬ মাস। ২০০-৩০০ শব্দ: মিডিয়ান এজ: ৩৬ মাস। লিমিট এজ: ৪২-৪৮ মাস। ৫. বাক্য তৈরি করা: তিন শব্দের বাক্য যেমন “আমি জল খাবো”। মিডিয়ান এজ: ৩৬ মাস। লিমিট এজ: ৪২ মাস। ৬. স্পষ্টভাবে কথা বলা: ৭৫% বোধগম্য করে কথা বলা: মিডিয়ান এজ: ৩৬ মাস। লিমিট এজ: ৪৮ মাস। ১০০% বোধগম্য করে কথা বলা: মিডিয়ান এজ: ৪৮ মাস। লিমিট এজ: ৬০ মাস। স্পিচ ডিলের কারণ: শারীরিক বা মুখমণ্ডলের গঠন গত সমস্যা ( ক্লেফট লিপ, ক্লেফট প্যালেট ইত্যাদি) শ্রবনশক্তির সীমাবদ্ধতা অন্যান্য নিউরোডেভেলপ মেন্টাল সমস্যা ( যেমম অটিজম, ল্যাংগুয়েজ ডিসঅর্ডার ইত্যাদি) জন্মগত ত্রুটি যেমন সেরেব্রাল পালসি বিভিন্ন সিন্ড্রোমিক ডিসঅর্ডার বিভিন্ন পারিবারিক বা পরিবেশগত কারণ গর্ভকালীন জটিলতা বা ইনফেকশানের ইতিহাস ( যেমন, রুবেলা, টক্সপ্লাজমা, বিভিন্ন নেশা জাতীয় দ্রব্য গ্রহন , ধূমপান, মদ্যপান ইতাদি) বিকাশের জন্য বা কথা শেখানোর  জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহন বা চেষ্টার ঘাটতি ইত্যাদি। চিকিৎসা ও করণীয়: যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সম্ভব সমস্যা নির্ধারণ এবং তা মূল্যায়ন করা : এই ব্যাপারে একজন বিশেষজ্ঞ  চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরি যেমন পেডিয়াট্রিক নিউরোলজিস্ট কিংবা চাইল্ড সাইক্রিয়াট্রিস্ট, চাইল্ড সাইকোলজিস্ট/ স্পিড থেরাপিস্ট স্পিচ থেরাপি: এটি স্পিচ ডিলে সমস্যার একটি অন্যতম এবং গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা পদ্ধতি। যেখানে একজন ট্রেন্ড থেরাপিস্ট বাচ্চাকে তার সমস্যা অনুযায়ী থেরাপি বা প্রশিক্ষণ দিবে পরিবার এবং পরিবারের সদস্যদের সাথে নিয়মিত কথা বলা কিংবা অভিব্যক্তি বুঝানোর চেষ্টা করা,শিশুর সাথে কথা বলা গল্প বলা বিভিন্ন রকমের ইন্টারেকশন করা অন্যান্য সমস্যা যেমন শারীরিক ত্রুটি কিংবা শ্রবণ শক্তির সীমাবদ্ধতা থাকলে সেটার চিকিৎসা করা অন্যান্য স্নায়ু বিকাশ জনিত সমস্যা যেমন সেরেব্রাল পালসি এডিএইচডি/ বা অন্যান্য জেনেটিক ডিসঅর্ডার থাকলে সেটার সিম্পটমস অনুযায়ী চিকিৎসা করা সর্বোপরি পিতা-মাতার এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যের ধৈর্য ধারণ এবং পারস্পরিক সহযোগিতা এবং নিরবিচ্ছিন্ন চেষ্টা এই সমস্যার সমাধানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে রেফারেন্স:Singapore Medical Journal

স্পিচ ডিলে বা শিশুর কথা বলার দেরির কারণ ও সমাধান Read More »

