ডাক্তারের পরামর্শ: ঔষধ গ্রহণের প্রথম শর্ত
প্রতিদিনের ছোটখাটো অসুস্থতার জন্য আমরা অনেক সময় নিজে থেকেই ঔষধ সেবন করি। কিন্তু গর্ভাবস্থায় এ ধরনের নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেয়া ক্ষতিকর হতে পারে। সাধারণ সর্দি, কাশি, বা মাথাব্যথার মতো সমস্যার জন্যও ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ঔষধ গ্রহণ করা উচিত নয়। কারণ, অনেক ঔষধ গর্ভস্থ শিশুর বিকাশে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। সুতরাং, কোনও ধরনের চিকিৎসা শুরু করার আগে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা প্রয়োজন।
প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ঔষধ গ্রহণ
গর্ভাবস্থায় কোন ঔষধ সেবন করার আগে সেটি ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী গ্রহণ করতে হবে। প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী সঠিক ডোজ এবং নির্ধারিত সময় মেনে ঔষধ খাওয়া জরুরি। কারণ ডোজে কোন ধরনের পরিবর্তন হলে তা মা এবং শিশুর স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
প্রাকৃতিক ও হারবাল ঔষধ সেবনে সতর্কতা
প্রাকৃতিক বা হারবাল ঔষধ অনেক সময় ক্ষতিকর হতে পারে। বেশিরভাগ মানুষ হারবাল ঔষধকে নিরাপদ মনে করেন, কিন্তু গর্ভাবস্থায় এটি মায়ের এবং শিশুর স্বাস্থ্যের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই যেকোনো প্রকার হারবাল ঔষধ সেবনের আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
গর্ভাবস্থার বিভিন্ন পর্যায়ে ঔষধ গ্রহণের বিশেষ সতর্কতা
গর্ভাবস্থার সময়কে সাধারণত তিনটি ধাপে ভাগ করা হয়—প্রথম তিন মাস (প্রথম ট্রাইমেস্টার), মধ্যের তিন মাস (দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টার), এবং শেষের তিন মাস (তৃতীয় ট্রাইমেস্টার)। প্রতিটি ধাপে মায়ের ও শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষায় ভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়।
প্রথম তিন মাসের ঔষধ সেবন
প্রথম তিন মাস গর্ভস্থ শিশুর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গঠনের সময়। এই সময় যেকোনো প্রকার ঔষধ সেবন করলে শিশুর শারীরিক বিকাশে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। তাই প্রথম তিন মাসে যে কোনো ঔষধ গ্রহণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সতর্ক থাকা জরুরি।
মধ্যের তিন মাসের ঔষধ সেবন
মধ্যের তিন মাস তুলনামূলকভাবে কম ঝুঁকিপূর্ণ হলেও, মায়ের শরীরের পরিবর্তনের সাথে সাথে শিশুর বৃদ্ধি এসময় দ্রুত হয়। এই সময় কোন ঔষধ গ্রহণ করতে হলে অবশ্যই চিকিৎসকের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে।
শেষ তিন মাসের ঔষধ সেবন
শেষ তিন মাসেও সতর্কতার প্রয়োজন। যেকোনো প্রকার ঔষধ শিশুর জন্মের প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে। এছাড়া কিছু ঔষধ প্রিম্যাচিউর লেবার বা শিশুর প্রিম্যাচিউর জন্মের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
কোন ঔষধগুলি গর্ভাবস্থায় এড়িয়ে চলা উচিত
গর্ভাবস্থায় কিছু ঔষধ গ্রহণ করলে তা মা ও শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। নিচে উল্লেখিত ঔষধগুলো এড়িয়ে চলা উচিত:
১. অ্যাসপিরিন ও অন্যান্য ব্যথানাশকঃ অনেক ব্যথানাশক ঔষধ গর্ভস্থ শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। অ্যাসপিরিন, আইবুপ্রোফেন প্রভৃতি ঔষধ গ্রহণের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
২. অ্যান্টিবায়োটিকঃ অনেক ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক শিশুর অঙ্গপ্রত্যঙ্গের গঠনে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। তাই কোন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ গ্রহণ করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলা জরুরি।
৩. অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টঃ যেসব ঔষধ মনের অবস্থার উন্নতি করতে ব্যবহৃত হয়, সেগুলি গর্ভস্থ শিশুর মানসিক ও শারীরিক বিকাশে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
