স্মার্ট প্যারেন্টিং

শিশুর সৃজনশীলতা বৃদ্ধিতে প্রিটেন্ড প্লে বা অভিনয়-অভিনয় খেলা

আপনি কি কখনো দেখেছেন, আপনার বাচ্চা তার প্রিয় পুতুলটিকে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করছে, আপনার জুতা পরে হেঁটে বেড়াচ্ছে, বা একটি বাটিতে কাল্পনিক স্যুপ নিয়ে চামচ দিয়ে নাড়ছে? শিশুরা যখন ২ বছর বয়সে পৌঁছে, তখন তারা নানা সৃজনশীল পদ্ধতিতে খেলতে শুরু করে। এই সময়টাই তাদের অভিনয়-অভিনয় খেলা বা ‘প্রিটেন্ড প্লে’র শুরু।

প্রিটেন্ড প্লে এমন একটি খেলা যেখানে শিশু বাস্তব কোনো কাজকে কল্পনার মাধ্যমে অন্য কোনোভাবে উপস্থাপন করে। যেমন, টেবিলকে নৌকা হিসেবে বা ঝাড়ুকে ঘোড়া হিসেবে কল্পনা করা। এই ধরনের খেলায় শিশুরা বাস্তব জগতের অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে কাল্পনিক জগতে প্রবেশ করে। সাধারণত, ২ বছর বয়সে শিশুরা বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতাকে তাদের খেলায় নিয়ে আসে, আর ৩ থেকে ৪ বছর বয়সে এসে তারা নিজেরাই বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় শুরু করে।

pretend play

প্রিটেন্ড প্লে’র মাধ্যমে শিশুর মানসিক বিকাশ

১ থেকে ৩ বছর বয়সী বাচ্চারা তাদের কল্পনাশক্তি দিয়ে পৃথিবীকে বুঝতে শুরু করে। এ বয়সে তাদের কাছে বাস্তব আর কল্পনার জগৎের মধ্যে পার্থক্য স্পষ্ট হয় না। তবে মানসিক বিকাশের সাথে সাথে এবং বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা বাড়ার সাথে সাথে এই পার্থক্যও পরিষ্কার হতে থাকে।

বাচ্চার অভিনয়-অভিনয় খেলায় সাহায্য করার উপায়

শিশুরা কল্পনাশক্তিতে সমৃদ্ধ। তাই আপনাকে খুব বেশি কিছু করতে হবে না। তবু কিছু ছোটো পদক্ষেপে আপনি তাদের খেলাকে আরও উপভোগ্য করে তুলতে পারেন:

 ১. অভিনয়-অভিনয় খেলার জন্য একটি স্থান নির্ধারণ করুনঃ শিশুর জন্য একটি নিরাপদ জায়গা তৈরি করতে পারেন যেখানে সে কল্পনার জগতে ঢুকে খেলতে পারে। সেখানে খেলার তাঁবু, বড় কার্ডবোর্ড বক্সের মত কিছু জিনিস রাখতে পারেন। এটি শিশুকে খেলায় উদ্বুদ্ধ করবে।

 ২. স্পষ্ট করে কথা বলুনঃ শিশুর সাথে কথা বলার সময় বর্ণনা করে বোঝান। এটি তার কল্পনার জগৎকে প্রসারিত করতে সাহায্য করবে। যেমন, “আমরা এখন চা খাচ্ছি, তুমি কি আমাকে একটু চা ঢেলে দিতে পারবে?”

 ৩. অভিনয় করা শিখিয়ে দিনঃ সাজানোর জন্য সহজে পরা যায় এমন জামাকাপড় দিন। ব্যাটম্যান বা স্পাইডারম্যানের কেপ, বড় জুতো, নকল চুল ইত্যাদি দিয়ে শিশুকে কল্পনাপ্রবণ চরিত্রে অভিনয় করতে সহায়তা করতে পারেন।

 ৪. বাস্তব জিনিসপত্র ব্যবহার করুনঃ শিশুর আশেপাশের জিনিসের অনুকরণে তৈরি খেলনা তাকে কল্পনার জগতে মগ্ন হতে সাহায্য করে। রান্নাঘর বা বাগানের জিনিস দিয়েও খেলার সামগ্রী তৈরি করতে পারেন।

৫. খেলার সঙ্গী হনঃ শিশুর খেলার সঙ্গী হয়ে তার সাথে মজা করুন। সে যদি প্যানকেক বানানোর অভিনয় করে, তবে আপনি বলতে পারেন, “তুমি কি আমাকে এই প্যানকেকগুলো একটি প্লেটে সাজিয়ে দেবে?”

প্রিটেন্ড প্লে’র উপকারিতা

১. সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধি: শিশু যখন বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করে, তখন সে বিভিন্ন সামাজিক পরিস্থিতি শিখে।

২. ভাষা উন্নতি: বিভিন্ন চরিত্রে কথা বলার মাধ্যমে শিশুর ভাষার দক্ষতা বাড়ে।

৩. সমস্যা সমাধানের দক্ষতা: কল্পনাপ্রসূত খেলার মাধ্যমে শিশু বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের উপায় খুঁজে পায়।

৪. মানসিক বিকাশ: খেলাধুলা শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশকে ত্বরান্বিত করে, তাকে সৃজনশীল ও কল্পনাপ্রবণ করে তোলে।

শিশুরা যখন প্রিটেন্ড প্লে’র মাধ্যমে তাদের কল্পনার জগতে বিচরণ করে, তখন তাদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই শিশুর কল্পনাশক্তি ও সৃজনশীলতাকে সমর্থন দিতে তাদের অভিনয়-অভিনয় খেলার পরিবেশ তৈরি করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Trending

Exit mobile version