শিশু এবং কিশোরদের উপর ইলেকট্রনিক ডিভাইসের প্রভাব

impact-of-electronic-devices-on-children-and-teens

ডা: মৌমিতা পাল শিশু-কিশোর মনোরোগ বিশেষজ্ঞএম.বি.বি.এস (এস.ইউ. এস.টি )এমডি, চাইল্ড এন্ড এডোলেসেন্ট সাইকিয়াট্রি ( বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটি) সব দিকে এখন প্রযুক্তির জয়জয়কার। স্মার্টফোন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে টেলিভিশন এবং ট্যাবলয়েড বেইসড খেলনা সবকিছুতেই শিশু এবং কিশোরেরা প্রতিনিয়ত প্রযুক্তি দিয়ে আচ্ছন্ন। বাস্তবতা হচ্ছে শিশু এবং কিশোরদের প্রযুক্তির ব্যবহার তাদের যোগ্যতা অর্জন, শিক্ষা,দক্ষতা অর্জনের জন্য যেমনটা প্রয়োজন, ঠিক তেমনভাবে প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহার প্রভাব ফেলছে তাদের শরীর এবং মনস্তত্ত্বের ওপর। এই প্রভাব হতে পারে, চোখের সমস্যা, স্থূলতা,অন্যান্য শারীরিক সমস্যা থেকে শুরু করে সামাজিক দক্ষতা এবং আচরণগত সমস্যা, কিংবা ঘুম এবং স্মৃতি শক্তির সমস্যা । যেহেতু প্রযুক্তি আমাদের, দৈনন্দিন জীবনের  একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়েছে, এবং অনেক কিছুই প্রযুক্তি নির্ভর, সুতরাং পিতামাতারা হয়তো প্রযুক্তিকে তাদের সন্তানের জীবন থেকে একদমই ব্যান করে দিতে পারবেন না, কিন্তু তাদের উচিত হবে, অতিরিক্ত সতর্কতা এবং সচেতনতার সহিত সেই প্রযুক্তির ব্যবহারকে তাদের সন্তানের মধ্যে চালনা করা। কীভাবে প্রযুক্তি শিশু এবং কিশোরদের মধ্যে প্রভাব ফেলে শিশুদের স্থূলতা এবং প্রযুক্তি: শিশু এবং কিশোররা যখন ডিভাইস নিয়ে ব্যস্ত থাকে স্বাভাবিকভাবেই তারা বাইরের শারীরবৃত্তীয় কার্যকলাপ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, মাঠে খেলাধুলা, শারীরিক ব্যায়াম এগুলা আর হয়ে ওঠে না। ফলশ্রুতিতে হয়ে যায় স্থূলতা। পাশাপাশি অনেক গবেষণা এটাও বলে যে, অতিরিক্ত মোবাইল কিংবা টেলিভিশন দেখিয়ে যখন আমার শিশু এবং কিশোরদেরকে খাওয়ানোতে ব্যস্ত রাখি, তখন তাদের “মাইন্ডফুল ইটিং” থেকে তারা ব্যাহত হয়। যা পরবর্তীতে আরো স্থুলতাকে ত্বরান্বিত করে। সুতরাং শিশু এবং কিশোরদের প্রযুক্তি নির্ভরতা কে, একদম অবাঞ্ছিত না করে, উচিত হবে সেটাকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা, যতটুকু প্রয়োজন ঠিক ততটুকু ব্যবহার করা, বাইরের খেলাধুলা কিংবা শারীরবৃত্তীয় কাজগুলোকে উৎসাহিত করা। টেকনোলজির প্রভাবে শিশু এবং কিশোরদের সামাজিক দক্ষতা: প্রযুক্তির উন্নয়নের আরেকটি চ্যালেঞ্জ হলো সামাজিক দক্ষতা। একটি গান আমরা সবাই জানি পৃথিবীটা নাকি ছোট হতে হতে ‘স্যাটেলাইট আর ক্যাবলের হাতে, ড্রয়িং রুমে রাখা বোকা বাক্সতে বন্দী”। ঠিক তেমনি পৃথিবীটা যেমন আমাদের হাতে বন্দি, আমাদের সমাজ পরিবার সবকিছুই যেন এই মুঠোফোন কিংবা এই ডিভাইসের মধ্যেই যেন সবকিছু বন্দী। এতে করে শিশু এবং কিশোরদের পারস্পরিক সম্পর্ক কিংবা সামাজিক দক্ষতা খুব কঠিন ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এতে করে শিশু এবং কিশোরদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস কমে যাচ্ছে, কীভাবে সামাজিক পরিবেশে নিজেদেরকে মানিয়ে নিতে হয় সেটা শিখতে পারছে না, বন্ধুবান্ধব কিংবা আত্মীয় স্বজনের সাথে সম্পর্ক তৈরি কিংবা রক্ষা করতে পারছে না। এমনকি সমবয়সি বন্ধুদের সাথেও বন্ধুত্ব তৈরি করতে সমস্যা হচ্ছে। সুতরাং এই ক্ষেত্রে পিতা মাতার ভূমিকা হচ্ছে, প্রযুক্তির ব্যবহার একটি নির্দিষ্ট লিমিটের মধ্যে নিয়ে আসা, পারিবারিক বন্ধন আরো দৃঢ় করা। যেমন, প্রতিদিন নির্দিষ্ট একটা সময় পরিবারের সদস্যরা একই সাথে বসে দুপুরের খাবার খাবে, একসাথে বসে গল্প করবে, ছুটির দিনে বেড়াতে যাবে, আত্মীয়-স্বজনদের সাথে দেখা করবে, সমবয়সি বন্ধুদের সাথে খেলাধুলা করবে ইত্যাদি। ভুলে গেলে চলবে না, শিশু এবং কিশোররা অনুকরণ প্রিয়। তারা তাই শিখে যা তারা দেখে, তাই তাদেরকে সেই অভ্যাসে তৈরি করতে হলে পিতা-মাতাকেও সেভাবেই রুটিন সাজিয়ে নিতে হবে প্রযুক্তি এবং মনোযোগ গবেষণা বলে অতিরিক্ত প্রযুক্তি এবং ডিভাইসের ব্যবহার, শিশু এবং কিশোরদের মধ্যে মনোযোগের ঘাটতি ঘটায়। স্ক্রিনে চলতে থাকা অনবরত রিলস কিংবা শর্টস যখন শিশু-কিশোররা দেখে, একটা নির্দিষ্ট কোন কিছুতে তারা তাদের মস্তিষ্ককে তখন স্থির করতে পারে না, ঠিক একইভাবে তারা তাদের মনোযোগ টাকেও স্থির করতে পারে না, ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে স্থায়ী  হয়ে যায় সেই মনোযোগের ঘাটতি। পাঁচ বছরের নিচে শিশুদের মধ্যে প্রযুক্তির প্রভাব : এটা আমরা অস্বীকার করতে পারবো না যে, এখন ছয় মাস বয়স থেকে শিশুদের হাতে তুলে দেয়া হয় বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস। এতে করে ঠিক যে বয়সে তাদের সামাজিক যোগাযোগ এর ক্ষমতা বেড়ে ওঠার কথা সেটা ব্যাহত হয়। শিশুরা দেরিতে কথা বলতে শিখে, কিংবা কথা বলতে শিখলেও তো অস্পষ্ট হয় কিংবা মনের ভাবকে সঠিকভাবে প্রকাশ করতে পারে না তাছাড়া অল্প বয়সেই শুরু হয়ে যায় চোখের সমস্যা, ঘুমের সমস্যা, আচরণ গত সমস্যা। ঠিক কত সময় প্রযুক্তির ব্যবহারকে আমরা অতিরিক্ত বলবো? আমেরিকান একাডেমি অফ চাইল্ড এন্ড অ্যাডোলসেন্ট সাইকিয়াট্রি (AACA) এর মতে বিশ্বব্যাপী কিশোরেরা প্রতিদিন গড়ে ৯ ঘণ্টার বেশী স্ক্রিন টাইম ইউজ করছে। এবং ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুরা প্রতিদিন গড়ে ৬ ঘণ্টার বেশি স্ক্রিন টাইম ইউজ করছে। “মায়ো ক্লিনিকের” পরামর্শ মতে দুই থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের স্ক্রিন টাইম প্রতিদিন এক ঘণ্টা বা তার কমে নিয়ে আসা উচিত। আমেরিকান একাডেমি অফ পেডিয়াট্রিক্স (AAP) অনুযায়ী, ৫ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিশু এবং কিশোরদের পিতা-মাতাকে তাদের সন্তানদের স্ক্রিনটাইম একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কমিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

শিশু এবং কিশোরদের উপর ইলেকট্রনিক ডিভাইসের প্রভাব Read More »

