এই প্রভাব হতে পারে, চোখের সমস্যা, স্থূলতা,অন্যান্য শারীরিক সমস্যা থেকে শুরু করে সামাজিক দক্ষতা এবং আচরণগত সমস্যা, কিংবা ঘুম এবং স্মৃতি শক্তির সমস্যা ।
যেহেতু প্রযুক্তি আমাদের, দৈনন্দিন জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়েছে, এবং অনেক কিছুই প্রযুক্তি নির্ভর, সুতরাং পিতামাতারা হয়তো প্রযুক্তিকে তাদের সন্তানের জীবন থেকে একদমই ব্যান করে দিতে পারবেন না, কিন্তু তাদের উচিত হবে, অতিরিক্ত সতর্কতা এবং সচেতনতার সহিত সেই প্রযুক্তির ব্যবহারকে তাদের সন্তানের মধ্যে চালনা করা।
কীভাবে প্রযুক্তি শিশু এবং কিশোরদের মধ্যে প্রভাব ফেলে
শিশুদের স্থূলতা এবং প্রযুক্তি:
শিশু এবং কিশোররা যখন ডিভাইস নিয়ে ব্যস্ত থাকে স্বাভাবিকভাবেই তারা বাইরের শারীরবৃত্তীয় কার্যকলাপ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, মাঠে খেলাধুলা, শারীরিক ব্যায়াম এগুলা আর হয়ে ওঠে না। ফলশ্রুতিতে হয়ে যায় স্থূলতা। পাশাপাশি অনেক গবেষণা এটাও বলে যে, অতিরিক্ত মোবাইল কিংবা টেলিভিশন দেখিয়ে যখন আমার শিশু এবং কিশোরদেরকে খাওয়ানোতে ব্যস্ত রাখি, তখন তাদের “মাইন্ডফুল ইটিং” থেকে তারা ব্যাহত হয়। যা পরবর্তীতে আরো স্থুলতাকে ত্বরান্বিত করে।
সুতরাং শিশু এবং কিশোরদের প্রযুক্তি নির্ভরতা কে, একদম অবাঞ্ছিত না করে, উচিত হবে সেটাকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা, যতটুকু প্রয়োজন ঠিক ততটুকু ব্যবহার করা, বাইরের খেলাধুলা কিংবা শারীরবৃত্তীয় কাজগুলোকে উৎসাহিত করা।
টেকনোলজির প্রভাবে শিশু এবং কিশোরদের সামাজিক দক্ষতা:
প্রযুক্তির উন্নয়নের আরেকটি চ্যালেঞ্জ হলো সামাজিক দক্ষতা। একটি গান আমরা সবাই জানি পৃথিবীটা নাকি ছোট হতে হতে ‘স্যাটেলাইট আর ক্যাবলের হাতে, ড্রয়িং রুমে রাখা বোকা বাক্সতে বন্দী”। ঠিক তেমনি পৃথিবীটা যেমন আমাদের হাতে বন্দি, আমাদের সমাজ পরিবার সবকিছুই যেন এই মুঠোফোন কিংবা এই ডিভাইসের মধ্যেই যেন সবকিছু বন্দী। এতে করে শিশু এবং কিশোরদের পারস্পরিক সম্পর্ক কিংবা সামাজিক দক্ষতা খুব কঠিন ভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
এতে করে শিশু এবং কিশোরদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস কমে যাচ্ছে, কীভাবে সামাজিক পরিবেশে নিজেদেরকে মানিয়ে নিতে হয় সেটা শিখতে পারছে না, বন্ধুবান্ধব কিংবা আত্মীয় স্বজনের সাথে সম্পর্ক তৈরি কিংবা রক্ষা করতে পারছে না।
এমনকি সমবয়সি বন্ধুদের সাথেও বন্ধুত্ব তৈরি করতে সমস্যা হচ্ছে।
