গর্ভকালীন সেবা

গর্ভাবস্থায় ফলিক অ্যাসিডের গুরুত্ব

আপনি শীঘ্রই একজন মা হবেন বা আপনি আপনার পরিবারকে সম্প্রসারিত করার কথা ভাবছেন, তাহলে মনে রাখবেন গর্ভাবস্থায় ফলিক এসিড মা ও শিশু উভয়ের সুস্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ । ফলিক এসিড আপনার শিশুর স্বাস্থ্য এবং বিকাশ নিশ্চিত করতে একটি বড় ভূমিকা পালন করে ।

গর্ভাবস্থায় ফলিক অ্যাসিডের গুরুত্ব

ফলিক অ্যাসিড কী এবং গর্ভাবস্থায় কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?

ফলিক অ্যাসিড, যা ফোলেট বা ভিটামিন বি 9 নামেও পরিচিত । যা কোষের বৃদ্ধি এবং বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গর্ভাবস্থায়, ফলিক অ্যাসিড আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠার কারণ এটি বিকাশমান ভ্রূণের নিউরাল টিউব গঠনে সহায়তা করে এবং গর্ভের শিশুর জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধ করে ।

গর্ভাবস্থার আগে এবং শুরুর দিকে যেসকল নারী ফলিক অ্যাসিড গ্রহণ করে, তদের গর্ভের শিশুর জন্মগত ত্রুটির সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায়। গর্ভাবস্থার প্রথম কয়েক সপ্তাহে নিউরাল টিউব তৈরি হয় যখন অনেক নারী জানেনও না যে তিনি গর্ভবতী। এই কারণেই সন্তান নেওয়ার চেষ্টা শুরু করার পর থেকে মহিলাদের প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে ফলিক অ্যাসিড খেতে হবে । সেটি সম্ভব না হলে, গর্ভধারণের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফলিক এসিড খাওয়া শুরু করতে হবে।

নিউরাল টিউব ত্রুটি প্রতিরোধ করার পাশাপাশি, ফলিক অ্যাসিড গর্ভাবস্থায় লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদন এবং ডিএনএ সংশ্লেষণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে ।

গর্ভাবস্থায় ফলিক অ্যাসিড গ্রহণের উপকারিতা

গর্ভাবস্থায়, পর্যাপ্ত পরিমাণ ফলিক অ্যাসিড গ্রহণ ভ্রূণের স্বাস্থ্য এবং বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফলিক অ্যাসিড নিউরাল টিউব ত্রুটি প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যেমন – শিশুর মেরুদন্ড, ব্রেইন, মাথার খুলি ও স্নায়ুতন্ত্রের অন্যান্য অংশ সঠিকভাবে গড়ে উঠতে সাহায্য করে । এটি নতুন কোষ গঠনে সহায়তা করে, গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে অঙ্গগুলির বৃদ্ধি এবং বিকাশে সহায়তা করে। এছাড়া ফলিক এসিড দেহের নানান গুরুত্বপূর্ণ কাজে ভূমিকা রাখে। যেমন—

  • রক্তকণিকা ও প্রোটিন তৈরিতে অংশ নেয়
  • রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ করে
  • গর্ভের শিশুর ব্রেইন, মাথার খুলি ও স্নায়ুতন্ত্রের অন্যান্য অংশ সঠিকভাবে গড়ে উঠতে সাহায্য করে
  • গর্ভের শিশুর নানান জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধ করে

গর্ভের শিশুর ‘নিউরাল টিউব’গঠনে ফলিক এসিডের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। গর্ভধারণের প্রথম দিকের সপ্তাহগুলোতে এই নিউরাল টিউব গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে নিউরাল টিউব থেকেই শিশুর ব্রেইন ও স্নায়ুতন্ত্রের অন্যান্য অংশ তৈরি হয়।

ফলিক এসিডের অভাবে শিশুর ব্রেইন ও স্নায়ুতন্ত্রের অন্যান্য অংশের গঠনে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। যার ফলে শিশু নানান জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জন্মায়।যেমন—

অ্যানেনসেফালি: মাথার খুলির হাড় ও ব্রেইন সঠিকভাবে গড়ে না ওঠা

স্পাইনা বিফিডা: মেরুদণ্ড সঠিকভাবে তৈরি না হওয়া

গর্ভাবস্থায় ফলিক এসিড খাওয়ার নিয়ম

গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী মায়ের প্রতিদিন ৬০০ মাইক্রোগ্রাম বা ০.৬০ মিলিগ্রাম ফলিক এসিড প্রয়োজন। কিন্তু এই চাহিদার পুরোটা খাবার থেকে পাওয়া প্রায় অসম্ভাব তাই ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পাশাপাশি প্রতিদিন কমপক্ষে প্রতিদিন প্রায় ৪০০ মাইক্রোগ্রাম বা ০.৪০ মিলিগ্রাম ফলিক এসিড ট্যাবলেট গ্রহনের পরামর্শ দেয় হয় ।

আয়রন-ফলিক এসিড খালি পেটে বেশি কাজ করে তাই খাবার খাওয়ার ১-২ ঘণ্টা আগে এক গ্লাস পানি দিয়ে এই ট্যাবলেট খাবেন তবে চাইলে আপনি পানির পরিবর্তে কমলার রস দিয়েও ট্যাবলেট টি খেতে পারবেন । ধারণা করা হয়, কমলার রসে থাকা ভিটামিন সি শরীরকে আয়রন শোষণে সাহায্য করে। তবে খালি পেটে আয়রন-ফলিক এসিড ট্যাবলেট খেলে আপনার যদি পেটে অস্বস্তি হয়, তাহলে খাবারের সাথে অথবা খাওয়ার ঠিক পর পরই ট্যাবলেটটি খেয়ে নিতে পারেন।

মনে রাখবেন যে অত্যধিক ফলিক অ্যাসিড গ্রহণের নেতিবাচক প্রভাবও হতে পারে, তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ফলিক এসিড খাবেন না ।

আয়রন-ফলিক এসিড ট্যাবলেটের সাথে একই সময়ে অ্যান্টাসিড অথবা ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাবেন না। এতে আয়রনের কার্যকারিতা কমে যায়। অ্যান্টাসিড অথবা ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়ার অন্তত ১ ঘণ্টা আগে অথবা ২ ঘণ্টা পরে আয়রন ট্যাবলেট খাবেন।

বর্তমানে দেশের প্রায় সকল সরকারি হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গর্ভবতী নারীদের বিনামূল্যে ফলিক এসিড ট্যাবলেট বিতরণ করে থাকে । এসকল ট্যাবলেটে ফলিক এসিডের সাথে প্রয়োজনীয় আয়রনও যোগ করা থাকে। নিকটস্থ সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে আপনি সহজেই এই আয়রন-ফলিক এসিড ট্যাবলেট সংগ্রহ করতে পারবেন। এছাড়া বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির আয়রন- ফলিক এসিড ট্যাবলেট পাওয়া যায় আপনি ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ঔষধের দোকান থেকেও সংগ্রহ করতে পারবেন ।

গর্ভবতী মহিলাদের জন্য উচ্চ ফলিক অ্যাসিডযুক্ত খাবার

 গর্ভাবস্থায় ঔষধের পাশাপাশি আপনি প্রতিদিনের খাবার তালিকায় ফোলেট সমৃদ্ধ খাবার রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ। যেমন-

  • বিভিন্ন শাক। যেমন: পালং শাক, পুঁইশাক, পাট শাক, কচু শাক, মেথি শাক, সজনে পাতা, লাল শাক, নটে শাক, সবুজ ডাঁটা শাক, মুলা শাক ও লাউ শাক
  • বিভিন্ন সবজি। যেমন: বরবটি, মটরশুঁটি, ঢেঁড়স, শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি ও ব্রকলি
  • ছোলার ডাল, মাসকলাই ডাল ও মুগ ডাল
  • বিভিন্ন ফল। যেমন: কমলা
  • চিনাবাদাম

উল্লেখ্য, খাবার রান্না করলে সেখানে থাকা ফোলেট সহজেই নষ্ট হয়ে যায়। আবার আমরা যে ফোলেট গ্রহণ করি, তা শরীর থেকে প্রস্রাবের সাথে বেরিয়ে যায়। সবমিলিয়ে শরীর এটিকে বেশিদিন জমা রাখতে পারে না।

অন্যদিকে গর্ভের শিশুর সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার জন্য গর্ভাবস্থায় দশগুণ পর্যন্ত ফলিক এসিড প্রয়োজন হতে পারে—যা শুধুমাত্র খাবার থেকে পূরণ করা খুবই কষ্টসাধ্য।

তাই গর্ভাবস্থায় ফোলেট এর অভাব প্রতিরোধে নিয়মিত ফলিক এসিড সেবন করা গুরুত্বপূর্ণ। সেই সাথে প্রতিদিনের খাবার তালিকায় যথেষ্ট পরিমাণে ফোলেটযুক্ত খাবারও রাখতে হবে।

কখন অতিরিক্ত ফলিক এসিড খেতে হবে

কিছু কিছু ক্ষেত্রে আপনার প্রতিদিন ৬০০ মাইক্রোগ্রাম বা ০.৬০ ফলিক এসিড গ্রহণ করার প্রয়োজন হতে পারে। নাহলে আপনার গর্ভের শিশুর ব্রেইন ও স্নায়ুতন্ত্রের অন্যান্য অংশের গঠনে সমস্যা হতে পারে। সেসব ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শে গর্ভধারণের পরিকল্পনা করার সময় থেকেই আপনার দিনে ৫ মিলিগ্রাম করে ফলিক এসিড গ্রহণ করতে হবে । যেমন —

  • ডায়াবেটিসে ভুগলে
  • গর্ভধারণের পূর্বের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি হলে
  • বিটা থ্যালাসেমিয়া ও সিকেল সেল অ্যানিমিয়ার মতো রক্তশূন্যতাজনিত রোগে ভুগলে
  • এপিলেপ্সি বা খিঁচুনি রোগের জন্য ঔষধ সেবন করলে
  • এইচআইভি ভাইরাসের চিকিৎসায় অ্যান্টি-রেট্রোভাইরাল ঔষধ সেবন করলে
  • গর্ভের শিশুর বাবার নিউরাল টিউবে সমস্যা থাকলে
  • গর্ভের শিশুর বাবার পরিবারের কারও নিউরাল টিউবজনিত সমস্যা থাকলে
  • পূর্বের কোনো গর্ভের শিশুর নিউরাল টিউবজনিত জটিলতার ইতিহাস থাকলে
  • এর কোনটি আপনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলে অবশ্যই ডাক্তারকে জানাবেন। ডাক্তারের পরামর্শ মেনে ফলিক এসিড গ্রহণ করবেন।

5 Comments

  1. Pingback: প্রেগন্যান্সির লক্ষণ — Parenting Point

  2. Sammy

    September 5, 2024 at 5:39 am

    I think this is one of the most vital information for me.
    And i’m glad reading your article. Buut should reark on sopme general things,
    The web site style is ideal, the articles iss really nice : D.
    Good job, cheers https://Bandur-Art.Blogspot.com/2024/08/the-ultimate-guide-to-no-mans-sky-mods.html

  3. Sammy

    September 5, 2024 at 5:40 am

    I think this is one of the moat vital information for
    me. And i’m glad reading your article. Butt should remark onn some general things, The web site style is
    ideal, the articles is really nice : D. Good job, cheers https://Bandur-Art.Blogspot.com/2024/08/the-ultimate-guide-to-no-mans-sky-mods.html

    • Samira

      September 5, 2024 at 3:02 pm

      Thank You so much for your valuable comments .

  4. Pingback: গর্ভাবস্থায় আয়রন — Parenting Point

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Trending

Exit mobile version