গর্ভকালীন সেবা

গর্ভাবস্থা নিয়ে প্রচলিত কুসংস্কার

গর্ভকালীন সময়টি একজন নারীর জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়টিতে মায়ের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বজায় রাখা অপরিহার্য। তবে আমাদের সমাজে গর্ভকালীন সময় নিয়ে অনেক কুসংস্কার ও ভুল ধারণা প্রচলিত আছে, যা অনেক ক্ষেত্রেই গর্ভবতী নারীদের উদ্বিগ্ন করে তোলে এবং ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে প্ররোচিত করে।

প্রথমেই বলতে হয়, গর্ভাবস্থার শুরুর দিকে অনেক মা-ই জানেন না কোন বিষয়গুলো তাদের এবং গর্ভের সন্তানের জন্য ভালো বা খারাপ হতে পারে। অনেক সময় পরিবারের লোকজন কিংবা আশেপাশের মানুষজনের কাছ থেকে নানা পরামর্শ এবং গুজব শোনা যায়, যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিজ্ঞানের ভিত্তিতে নয় বরং কুসংস্কারের ওপর নির্ভরশীল।

এই সময়ে একজন মায়ের উচিত চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা এবং সঠিক তথ্য জেনে নিজেকে ও গর্ভস্থ শিশুকে সুরক্ষিত রাখা। কুসংস্কারের পরিবর্তে বিজ্ঞানসম্মত পরামর্শ গ্রহণ করাই হবে সঠিক পথ।

আমাদের দেশে গর্ভাবস্থার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রচুর কুসংস্কার বা মিথ প্রচলিত রয়েছে, যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসছে। গর্ভবতী নারীরা সাধারণত পরিবারের বয়স্ক সদস্যদের কাছ থেকে বিভিন্ন পরামর্শ পান, যা কখনো কখনো সঠিক হলেও, অনেক সময় বিজ্ঞানসম্মত নয় এবং ক্ষতিকরও হতে পারে।

Myth vs Fact

গর্ভবতীর পেটের আকৃতি দেখে গর্ভের শিশু ছেলে না মেয়ে তা কি বোঝা সম্ভব?

গর্ভাবস্থায় পেট নিচের দিকে বড় হলে ছেলে এবং ওপরের দিকে বড় হলে বা উঁচু হলে মেয়ে সন্তান হবে—এমনটা অনেকে বলে থাকেন।

বিজ্ঞান যা বলে: এই ধারণার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। একজন গর্ভবতী নারীর বাড়ন্ত পেট ওপরের দিকে অথবা নিচের দিকে বাড়ার সাথে তার গর্ভের সন্তান মেয়ে কিংবা ছেলে হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই।

প্রকৃতপক্ষে একজন নারী যতবার গর্ভধারণ করেন, তার পেটের পেশিগুলো তত বেশি প্রসারিত হয়। তাই কেউ প্রথমবারের মতো গর্ভধারণ করলে গর্ভাবস্থায় তার পেট হয়তো খুব বেশি নিচে নামে না। এমনকি উঁচু হয়েও থাকতে পারে। এ ছাড়া কারও পেটের পেশিগুলো অপেক্ষাকৃত শক্ত হলে তার বাড়ন্ত পেট কিছুটা উঁচু হয়ে থাকতে পারে। এক্ষেত্রে তার গর্ভের শিশু ছেলে অথবা মেয়ে—যে কোনোটিই হতে পারে।

গর্ভের শিশুর হার্টরেট গুণে শিশুটি ছেলে না মেয়ে তা বোঝা যায়

বিজ্ঞান যা বলে: এই ধারণাটি ভুল। একথা সত্য যে জন্মের পর ছেলে সন্তানের চেয়ে মেয়ে সন্তানের হার্টরেট সাধারণত বেশি হয়। তবে গর্ভে থাকাকালীন সময়ে ছেলে ও মেয়ে শিশুর হার্টরেটে তেমন কোনো পার্থক্য থাকে না। তাই গর্ভের শিশুর হার্টরেট গুণে শিশুটি ছেলে না কি মেয়ে তা বোঝা সম্ভব নয়।

