Parenting Point

টামি টাইম (Tummy Time) : শিশুর ঘাড় শক্ত করার সহজ ও কার্যকরী উপায়

Tummy time

শিশুর জন্মের পর শারীরিক বিকাশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ রয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো টামি টাইম। অনেক মা-বাবা জানেন না এই ছোট অভ্যাসটি কীভাবে শিশুর ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্য ও মোটর স্কিল ডেভেলপমেন্টে বড় ভূমিকা রাখে।

এই ব্লগে আপনি জানবেন—

  • টামি টাইম কী

  • এর উপকারিতা

  • কখন ও কিভাবে করবেন

  • সতর্কতা ও পরামর্শ

টামি টাইম কী?

টামি টাইম (Tummy Time) বলতে বোঝায়—শিশু জেগে থাকা অবস্থায় তাকে পেটের ওপর ভর দিয়ে উপুড় করে শোয়ানো। সাধারণত ৬-৭ মাস বয়সের আগে শিশুরা নিজে থেকে উপুড় হতে পারে না, তাই অভিভাবকরা তাকে সাহায্য করেন। এটি শিশুর ঘাড়, পিঠ ও কোমরের পেশি শক্তিশালী করে এবং গ্যাসের সমস্যা কমায়।

টামি টাইম কেন গুরুত্বপূর্ণ?

ঘাড় ও পেশি শক্তিশালী করে

শিশু সোজা হয়ে বসা, হামাগুড়ি বা হাঁটার জন্য যে পেশিগুলোর প্রয়োজন—টামি টাইম সেই পেশিগুলোকে শক্তিশালী করে।

পেটের গ্যাস দূর করে

শিশুরা যখন উপুড় হয়ে থাকে, তখন পেটের গ্যাস সহজে বের হয়ে যায়। এটি তাদের অস্বস্তি কমাতে সাহায্য করে।

মাথার গঠন ঠিক রাখতে সাহায্য করে

দীর্ঘ সময় চিত হয়ে শোয়ার ফলে শিশুর মাথা সমান বা চ্যাপ্টা হয়ে যেতে পারে (Flat Head Syndrome)। টামি টাইমে অবস্থান পরিবর্তন হয়, ফলে এই ঝুঁকি কমে।

দৃষ্টি ও মোটর স্কিল ডেভেলপ করে

চোখে চোখ রাখা, খেলনার দিকে তাকানো, সামনে এগিয়ে যাওয়া ইত্যাদির মাধ্যমে শিশুর মোটর স্কিল এবং ভিজুয়াল ট্র্যাকিং স্কিল তৈরি হয়।

 

কখন শুরু করবেন টামি টাইম?

শিশুর জন্মের কয়েকদিন পর থেকেই টামি টাইম শুরু করা যায়। প্রথম দিকে দিনে ২-৩ বার মাত্র ১-২ মিনিট করে শুরু করুন। এরপর ধীরে ধীরে সময় বাড়ান।

বয়স অনুযায়ী গাইডলাইন:

  • নবজাতক (০-২ মাস): দিনে ৩-৫ বার, ২-৩ মিনিট করে

  • ৩ মাস+: দিনে মোট ২০-৩০ মিনিট

  • ৬ মাস+: দিনে মোট ৪০-৬০ মিনিট (ভাগ করে)

টামি টাইম কোথায় করাবেন?

  • আপনার বুকের উপর: সবচেয়ে নিরাপদ ও ঘনিষ্ঠ সময়।

  • নরম ম্যাট বা কম্বলের উপর: ফ্লোরে একটি সেফ জোন বানিয়ে।

  • আপনার কোলে বা পায়ের উপর: সহজ এবং আরামদায়ক বিকল্প।

টামি টাইম করার টিপস

✔️ শিশুর মন ভালো থাকলে করুন (খাওয়ার পর নয়)
✔️ রঙিন খেলনা বা আয়নার সাহায্যে শিশুকে উৎসাহ দিন
✔️ শিশুর সঙ্গে চোখে চোখ রেখে কথা বলুন
✔️ ধীরে ধীরে সময় বাড়ান—প্রথমে ১ মিনিট, পরে ১০ মিনিট পর্যন্ত

সতর্কতা ও ভুল এড়ানো

⚠️ টামি টাইম কখনো ঘুমের সময় নয়
⚠️ শিশুকে একা ফেলে যাবেন না
⚠️ নরম বালিশ বা উঁচু স্থানে করবেন না
⚠️ যদি শিশু ক্লান্ত হয় বা কান্না করে, তখন বিরতি দিন

টামি টাইম না করালে কী সমস্যা হতে পারে?

  • ঘাড়ের পেশি দুর্বল থেকে যাবে

  • মাথা চ্যাপ্টা হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে

  • বসা, হামাগুড়ি, হাঁটার সময় দেরি হতে পারে

  • হাতের স্পর্শ ও চোখের দৃষ্টি ব্যবহারে বিলম্ব হয়

টামি টাইম শিশুর জীবনের শুরুতেই তার শরীর ও মস্তিষ্ক বিকাশের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রতিদিন কিছু সময় ধরে এই অভ্যাস গড়ে তুললে শিশু আরও শক্তিশালী, সক্রিয় এবং সুস্থভাবে বেড়ে উঠবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *