এমপক্স ১৯৫৮ সালে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে পরীক্ষাগারে বানরের মধ্যে প্রথম শনাক্ত করা হয়েছিল। পরবর্তীতে ১৯৭০ সালে কঙ্গোতে মানুষের মধ্যে প্রথম শনাক্ত করা হয়। এমপক্স নামে এক ধরনের ভাইরাসের মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায়। অনেকটা জল বসন্তের ভাইরাসের মতো বৈশিষ্ট্যের হলেও এর ক্ষতিকারক প্রভাব ও সংক্রমণের হার কম। পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকার নিরক্ষীয় বনাঞ্চলে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি।
এমপক্স দুই ধরনের –
মধ্য আফ্রিকান
পশ্চিম আফ্রিকান
এমপক্স কিভাবে ছড়ায়?
সাধারণত ত্বকে কাটা ছেঁড়া থাকলে, মিউকোসাল সারফেস যেমন মুখ, গলা, চোখ, যৌনাঙ্গের মাধ্যমে এমনকি শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমেও এ রোগ হতে পারে।
ত্বকের মধ্যে লেসন থাকলে সরাসরি সংস্পর্শের মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায়। সাধারণত স্পর্শ, চুম্বন, শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করলে এই রোগ ছড়ায়। এমনকি ফেস টু ফেস কথা বললে, শ্বাস নিলেও ছড়াতে পারে।
আক্রান্ত প্রাণীর কামড়, স্ক্র্যাচ, শিকার করা, চামড়া ছড়ানো, রান্না করা থেকেও আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত দ্রব্য যেমন কাপড়, চাদর, সুঁই ব্যবহার করলেও সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে।
আক্রান্ত গর্ভবতী মা থেকে গর্ভের সন্তান ও আক্রান্ত হতে পারে।
এমপক্স এর লক্ষণ কি?
এমপক্স একটি ভাইরাল সংক্রামক রোগ। সংক্রমণের ১-২১ দিনের মধ্যে লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে।
প্রধান লক্ষণ হলো র্যাশ। ২-৪ সপ্তাহ র্যাশের পাশাপাশি নিচের লক্ষণগুলোও থাকতে পারে—
জ্বর
গলাব্যথা
মাথাব্যথা
মাংসপেশিতে ব্যথা
দূর্বলতা
লিম্ফনোড বা লসিকাগ্রন্থি ফুলে যাওয়া
অনেকের অসুস্থতা প্রথমে র্যাশ দিয়ে শুরু হয়। অনেকের এমন নাও হতে পারে। অনেকে চিকেন পক্স বা অন্যান্য অসুখের র্যাশের সাথে এটিকে মিলিয়ে ফেলতে পারেন। এই র্যাশ প্রথমে ফ্ল্যাট থাকে, পরে তরলপূর্ণ ব্লিস্টারে পরিণত হয়। র্যাশে ব্যথা বা চুলকানিও হতে পারে। র্যাশ একসময় শুকিয়ে ঝরে পড়ে।
সাধারণত হাতের তালু, পায়ের পাতা, মুখ,গলা, কুচকি, যৌনাঙ্গ ও পায়ুতে র্যাশ বেশি হতে পারে।
এর পাশাপাশি পায়ুপথে ব্যথা বা রক্তপাতও হতে পারে।
এমপক্স আক্রান্ত হলে কি করবেন?
সকল ক্ষত বা স্ক্যাব ঝরে পড়ে নতুন চামড়া উঠা পর্যন্ত ঘরে থাকুন।
বাইরে বের হলে ক্ষত ঢেকে রাখুন এবং মাস্ক পরুন।
অন্য মানুষের সাথে সরাসরি স্পর্শ এড়িয়ে চলুন ।
মুখের ঘার জন্য লবণ পানি দিয়ে কুলকুচি করুন।
সাধারণত ভাইরাল অসুখগুলোর ওষুধ থাকেনা। যে যে লক্ষন থাকে সেগুলোর চিকিৎসা নিতে হয়। যেমন র্যাশ হলে সেটির যত্ন নিন, ব্যথা হলে সেটির জন্য ওষুধ খান।
এমপক্স প্রতিরোধে যা করতে হবেঃ
কোভিডের সময় আমরা যেসব সাবধানতা অবলম্বন করতাম, আবার সেই অভ্যাসগুলো ফিরিয়ে আনতে হবে। যেমন —
বারবার সাবান, হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে হাত ধুয়ে নিন।
স্বামী বা স্ত্রীর সংক্রমণের লক্ষণ দেখা গেলে শারীরিক সম্পর্ক থেকে বিরত থাকুন।
অন্য কারো ব্যবহৃত সামগ্রী ব্যবহার এড়িয়ে চলুন।
আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে অন্তত ১ মিটার দূরত্ব রেখে চলুন।
আক্রান্ত পশুপাখি এড়িয়ে চলুন।
যেসকল এলাকায় এই রোগ ছড়িয়েছে সেই এলাকায় ভ্রমণ এড়িয়ে চলুন।