ছেলে কিংবা মেয়ে হোক, গর্ভকালের একেক পর্যায়ে গর্ভের শিশুর হার্টরেট একেক রকম হয়। যেমন, গর্ভাবস্থার পঞ্চম সপ্তাহে গর্ভের শিশুর হার্ট মিনিটে ৮০–৮৫ বার স্পন্দিত হয়। এটা নবম সপ্তাহের প্রথমদিক পর্যন্ত বাড়তে বাড়তে মিনিটে ১৭০–২০০ হার্টবিটে পৌঁছে। এরপর হার্টরেট কমতে শুরু করে। গর্ভাবস্থার মাঝামাঝি সময়ে পৌঁছাতে পৌঁছাতে এটা কমে দাঁড়ায় মিনিটে ১২০–১৬০ হার্টবিট (গড়) পর্যন্ত। প্রসবের সময়ে ছেলে ও মেয়ে শিশু উভয়ের হার্টবিট থাকে মিনিটে ১২০–১৬০।

গর্ভাবস্থায় বমিভাব বেশি হলে গর্ভের শিশু মেয়ে হয়

বিজ্ঞান যা বলে: শুনতে অবাক লাগলেও এই ধারণা সত্য হতে পারে। কিছু কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, যেসব গর্ভবতী নারীরা গর্ভে মেয়ে শিশু অথবা যমজ শিশু ধারণ করেন, তাদের গর্ভাবস্থায় বমি বমি ভাব হওয়ার সম্ভাবনা কিছুটা বেশি।

এর সম্ভাব্য কারণ হিসেবে ধারণা করা হয়েছে যে, গর্ভে মেয়ে শিশু থাকলে এইচসিজি হরমোনের পরিমাণের তারতম্যের কারণে গর্ভবতী নারীর বমি বমি ভাব বাড়তে পারে। তবে এই তথ্যটি এখনো শক্তভাবে প্রমাণিত হয়নি।

গর্ভাবস্থায় মা ও অনাগত শিশু দুজনের সমপরিমাণ খাবার খেতে হয়

বিজ্ঞান যা বলে: গর্ভাবস্থায় দুইজনের সমপরিমাণ বা স্বাভাবিকের দ্বিগুণ পরিমাণ খাবার খেতে হবে—এই কথার কোনো ভিত্তি নেই। বরং এই পরামর্শ মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

গর্ভাবস্থায় কতটুকু খাবার বেশি খেতে হবে তা বেশ কিছু বিষয়ের ওপর নির্ভর করতে পারে। যেমন: আপনার ওজন, আপনার উচ্চতা, আপনি দৈনিক কী পরিমাণ কাজ করছেন অথবা আপনার গর্ভাবস্থার কততম মাস চলছে।

গর্ভকালীন প্রথম তিন মাসে সাধারণত বাড়তি খাবারের প্রয়োজন হয় না। তবে এর পরের মাসগুলোতে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কিছুটা বেশি খাবার খেতে হবে। এসময়ে একই ধরনের খাবার বেশি পরিমাণে খেয়ে পূরণ না করে বিভিন্ন ধরনের খাবার থেকে মেটানো উচিত। প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় বৈচিত্র্য থাকলে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদানের চাহিদা পূরণ হবে।

গর্ভাবস্থায় টক জাতীয় খাবার খেলে গর্ভপাত হবে

বিজ্ঞান যা বলে: টক জাতীয় খাবারের সঙ্গে গর্ভপাতের আসলে কোনো সম্পর্ক নেই। টক জাতীয় খাবার ভিটামিন সি সমৃদ্ধ, এতে অনেক ধরনের খনিজ এবং ভিটামিন রয়েছে। যা মুখের স্বাদ ও রুচি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। তবে বেশি টক খেলে হাইপার এসিডিটির সমস্যা হতে পারে।

গর্ভাবস্থায় পেঁপে ও আনারস খেলে গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ে

