সুস্বাস্থের টিপস

পেপটিক আলসার: কারণ, লক্ষণ, নির্ণয় ও চিকিৎসা

পেপটিক আলসার হলো একটি সাধারণ কিন্তু যন্ত্রণাদায়ক রোগ, যা পাকস্থলী এবং পরিপাকতন্ত্রের অন্যান্য অংশে ঘা সৃষ্টি করে। পাকস্থলীর ভেতরের আবরণ বা ক্ষুদ্রান্ত্রের উপরের অংশে কোনো ক্ষত সৃষ্টি হলে পেপটিক আলসার দেখা দেয়। এটি যদি সময়মতো চিকিৎসা না করা হয়, তবে মারাত্মক জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। তাই এ রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

peptic ulcer

পেপটিক আলসারের কারণ

পেপটিক আলসারের মূল কারণ হলো পাকস্থলীর পাচক রসের সঙ্গে পাকস্থলীর অভ্যন্তরের আস্তরণের ভারসাম্যহীনতা। এই ভারসাম্যহীনতার পেছনে কিছু নির্দিষ্ট কারণ থাকে, যেমন:

  • হেলিকোব্যাক্টার পাইলোরি সংক্রমণ: হেলিকোব্যাক্টার পাইলোরি (Helicobacter Pylori) নামক ব্যাকটেরিয়া পাকস্থলীর আস্তরণ দুর্বল করে, যা পেপটিক আলসারের একটি প্রধান কারণ।
  • অনিয়ন্ত্রিতভাবে NSAID সেবন: অ্যাসপিরিন, আইবুপ্রফেন, ন্যাপ্রক্সেনের মতো NSAID জাতীয় ওষুধ নিয়মিত ব্যবহার পাকস্থলীর আস্তরণ ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং পেপটিক আলসার সৃষ্টি করে।
  • অ্যালকোহল ও ধূমপান: অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন পাকস্থলীতে অ্যাসিড উৎপাদন বাড়ায়, যা আস্তরণে ক্ষত সৃষ্টি করে। একইভাবে, ধূমপান পাকস্থলীর ক্ষত তৈরির ঝুঁকি বাড়ায়।
  • ফাস্ট ফুড ও জাংক ফুড: অতিরিক্ত ভাজাপোড়া বা ফাস্ট ফুড খাওয়ার ফলে পাকস্থলীর অ্যাসিড নিঃসরণ বেড়ে যায়, যা পেপটিক আলসারের ঝুঁকি বাড়ায়।
  • স্ট্রেস: অতিরিক্ত স্ট্রেস সরাসরি পেপটিক আলসার সৃষ্টি না করলেও এর লক্ষণগুলো তীব্র করে এবং নিরাময় প্রক্রিয়া বিলম্বিত করে।

পেপটিক আলসারের লক্ষণ

পেপটিক আলসারের লক্ষণ ও উপসর্গ সাধারণত এর অবস্থান এবং তীব্রতার উপর নির্ভর করে। তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছে, যেমন:

  •  পেটে জ্বালাপোড়া ও ব্যথা: বুকের নিচ থেকে নাভি পর্যন্ত ব্যথা অনুভূত হতে পারে, যা থেকে থেকে কম বা বেশি হতে পারে।
  •  বমি বমি ভাব ও বমি: খাওয়ার পর বমি বমি ভাব এবং কখনও কখনও বমি হতে পারে।
  •  পেট ফাঁপা ভাব: অল্প খাওয়ার পরও পেট ভরা মনে হতে পারে।
  •  বুক জ্বালাপোড়া: বিশেষত খাওয়ার পর বা রাতে বুক জ্বালাপোড়া হতে পারে, যা GERD এর লক্ষণ হতে পারে।
  •  ওজন হ্রাস: পেপটিক আলসারের কারণে ক্ষুধা কমে গিয়ে অতিরিক্ত ওজন কমে যেতে পারে।
  •  রক্ত বমি: পেপটিক আলসার মারাত্মক আকার ধারণ করলে রক্ত বমি বা কালো মল দেখা দিতে পারে।

পেপটিক আলসার নির্ণয়

পেপটিক আলসার নির্ণয়ের জন্য কিছু নির্দিষ্ট পরীক্ষা করা হয়, যেমন:

  • এন্ডোস্কোপি: পাকস্থলীর অভ্যন্তরীণ অবস্থা দেখার জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • বেরিয়াম সোয়ালো এক্সরে: পাকস্থলীর অবস্থা নির্ণয়ে সহায়ক।
  • হেলিকোব্যাক্টার পাইলোরি টেস্ট: রক্ত, মল, বা নিঃশ্বাসের নমুনা পরীক্ষার মাধ্যমে এই ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি নির্ণয় করা হয়।

পেপটিক আলসারের চিকিৎসা

পেপটিক আলসারের চিকিৎসার প্রধান উদ্দেশ্য হলো লক্ষণগুলো উপশম করা, রোগ নিরাময় ত্বরান্বিত করা, এবং জটিলতা প্রতিরোধ করা। এর মধ্যে রয়েছে:

  • ঔষধ: প্রটোন পাম্প ইনহিবিটর জাতীয় ঔষধ পাকস্থলীর অতিরিক্ত অ্যাসিড উৎপাদন কমাতে সাহায্য করে।
  • অ্যান্টিবায়োটিক: হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি নির্মূলে ব্যবহৃত হয়।
  • অ্যান্টাসিড: পাকস্থলীর অ্যাসিড কার্যক্ষমতা কমাতে সাহায্য করে।
  • জীবন যাত্রার মান পরিবর্তন: অনিয়ন্ত্রিত ঔষধ সেবন, অতিরিক্ত মদ্যপান ও ধূমপান ত্যাগ করে সুস্থ জীবনযাত্রা নিশ্চিত করা যায়।
  • সার্জারি: তীব্র অবস্থায় পরিপাকতন্ত্রে ছিদ্র হলে অপারেশন প্রয়োজন হতে পারে।

পেপটিক আলসার আপনার দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত ঘটাতে পারে, তবে নিয়মিত চিকিৎসা ও সতর্কতার মাধ্যমে এই রোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ নিয়ে সুস্থ জীবনযাপন নিশ্চিত করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Trending

Exit mobile version