নবজাতকের মানসিক, ইমোশনাল এবং মনস্তাত্ত্বিক বিকাশ: একটি অন্তর্দৃষ্টি

child development

ডা: মৌমিতা পাল শিশু-কিশোর মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এম.বি.বি.এস (এস.ইউ. এস.টি )এমডি, চাইল্ড এন্ড এডোলেসেন্ট সাইকিয়াট্রি ( বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটি) নবজাতকের জন্মের পর থেকেই তার শারীরিক বিকাশ যেমন চোখে পড়ে, তেমনি মানসিক, আবেগিক ও মনস্তাত্ত্বিক বিকাশও গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক। নবজাতক তার আশেপাশের পরিবেশ, মানুষের আচরণ, এবং বিভিন্ন অভিজ্ঞতা থেকে ধীরে ধীরে শিখতে শুরু করে। এই প্রক্রিয়াটি ধাপে ধাপে ঘটে এবং প্রতিটি স্তরে বিভিন্ন উপাদান প্রভাব ফেলে। মানসিক বিকাশ: নবজাতকের মানসিক বিকাশের শুরু হয় তার জন্মের পর থেকেই। প্রথম ৬ মাসের মধ্যে নবজাতক তার মা-বাবা এবং অন্যান্য পরিচিত মানুষের সাথে মানসিক বন্ধন গড়ে তোলে। এই সময় তার ব্রেনের নিউরোনাল কানেকশন দ্রুত বিকাশ লাভ করে। সঠিক যত্ন এবং ভালবাসা এই সময় শিশুর মানসিক বিকাশে সহায়ক হয়। বিশেষ করে, মায়ের সাথে ত্বক-স্পর্শ (skin-to-skin contact) শিশুর ব্রেনের সঠিক বৃদ্ধি এবং মানসিক স্থিতিশীলতা গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইমোশনাল বিকাশ: নবজাতকের ইমোশনাল বা আবেগিক বিকাশ তার আশেপাশের পরিবেশ এবং পরিবার থেকে প্রাপ্ত অনুভূতির মাধ্যমে হয়। প্রথমদিকে, শিশু শুধুমাত্র কেঁদে তার প্রয়োজনীয়তা প্রকাশ করে। তবে ধীরে ধীরে সে বিভিন্ন ধরণের আবেগ প্রকাশ করতে শেখে, যেমন- হাসি, বিরক্তি, বা আতঙ্ক। শিশুর আবেগিক বিকাশের ক্ষেত্রে বাবা-মার ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্নেহময় সম্পর্ক ও স্থিতিশীল পরিবেশ শিশুর আবেগিক স্থিতিশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে। মনস্তাত্ত্বিক বিকাশ: নবজাতকের মনস্তাত্ত্বিক বিকাশও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিশুর সাথে কথা বলা, গান শোনানো, এবং গল্প বলা তার ভাষাগত এবং চিন্তনক্ষমতা বিকাশে সাহায্য করে। এমনকি একতরফা কথা বললেও শিশুর ব্রেন ধীরে ধীরে শব্দ, ভাষা এবং অর্থ বোঝার ক্ষমতা তৈরি করতে শুরু করে। এছাড়াও, নিয়মিত চাহিদা পূরণ এবং স্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে শিশুর আত্মবিশ্বাস এবং নিরাপত্তাবোধ তৈরি হয়। কেন এই বিকাশ গুরুত্বপূর্ণ? শিশুর প্রথম বছরগুলির অভিজ্ঞতা তার ভবিষ্যতের মানসিক এবং শারীরিক সুস্থতায় প্রভাব ফেলে। এই সময়টিতে সন্তানের বিকাশের সঠিক যত্ন নিলে সে ভবিষ্যতে মানসিকভাবে আরও স্থিতিশীল, আবেগিকভাবে শক্তিশালী, এবং মনস্তাত্ত্বিকভাবে সৃজনশীল হয়ে উঠবে। তাই, এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সন্তানের শারীরিক যত্নের পাশাপাশি তার মানসিক ও আবেগিক বিকাশেও গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন কীভাবে সঠিকভাবে যত্ন নেয়া যায়? সন্তানের সাথে সময় কাটানো: সন্তানের সাথে কথা বলা, তার অনুভূতির প্রতি যত্নশীল হওয়া এবং নিয়মিত শারীরিক স্পর্শ তার বিকাশে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। সঠিক পুষ্টি: সন্তানের সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করা তার ব্রেন এবং মানসিক বিকাশের জন্য অপরিহার্য। আনন্দময় পরিবেশ: আনন্দদায়ক এবং নির্ঝঞ্ঝাট পরিবেশ শিশুকে নিরাপত্তাবোধ প্রদান করে, যা তার আবেগিক স্থিতিশীলতায় সহায়তা করে। সুতরাং, নবজাতকের মানসিক, আবেগিক এবং মনস্তাত্ত্বিক বিকাশের জন্য সন্তানের প্রতি পিতামাতার মনোযোগ এবং ভালোবাসা সবচেয়ে বড় অবলম্বন। নবজাতকের মানসিক, আবেগিক, এবং মনস্তাত্ত্বিক বিকাশ ধাপে ধাপে ঘটে, যা প্রতিটি বয়সের সঙ্গে পরিবর্তিত হয়। নিচে বয়সভিত্তিক কিছু সাধারণ বিকাশের ধাপ তুলে ধরা হলো:

নবজাতকের মানসিক, ইমোশনাল এবং মনস্তাত্ত্বিক বিকাশ: একটি অন্তর্দৃষ্টি Read More »

শিশুরা খেতে না চাইলে কি করবেন

feeding-problems

প্রায় প্রত্যেক মায়ের এই অভিযোগ আমার বাচ্চা কিছু খেতে চায় না। সারা দিন খাবার না দিলে না খেয়েই থাকে। আবার জোর করে খাওয়ালে বমি করে দেয়। ১ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের মা–বাবারা এই সমস্যা নিয়ে শিশুবিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হন। শিশু খেতে চায় না, এটি  কি আদতেই জটিল সমস্যা? নাকি সাধারণ ব্যাপার? জন্মের পর প্রথম ৬ মাস শিশু শুধু বুকের দুধ খায়। তারপর ধীরে ধীরে বাড়তি খাবার শুরু করা হয়। এ সময় যদি শিশুকে সঠিক নিয়মে খাবার না দেয়া হয় তাহলে শিশুরা খাবারের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে বা অনীহা প্রকাশ করতে থাকে। যেমন— শিশুরা যদি বাইরের খাবারের অভ্যস্ত হয়ে যায়, তাহলে ঘরে তৈরি খাবার খেতে চায় না। একই খাবার প্রতিদিন দেওয়া, এতে শিশু একঘেয়েমিতে ভোগে। খাবারের ঘনত্ব ঠিক না থাকা। খুব বেশি তরল বা একদম ব্লেন্ড করা খাবার দিলে শিশু খাবারের স্বাদ পায় না। আবার বেশি শক্ত বা থকথকে দিলে গিলতে পারে না। বুকের দুধের পরপর বাড়তি খাবার দেওয়া। শিশুদের পাকস্থলী আকারে বেশ ছোট, দুধই তাদের পেটের অনেকখানি ভরিয়ে ফেলে। তাই এ সময় বাড়তি খাবারটা খেতে পারে না। ঘন ঘন এক–দুই ঘণ্টা পরপরই খাবার দেওয়া। এতে শিশু খাবারটুকু হজমের সময় পায় না, অনেক সময় বমিও করে দেয়। ১ থেকে ২ বছরের শিশুরা সাধারণত দুরন্ত প্রকৃতির হয়। খাবারের চেয়ে খেলাধুলা ও চঞ্চলতা বেশি করে। তাই বসিয়ে খাবার খাওয়ানো মুশকিল হয়ে যায়। তা ছাড়া এ বয়সে শিশুরা যদি চকলেট, চিপস, জুস—এ ধরনের বাইরের খাবারের অভ্যস্ত হয়ে যায়, তাহলে ঘরে তৈরি খাবার খেতে চায় না। যা করবেন ১. শিশুদের খাবারের একটি রুটিন তৈরি করুনঃ ৬ থেকে ৯ মাসের শিশুরা বুকের দুধের পাশাপাশি দিনে দুবার আধা বাটি পরিমাণ বাড়তি খাবার খেলেই যথেষ্ট। বুকের দুধের পাশাপাশি ধীরে ধীরে ১-২ চামচ করে বাড়তি খাবার খাওয়াতে হবে। ১০ মাস থেকে ১ বছরের শিশুকে আধা বাটি করে তিন বেলা, মাঝে ১–২ বার নাশতা দেওয়া যেতে পারে। এক বছর পর এক বাটি করে তিন বেলা খাবারের সঙ্গে নাশতা দিন। ২ বছরের পর থেকে ঘরের অন্য সদস্যদের সঙ্গে একই নিয়মে খাবে। ২. খাবারের ঘনত্ব ঠিক রাখতে হবেঃ খাবার পুরোপুরি ব্লেন্ড করে বা তরল করে দেওয়া যাবে না। আধা শক্ত খাবার শিশু কিছুটা চিবিয়ে খাবে। এতে খাবারের স্বাদ বুঝবে। চিবিয়ে খাওয়া পরে দ্রুত কথা বলার ক্ষেত্রেও সাহায্য করবে। ৩. ঘরের পরিবেশ সুস্থ ও শিশুবান্ধব রাখুনঃ শিশুকে ধৈর্য ধরে যত্ন ও স্নেহ–মমতার সঙ্গে খাওয়ান। সম্ভব হলে পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে বসিয়ে খাবার দিন। একটি নির্দিষ্ট স্থানে বসিয়ে বিভিন্ন সুন্দর ও রংবেরঙের পাত্রে পরিবেশন করলে খাবারের প্রতি আগ্রহ বোধ করবে। ৪. খাবারের বৈচিত্র্য আনুনঃ প্রতিদিন একই উপাদান দিয়ে রান্না করা খিচুড়ি না দিয়ে ভিন্নভাবে দিন। ডিমও প্রতিদিন সেদ্ধ না দিয়ে কখনো ভাজা বা পুডিং হিসেবে দিন। ৫. শিশুকেও খাবার আয়োজনে যুক্ত করুনঃ খাবার রান্না ও পরিবেশনের সময় শিশুকে সঙ্গে রাখুন। একটু বড় হলে আঙুল দিয়ে ধরে খেতে পারে, এ ধরনের খাবারগুলো নিজের হাতে খেতে উৎসাহ দিন। যা করবেন না ১. বাচ্চাদের জোর করে, ভয় দেখিয়ে খাওয়াবেন না। ২. চকলেট, চিপস, জুস দেবেন না। এসব রুচি নষ্ট করে এবং সহজেই পেট ভরিয়ে ফেলে, তখন ঘরে তৈরি পুষ্টিকর খাবার খেতে চায় না। ৩. মোবাইল, টিভি ইত্যাদি যন্ত্রের সামনে বসিয়ে না খাওয়ানোই ভালো। এতে খাবারের প্রতি মনোযোগ না থাকায় কী খাচ্ছে, তা বুঝতে পারে না। কখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন শিশু খাওয়াদাওয়া করছে না, সেই সঙ্গে দুর্বল হয়ে পড়ছে, অপুষ্টির লক্ষণ দেখা দিচ্ছে। শিশু খেলাধুলার উৎসাহ হারিয়ে ফেলছে। শিশু খাবার খাচ্ছে না। অন্যান্য উপসর্গ যেমন গলাব্যথা, বমি, রক্তশূন্যতা ইত্যাদি সমস্যা হচ্ছে। এসব কোনো রোগের লক্ষণ হতে পারে না। জিহ্বার ওপরে পুরু সাদা স্তর পড়ে গেছে, যা ছত্রাকের কারণে হতে পারে। খাওয়া দাওয়া না করার সঙ্গে সঙ্গে শিশুর মানসিক বিকাশ, কথা বলা, অন্যান্য দিক ঠিক আছে কি না, সেটাও লক্ষ করতে হবে। অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের বিশেষ কোনো খাবারের গন্ধ, রং বা স্বাদের প্রতি সংবেদনশীলতা থাকার কারণে কিছু খাবার খেতে চায় না। আবার সেরিব্রাল পলিসি, হাইপোথাইরয়েডিজম ইত্যাদি রোগের কারণে খেতে পারে না। সেই সঙ্গে হাঁটা, বসা ইত্যাদি সময়মতো হয় না। এসব ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

শিশুরা খেতে না চাইলে কি করবেন Read More »

