Connect with us

নবজাতকের সেবা

নবজাতকের জন্য মায়ের দুধের গুরুত্ব

importance of breastfeeding

নবজাতকের জন্য মায়ের দুধ হচ্ছে প্রকৃতির এক অনন্য উপহার, যা শিশুর প্রথম খাদ্য হিসেবে তার সঠিক পুষ্টি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং সুস্থতা নিশ্চিত করে। মায়ের দুধ শিশুর জন্মের পর থেকেই তার শারীরিক ও মানসিক বিকাশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই দুধের প্রতিটি ফোঁটায় মিশে আছে শিশুর সঠিক বেড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত উপাদান। মায়ের দুধ ০২ ভাগে বিভক্তঃ

·       ১ম ভাগে পানি বেশি থাকে যা শিশুর তৃষ্ণা মেটাবে।

·       ২য় ভাগে চর্বি ও ক্যালরী বেশি থাকে যা শিশুর ক্ষিধা মেটাবে।

শাল দুধঃ শিশুর জন্মের প্রথম কয়েকদিন যে ঘন আঠালো হলুদাভ দুধ পাওয়া যায় তাহাই শাল দুধ। এটি শিশুর প্রথম টিকা কারণ এতে রোগ প্রতিরোধক অনেক উপাদান থাকে। কিন্তু কুসংষ্কারের কারনে অনেক শিশু শাল দুধ থেকে বঞ্চিত হয়। মনে রাখবেন জন্মের প্রথম ৬মাস শিশুকে শুধুমাত্র মায়ের দুধ পান করাবেন। মায়ের দুধ ব্যতিত কিছুই খাওয়ানো যাবেনা এমন কি একফোটা পানিও না। কিন্তু আমাদের সমাজে শিশুকে জন্মের পর মধু, পানি, তেল, চিনির পানি ইত্যাদি খাওয়ানোর প্রচলন দেখা যায় যা নবজাতকের মৃত্যুর জন্য দায়ী কারণঃ

v এটি নবজাতককে শালদুধ থেকে বঞ্চিত করে।

v নবজাতক অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

v নবজাতকের ক্ষুধা নষ্ট করে তাকে মায়ের দুধ খাওয়া থেকে বিরত রাখে।

v আর যদি ফিডার ব্যবহার করা হয় তবে শিশু মায়ের দুধ চুষতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।

নবজাতকের জন্য মায়ের দুধের উপকারিতা

 ১. মায়ের দুধে শিশুর বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশের জন্য পরিপূর্ণ পুষ্টিমান নিশ্চিত থাকে।

২. মায়ের দুধ ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া মুক্ত, খাঁটি এবং পরিচ্ছন্ন। ফলে শিশুর রোগাক্রান্ত হবার ভয় নেই।

৩. বুকের দুধে থাকে অ্যান্টিবডি, এনজাইম এবং ভিটামিন, যা শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।

৪. শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ালে বিভিন্ন সংক্রামক রোগ যেমন: ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, কানপাকা মেনিনজাইটিস ইত্যাদি থেকে রক্ষা পায়।

৫. বুকের দুধে লিনোলেনিক এসিড, ওমেগা-৩, ফ্যাটি এসিড এবং কোলেস্টেরল বিভিন্ন উপাদান থাকে; যা শিশুর মস্তিষ্ক গঠনে সাহায্য করে। এতে শিশু মেধাবী ও বুদ্ধিমান হয়।

৬. মায়ের দুধ শিশুকে ভবিষ্যতে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং স্থুলতা থেকে রক্ষা করে।

৭. বিশেষ কিছু রোগ যেমন: হাঁপানি, এলার্জি, একজিমা, দাঁতের অসুখ ইত্যাদি রোধে মায়ের দুধের ভূমিকা ব্যাপক।

৮. মায়ের দুধে থাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি, যা শিশুকে অন্ধত্ব ও স্কার্ভি থেকে রক্ষা করে।

৯. মায়ের শাল দুধ শিশুর প্রথম প্রাকৃতিক টিকা হিসেবে কাজ করে।

১০. যে সব শিশু ঠিক মতো মায়ের দুধ পান করে তারা স্বাস্থ্যবান ও দ্রুত বেড়ে উঠে।

মায়ের দুধ পান করানোর মাধ্যমে মা নিজেই বেশ কয়েকটি শারীরিক এবং মানসিক উপকারিতা পান। মায়ের দুধ শুধু শিশুর জন্যই উপকারী নয়, বরং মায়ের স্বাস্থ্যের জন্যও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