৪. এন্টিহিস্টামিন ও ডিকঞ্জেস্ট্যান্টঃ যেকোনো ধরনের অ্যালার্জি বা ঠান্ডা জনিত ঔষধ সেবন করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা জরুরি। কিছু এন্টিহিস্টামিন ঔষধ গর্ভস্থ শিশুর উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
ফার্মাসিস্টের পরামর্শে ঔষধ সেবন করবেন না
বেশিরভাগ মানুষ ঔষধ ক্রয়ের জন্য ফার্মেসির ওপর নির্ভরশীল। তবে ফার্মাসিস্ট বা ফার্মেসির কর্মীরা সাধারণত চিকিৎসক নন এবং তারা মায়ের নির্দিষ্ট শারীরিক অবস্থা, রোগের ইতিহাস বা অন্যান্য বিবরণ সম্পর্কে জানেন না। এতে ভুল ঔষধ সেবন বা ডোজের ভুল হওয়ার ঝুঁকি থাকে, যা মা এবং শিশুর জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। তাই, ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ব্যতীত ঔষধ গ্রহণ করা উচিত নয়।
গর্ভাবস্থায় নিরাপদ কিছু ঔষধ
গর্ভাবস্থায় সব ঔষধ ঝুঁকিপূর্ণ নয়। কিছু সাধারণ সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নিরাপদ ঔষধ রয়েছে, তবে সেগুলি গ্রহণ করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। উদাহরণস্বরূপ:
প্যারাসিটামল: মাথাব্যথা বা জ্বরের ক্ষেত্রে প্যারাসিটামল নিরাপদ বলে ধরা হয়।
এন্টাসিড: গ্যাস্ট্রিক বা বুকজ্বালা কমাতে কিছু এন্টাসিড গ্রহণ করা যেতে পারে।
ভিটামিন ও আয়রন সাপ্লিমেন্ট: গর্ভাবস্থায় শরীরে পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করতে বিশেষ কিছু ভিটামিন এবং আয়রন সাপ্লিমেন্ট প্রয়োজন হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় সুস্থ থাকার কিছু সাধারণ পরামর্শ
গর্ভাবস্থায় ঔষধ সেবনের পাশাপাশি নিজের শরীরের প্রতি বাড়তি যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। সুস্থ থাকতে কিছু সহজ পদক্ষেপ অনুসরণ করা যেতে পারে:
পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন: প্রতিদিন পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং ভালো ঘুম নিশ্চিত করুন।
পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ: স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মেনে চলুন এবং পুষ্টিকর খাবার খান।
হালকা ব্যায়াম: হালকা শরীরচর্চা করতে পারেন, তবে তা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী।
মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন: নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিন এবং কোনো মানসিক চাপ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন।
মায়ের স্বাস্থ্য যত ভালো থাকবে, গর্ভস্থ শিশুর স্বাস্থ্যও তত ভালো থাকবে। গর্ভাবস্থায় ঔষধ সেবনের ক্ষেত্রে সচেতন থাকাটা অত্যন্ত জরুরি। শিশুর সুস্থতা নিশ্চিত করতে হলে মাকে অবশ্যই নিজে সচেতন হতে হবে, নিজের শরীরের যত্ন নিতে হবে এবং ডাক্তারের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে।
সচেতন হোন, সুস্থ থাকুন এবং আপনার শিশুকে একটি স্বাস্থ্যকর জীবন উপহার দিন!
Pingback: প্রেগন্যান্সির লক্ষণ — Parenting Point
Sammy
September 5, 2024 at 5:39 am
I think this is one of the most vital information for me.
And i’m glad reading your article. Buut should reark on sopme general things,
The web site style is ideal, the articles iss really nice : D.
Good job, cheers https://Bandur-Art.Blogspot.com/2024/08/the-ultimate-guide-to-no-mans-sky-mods.html
Sammy
September 5, 2024 at 5:40 am
I think this is one of the moat vital information for
me. And i’m glad reading your article. Butt should remark onn some general things, The web site style is
ideal, the articles is really nice : D. Good job, cheers https://Bandur-Art.Blogspot.com/2024/08/the-ultimate-guide-to-no-mans-sky-mods.html
Samira
September 5, 2024 at 3:02 pm
Thank You so much for your valuable comments .
Pingback: গর্ভাবস্থায় আয়রন — Parenting Point