শিশুর সৃজনশীলতা বৃদ্ধিতে প্রিটেন্ড প্লে বা অভিনয়-অভিনয় খেলা

pretend play

আপনি কি কখনো দেখেছেন, আপনার বাচ্চা তার প্রিয় পুতুলটিকে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করছে, আপনার জুতা পরে হেঁটে বেড়াচ্ছে, বা একটি বাটিতে কাল্পনিক স্যুপ নিয়ে চামচ দিয়ে নাড়ছে? শিশুরা যখন ২ বছর বয়সে পৌঁছে, তখন তারা নানা সৃজনশীল পদ্ধতিতে খেলতে শুরু করে। এই সময়টাই তাদের অভিনয়-অভিনয় খেলা বা ‘প্রিটেন্ড প্লে’র শুরু। প্রিটেন্ড প্লে এমন একটি খেলা যেখানে শিশু বাস্তব কোনো কাজকে কল্পনার মাধ্যমে অন্য কোনোভাবে উপস্থাপন করে। যেমন, টেবিলকে নৌকা হিসেবে বা ঝাড়ুকে ঘোড়া হিসেবে কল্পনা করা। এই ধরনের খেলায় শিশুরা বাস্তব জগতের অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে কাল্পনিক জগতে প্রবেশ করে। সাধারণত, ২ বছর বয়সে শিশুরা বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতাকে তাদের খেলায় নিয়ে আসে, আর ৩ থেকে ৪ বছর বয়সে এসে তারা নিজেরাই বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় শুরু করে। প্রিটেন্ড প্লে’র মাধ্যমে শিশুর মানসিক বিকাশ ১ থেকে ৩ বছর বয়সী বাচ্চারা তাদের কল্পনাশক্তি দিয়ে পৃথিবীকে বুঝতে শুরু করে। এ বয়সে তাদের কাছে বাস্তব আর কল্পনার জগৎের মধ্যে পার্থক্য স্পষ্ট হয় না। তবে মানসিক বিকাশের সাথে সাথে এবং বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা বাড়ার সাথে সাথে এই পার্থক্যও পরিষ্কার হতে থাকে। বাচ্চার অভিনয়-অভিনয় খেলায় সাহায্য করার উপায় শিশুরা কল্পনাশক্তিতে সমৃদ্ধ। তাই আপনাকে খুব বেশি কিছু করতে হবে না। তবু কিছু ছোটো পদক্ষেপে আপনি তাদের খেলাকে আরও উপভোগ্য করে তুলতে পারেন:  ১. অভিনয়-অভিনয় খেলার জন্য একটি স্থান নির্ধারণ করুনঃ শিশুর জন্য একটি নিরাপদ জায়গা তৈরি করতে পারেন যেখানে সে কল্পনার জগতে ঢুকে খেলতে পারে। সেখানে খেলার তাঁবু, বড় কার্ডবোর্ড বক্সের মত কিছু জিনিস রাখতে পারেন। এটি শিশুকে খেলায় উদ্বুদ্ধ করবে।  ২. স্পষ্ট করে কথা বলুনঃ শিশুর সাথে কথা বলার সময় বর্ণনা করে বোঝান। এটি তার কল্পনার জগৎকে প্রসারিত করতে সাহায্য করবে। যেমন, “আমরা এখন চা খাচ্ছি, তুমি কি আমাকে একটু চা ঢেলে দিতে পারবে?”  ৩. অভিনয় করা শিখিয়ে দিনঃ সাজানোর জন্য সহজে পরা যায় এমন জামাকাপড় দিন। ব্যাটম্যান বা স্পাইডারম্যানের কেপ, বড় জুতো, নকল চুল ইত্যাদি দিয়ে শিশুকে কল্পনাপ্রবণ চরিত্রে অভিনয় করতে সহায়তা করতে পারেন।  ৪. বাস্তব জিনিসপত্র ব্যবহার করুনঃ শিশুর আশেপাশের জিনিসের অনুকরণে তৈরি খেলনা তাকে কল্পনার জগতে মগ্ন হতে সাহায্য করে। রান্নাঘর বা বাগানের জিনিস দিয়েও খেলার সামগ্রী তৈরি করতে পারেন। ৫. খেলার সঙ্গী হনঃ শিশুর খেলার সঙ্গী হয়ে তার সাথে মজা করুন। সে যদি প্যানকেক বানানোর অভিনয় করে, তবে আপনি বলতে পারেন, “তুমি কি আমাকে এই প্যানকেকগুলো একটি প্লেটে সাজিয়ে দেবে?” প্রিটেন্ড প্লে’র উপকারিতা ১. সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধি: শিশু যখন বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করে, তখন সে বিভিন্ন সামাজিক পরিস্থিতি শিখে। ২. ভাষা উন্নতি: বিভিন্ন চরিত্রে কথা বলার মাধ্যমে শিশুর ভাষার দক্ষতা বাড়ে। ৩. সমস্যা সমাধানের দক্ষতা: কল্পনাপ্রসূত খেলার মাধ্যমে শিশু বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের উপায় খুঁজে পায়। ৪. মানসিক বিকাশ: খেলাধুলা শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশকে ত্বরান্বিত করে, তাকে সৃজনশীল ও কল্পনাপ্রবণ করে তোলে। শিশুরা যখন প্রিটেন্ড প্লে’র মাধ্যমে তাদের কল্পনার জগতে বিচরণ করে, তখন তাদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই শিশুর কল্পনাশক্তি ও সৃজনশীলতাকে সমর্থন দিতে তাদের অভিনয়-অভিনয় খেলার পরিবেশ তৈরি করুন।

শিশুর সৃজনশীলতা বৃদ্ধিতে প্রিটেন্ড প্লে বা অভিনয়-অভিনয় খেলা Read More »