মা দুধ পান করালে যে উপকারিতা পান

 ১. সদ্যভূমিষ্ট শিশু নাড়ী কাটার আগেই যদি মায়ের দুধ পান করে, তাহলে গর্ভস্থফুল বা প্লাসেন্টা দ্রুত বের হয়ে আসে। ফলে প্রসব পরবর্তী রক্তক্ষরণের ঝুঁকি কমে যায়।

২. শিশুকে ঠিক মতো বুকের দুধ খাওয়ান, এমন মায়ের স্তন ও জরায়ু ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।

৩. বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় প্রোলাকটিন নামে এক ধরনের হরমোন মায়ের ডিম্বাশয়ের কার্যপ্রণালিতে বাধা দেয়। ফলে দুধ পান একটি প্রাকৃতিক জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি হিসেবে কাজ করে।

৪. বুকের দুধ খাওয়ানোর ফলে স্তনের টিস্যুগুলোর ব্যায়াম হয়, বিধায় স্তন সুডৌল থাকে।

৫. বুকের দুধ তৈরি হতে শরীরের অভ্যন্তরে প্রতিদিন অতিরিক্ত ক্যালরি খরচ হয়, ফলে মায়ের শরীরে থাকা অতিরিক্ত মেদ কমে যায়, এতে শরীর দ্রুত আগের অবস্থায় ফিরে আসে।

৬. দুধ দেওয়ার মধ্য দিয়ে মা ও শিশুর আত্মিক বন্ধন দৃঢ় হয়। এতে দুজনের মধ্যে গড়ে উঠে গভীর ভালোবাসার সম্পর্ক।

৭. মায়ের দুধ খাওয়ানোর মাধ্যমে মায়ের মধ্যে অক্সিটোসিনের নিঃসরণ হয়, যা মায়ের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এটি হতাশা এবং মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক।

নবজাতকের জন্য মায়ের দুধ একান্ত অপরিহার্য। এটি শিশুর প্রথম এবং সর্বোত্তম খাদ্য, যা তার শারীরিক ও মানসিক বিকাশ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং সামগ্রিক সুস্থতায় সহায়ক। প্রথম ছয় মাসে একমাত্র মায়ের দুধই শিশুর জন্য যথেষ্ট এবং ছয় মাসের পরেও এক বছর বা তার বেশি সময় ধরে সম্পূরক খাবারের পাশাপাশি মায়ের দুধ খাওয়ানো উচিত। মায়ের দুধ খাওয়ানোর মাধ্যমে আমরা নবজাতকের সঠিক বিকাশ এবং সুস্থ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে পারি।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

নবজাতকের সেবা

শীতকালে শিশুর গোসল: সতর্কতা ও সঠিক পদ্ধতি

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা শিশুর সুস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে শীতকালে শিশুকে গোসল করানোর সময় অতিরিক্ত যত্ন ও সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। ঠান্ডা-কাশি ও নিউমোনিয়া থেকে শিশুকে রক্ষা করার পাশাপাশি পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার বিষয়েও সচেতন থাকা প্রয়োজন। বিশেষত নবজাতকদের ক্ষেত্রে এ বিষয়ে বিশেষ যত্ন নেওয়া দরকার।

winter-baby-bathing-tips

নবজাতক গোসলের নিয়ম

নবজাতক বলতে সাধারণত ২৮ দিনের কম বয়সী শিশু বোঝানো হয়। জন্মের ৭২ ঘণ্টা পর নবজাতকের প্রথম গোসল করানো হয়, যেকোনো ঋতুতেই। নবজাতকদের সপ্তাহে দুই বা তিন দিন গোসল করানোই যথেষ্ট। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিয়মিত গোসল করানো যেতে পারে।

শীতকালে শিশুর গোসলের জন্য বিশেষ যত্ন

শীতকালে শিশুকে গরম রাখা অত্যন্ত জরুরি। এ সময়ে বাতাসের আর্দ্রতা কম থাকায় শিশুর ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে এবং সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। এজন্য:

  • এক বছরের বেশি বয়সী শিশুদের প্রতিদিন গোসল করানো ভালো, যদি সর্দি-কাশি বা নিউমোনিয়ার লক্ষণ না থাকে।
  • অতিরিক্ত শীত পড়লে এক বা দুই দিন পরপর গোসল করানো যেতে পারে।
  • প্রতিদিন গোসল সম্ভব না হলে কুসুম গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে শিশুর শরীর ভালোভাবে স্পঞ্জ করিয়ে দেওয়া একটি ভালো বিকল্প।

শীতকালে শিশুর গোসলের সময় যে বিষয়গুলো অবশ্যই মনে রাখবেন

  1. নিয়মিত সময় ঠিক করুন: প্রতিদিন একই সময়ে গোসল করালে শিশুর মধ্যে একটি রুটিন তৈরি হয়। তবে খাওয়ার সময় বা ঘুমানোর সময় গোসল করানো উচিত নয়। এতে শিশুর মেজাজ খারাপ হতে পারে।
  2. উষ্ণ স্থান নির্বাচন করুন: গোসলের স্থানটি উষ্ণ হওয়া উচিত এবং সেখানে ঠান্ডা বাতাস ঢুকতে না পারে তা নিশ্চিত করুন।
  3. গোসলের আগে তেল ব্যবহার: প্রাকৃতিক তেল শিশুর ত্বকের জন্য ভালো হতে পারে। তবে কোনো ত্বকের সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া তেল ব্যবহার করা ঠিক নয়।
  4. পানির তাপমাত্রা পরীক্ষা করুন: কুসুম গরম পানিতে গোসল করানো উচিত। পানির তাপমাত্রা শিশুর জন্য উপযুক্ত কি না, তা হাতে পরীক্ষা করে নিন।
  5. গোসলের সময়সীমা: ৫-১০ মিনিটের গোসলই যথেষ্ট। বেশি সময় ধরে গোসল করানো উচিত নয়।
  6. পোশাক হাতের কাছে রাখুন: শিশুকে গোসল করানোর পর তৎক্ষণাৎ তোয়ালে দিয়ে মুছে গরম পোশাক পরিয়ে দিন।
  7. চুল কান শুকনো রাখুন:
    • গোসলের পর চুল ভালোভাবে মুছে নিশ্চিত করুন, যাতে ভেজা চুলের কারণে ঠান্ডা না লাগে।
    • কানের ভেতরে পানি ঢুকেছে কি না, সেদিকে খেয়াল রাখুন।
  1. ত্বকের যত্ন:
    গোসলের পর শিশুর ত্বকে বয়স উপযোগী ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন, যা ত্বককে শুষ্ক হয়ে খসখসে হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করবে।
  2. নিরাপত্তা বজায় রাখুন:
    শিশুকে কোনো অবস্থাতেই পানির কাছে একা যেতে দেওয়া উচিত নয়।

শীতকালে শিশুর গোসলের নিয়মাবলী মেনে চললে সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া থেকে দূরে থাকা সম্ভব। একই সঙ্গে শিশুর ত্বকের স্বাস্থ্য এবং পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত হবে।

শিশুর যত্নে সঠিক পদ্ধতি ও সতর্কতা আপনার শিশুকে সুস্থ, সতেজ এবং হাসিখুশি রাখতে সহায়তা করবে।

Continue Reading

নবজাতকের সেবা

শীতে শিশুর যত্ন

শীতের আগমন প্রাকৃতিক পরিবর্তনের এক নতুন বার্তা নিয়ে আসে। তবে এই সময়টায় শিশুরা নানা ধরনের শারীরিক ও ত্বকের সমস্যার মুখোমুখি হতে পারে। ঠান্ডা আবহাওয়া এবং শুষ্ক পরিবেশ শিশুর স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সঠিক যত্ন এবং পূর্বসতর্কতা গ্রহণের মাধ্যমে এই সমস্যাগুলো সহজেই এড়িয়ে চলা সম্ভব। আজকের আলোচনায় তুলে ধরা হবে শীতকালে শিশুদের ত্বক ও স্বাস্থ্য পরিচর্যার কিছু প্রয়োজনীয় দিক।

baby winter care

শীতকালে শিশুর ত্বকের সমস্যাগুলো

শীতের শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে শিশুরা সাধারণত যে সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হয় তা হলো:

  • ত্বক রুক্ষ হওয়া
  • ত্বকের চুলকানি এবং অ্যালার্জি
  • ঠোঁট ফাটা
  • ত্বকের লালচে ভাব
  • হাত ও পায়ের ত্বক ফেটে যাওয়া

শিশুদের ত্বক অত্যন্ত সংবেদনশীল হওয়ায় এই সমস্যাগুলো দ্রুত দেখা দিতে পারে। তাই সঠিক পরিচর্যা অত্যন্ত জরুরি।

শীতে শিশুরা যে স্বাস্থ্য সমস্যায় বেশি আক্রান্ত হয়

শুধু ত্বকের সমস্যাই নয়, শীতকালে ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে শিশুরা বিভিন্ন রোগেও আক্রান্ত হতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য:

  • সর্দি-কাশি
  • গলাব্যথা
  • জ্বর
  • নিউমোনিয়া
  • অ্যালার্জি

শুষ্ক বাতাস এবং পরিবেশে ধুলাবালুর আধিক্যের কারণে এই সমস্যাগুলো আরও বাড়তে পারে। সঠিক প্রস্তুতি নিলে এই ঝুঁকি অনেকাংশে হ্রাস করা সম্ভব।

শীতকালে শিশুদের সুরক্ষায় করণীয়

     ১. ঠান্ডা বাতাস এবং ধুলাবালু থেকে সুরক্ষা

  • শিশুকে বাইরে নিয়ে গেলে মুখে মাস্ক পরার অভ্যাস করান।
  • শিশুর ঘরকে ধুলোমুক্ত রাখার চেষ্টা করুন। নিয়মিত পরিষ্কার করুন এবং ভেজা কাপড় দিয়ে ধুলো মুছুন।
  • ঘরে পর্যাপ্ত তাপমাত্রা বজায় রাখুন।

     ২. ত্বকের যত্ন

        শীতকালে শিশুর ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখার জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপ নিতে পারেন:

  1. বেবি লোশন ক্রিম: শিশুর ত্বকে নিয়মিত বেবি লোশন, বেবি অয়েল বা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। এতে ত্বকের শুষ্কতা দূর হবে।
  2. গ্লিসারিনের ব্যবহার: গ্লিসারিন ও গোলাপজলের মিশ্রণ ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
  3. ঠোঁটের যত্ন: শিশুর ঠোঁট ফাটলে পেট্রোলিয়াম জেলি বা ঠোঁটের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।

     ৩. গরম পানি ব্যবহার

  • শিশুকে হালকা কুসুম গরম পানিতে গোসল করান।
  • সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর দাঁত ব্রাশ, মুখ ধোয়া, এবং অন্যান্য কাজে হালকা গরম পানি ব্যবহার করতে বলুন।
  • নবজাতক বা ঠান্ডার সমস্যা থাকা শিশুর ক্ষেত্রে গরম পানিতে ভেজানো নরম কাপড় দিয়ে শরীর মুছে দেওয়া যেতে পারে।

     ৪. উষ্ণ পোশাক পরিধান

  • শিশুকে সুতির পোশাকের ওপর নরম উলের পোশাক পরাতে হবে। সরাসরি উলের পোশাক পরানো থেকে বিরত থাকুন।
  • পোশাক অবশ্যই আরামদায়ক এবং পরিবেশ অনুযায়ী হতে হবে।

শীতে শিশুদের খাবারদাবার

     ১. পুষ্টিকর খাবার:

       শীতে শিশুদের খাওয়ার প্রবণতা কমে যেতে পারে। তবে এই সময়ে পুষ্টিকর খাবার দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

  1. ডিম: ডিমের কুসুম শিশুর জন্য অত্যন্ত পুষ্টিকর।
  2. সবজি স্যুপ: গাজর, বিট, টমেটো দিয়ে তৈরি স্যুপ শীতকালে শিশুর শরীর গরম রাখতে সাহায্য করে।
  3. ফলের রস: কমলা, মাল্টা, আপেল বা পেয়ারার রস শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
  4. সবজি দিয়ে খিচুড়ি: বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি দিয়ে তৈরি খিচুড়ি শিশুর শরীরের জন্য পুষ্টিকর।

