গরুর দুধের পুষ্টি ও সমস্যা
গরুর দুধে উচ্চমাত্রার আমিষ ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান থাকে যা ১ বছরের নিচের শিশুদের হজম করার ক্ষমতা নেই। উপরন্তু, গরুর দুধে কিছু ভিটামিন ও মিনারেল নেই যা প্রথম বছরের শিশুর বিকাশের জন্য প্রয়োজন।
শিশুকে গরুর দুধে অভ্যস্ত করার পদ্ধতি
গরুর দুধের স্বাদে অভ্যস্ত করা: বুকের দুধ গরুর দুধের চেয়ে বেশি মিষ্টি হওয়ায় কিছু বাচ্চা সহজেই গরুর দুধ খেতে পছন্দ করে না। এমন হলে, শুরুতে বুকের দুধের সঙ্গে সামান্য গরুর দুধ মিশিয়ে খাওয়াতে পারেন। এতে বাচ্চা নতুন স্বাদে অভ্যস্ত হবে। ধীরে ধীরে গরুর দুধের পরিমাণ বাড়িয়ে দিন।
খাবার তৈরিতে গরুর দুধের ব্যবহার: বাচ্চার খাবার যেমন সুজি বা অন্যান্য খাবারে গরুর দুধ ব্যবহার করতে পারেন। এতে বাচ্চা দুধের স্বাদে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে।
দুধের তাপমাত্রা সামঞ্জস্য করা: বাচ্চা ঠান্ডা দুধ খেতে না চাইলে কুসুম গরম দুধ দিয়ে চেষ্টা করুন। তাপমাত্রার পরিবর্তনে অনেক সময় বাচ্চা দুধ খেতে পছন্দ করে।
ফল বা বাদাম মিশিয়ে দিন: গরুর দুধের সঙ্গে বাচ্চার পছন্দের ফল বা বাদাম গুঁড়া মিশিয়ে দিলে দুধের স্বাদ ও পুষ্টিগুণ বাড়ে। এতে বাচ্চা দুধ খেতে আরও আগ্রহী হবে।
বয়সভেদে গরুর দুধের পরিমাণ
১-৩ বছর বয়সী শিশুদের জন্য প্রতিদিন ২-৩ কাপ (১৬-২৪ আউন্স বা ৫০০-৬৮০ গ্রাম) গরুর দুধ খাওয়ানো উচিত। গরুর দুধে প্রচুর ফ্যাট, প্রোটিন, জিঙ্ক, ভিটামিন এ এবং ডি থাকে, যা শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সাহায্য করে।
তবে মনে রাখতে হবে, অতিরিক্ত গরুর দুধ খাওয়ানো উচিত নয়। অতিরিক্ত দুধ খেলে বাচ্চার ক্ষুধা নষ্ট হয়ে যেতে পারে, যার ফলে সলিড খাবারের প্রতি আগ্রহ কমে যায়। গরুর দুধে আয়রন নেই, তাই বাচ্চা যদি আয়রনযুক্ত খাবার না খায়, তবে আয়রনের অভাব থেকে অ্যানিমিয়া হতে পারে।
শিশুর পেটে গরুর দুধ সহ্য না হলে কী করবেন?
নন-ডেইরি দুধের বিকল্প: বাচ্চার যদি দুধে অ্যালার্জি থাকে, তবে নন-ডেইরি দুধ (যেমন আমন্ড মিল্ক, ওট মিল্ক) খাওয়ানো যেতে পারে। তবে এগুলো ৫ বছরের নিচে খাওয়াতে হলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ফর্টিফাইড সয়া মিল্ক: সয়াবিন দিয়ে তৈরি ফর্টিফাইড সয়া মিল্কে গরুর দুধের সমান পুষ্টিগুণ থাকে। সয়া মিল্ক গরুর দুধের ভালো বিকল্প হতে পারে।
বাচ্চা দুধ না খেলে যে-সব খাবার দেওয়া যেতে পারে
দুধের বিকল্প হিসেবে বাচ্চাকে নিম্নোক্ত খাবার খাওয়ানো যেতে পারে, যাতে প্রচুর ক্যালসিয়াম এবং পুষ্টি উপাদান থাকে:
– টকদই
– পনির বা চিজ
– চিয়া সিড / তিল
– পালং শাক
– ব্রকলি
– মসুর ডাল
– মটরশুঁটি
– কাজুবাদাম
বাচ্চা দুধ না খেলেও অন্যান্য পুষ্টিকর খাবার তার সঠিক বিকাশে সাহায্য করতে পারে। সঠিক পরিমাণ এবং পুষ্টির বিষয়টি মাথায় রেখে বাচ্চার খাদ্য তালিকা তৈরি করা উচিত। প্রয়োজনে পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া সবসময় ভালো।