শিশুর ঘুমের সমস্যার কারণ ও প্রতিকার

baby sleep

শিশুর শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত ঘুম দরকার। কিন্তু বর্তমানে অনেক শিশুকেই ঘুমের সমস্যায় ভুগেতে দেখা যায়। যেসব শিশুরা ঘুমের সমস্যাতে ভোগে তাদের মধ্যে কিছু কমন সমস্যা দেখা যায়। যেমন – স্কুলে অমনোযোগী থাকে, দিনে ঝিমঝিম ভাব থাকে, পরীক্ষায় ভালো ফল করতে পারে না, মেজাজ খিটখিটে হয়, দীর্ঘমেয়াদি মাথাব্যথা ও স্থূলতায় ভুগে থাকে। মানুষের ঘুমের পরিমাণ ও তীব্রতা নির্ধারণে ‘প্রসেস-এস’ এবং অ্যাডিনোসিন ও অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থের প্রভাব থাকে। ঘুমসংক্রান্ত রাসায়নিক পদার্থগুলোকে বলে সমনোজেন। শিশু বয়সে এসব সমনোজেন থাকে বাড়তি মাত্রায়, ফলে এ বয়সের শিশু দিনে বেশিক্ষণ জেগে থাকতে পারে না। দিনের বেলার ঘুমে ঢলে পড়ে। মস্তিষ্কের ‘প্রসেস-সি’ ২৪ ঘণ্টাব্যাপী ঘুমানোর সময়কাল, ঘুম-জাগরণের ঢেউ নিয়ন্ত্রণ করে। এই মাস্টার ঘড়িটা মগজের হাইপোথ্যালামাস অংশে অবস্থিত। রক্ত সরবরাহ তন্ত্র, হরমোন, কিডনি ও ফুসফুসে ছড়িয়ে থাকা ঘুমঘড়ির ছোট ছোট বার্তাবাহকগুলো এই অংশের নিয়ন্ত্রণে। ঘুমের ‘সারকাডিয়ান ছন্দের’ কাজে প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রভাব বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বয়সভেদে শিশুর ঘুমের সময়কাল ও ঘুমের সমস্যা শূন্য থেকে দুই মাস বয়স: এই বয়সের শিশু ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রায় ১০-১৯ ঘণ্টা ঘুমিয়ে কাটায় (গড়ে ১৩ থেকে সাড়ে ১৪ ঘণ্টা), প্রিম্যাচিউর বা সময়ের আগেই জন্মানো শিশুর ক্ষেত্রে ঘুমের সময় আরও বেশি হয়ে থাকে । প্রথম সপ্তাহে রাত-দিনে ঘুমানোর কোনো শিডিউল গড়ে ওঠে না। পরের দিকে রাতে সাড়ে আট ঘণ্টা ও দিনে পৌনে ছয় ঘণ্টার মতো ঘুমের পরিমাণ নির্দিষ্ট হয়। বুকের দুধ খেয়ে তৃপ্ত থাকলে নবজাতক কখনো চার থেকে পাঁচ ঘণ্টাও একনাগাড়ে ঘুমাতে পারে। শূলবেদনা, অ্যাপনিয়া (হঠাৎ হঠাৎ শ্বাসপ্রশ্বাসের অসুবিধা), রিফ্লাক্স, ফর্মুলা খাবারে অ্যালার্জি ইত্যাদি কারণে এ বয়সের শিশুদের ঘুমের সমস্যা হতে পারে। ২ থেকে ১২ মাস বয়সী (ইনফ্যান্ট) শিশু: এ বয়সের শিশু গড়ে ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা অবধি ঘুমিয়ে কাটায়। মাথা দোলানো, পা ঝাঁকানো (রিদমিক মুভমেন্ট ডিজঅর্ডার), অনেক রাত অবধি ঘুম থেকে উঠিয়ে শিশুকে খাওয়ানোর অভ্যাস, ক্ষুধা, প্রস্রাব–পায়খানায় ভিজে যাওয়া, ঠান্ডা আবহাওয়া, একা রেখে মা কোথাও চলে যাবে এই বিচ্ছেদভীতি এ বয়সের শিশুর ঘুমের ব্যাঘাতের কারণ। ১ থেকে ৩ বছর বয়সী (টডলারস): শিশুর দৈনিক ঘুমের পরিমাণ দিনের ঘুম সহ ১১ থেকে ১৪ ঘণ্টার মতো। প্রধান ঘুমের সমস্যা হলো—ঘুম আতঙ্ক। এ বয়স থেকে শিশুকে নির্দিষ্ট সময়ে শোয়াতে নিয়ে যাওয়ার রুটিন গড়ে তোলা উচিত। স্কুলে যাওয়ার আগের বয়সে (৩-৫ বছর): দৈনিক ঘুমের পরিমাণ দিনের ঘুম সহ ১০-১৩ ঘণ্টা। ৪ বছর বয়সের ২৬ শতাংশ শিশু ও ৫ বছর বয়সে মাত্র ১৫ শতাংশ শিশু দিনে ঘুমায়। এ বয়সের শিশুর প্রধান ঘুমের সমস্যার মধ্যে আছে—স্লিপ ওয়াকিং, ঘুম আতঙ্ক ও হঠাৎ শ্বাসরোধ হওয়ার মতো পরিস্থিতি। এ বয়সে থেকে যাওয়া ঘুমের সমস্যা ক্রনিক হয়ে যেতে পারে, যা থেকে সে প্রস্রাব করে বিছানাও ভেজায়। মধ্য শৈশব (৬-১২ বছর): দৈনিক মোট ঘুম ৯ থেকে ১২ ঘণ্টা। বিদ্যালয়ের পরিবেশ ও আচরণের সমস্যা, স্ক্রিনের ব্যবহার, যেমন টেলিভিশন, কম্পিউটার, ভিডিও গেম, ইন্টারনেট আসক্তি ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায়। যা ঘুম আতঙ্ক, কম ঘুম ও ঘুমে শ্বাসপ্রশ্বাস বন্ধ হওয়ার মতো জটিলতা তৈরি করতে পারে। বয়ঃসন্ধিকাল: এ বয়সে শিশুর দৈনিক কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত। দেরি করে ঘুমানো, ক্লাস থাকার সময়ে ও ছুটির দিনের ঘুম রুটিনে বড় তফাত থাকা অনুচিত। চারপাশে নানা প্রতিযোগিতার দুশ্চিন্তা তার ঘুমকে প্রভাবিত করে। ফলে স্বাভাবিক নিদ্রা হয় না, সে নারকোলেপসিতে