যেসব খাবার দিবেন না : শীতকালে অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে এমন খাবার থেকে শিশুকে দূরে রাখুন

ঠান্ডাজনিত সমস্যায় ঘরোয়া সমাধান

    ১. গলা ব্যথা সর্দিকাশি

  • আদা ও লেবু দিয়ে তৈরি গরম চা শিশুর গলা ব্যথা কমাতে কার্যকর।
  • গরম পানিতে লবণ দিয়ে গড়গড়া করলে সংক্রমণ কমে।
  • মধু ও তুলসী পাতার রস সর্দি-কাশি প্রশমনে সাহায্য করে।

    ২. গায়ের ব্যথা ক্লান্তি দূর করতে

  • শিশুকে হালকা গরম পানিতে গোসল করান।
  • মালিশ করার জন্য শিশুর ত্বকে মৃদু গরম নারিকেল তেল ব্যবহার করুন।

    ৩. চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া

      শিশুর সমস্যার তীব্রতা বেশি হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। বিশেষ করে নিচের লক্ষণগুলো দেখা দিলে          দেরি করবেন না:

  • দীর্ঘদিন ধরে জ্বর বা কাশি থাকলে
  • শ্বাসকষ্ট বা শ্বাস নিতে অসুবিধা হলে
  • ত্বকে লালচে দাগ বা অ্যালার্জি গুরুতর হলে

 শীতের সময় শিশুদের জন্য বিশেষ কিছু টিপস

  1. শিশুকে দিনের প্রথম ভাগে রোদে খেলতে দিন। সূর্যের আলো ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি পূরণ করবে।
  2. শিশুকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে দিন।
  3. শিশুকে প্রতিদিন কিছুটা হালকা ব্যায়াম বা শারীরিক কাজ করান। এটি তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে।
  4. শিশু যে কম্বল বা বিছানার চাদর ব্যবহার করছে তা পরিষ্কার এবং ধুলোমুক্ত রাখুন।

শীতকালে শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সঠিক পরিচর্যা এবং পুষ্টিকর খাবার দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ত্বকের যত্ন থেকে শুরু করে ঠান্ডাজনিত সমস্যার প্রতিরোধ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপেই সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে। সামান্য যত্নই শিশুর শীতকালীন সময়কে স্বাস্থ্যকর ও আনন্দময় করে তুলতে পারে।

Continue Reading

নবজাতকের সেবা

বেবি বার্পিং ( নবজাতকের ঢেকুর তোলা )

নবজাতকের যত্নে বেবি বার্পিং বা ঢেকুর তোলা একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এটি শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, কারণ খাওয়ার সময় বাচ্চার পেটে যে অতিরিক্ত গ্যাস জমে তা বার্পিংয়ের মাধ্যমে বের হয়ে আসে। এতে শিশুর পেটের অস্বস্তি, গ্যাসের সমস্যা, এবং হজমজনিত জটিলতা কমে যায়। আসুন, এই আর্টিকেলে জেনে নিই বেবি বার্পিংয়ের সঠিক পদ্ধতি ও এর গুরুত্ব।

baby burp

কেন বেবি বার্পিং জরুরি?

নবজাতক যখন দুধ টেনে খেতে থাকে, মুখ দিয়ে তখন খানিকটা বাতাসও গিলে ফেলে। এই বাতাস শিশুর পেটে গ্যাস তৈরি করে। পেটে অস্বস্তি বোধ করায় শিশু অনবরত কান্না করে, হাত মুঠ করে হাত–পা ছোড়াছুড়ি করে, মুখ থেকে দুধ বের করে দেয়। বেবি বার্পিং এর মাধ্যমে এই গ্যাস সহজেই বের হয়ে যায়, যা শিশুকে আরাম দেয় এবং হজমে সাহায্য করে।

বেবি বার্পিংয়ের সঠিক পদ্ধতি

নবজাতককে বার্প করানোর সময় কিছু সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত। নিচে কয়েকটি সহজ ও কার্যকর পদ্ধতি উল্লেখ করা হলো:

baby burp

কাঁধের উপর ধরে বার্পিং:

  • শিশুর মাথা সোজা রেখে কোলে নিয়ে শিশুর মুখ নিজের কাঁধের ওপর রাখবেন ।
  • এক হাতে শিশুর পিঠে হালকা চাপড় দিবেন।
  • চাইলে শিশুকে আরও খানিকটা ওপরে তুলে তার পেট কাঁধের ওপর রেখেও পিঠে চাপড় দিতে পারবেন ।
  • এটি বারবার করতে হতে পারে। তবে লক্ষ্য রাখবেন যেন শিশুর মাথা ও ঘাড় আরেক হাত দিয়ে ভালো করে সাপোর্ট দেওয়া থাকে।
baby burp

বসানো অবস্থায় বার্পিং:

  • শিশুকে কোলের ওপর বসিয়েও হাতের তালু দিয়ে পিঠে হালকা চাপড় দিয়ে ঢেকুর তোলাতে পারবেন ।
  • এ ক্ষেত্রে আরেক হাতে শিশুর বুক ও চোয়াল ধরে শিশুকে সাপোর্ট দিতে হবে, যাতে শিশুর মাথা সোজা থাকে।
  • হাতের তালু খানিকটা ভাঁজ করে কাপের মতো করে পিঠে বারবার চাপড় দিবেন তাহলে আরও ভালো ফল পাবেন ।
baby burp

পেটের উপর শুইয়ে বার্পিং:

এ ছাড়া শিশুকে হাঁটুর ওপর, উপুড় করে শুইয়ে রেখে পিঠে চাপড় দেওয়া যায়। এ ক্ষেত্রেও শিশুর থুঁতনি ধরে তাকে সাপোর্ট দিতে হবে।

কখন বার্প করানো উচিত?

খাবারের মাঝে ও পরে: শিশুকে খাওয়ানোর মাঝে একবার ও খাওয়ানো শেষ হওয়ার পর অবশ্যই বার্প করানো উচিত।

 বাচ্চা যদি অস্বস্তি বোধ করে: যদি শিশুকে অস্বস্তি বোধ করতে দেখেন, তার মানে তার পেটে গ্যাস জমেছে। তখনই বার্প করানোর চেষ্টা করুন।

কতক্ষণ ধরে বার্প করাবেন?

বাচ্চার বার্প করানোর সময় ধৈর্য ধরে কাজটি করতে হবে। ৫-১০ মিনিট ধরে বিভিন্ন পদ্ধতিতে চেষ্টা করুন। বারবার বার্প না হলে, কিছুক্ষণ পর পুনরায় চেষ্টা করুন।

বার্পিংয়ের পর সাবধানতা

  • বার্প করানোর পর শিশুকে কিছুক্ষণ সোজা অবস্থায় রাখুন। এতে দুধ উঠে আসার ঝুঁকি কমে যায় এবং পেটে হজম প্রক্রিয়া ভালোভাবে কাজ করে।
  • প্রতিটি পদ্ধতিতে খেয়াল রাখতে হবে ঢেকুর তোলার সময় শিশুর নাক যেন খোলা থাকে, সে যেন ঠিকভাবে শ্বাস নিতে পারে।

কত দিন পর্যন্ত বার্পিং জরুরি

শিশু সোজা হয়ে বসতে শিখলে এটা করার আর প্রয়োজন হয় না। সাধারণত ৪ থেকে ৬ মাসের মধ্যেই এটা ঘটে থাকে, তবে কারও কারও ৯ মাস পর্যন্ত প্রয়োজন হতে পারে। যখন মা মনে করবেন দুধ পানের পরপর শিশু আর কান্না ও অস্বস্তি বোধ করছে না, তখন থেকে এটা করার আর দরকার হবে না।

নবজাতকের স্বাস্থ্য ও সুস্থতার জন্য বেবি বার্পিং অত্যন্ত জরুরি। সঠিক পদ্ধতিতে এবং সময়মতো বার্প করানোর মাধ্যমে আপনি আপনার শিশুকে আরাম দিতে এবং সুস্থ রাখতে পারবেন।