সুতরাং এই ক্ষেত্রে পিতা মাতার ভূমিকা হচ্ছে, প্রযুক্তির ব্যবহার একটি নির্দিষ্ট লিমিটের মধ্যে নিয়ে আসা, পারিবারিক বন্ধন আরো দৃঢ় করা। যেমন, প্রতিদিন নির্দিষ্ট একটা সময় পরিবারের সদস্যরা একই সাথে বসে দুপুরের খাবার খাবে, একসাথে বসে গল্প করবে, ছুটির দিনে বেড়াতে যাবে, আত্মীয়-স্বজনদের সাথে দেখা করবে, সমবয়সি বন্ধুদের সাথে খেলাধুলা করবে ইত্যাদি।
ভুলে গেলে চলবে না, শিশু এবং কিশোররা অনুকরণ প্রিয়। তারা তাই শিখে যা তারা দেখে, তাই তাদেরকে সেই অভ্যাসে তৈরি করতে হলে পিতা-মাতাকেও সেভাবেই রুটিন সাজিয়ে নিতে হবে
প্রযুক্তি এবং মনোযোগ
গবেষণা বলে অতিরিক্ত প্রযুক্তি এবং ডিভাইসের ব্যবহার, শিশু এবং কিশোরদের মধ্যে মনোযোগের ঘাটতি ঘটায়।
স্ক্রিনে চলতে থাকা অনবরত রিলস কিংবা শর্টস যখন শিশু-কিশোররা দেখে, একটা নির্দিষ্ট কোন কিছুতে তারা তাদের মস্তিষ্ককে তখন স্থির করতে পারে না, ঠিক একইভাবে তারা তাদের মনোযোগ টাকেও স্থির করতে পারে না, ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে স্থায়ী হয়ে যায় সেই মনোযোগের ঘাটতি।
পাঁচ বছরের নিচে শিশুদের মধ্যে প্রযুক্তির প্রভাব :
এটা আমরা অস্বীকার করতে পারবো না যে, এখন ছয় মাস বয়স থেকে শিশুদের হাতে তুলে দেয়া হয় বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস।
এতে করে ঠিক যে বয়সে তাদের সামাজিক যোগাযোগ এর ক্ষমতা বেড়ে ওঠার কথা সেটা ব্যাহত হয়। শিশুরা দেরিতে কথা বলতে শিখে, কিংবা কথা বলতে শিখলেও তো অস্পষ্ট হয় কিংবা মনের ভাবকে সঠিকভাবে প্রকাশ করতে পারে না
তাছাড়া অল্প বয়সেই শুরু হয়ে যায় চোখের সমস্যা, ঘুমের সমস্যা, আচরণ গত সমস্যা।
ঠিক কত সময় প্রযুক্তির ব্যবহারকে আমরা অতিরিক্ত বলবো?
আমেরিকান একাডেমি অফ চাইল্ড এন্ড অ্যাডোলসেন্ট সাইকিয়াট্রি (AACA) এর মতে বিশ্বব্যাপী কিশোরেরা প্রতিদিন গড়ে ৯ ঘণ্টার বেশী স্ক্রিন টাইম ইউজ করছে। এবং ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুরা প্রতিদিন গড়ে ৬ ঘণ্টার বেশি স্ক্রিন টাইম ইউজ করছে।
“মায়ো ক্লিনিকের” পরামর্শ মতে দুই থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের স্ক্রিন টাইম প্রতিদিন এক ঘণ্টা বা তার কমে নিয়ে আসা উচিত।
আমেরিকান একাডেমি অফ পেডিয়াট্রিক্স (AAP) অনুযায়ী, ৫ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিশু এবং কিশোরদের পিতা-মাতাকে তাদের সন্তানদের স্ক্রিনটাইম একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কমিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
Pingback: স্পিচ ডিলে বা শিশুর কথা বলার দেরির কারণ ও সমাধান — Parenting Point