জন্মের পর প্রথম ৬ মাস শিশু শুধু বুকের দুধ খায়। তারপর ধীরে ধীরে বাড়তি খাবার শুরু করা হয়। এ সময় যদি শিশুকে সঠিক নিয়মে খাবার না দেয়া হয় তাহলে শিশুরা খাবারের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে বা অনীহা প্রকাশ করতে থাকে। যেমন—
- শিশুরা যদি বাইরের খাবারের অভ্যস্ত হয়ে যায়, তাহলে ঘরে তৈরি খাবার খেতে চায় না।
- একই খাবার প্রতিদিন দেওয়া, এতে শিশু একঘেয়েমিতে ভোগে।
- খাবারের ঘনত্ব ঠিক না থাকা। খুব বেশি তরল বা একদম ব্লেন্ড করা খাবার দিলে শিশু খাবারের স্বাদ পায় না। আবার বেশি শক্ত বা থকথকে দিলে গিলতে পারে না।
- বুকের দুধের পরপর বাড়তি খাবার দেওয়া। শিশুদের পাকস্থলী আকারে বেশ ছোট, দুধই তাদের পেটের অনেকখানি ভরিয়ে ফেলে। তাই এ সময় বাড়তি খাবারটা খেতে পারে না।
- ঘন ঘন এক–দুই ঘণ্টা পরপরই খাবার দেওয়া। এতে শিশু খাবারটুকু হজমের সময় পায় না, অনেক সময় বমিও করে দেয়।
১ থেকে ২ বছরের শিশুরা সাধারণত দুরন্ত প্রকৃতির হয়। খাবারের চেয়ে খেলাধুলা ও চঞ্চলতা বেশি করে। তাই বসিয়ে খাবার খাওয়ানো মুশকিল হয়ে যায়। তা ছাড়া এ বয়সে শিশুরা যদি চকলেট, চিপস, জুস—এ ধরনের বাইরের খাবারের অভ্যস্ত হয়ে যায়, তাহলে ঘরে তৈরি খাবার খেতে চায় না।
যা করবেন
১. শিশুদের খাবারের একটি রুটিন তৈরি করুনঃ ৬ থেকে ৯ মাসের শিশুরা বুকের দুধের পাশাপাশি দিনে দুবার আধা বাটি পরিমাণ বাড়তি খাবার খেলেই যথেষ্ট। বুকের দুধের পাশাপাশি ধীরে ধীরে ১-২ চামচ করে বাড়তি খাবার খাওয়াতে হবে। ১০ মাস থেকে ১ বছরের শিশুকে আধা বাটি করে তিন বেলা, মাঝে ১–২ বার নাশতা দেওয়া যেতে পারে। এক বছর পর এক বাটি করে তিন বেলা খাবারের সঙ্গে নাশতা দিন। ২ বছরের পর থেকে ঘরের অন্য সদস্যদের সঙ্গে একই নিয়মে খাবে।
২. খাবারের ঘনত্ব ঠিক রাখতে হবেঃ খাবার পুরোপুরি ব্লেন্ড করে বা তরল করে দেওয়া যাবে না। আধা শক্ত খাবার শিশু কিছুটা চিবিয়ে খাবে। এতে খাবারের স্বাদ বুঝবে। চিবিয়ে খাওয়া পরে দ্রুত কথা বলার ক্ষেত্রেও সাহায্য করবে।
৩. ঘরের পরিবেশ সুস্থ ও শিশুবান্ধব রাখুনঃ শিশুকে ধৈর্য ধরে যত্ন ও স্নেহ–মমতার সঙ্গে খাওয়ান। সম্ভব হলে পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে বসিয়ে খাবার দিন। একটি নির্দিষ্ট স্থানে বসিয়ে বিভিন্ন সুন্দর ও রংবেরঙের পাত্রে পরিবেশন করলে খাবারের প্রতি আগ্রহ বোধ করবে।
৪. খাবারের বৈচিত্র্য আনুনঃ প্রতিদিন একই উপাদান দিয়ে রান্না করা খিচুড়ি না দিয়ে ভিন্নভাবে দিন। ডিমও প্রতিদিন সেদ্ধ না দিয়ে কখনো ভাজা বা পুডিং হিসেবে দিন।
৫. শিশুকেও খাবার আয়োজনে যুক্ত করুনঃ খাবার রান্না ও পরিবেশনের সময় শিশুকে সঙ্গে রাখুন। একটু বড় হলে আঙুল দিয়ে ধরে খেতে পারে, এ ধরনের খাবারগুলো নিজের হাতে খেতে উৎসাহ দিন।
যা করবেন না
১. বাচ্চাদের জোর করে, ভয় দেখিয়ে খাওয়াবেন না।
২. চকলেট, চিপস, জুস দেবেন না। এসব রুচি নষ্ট করে এবং সহজেই পেট ভরিয়ে ফেলে, তখন ঘরে তৈরি পুষ্টিকর খাবার খেতে চায় না।
৩. মোবাইল, টিভি ইত্যাদি যন্ত্রের সামনে বসিয়ে না খাওয়ানোই ভালো। এতে খাবারের প্রতি মনোযোগ না থাকায় কী খাচ্ছে, তা বুঝতে পারে না।
কখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন
- শিশু খাওয়াদাওয়া করছে না, সেই সঙ্গে দুর্বল হয়ে পড়ছে, অপুষ্টির লক্ষণ দেখা দিচ্ছে।
- শিশু খেলাধুলার উৎসাহ হারিয়ে ফেলছে।
- শিশু খাবার খাচ্ছে না। অন্যান্য উপসর্গ যেমন গলাব্যথা, বমি, রক্তশূন্যতা ইত্যাদি সমস্যা হচ্ছে। এসব কোনো রোগের লক্ষণ হতে পারে না।
- জিহ্বার ওপরে পুরু সাদা স্তর পড়ে গেছে, যা ছত্রাকের কারণে হতে পারে।
খাওয়া দাওয়া না করার সঙ্গে সঙ্গে শিশুর মানসিক বিকাশ, কথা বলা, অন্যান্য দিক ঠিক আছে কি না, সেটাও লক্ষ করতে হবে। অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের বিশেষ কোনো খাবারের গন্ধ, রং বা স্বাদের প্রতি সংবেদনশীলতা থাকার কারণে কিছু খাবার খেতে চায় না। আবার সেরিব্রাল পলিসি, হাইপোথাইরয়েডিজম ইত্যাদি রোগের কারণে খেতে পারে না। সেই সঙ্গে হাঁটা, বসা ইত্যাদি সময়মতো হয় না। এসব ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।