ভোগে। কেউ কেউ ঘুমে ক্রমাগত পা ঝাঁকায়। এই ঘুমহীন অবস্থা নানা সংকট তৈরি করে। যেমন স্কুলে সমস্যা সৃষ্টি, পারফরম্যান্সে ভাটা, মনোযোগ কমে যাওয়া ও স্বল্পকালীন দুর্বল স্মৃতিশক্তি। শিশু তাৎক্ষণিকভাবে কোনো কিছুর উত্তর দিতে পারে না, মেজাজ থাকে চড়া। বাইসাইকেল বা গাড়ি চালাতে প্রায় দুর্ঘটনার শিকার হয়। শিশুর স্বাস্থ্যকর ঘুমের টিপস ও ঘুমের সমস্যার প্রতিকার শিশুর সুস্বাস্থ্যের জন্য ঘুম ভীষণ প্রয়োজনীয় উপাদান। গবেষণা বলছে, অনধিক ৫ বছরের প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন শিশুর ঘুমের সমস্যা থাকে। এদের মধ্যে আবার ৩০ শতাংশের এ সমস্যা বেশ প্রকট। তবে শিশু যত বড় হতে থাকে, সমস্যা তত হ্রাস পায় এবং ৮ বছর বয়সে এসে প্রতি ১০ জন শিশুর একজন মাত্র ঘুমের অসুবিধায় ভোগে। শিশুর ৪ বছর বয়স থেকে ১৮ বছর বয়স অবধি প্রয়োজনীয় ঘুমের সবটুকুই রাতে বরাদ্দ। তখন থেকে আর দিনের ঘুমের প্রয়োজন পড়ে না। একজন শিশুর ঘুমের দৈনিক ঘণ্টার মোট পরিমাণ প্রতিদিনে খুব বেশি ওঠানামা করে না। তবে একেক শিশুর মধ্যে ঘুমের স্বাভাবিক পরিমাণের ফারাকটা বেশ বড়। শিশু যদি রাতে কম ঘুমায়, তবে দিনের বেলায় সে বেশি ঘুমাবে। রাতে বেশি ঘুমালে দিনে কম ঘুমাবে, এটাই নিয়ম। শিশুর ঘুমের রুটিনে স্বাভাবিক বা অস্বাভাবিকত্ব বলে কিছু নেই। এটি তখনই অস্বাভাবিক, তা যদি মা-বাবার ইচ্ছার সঙ্গে না মেলে। এই ঘুমের সমস্যার জন্য দিনে মা–বাবা ও শিশু উভয়ে ভীষণ ক্লান্ত থাকে। অল্প বয়সে যে শিশু ঘুমের সমস্যায় পড়ে, পরবর্তী সময়ে সে তা নিয়েই বেড়ে ওঠে। শিশুর ঘুমের সমস্যার কারণ চিহ্নিত করতে পূর্বাপর ইতিহাস নেওয়া উচিত। বিশেষত টেমপারেমেন্ট ও সাইকোলজিক্যাল হিস্ট্রি। যেমন ২৫-৫০ শতাংশ অমনোযোগী ডানপিটে শিশু ঘুমের সমস্যায় ভোগে। শিশু যদি কান পাকা, অ্যাডিনয়েড ও টনসিল স্ফীতজনিত শ্বাসরোধ অসুখ, পেটব্যথা বা স্নায়ুতন্ত্রের রোগে আক্রান্ত থাকে, তবে ঘুমের সমস্যায় পড়তে পারে। এসব শিশুকে শারীরিক পরীক্ষার সঙ্গে বা কখনো ইইজিসহ মৃগী রোগে ভুগছে কি না, যাচাই করা প্রয়োজন। শুরু থেকে শিশুর জন্য একটা ‘সুনিদ্রা অভ্যাস’ গড়ে তোলা উচিত। ঘুম ঘুম ভাব আছে, তবে সজাগ, এমন অবস্থায় শিশুকে ঘুমাতে নেওয়া উচিত। এ সময়টার কিছু আগে থেকে তাকে খানিক মজাদার গল্প পড়িয়ে শোনানো, ছবি দেখানো বা সুরেলা গানে অভ্যস্ত করা স্বাস্থ্যকর। ঘুমের আগে বেশি ছোটাছুটি বা দৌড়ঝাঁপ–জাতীয় কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখা উচিত। বিছানায় যাওয়ার আগে শিশু যে যে পছন্দের জিনিস নিতে চায়, তা নিতে দেওয়া ভালো, যেমন প্রিয় খেলনা, পুতুল বা বই। তবে কোনো ধারালো কিছু বা বোতাম–জাতীয় জিনিস, যা থেকে আঘাত কিংবা হঠাৎ গিলে ফেলার মতো দুর্ঘটনার আশঙ্কা আছে, সে সম্পর্কে সাবধানতা জরুরি। ঘুমাতে যাওয়ার আগের এক ঘণ্টা সময়কাল যেন শান্ত পরিবেশে থাকে। আলোহীন শোবার ঘর ও সহনীয় তাপমাত্রা (২৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের কম) থাকলে ভালো। শোবার ঘরে টেলিভিশন রাখা উচিত নয়। শিশু যেন অভুক্ত ঘুমাতে না যায়। তবে ঘুমানোর এক থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যে ভরপেট খাবার, কফি–চা, চকোলেটের মতো ক্যাফেইনযুক্ত খাবার গ্রহণ ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। সবচেয়ে ভালো হয় ঘুমের অন্তত তিন ঘণ্টা আগে খাবার খাওয়ানো। শিশুকে ‘শুভরাত্রি’ জানানো প্রতিদিন যেন একই রকমের হয়। ঘরের আলো নিভিয়ে দরজা বন্ধ করে আসুন। শোবার ঘরের আলো জ্বালিয়ে রাখার অর্থ—‘অন্ধকার এক ভয়ংকর ব্যাপার’, আর শোবার ঘরের দরজা খোলা রেখে দেওয়ার ইঙ্গিত—‘যখন ইচ্ছা তুমি বিছানা ছেড়ে চলে আসতে পারো’। এই ম্যাসেজ দেবেন না। সে যেন বুঝতে পারে, বিছানায় যাওয়ার পর টয়লেট বা জরুরি কাজ ছাড়া শয্যাত্যাগ নিষেধ। এ সময়ে তার সঙ্গে খেলা, কথা বলা, লাইট জ্বালানো–নেভানো এসব বাড়তি কিছু করা উচিত নয়। যখনই শিশু বিছানা থেকে ডাক দেবে, তার ওপর নজর রাখবেন। তার ডাকে দ্রুত না গিয়ে খানিক

