গর্ভে বেশিরভাগ শিশুই ডেলিভারির আগে মাথা নীচের দিকে এবং পা ওপরের দিকে দিয়ে রাখে। এই অবস্থানকে ডাক্তারি ভাষায় ‘সেফালিক’ প্রেজেন্টেশন বা পজিশন বলা হয়। এই অবস্থানে থাকলে নরমাল ডেলিভারি করা অনেকটা সহজ হয়।
ব্রিচ পজিশন (Breech Position) হল সেই অবস্থান যেখানে গর্ভাবস্থায় শিশুটি মায়ের গর্ভে মাথা নিচে না থেকে পা বা নিতম্ব নিচের দিকে থাকে। সাধারণত, শিশুর জন্মের সময় মাথা প্রথমে প্রসবের পথে বেরিয়ে আসে, কিন্তু ব্রিচ অবস্থানে শিশুর নিতম্ব বা পা প্রথমে বের হতে চায়। এমন হলে শিশুর ডেলিভারির জন্য বিশেষ ব্যবস্থার প্রয়োজন হতে পারে।
ব্রিচ পজিশন কি কমন?
গর্ভে ৩৯ সপ্তাহ পূর্ণ করে জন্মগ্রহণ করা শিশুদের ‘ফুল টার্ম’ বলা হয়। এমন প্রতি ১০০টি শিশুর মধ্যে প্রায় ৯৬-৯৭টি শিশুর মাথা নিচের দিকে থাকে, যা স্বাভাবিক অবস্থান এবং ৩–৪টি শিশুর ক্ষেত্রে ব্রিচ পজিশন দেখা যায়।
গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে শিশুরা ঘন ঘন অবস্থান পরিবর্তন করে, তাই তখন ব্রিচ পজিশন অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু ৩৬-৩৭ সপ্তাহের পরেও যদি শিশুটি ব্রিচ পজিশনে থাকে, তাহলে চিকিৎসকরা প্রায়ই সিজারিয়ান সেকশন (সিজার) করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
ব্রিচ পজিশনের কারণ
ব্রিচ পজিশনের নির্দিষ্ট কারণ সবসময় জানা যায় না, তবে কিছু ফ্যাক্টর বা কারণ রয়েছে যা ব্রিচ অবস্থানের ঝুঁকি বাড়াতে পারে-
- অতিরিক্ত বা কম অ্যামনিওটিক ফ্লুইড: গর্ভে অ্যামনিওটিক ফ্লুইডের পরিমাণ খুব বেশি বা খুব কম হলে শিশুর অবস্থান স্থির হতে সমস্যা হতে পারে, যার ফলে ব্রিচ পজিশন হতে পারে।
- গর্ভাশয়ের আকার বা আকৃতি: মায়ের গর্ভাশয়ের আকার বা আকৃতি যদি অস্বাভাবিক হয় (যেমন, বাইকর্নুয়েট বা সেপটেট ইউটেরাস), তবে শিশুর ঘুরে সঠিক অবস্থানে আসা কঠিন হতে পারে।
- মাল্টিপল গর্ভধারণ: যমজ বা একাধিক শিশুর গর্ভাবস্থা থাকলে তাদের জন্য গর্ভে পর্যাপ্ত স্থান না থাকার কারণে একটি বা একাধিক শিশু ব্রিচ পজিশনে থাকতে পারে।
- প্রিভিয়াস ব্রিচ ডেলিভারি: পূর্বে ব্রিচ ডেলিভারি হয়ে থাকলে, পরবর্তী গর্ভাবস্থায় ব্রিচ অবস্থানের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
- প্রিম্যাচিউরিটি: গর্ভাবস্থার ৩৭ সপ্তাহের আগেই যদি শিশুর জন্ম হয়, তবে তার ব্রিচ পজিশনে থাকার সম্ভাবনা বেশি থাকে, কারণ এই সময়ের মধ্যে শিশু সঠিকভাবে মাথা নিচের দিকে ঘুরে যেতে পারে না।
- অন্য কোনো শারীরিক কারণ: যেমন, প্ল্যাসেন্টা প্রিভিয়া (প্ল্যাসেন্টা নিচে থাকা), বা শিশুর জন্মগত কিছু ত্রুটি থাকলেও ব্রিচ পজিশন হতে পারে।
এছাড়া, কিছু ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট কারণ পাওয়া যায় না, এবং এটি কেবল একটি স্বাভাবিক পরিবর্তন হতে পারে।
শিশু ব্রিচ পজিশনে আছে কি না বোঝার উপায়
গর্ভে শিশু কোন অবস্থানে আছে সেটা আপনার জন্য বোঝা কঠিন হতে পারে। তাই শিশু ডেলিভারির জন্য সঠিক অবস্থানে আছে কি না জানতে নিয়মিত গর্ভকালীন চেকআপে যাবেন। চেকআপের সময়ে ডাক্তার আপনার পেটে হাত রেখে পরীক্ষা করবেন। এভাবে শিশু ব্রিচ পজিশনে থাকলে তিনি সেটা বুঝতে পারবেন।
ডাক্তার মূলত আপনার পেটের বিভিন্ন জায়গায় আলতো চাপ দিয়ে গর্ভে শিশুর অবস্থান বোঝার চেষ্টা করবেন। এভাবে তিনি আপনার পেটের ভেতর শিশুর মাথা, পিঠ, পা ও নিতম্বের অবস্থান খুঁজে বের করবেন। ব্রিচ পজিশনে থাকলে শিশুর মাথা ওপরের দিকে এবং নিতম্ব ও/অথবা পা নিচের দিকে থাকবে। শিশুর পিঠ আপনার শরীরের যেকোনো একপাশে ঘুরানো থাকবে। এর সাথে ডাক্তার পেলভিক (যোনিপথে হাত ঢুকিয়ে) পরীক্ষা করতে পারেন।
তবে আলট্রাসাউন্ড পরীক্ষা সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি ব্রিচ পজিশন নিশ্চিত করার জন্য। এতে স্পষ্টভাবে দেখা যায় যে শিশুটি গর্ভে কী অবস্থায় রয়েছে।
শিশু ব্রিচ পজিশনে থাকলে করণীয়
এক্সটার্নাল সেফালিক ভারসন (ECV) একটি চিকিৎসা পদ্ধতি যেখানে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক গর্ভের বাইরে থেকে মায়ের পেটের উপর চাপ প্রয়োগ করে শিশুটিকে ঘুরিয়ে মাথা নিচের দিকে আনার চেষ্টা করেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রিটার্ম ডেলিভারি বা অকাল প্রসবের ঝুঁকি এড়াতে গর্ভকালীন ৩৭ সপ্তাহে বা তারপরে এই পদ্ধতি চেষ্টা করা হয়। যদিও এটি সফল হলে শিশুটি সঠিক অবস্থানে চলে আসে, কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে এটি সফল নাও হতে পারে।
এক্সটার্নাল সেফালিক ভারসন চেষ্টা করার আগে ডাক্তার পদ্ধতিটি আপনার ও গর্ভের শিশুর জন্য নিরাপদ কি না সেটি বিবেচনা করবেন। সেই অনুযায়ী পদ্ধতিটির সুবিধা-অসুবিধা ও ঝুঁকি সম্পর্কে আপনার সাথে আলোচনা করে নিবেন।
এক্সটার্নাল সেফালিক ভারসন পদ্ধতি
এক্সটার্নাল সেফালিক ভারসন হল একটি চিকিৎসা পদ্ধতি, যেখানে অভিজ্ঞ প্রসূতি চিকিৎসক মায়ের পেটের উপর থেকে হাতে চাপ প্রয়োগ করে শিশুটিকে ব্রিচ পজিশন থেকে ঘুরিয়ে মাথা নিচের দিকে আনতে চেষ্টা করেন। এই পদ্ধতিটি সাধারণত গর্ভাবস্থার ৩৭ সপ্তাহের পর প্রয়োগ করা হয়। পদ্ধতিটি প্রায় ৫০% ক্ষেত্রেই সফল হয়।
এটা একটা নিরাপদ প্রক্রিয়া, এতে পেট কাটার বা কোনো অপারেশন করার প্রয়োজন হয় না। তবে শিশুকে ঘোরানোর সময়ে কিছুটা অস্বস্তি লাগতে পারে।
পদ্ধতির উদ্দেশ্য:
- স্বাভাবিক প্রসবের সম্ভাবনা বাড়ানো।
- সিজারিয়ান সেকশনের প্রয়োজনীয়তা কমানো।
এক্ষেত্রে একটা বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে- এক্সটার্নাল সেফালিক ভারসন অবশ্যই হাসপাতালে বা অভিজ্ঞ গাইনি ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে করাতে হবে। যেন মা অথবা শিশুর কোনো ধরনের সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়।এটা সচরাচর ডেলিভারি রুম বা অপারেশন থিয়েটারের কাছেই করানো হয়, যেন প্রয়োজনে জরুরি ভিত্তিতে সিজার করিয়ে মা ও শিশুকে সুস্থ রাখা যায়।
মেহেরুন্নেছা
October 20, 2024 at 2:49 am
আমার বাচ্চা ডান দিকে বেশি নরাচরা করে