বিজ্ঞান যা বলে: গর্ভাবস্থায় সাধারণত বেশি বেশি ফলমূল খেতে উৎসাহিত করা হয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। যেমন, গর্ভাবস্থায় কাঁচা অথবা আধাকাঁচা পেঁপে না খাওয়াই ভালো। কাঁচা পেঁপেতে উচ্চমাত্রায় ল্যাটেক্স থাকে। ইঁদুরের ওপর করা গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, ল্যাটেক্স জরায়ুর শক্তিশালী সংকোচন করে থাকে। তাই বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, কাঁচা পেঁপে খেলে সেটি গর্ভের শিশুর জন্য নিরাপদ না-ও হতে পারে। তবে পাকা পেঁপে খেতে কোনো সমস্যা নেই। পাকা পেঁপে ভিটামিন সি-সহ বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদানের একটি ভালো উৎস।

অনেকে হয়তো শুনে থাকবেন যে আনারস খেলে গর্ভপাত হয়। এই ধারণার পক্ষে কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

গর্ভাবস্থায় খাসির মাংস খেলে বাচ্চার শরীর থেকে বাজে গন্ধ বের হবে

বিজ্ঞান যা বলে: খাসির মাংস খাওয়ার সাথে শিশুর শরীর থেকে বাজে গন্ধ বের হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। খাসির মাংস প্রোটিন ও আয়রনের উৎকৃষ্ট একটি উৎস। এসবের চাহিদা মেটাতে গর্ভবতী মায়েদের ভালোমতো সিদ্ধ করা খাসির মাংস খাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই।

তবে গরু, খাসি ও ছাগলের মাংসে তুলনামূলকভাবে বেশি চর্বি থাকে। অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার খেলে মায়ের অস্বাস্থ্যকর ওজন বাড়ার পাশাপাশি হার্টের রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই গরু-খাসির মাংস অনেক বেশি না খেয়ে পরিমিত পরিমাণে খাবেন। খাওয়ার সময়ে চর্বি ছাড়া মাংসের টুকরা বেছে নেওয়ার চেষ্টা করবেন।

উল্লেখ্য, প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে খাসির মাংসের পাশাপাশি মাছ, ডিম, ডাল ও মুরগির মাংস বেছে নিতে পারেন।

গর্ভাবস্থায় যমজ কলা খেলে যমজ সন্তান হবে

বিজ্ঞান যা বলে: গর্ভাবস্থায় যমজ কলা অথবা অন্য কোনো ফল খেলে যমজ সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়—এমন ধারণা প্রচলিত আছে। তবে এর সপক্ষে কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

গবেষণায় পাওয়া গিয়েছে যে, কিছু বিষয় যমজ সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা বাড়াতে কিংবা কমাতে পারে। যেমন, ৩৫ বছরের পরে গর্ভধারণ করলে যমজ সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। কৃত্রিমভাবে গর্ভধারণের ক্ষেত্রেও যমজ সন্তান হওয়ার ঘটনা বেশি দেখা যায়। পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাসের সাথেও যমজ সন্তান হওয়ার সম্পর্ক থাকতে পারে। বিশেষ করে যারা দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার বেশি খান, তাদের মাঝে যমজ সন্তান হওয়ার ঘটনা বেশি দেখা গেছে।এ ছাড়া উচ্চতা, ওজন ও জেনেটিক কারণেও যমজ সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা বাড়তে কিংবা কমতে পারে।

গর্ভাবস্থায় এক্সারসাইজ করা উচিত নয়

বিজ্ঞান যা বলে: গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, গর্ভাবস্থায় নিয়মিত ব্যায়াম করা নিরাপদ। গর্ভাবস্থায় শরীরচর্চা করলে সেটি আপনার ও গর্ভের শিশুর জন্য উপকারী হতে পারে। তাই আপনার বিশেষ কোনো স্বাস্থ্য জটিলতা না থাকলে গর্ভাবস্থায় নিয়মিত ব্যায়াম করা চালিয়ে যান।