শিশুর ঘুমের সমস্যার কারণ ও প্রতিকার Read More »

প্যারেন্টিং এবং গাছ পালনের সম্পর্ক

parenting vs planting

নিয়মিত যত্নই সাফল্যের চাবিকাঠি প্যারেন্টিং এবং গাছ পালনের মধ্যে একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে। উভয় ক্ষেত্রেই সফলতা অর্জন করতে হলে নিয়মিত যত্ন, ধৈর্য এবং সময়ের প্রয়োজন হয়। একটি গাছকে বাঁচিয়ে রাখা বা সুস্থভাবে বড় করে তোলার মতো, একজন শিশুকে সঠিকভাবে বড় করে তোলাও অনেক পরিশ্রমের কাজ। উদাহরণস্বরূপ একটি গাছের যত্ন নেওয়া ধরুন, আপনি একটি চারাগাছ রোপণ করেছেন বা বীজ বপণ করেছেন। প্রথমদিকে আপনি পানি দেওয়া ভুলে যান, রোদে রাখা মনে থাকে না। এরপর হঠাৎ শুক্রবার ছুটির দিনে আপনি গাছটিকে ৫ ঘণ্টা কড়া রোদে রেখে দিলেন, এবং সাথে দিলেন এক ড্রাম পানি। যেহেতু এতদিন যত্ন নেওয়া হয়নি, তাই এক বস্তা সারও দিলেন। কিন্তু সোমবার এসে দেখলেন, গাছটা মরে গেছে। আপনি অবাক হয়ে ভাবলেন, এত রোদ, পানি এবং সার দেওয়ার পরও গাছটি কেন বাঁচল না? নিয়মিত যত্নের গুরুত্ব গাছকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে নিয়মিত অল্প পরিমাণে পানি দিতে হয়, সঠিক সময়ে রোদে রাখতে হয় এবং প্রতি সপ্তাহে আগাছা পরিষ্কার করতে হয়। এমনকি সামান্য অবহেলাও গাছের ক্ষতি করতে পারে। একইভাবে, শিশুদের প্রতিদিনের যত্ন ও মনোযোগ দরকার। হঠাৎ একদিন অনেক কিছু দেওয়ার চেষ্টা করলে বা বিশেষ কিছু করার চিন্তা করলেই সঠিক ফল পাওয়া যায় না। প্যারেন্টিংয়ের ক্ষেত্রে ধৈর্য ও অধ্যবসায়ের ভূমিকা একটি শিশুকে সঠিকভাবে বড় করতে গেলে ধৈর্য এবং অধ্যবসায় অপরিহার্য। শিশুরা প্রতিদিনের আদর, ভালোবাসা, শৃঙ্খলা, এবং সময়ের মাধ্যমে বেড়ে ওঠে। একদিনের জন্য কিছু বিশেষ করে দেওয়া বা হঠাৎ বেড়াতে নিয়ে যাওয়া প্যারেন্টিং নয়। বরং, প্রতিদিনের ছোট ছোট যত্নই শিশুদের জীবনে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। সঠিক অভ্যাস গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা যেমন দাঁত ব্রাশ করা, সময় মতো খাওয়া, পড়াশোনা করা—এসব অভ্যাস শিশুদের শেখাতে হলে নিয়মিতভাবে তাদের সাথে কাজ করতে হবে। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া যা ধৈর্য সহকারে করতে হয়। ঠিক যেমন একটি গাছকে প্রতিদিনের যত্নে সবল এবং সুস্থ রাখা সম্ভব, তেমনি একজন শিশুকেও নিয়মিত যত্ন এবং মনোযোগে একটি সুখী, সুস্থ, এবং সাফল্যমণ্ডিত জীবনের দিকে পরিচালিত করা যায়। প্যারেন্টিং একটি অবিচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া—একদিনের চেষ্টায় এর সফলতা আসে না। সুতরাং, প্রতিদিনের যত্নের মাধ্যমে আপনার সন্তানের ভবিষ্যৎকে উজ্জ্বল করে তুলুন, যেমনটি আপনি একটি গাছকে প্রতিদিনের যত্ন দিয়ে সুস্থভাবে বড় করেন।

প্যারেন্টিং এবং গাছ পালনের সম্পর্ক Read More »

শিশুর সামনে যে বিষয়ে আলোচনা করবেন না

what not to speak in front of your child

পারিবারিক জীবনে কিছু কিছু সংবেদনশীল বিষয় থাকে, যেগুলো শিশুর সামনে আলোচনা করা ঠিক না। শিশুর সঙ্গে শিশুর মতো করেই মিশতে হবে। শিশুর বেড়ে ওঠার স্বাভাবিকতায় যাতে ছন্দপতন না হয় পাশাপাশি ‍শিশুর মনের উপর ওপর যাতে চাপ না পড়ে— সে কারণেই শিশুর সামনে নিচে উল্লেখিত বিষয়ে কথা বলা যাবে না। ১. আর্থিক অবস্থাঃ আপনার পরিবারের আর্থিক অবস্থা যেমনই হোক না কেন, শিশুর সামনে তা আলোচনা করা থেকে বিরত থাকুন। আর্থিক সমস্যার ভেতর দিয়ে গেলেও শিশুকে তা বুঝতে দেওয়া যাবে না। আবার আপনি যদি বিলিয়নিয়ার হন, সেটির বাড়াবাড়ি প্রকাশও শিশুর স্বাভাবিক মানসিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। ২. দাম্পত্য সমস্যাঃ নিজেদের দাম্পত্যজীবনের যেকোনো সমস্যা কেবল শিশু কেন, যে কারও থেকেই আড়ালে রাখার চেষ্টা করুন। নিজেদের সমস্যা যথাসম্ভব গোপনীয়তা বজায় রেখে নিজেরা আলোচনার মধ্য দিয়ে সমাধান করুন। প্রয়োজনে বাসার বাইরে কোনো রেস্টুরেন্টে গিয়ে খোলামেলা আলাপ করুন। শিশুর সামনে কোন অবস্থায় এসব বিষয়ে আলাপ করা যাবে না। এতে শিশুর মনে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। মা ও বাবা যে কারও প্রতি, এমনকি দুজনের প্রতিই শিশুর দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যেতে পারে। ৩. যুদ্ধ, হানাহানি, গোলাগুলি, রাজনৈতিক অস্থিরতাঃ দেশে বা বিশ্বের কোথাও যদি কোনো জরুরি অবস্থার সৃষ্টি হয়, যুদ্ধ চলে, এসব নৃশংসতা নিয়ে শিশুর সামনে আলাপ না করাই ভালো। এমনকি কম্পিউটার, মুঠোফোন বা টেলিভিশনের (সিনেমা বা বাস্তবে) নৃশংসতার কোন দৃশ্য শিশুর সামনে দেখবেন না। এতে শিশুর কোমল মনে গভীর ছাপ ফেলতে পারে। ৪. অন্যের সমালোচনাঃ শিশুর সামনে অন্যকে ‘জাজ’ করা বা সমালোচনা করা যাবে না। বিশেষ করে পরিবারের অন্য সদস্য যেমন: ওই শিশুর নানা–নানি, দাদা–দাদি, খালা–ফুফু বা মামা–চাচার সম্পর্কে কোনো নেতিবাচক মন্তব্য করতে যাবেন না। প্রথমত, তা শিশুর ওই ব্যক্তির প্রতি স্বাভাবিক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরিতে বাধা সৃষ্টি করবে। আর দ্বিতীয় সমস্যাটি আরও গুরুতর। শিশু ওই ব্যক্তির কাছে গিয়ে গড়গড় করে বলে দেবে যে আপনি তাঁর সম্পর্কে ‘উল্টাপাল্টা’ কী বলেছেন! ধরুন, শিশু তার দাদিকে গিয়ে বলল, ‘জানো, মা বলেছে তুমি নাকি পচা। কানে কানে আরেকটা কথা বলি শোনো, তোমাকে যে বললাম, মাকে কিন্তু বলবে না। আমাকে বলতে নিষেধ করেছে। আর এই চকলেটটা দিয়েছে।’ ৫. শারীরিক জটিলতাঃ শিশুর সামনে জটিল কোনো অসুখ বা রোগ নিয়ে আলাপ করবেন না।  ৬. হতাশা বা মানসিক জটিলতাঃ শারীরিক সমস্যার মতো মানসিক জটিলতাও সমান গুরুতর। তাই আপনার শিশুর সামনে ব্যক্তিগত হতাশা, অফিসের চাপ, মানসিক সমস্যা নিয়ে আলাপ করবেন না। এটা তাকেও প্রভাবিত করতে পারে।

শিশুর সামনে যে বিষয়ে আলোচনা করবেন না Read More »