Continue Reading

Latest Post

speech delay speech delay
স্মার্ট প্যারেন্টিং1 week ago

স্পিচ ডিলে বা শিশুর কথা বলার দেরির কারণ ও সমাধান

ডা: মৌমিতা পাল শিশু-কিশোর মনোরোগ বিশেষজ্ঞএম.বি.বি.এস (এস.ইউ. এস.টি )এমডি, চাইল্ড এন্ড এডোলেসেন্ট সাইকিয়াট্রি ( বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটি) প্রযুক্তির...

winter-baby-bathing-tips winter-baby-bathing-tips
নবজাতকের সেবা2 weeks ago

শীতকালে শিশুর গোসল: সতর্কতা ও সঠিক পদ্ধতি

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা শিশুর সুস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে শীতকালে শিশুকে গোসল করানোর সময় অতিরিক্ত যত্ন ও সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। ঠান্ডা-কাশি...

impact-of-electronic-devices-on-children-and-teens impact-of-electronic-devices-on-children-and-teens
স্মার্ট প্যারেন্টিং3 weeks ago

শিশু এবং কিশোরদের উপর ইলেকট্রনিক ডিভাইসের প্রভাব

ডা: মৌমিতা পাল শিশু-কিশোর মনোরোগ বিশেষজ্ঞএম.বি.বি.এস (এস.ইউ. এস.টি )এমডি, চাইল্ড এন্ড এডোলেসেন্ট সাইকিয়াট্রি ( বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটি) সব...

baby winter care baby winter care
নবজাতকের সেবা1 month ago

শীতে শিশুর যত্ন

শীতের আগমন প্রাকৃতিক পরিবর্তনের এক নতুন বার্তা নিয়ে আসে। তবে এই সময়টায় শিশুরা নানা ধরনের শারীরিক ও ত্বকের সমস্যার মুখোমুখি...

হ্যান্ড, ফুট এন্ড মাউথ ডিজিস (HFMD) হ্যান্ড, ফুট এন্ড মাউথ ডিজিস (HFMD)
অসুখ বিসুখ1 month ago

হ্যান্ড, ফুট এন্ড মাউথ ডিজিস (HFMD)

ডাঃ মায়িশা হোসেন  MBBS Training/Course: PGT (Gynae & Obs) হ্যান্ড, ফুট এন্ড মাউথ ডিজিস (Hand, Foot, and Mouth Disease) একটি...

child development child development
স্মার্ট প্যারেন্টিং2 months ago

নবজাতকের মানসিক, ইমোশনাল এবং মনস্তাত্ত্বিক বিকাশ: একটি অন্তর্দৃষ্টি

ডা: মৌমিতা পাল শিশু-কিশোর মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এম.বি.বি.এস (এস.ইউ. এস.টি )এমডি, চাইল্ড এন্ড এডোলেসেন্ট সাইকিয়াট্রি ( বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটি)...

cow milk cow milk
শিশু খাদ্য2 months ago

শিশুকে গরুর দুধ কখন থেকে খাওয়াবেন?

আগে প্রচলিত ধারণা ছিল যে, বাচ্চাকে ২ বছরের আগে গরুর দুধ খাওয়ানো যাবে না এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনাও একই...

medicine and pregnancy medicine and pregnancy
গর্ভকালীন সেবা3 months ago

গর্ভাবস্থায় ঔষধ সেবনে সচেতনতা

গর্ভাবস্থাজীবনের একটি বিশেষ সময়, যা প্রতিটি মায়ের জন্য এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। এই সময় মায়ের স্বাস্থ্য সরাসরি গর্ভস্থ শিশুর স্বাস্থ্যের সাথে সম্পৃক্ত। তাই...

feeding-problems feeding-problems
স্মার্ট প্যারেন্টিং3 months ago

শিশুরা খেতে না চাইলে কি করবেন

প্রায় প্রত্যেক মায়ের এই অভিযোগ আমার বাচ্চা কিছু খেতে চায় না। সারা দিন খাবার না দিলে না খেয়েই থাকে। আবার...

pretend play pretend play
স্মার্ট প্যারেন্টিং3 months ago

শিশুর সৃজনশীলতা বৃদ্ধিতে প্রিটেন্ড প্লে বা অভিনয়-অভিনয় খেলা

আপনি কি কখনো দেখেছেন, আপনার বাচ্চা তার প্রিয় পুতুলটিকে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করছে, আপনার জুতা পরে হেঁটে বেড়াচ্ছে, বা একটি...

Trending