গর্ভকালীন সেবা

প্রেগন্যান্সির লক্ষণ

গর্ভধারণ একটি বিশেষ মুহূর্ত যা প্রত্যেক মহিলার জীবনে এক অনন্য অভিজ্ঞতা নিয়ে আসে। গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণগুলি প্রত্যেক মহিলার ক্ষেত্রে একটু আলাদা হতে পারে, তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছে যা অধিকাংশ মহিলার মধ্যে দেখা যায়।সাধানণত গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহে কোনো সুনির্দিষ্ট লক্ষণ থাকে না এমনকি ১ মাস পর্যন্ত মায়েরা বুঝতেই পারেন না যে তারা গর্ভধারণ করেছেন। প্রথম যে লক্ষণটি গর্ভবতী মায়েরা খেয়াল করে তা হলো পিরিয়ড বাদ যাওয়া। উল্লেখ্য, গর্ভবতী নারীর সর্বশেষ মাসিকের প্রথম দিন থেকে তার গর্ভকালের শুরু ধরা হয়।

আপনি প্রেগন্যান্ট কি না কীভাবে বুঝবেন?

গর্ভবতী হওয়ার প্রথম এবং প্রধান লক্ষণ হলো পিরিয়ড বন্ধ হওয়া। এ ছাড়া কারো কারো ক্ষেত্রে আরও কিছু লক্ষণ উপস্থিত থাকতে পারে। যেমন:

  • যোনিপথ দিয়ে হালকা রক্তপাত

  • মাথা ঘুরানো

  • চাপ দিলে স্তনে ব্যথা অনুভব করা

  • বমি বমি লাগা

  • ক্লান্তি অনুভব করা

  • পেটে অস্বস্তি বা পেট ফাঁপা হয়েছে এমন মনে হওয়া

  • সাদা স্রাবের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া

  • পিরিয়ড বা মাসিকের ব্যথার মতো তলপেটে মোচড় দিয়ে ব্যথা হওয়া

  • ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ আসা

  • প্রিয় কোনো খাবারে অরুচি কিংবা নতুন কোনো খাবারের প্রতি তীব্র আকাঙ্ক্ষা

  • মুখে অদ্ভুত স্বাদ পাওয়া

  • প্রখর ঘ্রাণশক্তি

এসব লক্ষণ থাকলেই যে আপনি গর্ভবতী তা সুনিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়। কেননা এমন কিছু লক্ষণ কারও কারও ক্ষেত্রে মাসিকের আগে আগে দেখা দেয়। যেমন: স্তনে ব্যথা, পেট ফাঁপা ও কোনো খাবারের প্রতি তীব্র আকাঙ্ক্ষা। আবার অনেকের ক্ষেত্রে প্রেগন্যান্ট হওয়ার পর পর তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। ফলে গর্ভধারণের ব্যাপারটা আঁচ করতে দেরি হয়।

আপনি গর্ভবতী কি না তা জানার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি হল প্রেগন্যান্সি টেস্ট করা। 

মিলনের কতদিন পর প্রেগন্যান্সি টেস্ট করবেন ?

আপনার যদি কোনো মাসের পিরিয়ড বাদ যায় এবং আপনি যদি এর আগের সময়ে অনিরাপদ সহবাস করে থাকেন, অর্থাৎ কোনো জন্মনিরোধক (কনডম, পিল বা বড়ি, ইনজেকশন) ব্যবহার না করে সহবাস করে থাকেন, সেক্ষেত্রে যখনই দেখবেন যে নির্দিষ্ট তারিখে পিরিয়ড শুরু হয়নি তখনি আপনি প্রেগন্যান্সি টেস্ট করে নিতে পারেন।

আপনার যদি পিরিয়ড শুরু হওয়ার সম্ভাব্য তারিখটি জানা না থাকে তাহলে অনিরাপদ সহবাসের কমপক্ষে ২১ দিন পরে টেস্ট করেও আপনি জেনে নিতে পারবেন আপনি গর্ভধারণ করেছেন কি না। এ ছাড়া আজকাল অনেক উন্নত প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট পাওয়া যায়, যার সাহায্যে গর্ভধারণের নয় দিন পরেই আপনি গর্ভবতী হয়েছেন কি না তা জানা সম্ভব।

প্রেগন্যান্সি টেস্ট কীভাবে করবেন ?

আপনি প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিটের সাহায্যে খুব সহজে ঘরে বসেই জেনে নিতে পারেন আপনি গর্ভবতী কি না। এই কিটগুলো আপনি সাধারণ ওষুধের দোকান বা ফার্মেসি থেকেই কিনতে পারবেন। দিনের যেকোনো সময়ের প্রস্রাবের নমুনা নিয়ে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করা যায়। প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট/স্টিকের উপর প্রস্রাব করার পর সাধারণত কয়েক মিনিটের মধ্যেই ফলাফল দেখায়। একেকটি টেস্ট কিটের ধরন একেকরকম, তাই ব্যবহারের আগে অবশ্যই বক্সের গায়ে লেখা নির্দেশাবলি ভালোমতো পড়ে নিবেন। এ ছাড়া নিকটস্থ কোনো ক্লিনিক, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, হাসপাতাল বা গাইনি ডাক্তারের চেম্বারে গিয়েও আপনি প্রেগন্যান্সি টেস্ট করাতে পারেন। 

গর্ভবতী নিশ্চিত হলে করণীয় কী?

গর্ভাবস্থা নিশ্চিত হওয়ার পরপরই একজন স্বাস্থ্যকর্মী বা সম্ভব হলে একজন গাইনি ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন। প্রথম আল্ট্রাসাউন্ড, রক্ত পরীক্ষা, এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে নিন। ডাক্তার যে-সব পরামর্শ দিবে সেসব মেনে চলবেন।

গর্ভাবস্থার শুরুতে নিচের বিষয়গুলো মেনে চলার পরামর্শ দেয়া হয়–

  • গর্ভবতী হওয়ার প্রথম ৩ মাস বা ১২তম সপ্তাহ পর্যন্ত দৈনিক ৪০০ মাইক্রোগ্রাম ফলিক অ্যাসিড সেবন করতে হবে। ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট আকারে পাওয়া যায়।

  • দৈনিক ১০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন ডি ট্যাবলেট সেবন করতে পারেন।

  • গর্ভাবস্থায় নানান রকম ইনফেকশনের ঝুঁকি থাকে। তাই এসময় কাঁচা বা ভালোভাবে রান্না হয়নি এমন খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।

  • গর্ভের শিশুর সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে অবশ্যই ধূমপান, অতিরিক্ত চা-কফি পান, মদপান করা এড়িয়ে চলা উচিত।

  • পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করবেন ।

  • কিছু কিছু ওষুধ গর্ভাবস্থায় ক্ষতিকর হতে পারে। তাই কোন ধরনের ওষুধ গ্রহণ করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন ।

1 Comment

  1. Pingback: প্রেগন্যান্সি টেস্ট কখন ও কিভাবে করবেন — Parenting Point

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Trending

Exit mobile version