আপনার পছন্দের অনেক ব্যায়াম এসময়ে নিরাপদে চালিয়ে যেতে পারবেন। যেমন: দ্রুত হাঁটা, সাইক্লিং, ইয়োগা ও সাঁতার। এ ছাড়া আগে থেকে ভারী ব্যায়াম করার অভ্যাস থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সেটাও চালিয়ে যেতে পারেন।

তবে এসময়ে নতুন করে ভারী ধরনের কোনো ব্যায়াম শুরু না করাই ভালো। সেই সাথে যেসব এক্সারসাইজ করলে আপনার পড়ে যাওয়ার অথবা আঘাত পাওয়ার ঝুঁকি থাকে (যেমন: বক্সিং, ব্যাডমিন্টন ও কারাতে) সেগুলো এসময়ে এড়িয়ে চলবেন। গর্ভাবস্থায় ঠিক কোন ধরনের এক্সারসাইজগুলো আপনার জন্য নিরাপদ হবে তা আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলে নির্ধারণ করে নিতে পারলে সবচেয়ে ভালো হয়।

মর্নিং সিকনেস শুধু সকালেই হয়

বিজ্ঞান যা বলে: ‘মর্নিং সিকনেস’ বলতে গর্ভাবস্থায় বমি বমি ভাব ও বমি হওয়াকে বোঝায়। নামের মধ্যে ‘মর্নিং’ থাকলেও এটা যে শুধুমাত্র সকালেই হবে তা নয়। দিনের যেকোনো সময়েই বমি বমি ভাব বা বমি হতে পারে।

গর্ভাবস্থায় শরীরে হরমোনের পরিবর্তনের কারণে মর্নিং সিকনেস দেখা দেয়। সাধারণত গর্ভাবস্থার একদম প্রথম দিকেই (৪ থেকে ৭ সপ্তাহের ভেতর) এই সমস্যা দেখা দেয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ১২ থেকে ১৪ সপ্তাহের মধ্যে বমি বমি ভাব নিজে থেকেই কমে আসে। তবে কারও কারও ক্ষেত্রে এই সময়ের পরেও—এমনকি পুরো গর্ভকাল জুড়ে বমি বমি ভাব অথবা বমি হতে পারে।

মনে রাখবেন, গর্ভাবস্থায় খুব বেশি বমি বমি ভাব অথবা বমি হলে তা মর্নিং সিকনেস নয়, বরং হাইপারএমেসিস গ্রাভিডেরাম রোগের লক্ষণ হতে পারে। এমন হলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।

গর্ভাবস্থায় প্লেনে ওঠা যাবে না

বিজ্ঞান যা বলে: সুস্থ গর্ভবতীদের জন্য সীমিত সংখ্যক বার প্লেনে ভ্রমণ করা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিরাপদ। প্রায় সব এয়ারলাইন গর্ভাবস্থার ৩৬ সপ্তাহ পর্যন্ত গর্ভবতী নারীদের প্লেনে ওঠার ক্ষেত্রে কোনো বিধি-নিষেধ আরোপ করে না। তবে ভ্রমণের আগে জেনে নিন এয়ারলাইনে কোনো বিধি-নিষেধ আরোপ করছে কি না। যদি এমন কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা বা গর্ভকালীন জটিলতা থাকে যা প্লেনে ভ্রমণের কারণে খারাপের দিকে যেতে পারে, তাহলে প্লেনে ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকুন। প্লেনে এয়ার প্রেশার কম থাকার কারণে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ কিছুটা কমে যেতে পারে। তবে এতে দুশ্চিন্তার কারণ নেই। কারণ আমাদের শরীর এ পরিবর্তনের সঙ্গে দ্রুত খাপ খাইয়ে নিতে পারে। এ ছাড়া প্লেনে জার্নির সময় আমরা অনেক উঁচুতে উঠি, যেখানে রেডিয়েশনের সঙ্গে সংস্পর্শ বাড়ে। এতেও দুশ্চিন্তার কারণ নেই। যদি ঘন ঘন প্লেনে যাতায়াত করেন তাহলে ডাক্তারের সঙ্গে আলোচনা করে জেনে নিন, কতটুকু প্লেনে যাতায়াত আপনার জন্য নিরাপদ। তবে প্লেনে যাতায়াতের সময় নিচের পরামর্শগুলো মেনে চলুন।

মাঝে মাঝেই পা ও পায়ের আঙ্গুল নাড়াচাড়া করুন। সম্ভব হলে উঠে দাঁড়ান। লম্বা ফ্লাইট হলে কয়েকবার হাঁটা-চলা করার চেষ্টা করুন।

সম্ভব হলে প্যাসেজওয়ের পাশের সিট বেছে নিন। এতে দীর্ঘ ফ্লাইটের সময় উঠে দাঁড়িয়ে পা সোজা করা ও হাঁটতে সুবিধা হবে।

গ্যাস হয় এমন খাবার ও কার্বনেটেড ড্রিঙ্কস খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। এতে করে প্লেনে জার্নির সময় পেটে অতিরিক্ত গ্যাস হয়ে অস্বস্তি লাগতে পারে।

গর্ভাবস্থার একদম শেষদিকে অথবা নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সন্তান প্রসব হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকলে, গর্ভবতীর প্লেনে ওঠা অথবা দূরের ভ্রমণ এড়িয়ে চলা উচিত।

গর্ভাবস্থায় সহবাস করা যাবে না

বিজ্ঞান যা বলে: গর্ভাবস্থায় সহবাস করা নিরাপদ কিনা সে ব্যাপারে অনেকের মনেই প্রশ্ন থাকে। বিশেষ করে গর্ভবতীর প্রথম তিন মাস এবং শেষের তিন মাসে সহবাস করলে গর্ভের সন্তানের ক্ষতি হতে পারে বলে অনেকে আশংকা করে থাকেন। তবে এই ধারণাটি সঠিক নয়।

গর্ভকালীন সময়ে আপনার যদি কোনো জটিলতা না থাকে এবং ডাক্তার যদি আপনাকে এসময়ে সহবাস করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ না দিয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় সহবাস করা আপনার জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ। এতে সাধারণত গর্ভের সন্তানের কোনো ধরনের আঘাত পাওয়ার অথবা ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে (যেমন: জরায়ুমুখে দুর্বলতা থাকলে) ডাক্তার আপনাকে গর্ভাবস্থায় সহবাস এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিতে পারেন। সেসব ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ মেনে সহবাস করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

এ ছাড়া গর্ভাবস্থায় মাসিকের রাস্তা দিয়ে রক্তপাত হলেও সহবাস থেকে বিরত থাকবেন এবং রক্তপাতের বিষয়ে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। যোনিপথে রক্তপাত পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলে আবারও নিরাপদে সহবাস করতে পারবেন।

চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণ হলে গর্ভবতীর বাইরে যাওয়া ও খাওয়া নিষেধ

বিজ্ঞান যা বলে: অনেকেই মনে করেন যে, চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণের সময় গর্ভবতী মায়েরা বাইরে গেলে, ধারালো কিছু নিয়ে কাজ করলে অথবা খাওয়াদাওয়া করলে গর্ভের শিশু বিকলাঙ্গ হয়। এগুলো বহুল প্রচলিত ধারণা। তবে এসবের পক্ষে কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

তাই সূর্যগ্রহণ অথবা চন্দ্রগ্রহণ হলেই গর্ভবতী মায়েদের খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। বরং এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। কারণ গর্ভকালীন সময়ে নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খাওয়া এবং পর্যাপ্ত পানি পান করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়াও বাইরে যেতে অথবা ধারালো কিছু নিয়ে কাজ করতে অসুবিধা নেই। তবে ধারালো জিনিস ব্যবহারের ক্ষেত্রে সবসময়ের মতো গর্ভাবস্থাতেও সতর্ক থাকতে হবে।

এ কথা সঠিক যে, সূর্যগ্রহণের সময় সূর্যের দিকে সরাসরি তাকালে চোখের ক্ষতি হওয়ার ক্ষুদ্র সম্ভাবনা আছে। তাই এসময়ে সূর্যের দিকে সরাসরি তাকানো থেকে বিরত থাকা উচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Trending

Exit mobile version